অর্থঃ তাঁর (আল্লাহর) কুরসী (অর্থাৎ পা রাখার জায়গা) সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।
কুরসী আল্লাহ তাআ’লার বৃহৎ সৃষ্টির একটি।
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা কুরসির বর্ণনায় বলেন যে, আল্লাহর কুরসী আকাশ এবং যমীন পরিব্যপ্ত হয়ে আছে।
তার প্রশস্ততা, আকৃতির বড়ত্বতা এবং ক্ষেত্রের বিশালতার কারণে।
ভূমণ্ডল এবং নভোমন্ডলের তুলনা কুরসীর সাথে খুবই ক্ষীণ তুলনা।
যেমন কুরসীর তুলনা আরশের সাথে দুর্বল তুলনা।
কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত আয়াতুল কুরসি
আবূ যর (রাঃ) বলেন, আমি মসজিদে হারামে প্রবেশ করি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একাকি দেখে তার পাশে বসে পড়ি এবং জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসূল!
আপনার প্রতি নাযিল হওয়া কোন আয়াতটি শ্রেষ্ঠ? তিনি বলেন, “আয়াতুল কুরসী; আল্লাহর কুরসী এতো বড় যে, কুরসীর তুলনায় আসমান এবং যমীন যেন মরূভূমিতে পড়ে থাকা একটি আংটির মতো।
আর আরশের শ্রেষ্ঠত্ব কুরসীর প্রতি যেমন মরূভূমির শ্রেষ্ঠত্ব সেই বালার প্রতি”।
১. হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না। (নাসাঈ)
২. হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় থাকে।
যে ব্যক্তি এ আয়াতটি শোয়ার আগে পড়বে আল্লাহ তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (বায়হাকি)
৩. হজরত উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজিদের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ?
তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আল্ হাইয়্যুল কাইয়্যুম) তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তার বুকে রেখে বলেন, আবুল মুনযির!
এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (মুসলিম)
৪. আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সুরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ।
তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো ‘আয়াতুল কুরসি’। (মুসনাদে হাকিম)
আয়তুল কুরসির উপকারিতা
পাঠক! আয়তুল কুরসির অনেক অনেক উপকার রয়েছে ৷ আয়াতুল কুরসি কে ইসমে আজম বলা হয় ৷ অর্থাত ইসমে আজম হচ্ছে মহান রব্বুল আলামীনের এমন এক ইসিম, এমন এক নাম ৷ যে নাম নিয়ে দোয়া করলে ৷ যে নাম নিয়ে প্রার্থনা করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অবশ্যই কবুল করেন ৷ তো নানা কারণে, বিভিন্ন ইঙ্গিত এর মাধ্যমে আয়াতুল কুরসি ইসমে আজম হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ৷
আয়তুল কুরসি আমল করার মাধ্যমে বহু ধরনের বিপদ-আপদ বালা মুসিবত থেকে নিরাপদ থাকার অনেক নজির রয়েছে ৷ আপনি সকাল সন্ধ্যা আয়তুল কুরসির আমল করুন ৷ নূন্যতম পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে আয়তুল কুরসি পরে বুকে ফুঁ দিলে যাবতীয় বিপদ আপদ বালা মুসিবত থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাকে হেফাজত করবেন ৷ তাই আর দেরি নয় আজি শুরু করে দিন আয়াতুল কুরসির আমল ৷
আয়াতুল কুরসি ও শয়তানের ঘটনা:
হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকায়ে ফিতরের দেখাশোনার করার জন্য আমাকে নিযুক্ত করলেন।
এক ব্যক্তি উভয় হাত ভরে শস্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে অব্যশই রাসুল (সা.)-এর নিকট নিয়ে যাব।
সে বলল, আমি একজন গরিব লোক, আমার ওপর, আমার পরিবার-পরিজনের বোঝা রয়েছে এবং আমি অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত। আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। সকালে নবী করিম (সা.) বললেন, হে আবু হুরায়রা, তোমার কয়েদি গত রাতে কি করেছেন?
