জীবন সমস্যার সমাধানে আল কুরআন এর ভূমিকা
জীবন সমস্যার সমাধানে আল কুরআন এর ভূমিকা
সুপ্রিয় পাঠক! আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ আশা করছি ভাল ও সুস্থ আছেন ৷ আজ আমরা কথা বলবো জীবন সমস্যার সমাধানে আল কোরআনের ভূমিকা সম্পর্কে ৷
একজন মানুষের জীবনে অনেকগুলো সেক্টর রয়েছে ৷ প্রতিটি সেক্টরে মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হয় ৷ তার অনেক প্রশ্ন ৷ অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তাকে এগিয়ে চলতে হয় ৷
কোরআন কি তার প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করে? তার ব্যক্তি জীবন ৷ পারিবারিক জীবন ৷ সামাজিক জীবন ৷ রাজনৈতিক জীবন ৷ ধর্মীয় জীবন ৷ রাষ্ট্রীয় জীবন ৷ অর্থনৈতিক জীবন ৷ আন্তর্জাতিক জীবন ৷ সামরিক জীবন ৷ এগুলো সম্পর্কে কি আলোচনা করে? আজ আমরা বিস্তারিত জানব ইনশাআল্লাহ ৷
আল কুরআন মানবজাতির জীবন সমস্যার সমাধান ও তাদের হেদায়াতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। কুরআনী নীতিমালা অনুসরণ করলে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে মানবকল্যাণ সাধন হবে।
জীবন সমস্যার সমাধানে আল কুরআন
ব্যক্তিগত জীবনে আল কুরআন :
আল কুরআন ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় বিধানাবলি প্রদান করেছে। ইসলাম ব্যক্তিকে সার্বিক আচারআচরণ এমনকি জীবনের জন্য প্রয়ােজনীয় অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের মূলনীতি পর্যন্ত বাতলে দিয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে
.
كل نفس بما كسبت رهينة
পারিবারিক জীবনে আল কুরআন:
সামাজিক জীবনের প্রাথমিক সংঘ পরিবার। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভেতর পারস্পরিক সম্প্রীতি, সহানুভূতি ও হৃদ্যতা স্থাপন অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিতামাতা, স্বামী-স্ত্রী পুত্র-কন্যা, ভাইবােন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সমন্বয়ে পরিবার গঠিত হয়ে থাকে। মহাগ্রন্থ আল কুরআন প্রতিটি সদস্যদের জন্য স্ব স্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণপূর্বক ঘােষণা করেছে-
অথাৎ, তুমি আত্মীয়স্বজনদের প্রত্যেককে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও।
সামাজিক জীবনে আল কুরআন :
মহাগ্রন্থ আল কুরআন সামাজিক সমস্যার
পরিপূর্ণ সমাধান পেশ করেছে। সুষ্ঠু শাস্তিময় সমাজ জীবনের পরিগঠনে অনাচার, অত্যাচার, শােষণ, নির্যাতন, ঝগড়াবিবাদসহ সব ধরনের অস কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য কুরআন কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।
সকলের প্রতি ইনসাফ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়া হয়েছে।’
রাষ্ট্রীয় জীবনে আল কুরআন :
রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যাসমূহ সমাধানকল্পে কুরআনের নির্দেশনা বিশ্ববাসীর নিকট চিরকাঙ্ক্ষিত ৷ আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থার চমৎকার ব্যাখ্যা বিধৃত হয়ে আছে। আল্লাহ রাজাধিরাজ।
সুতরাং সর্বত্র তাঁরই বিধান চল
আল কুরআনের বাণী-জমিন যার, আইন চলবে তার ৷
আন্তর্জাতিক জীবনে আল কুরআন :
আন্তর্জাতিক জীবনে শান্তিসুখ নির্মাণ করে বিভিন্ন দেশ, রাষ্ট্র ও জাতির পারস্পরিক সহযােগিতা, সহানুভূতি ও শান্তির সহাবস্থানের ওপর।
আরো পড়ুন – রোগ মুক্তির দোয়া
কুরআন মানুষকে জীবনের সর্বত্র পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা মানবপ্রেমের নীতি অনুসরণ করতে বলেছে। সুতরাং ইসলামের এ আন্তর্জাতিক জীবনবােধ অনুসরণ করলে কোনাে সমস্যা থাকতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির জন্য আল্লাহ তায়ালা ঘােষণা করেন ৷
