আপনি কি হতাশ? ধর্ণা দিন রবের কাছে–শীর্ষবার্তা ডটকম

0 156

আপনি কি হতাশ? ধর্ণা দিন রবের কাছে

দীদার মাহদী

হতাশা ৷ মানবপ্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ৷ আমরা কেনো যেনো অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ি ৷ পরীক্ষায় সাফল্য নিয়ে হতাশ ৷ ফ্যামেলি ক্রাইসিস নিয়ে হতাশ ৷ মনের মত জীবনসঙ্গী খুঁজতে গিয়ে হতাশ ৷ পরিবারের অভাব অনটন নিয়ে হতাশ ৷ হতাশায় ঘিরে রেখেছে যেনো চারপাশ ৷ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা বিজয় না পেয়ে হতাশ ৷ কিন্তু না ৷ একজন মুমিনের এভাবে হতাশ হলে চলে না ৷ দুনিয়ার চাওয়া পাওয়া তাকে হতাশাগ্রস্ত করতে পারে না ৷ জীবনের চরম মুহূর্তেও তার মুখ থকে আফসোসের শব্দ বরোবে না ৷ কুরআননের ভাষায়— لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَاۚ
হতাশ হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন ৷
[সূরা তাওবা, আয়াত ৪০]

তবে বাস্তবতা হলো জীবনে চলার পথে নানা জটিলতায় আমরা আনমনে হতাশা ফিল করি ৷ তখন আমাদের হতাশাকে প্রশ্রয় না দিয়ে মহান রবের নিকট ধর্ণা দেয়া দরকার ৷ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে ৷ আর আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার সিস্টেমও তিনি বলে দিয়েছেন ৷ কুরআন বলছে—
وَ اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِؕ وَ اِنَّهَا لَكَبِیْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخٰشِعِیْنَۙ

সবর ও নামায সহকারে সাহায্য নাও ৷ নিঃসন্দেহে নামায বড়ই কঠিন কাজ, কিন্তু সেসব অনুগত বান্দাদের জন্য কঠিন নয় ৷
[সূরা বাকারাহ, আয়াত ৪৫]

হতাশাকে ডালপালা বিস্তার করতে না দিয়ে আপনি সালাতে দাঁড়িয়ে যান ৷ আপনার মনের কথাগুলো আল্লাহর কাছেই বলুন ৷ তিনিই সমাধানদাতা ৷
তিনি কাউকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন ৷ দোয়ার ব্যাপারে আবু দারদা (রাঃ) বলতেন, ‘তোমার হাতগুলো শিকলবন্দী হয়ে যাওয়ার আগেই সেগুলো উঁচু করো ৷’ আল্লাহ বলেন,

ادْعُواْ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً

‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে।’
[সূরা আল আ’রাফ, আয়াত ৫৫]

আমরা প্রথমত দুআ করি না ৷ করলেও একবার দুবার করেই অধৈর্য হয়ে পড়ি ৷ আর বলাবলি করি আল্লাহ আমার দুআ শোনেন না ৷ কবুল করবেন না ৷ আমরা কেউ জানি না, আল্লাহ কখন কীভাবে আমার দুআ কবুল করবেন ৷ তিনিই জানেন ৷ আমার কাজ দুআ করা ৷ করতেই থাকা ৷ এমনও হতে পারে এর থেকেও জটিল অবস্থার সময় আল্লাহ আপনাকে উদ্ধার করবেন ৷ এবং তা এই দুআর কারণেই ৷ সহিহ মুসলিমে এসেছে, নবী করিম (ﷺ) তিনবার করে দু’আ করতেন। সালাফাদের মধ্যে দেখা যায়, কেউ কেউ একটা দোয়া ২০ বছর ধরে করেছেন, কিন্তু ফল পাননি। তবুও তারা আশা ছাড়েননি। তারা মনে করতেন, একদিন আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করবেন।

প্রিয় নবীজিকে (ﷺ) আল্লাহ বলেছেন,

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُواْ لِي وَلْيُؤْمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

‘আর (হে মুহাম্মদ (ﷺ)) আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে ৷ বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে ৷ যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে ৷ কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। [সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬]

দুআর ক্ষেত্রে কিছু আদব রক্ষা করাও জরুরি ৷ চাওয়ার সিস্টেমও আয়ত্ব করে নিতে হবে ৷ আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন, এ চিন্তা নিয়ে দোয়া করুন। সুনানে তিরমিজিতে এসেছে, “আল্লাহ তোমার দোয়ার জবাব দেবেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আল্লাহকে ডাকো। তবে সে সাথে জেনে রেখো যে, গাফেল অন্তরের দোয়ার জবাব দেয়া হয় না।”

দুআ কবুলের ব্যাপারে মনে দ্বিধা রাখা উচিত নয়। চিন্তা করা দরকার যে আল্লাহ শয়তানের দোয়া কবুল করেছেন, সে আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন না! জাকারিয়া (আঃ) দোয়ার সময় আল্লাহর কাছে বলেছিলেন,

وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا

হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফল হইনি।
[সূরা মারইয়াম, আয়াত ৪]

দু’আর শুরু ও শেষে দরুদ পাঠ করতে থাকুন। মাঝেও পাঠ করুন। দরুদ পড়ে যে দোয়া করা হয় তা কবুল করা হয়। তিরমিযিতে এসেছে, উমর (রাঃ) বলেন, আসমান ও জমিনের মাঝে দু’আ আটকে থাকে, নবী করিম (ﷺ) এর উপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত সে দোয়া আসমানে পোঁছে না।

একনিষ্ঠ হয়ে দোয়া আমরা খুব কমই করি। অথচ দোয়ার ক্ষেত্রে একনিষ্ঠতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উমর (রাঃ) প্রায়ই বলতেন, ‘আমার দু’আ কবুল হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। বরং আমি চিন্তিত দু’আ করার তৌফিক পাবো কিনা সেটা নিয়ে।’

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا

“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।”
[সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব, আয়াত ২]

হতাশা নয় বরং জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন ৷ আপনার অসুবিধার সময়টা দীর্ঘ নয় ৷ আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন ৷ আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন ৷ আমীন ৷

- Advertisement -