আবু হুরায়রা বললেন, হে রাসুলুল্লাহ, সে অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত, তাই তাকে ছেড়ে দিলাম। তিনি বললেন, সাবধানে থেক, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে।
সকালে রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, আবু হুরায়রা তোমার কয়েদির কি হলো? আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে তার কঠিন প্রয়োজন ও পরিবার-পরিজনের বোঝার অভিযোগ করল, এই জন্য তার প্রতি আমার দয়া হলো এবং তাকে ছেড়ে দিলাম।
তিনি এরশাদ করলেন, সাবধানে থেক, সে মিথ্যা বলেছে, আবার আসবে। সুতরাং আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আসল এবং উভয় হাতে শস্য ভরতে লাগল।
আমি তাকে ধরে বললাম, অবশ্যই তোমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট নিয়ে যাব। এই তৃতীয়বার এবং শেষ সুযোগ। তুমি বলেছ, আগামীতে আসবে না কিন্তু আবার এসেছ।
সকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, তোমার কয়েদির কি হলো? আমি বললাম, সে বলেছে যে, আমাকে এমন কয়েকটি কালিমা শিখিয়ে দেবে যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমার উপকার করবে।
অতএব আমি তাকে এবারও ছেড়ে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে কালিমাগুলো কি ছিল? আমি বললাম, সে এই বলে গেছে যে, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাও তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে নাও।
তোমার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান তোমার নিকট আসবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করলেন, মনোযোগ সহকারে শোন।
যদিও সে মিথ্যাবাদী, কিন্তু তোমার সঙ্গে সত্য কথা বলেছে। হে আবু হুরায়রা। তুমি কি জান, তিন রাত যাবৎ তুমি কার সঙ্গে কথা বলছ? আমি বললাম, না।
হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর বর্ণনায় আছে যে, ‘শয়তান এই বলল, তুমি নিজের ঘরে আয়াতুল কুরসি পড়, তোমার নিকট কোনো শয়তান, জিন ইত্যাদি আসবে না ।’ (তিরমিজি : ২৮৮)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, সূরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। [মুসতাদরাকে হাকিম]। তাই এখনই পবিত্র আয়তুল কুরসীটি মুখস্থ করে নিন।
আয়াতুল কুরসি কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত’। যা সমগ্র কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াতও বটে। এ আয়াতের রয়েছে অনেক ফজিলত।
আয়াতুল কুরসির চমৎকার ব্যাখ্যা উস্তাদ নুমান আলী খানেরঃ
আয়াতুল কুরসি মোট ৯ টি বাক্য মিলে একটি আয়াত।
১। প্রথম বাক্যটিতে আল্লাহর দুটি নাম রয়েছে – আল হাইউ (চিরঞ্জীব), আল কাইউম (চিরস্থায়ী) আর শেষের বাক্যেও আল্লাহর দুটি গুনবাচক নাম রয়েছে আল আলিউ (সর্বোচ্চ), আল-আজিম (সুমহান)।
২। দিত্বীয় বাক্যে রয়েছে – তন্দ্রা (ঘুম ঘুম ভাব, ঘুমের ঝিমুনি) এবং ঘুম তাকে স্পর্শ করে না। তন্দ্রা কাদের আসে? দুর্বল হয়ে পড়লেই না তন্দ্রা আসে – অর্থাৎ তন্দ্রা এবং ঘুম আলস্য এবং দুর্বলতার চিহ্ন।
এটি থাকলে আপনি কখনও ক্রমাগত দায়িত্ব ও কোনো কিছু রক্ষনাবেক্ষণের কাজ করতে পারবেন না। এবার উলটো দিক থেকে দ্বিতীয় বাক্য দেখুন – আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সেগুলোর সংরক্ষণে আল্লাহ কখনও ক্লান্ত হন না!