অর্থনৈতিক জীবনে আল কুরআন :
আল কুরআন বিশ্বমানবকে একটি শোষণহীন
প্রগতিশীল সুষম অর্থব্যবস্থা উপহার দিয়েছে। যাকাত, ওশর, খারাজ, ফাই, গনীমতসহ, সদকা, জিযিয়া প্রভৃতি কুরআনী অর্থনীতির মূলভিত্তি। সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থাকে হারাম আর ব্যবসায়বাণিজ্যকে হালাল ঘােষণা করা হয়েছে।
অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ, আহরণ ও আত্মসাৎ হারাম করা হয়েছে।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনে আল কুরআন :
মানবজাতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনমান
উন্নয়নেওসুষ্ঠু প্রগতিশীল ব্যবস্থা প্রদান করেছে। তাই ইসলাম প্রত্যেক
নরনারীর জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে।
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনে আল কুরআন :
মানুষ কেবলই দেহসর্বস্ব জীব নয়; বরং
মানুষের রয়েছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবন। আল কুরআন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনের সমূহ সমস্যাবলির সঠিক সমাধান দান করেছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা – বলেন- অর্থাৎ আমি কুরআনে যা নাযিল করেছি তা মুমিনদের জন্য সকল সমস্যার সমাধান, চিকিৎসা,
নিরাময় এবং রহমতস্বরূপ।
অন্ত জ্ঞানের ভার হিসেবে আল কুরআন :
আল কুরআন অফুরন্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার।
কেননা মানুষের চিন্তার খােরাক ও গবেষণার বিষয়বস্তু এ অমূল্য গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে।
চৌদ্দশ বছর পরও মানুষ এ মহাগ্রন্থে নতুন জ্ঞানের সন্ধান পেয়ে থাকে।
বিশ্বশান্তির একমাত্র রক্ষাকবচ কুরআন :
সমগ্র বিশ্ব আজ অশান্তির বহ্নিশিখায় জ্বলছে। একমাত্র পবিত্র কুরআনকেই জীবন পথের আলােকবর্তিকা হিসেবে গ্রহণ করলে পৃথিবী থেকে সকল প্রকার অশান্তি চিরতরে দূর হয়ে যেতে পারে।
বস্তুত আল কুরআনই হলো, বিশ্বশান্তির একমাত্র রক্ষাকবচ।
কুরআন সর্বজনীন জীবনব্যবস্থা :
আল কুরআন মুসলিম উম্মাহর সর্বজনীন জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের এমন কোনাে দিক নেই, যার সুষ্ঠু সমাধান আল কুরআনে সুচারুরূপে বর্ণিত হয় নি।
উপসংহার :
কুরআন মাজীদ মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যার সঠিক সমাধান ৷ মানব জাতির উদ্দেশ্যে বিশ্বজনীন ও সামগ্রিক কল্যাণকর এক জীবনব্যবস্থা উপস্থাপন করেছে। আল কুরআনই জীবন সমস্যার একমাত্র সমাধান।
আমাদেরকে কুরআনের কাছে ফিরে যেতে হবে ৷ বিশ্ব নবী বলেছেন, যতদিন তোমরা পবিত্র কোরআন ও আমার সুন্নাহ আঁকড়ে ধরবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না ৷ লাঞ্ছিত হবে না ৷ আজ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ কোরআন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তারা লাঞ্ছিত ৷
অপদস্ত ও অপমানিত হচ্ছে ৷ দেশে দেশে নির্যাতিত হচ্ছে ৷ আমরা যদি পবিত্র কুরআনের প্রতিটি বাণীকে, প্রতিটি বিধানকে আঁকড়ে ধরতে পারি ৷ তবেই বিশ্ব থেকে অশান্তি দূর হয়ে শান্তি ও সুখের সমাজ বিনির্মাণ হবে ৷ মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি, রাহাজানি, হত্যা-সন্ত্রাস মাস্তানি সব দূর করতে পারে একমাত্র কুরআনী বিধান ৷
সুতরাং আসুন আমরা পবিত্র কোরআনের কাছে ফিরে যাই ৷ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের প্রতিটি হুকুম-আহকাম বিধি-বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন ৷ আমিন ৷
- Advertisement -