অর্থাৎ ২য় বাক্যে দুর্বলতার চিহ্ন তন্দ্রা এবং ঘুম তাকে ধরে না আরে শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় বাক্য (৮) এটাই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে যাকে দুর্বলতা পেয়ে বসতে পারে না।
তিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সেগুলোর সংরক্ষণে ক্লান্ত হন না – কারণ ক্লান্তির চিহ্ন ঘুম ঘুম ভাব (তন্দ্রা) এবং ঘুম তাকে স্পর্শ করে না। অর্থাৎ (২+৮) বাক্য মিলে গেলো।
৩। ৩ নং বাক্য হলো – আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এখানে লক্ষ্য করুন যে তিনি পুরো আসমান এবং জমিনের মালিক – মানে সবকিছুর মালিক, এখানে কিছু বাদ থাকছে না।
এখানে মালিক অনেকটা রাজার অর্থে – রাজা হলো বিশালতার নিদর্শন। রাজা কেবল এক খন্ড জমির মালিকের নাম নয় – বিশাল একটা এলাকার মালিকের নাম যিনি এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন।
তাহলে আল্লাহ হলো আসমান ও জমিন এবং এর মাঝে যা আছে সবকিছুর মালিক ও রাজা। আর শেষের দিক থেকে ৭ নং বাক্য কি? তাঁর (আল্লাহর) রাজত্ব আসমান ও জমিনের সব জায়গায়।
প্রথম দিক থেকে ৩ নং বাক্যে বলা হচ্চে তিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ করে এবং শেষের দিক থেকে ৩ নং (৭) এ বলছেন আসমান ও জমিনে তাঁর রাজত্ব বিরাজমান – অর্থাৎ যিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন (৩নং) অবশ্যই তাঁর রাজত্বও (শেষের দিক থেকে ৩নং) হবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের উপর। এভাবে চমৎকার মিলটি পেলাম ৩+৭ নং দিয়ে।
৪। ৪র্থ বাক্যের অর্থ – আর কে আছে যে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? অর্থাৎ আল্লাহ অনুমতি না দিলে আমাদের ক্ষমতা নেই আমরা কারো পক্ষে সুপারিশ করে তার জন্য একটা বিষয় সহজ করে দেবো –
যেরকম আমরা দুনিয়াতে কারো জন্য সুপারিশ করে দিলে কারো জন্য হয়তো একটা জিনিস সহজ হয়ে যায় –
চাকরি ক্ষেত্রে হোক, বিয়ের ক্ষেত্রে হোক বা সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে হোক। এখানে মূল বিষয় হলো তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না আখিরাতে।
আবার শেষের দিক থেকে ৪র্থ (৬) বাক্য কি বলে? তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না যদি না তিনি চান।
প্রথম ৪র্থ বাক্যে আছে কেউ সুপারিশ করতে পারবে না কিন্তু ব্যতিক্রম হলো আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন।
আর শেষের দিক থেকে ৪র্থ বাক্যে হচ্ছে – তাঁর জ্ঞানের কিছুই কেউ আয়ত্ত করতে পার না কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে কাউকে যদি তিনি জ্ঞান দিতে চান সে।
এভাবে ব্যতিক্রম ও ক্ষমতার মিল হলো ৪+৬ দুটি ব্যতিক্রম বিষয় – তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না।
আয়াতুল কুরসি কোন সূরার কত নম্বর আয়াত
আয়াতুল কুরসির আয়াত সংখ্যা কত
আয়াতুল কুরসি কত পারায় আছে
আয়াতুল কুরসি কত আয়াত
আয়াতুল কুরসি সুরা বাকারার কত নাম্বার আয়াত
আয়াত কাকে বলে
আয়াতুল+কুরসি
কাকে কুরাইশদের বাজপাখি বলা হয়
আয়াতুল কুরসী
আয়াতুল কুরসি আরবি
কারা সালাত সম্পর্কে উদাসীন
কুরসী আয়াতুল কুরসী
স্বপ্নে আয়াতুল কুরসি পড়লে কি হয়
আয়াতুল কুরসি শব্দের অর্থ কি
আয়াতুল কুরসি দিয়ে নামাজ পড়া যাবে কি
আয়াতুল কুরসি পড়লে কি হয়
স্বপ্নে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে কি হয়
আয়াতুল কুরসির ফজিলত কি কি
আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে কি হয়
কিভাবে আয় করব
কিভাবে আয় করা যায়
সূরা আয়াতুল কুরসি
কিভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা যায়
আয়াতুল কুরসি কি
সুরা আয়াতুল কুরসী
আয়াতুল কুরসি কেন বলা হয়
আয়াতুল কুরসির মর্যাদা এত বেশি কেন
কেমন আছো এইতো আছি
কেমন আছ কোথায় লিরিক্স
কেমন আছো কোথায় লিরিক্স
কেমন আছো তুমি কবিতা
কেমন আছো তুমি লিরিক্স
কোথা থেকে তুমি এলে
সুরা আয়াতুল কুরসি বাংলা
সুরা আয়াতুল কুরসি বাংলা
4 thoughts on “আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ মাওলানা দীদার মাহদী”
4 thoughts on “আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ মাওলানা দীদার মাহদী”
Comments are closed.