দাম্পত্যে জীবনের গুপ্তধন | শরিফ আহমাদ | শীর্ষবার্তা

— শরিফ আহমাদ |

পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম আলাইহিস সালাম ৷ পৃথিবীর প্রথম মানুষের জীবন সঙ্গিনী হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম ৷ দুজন মিলেই গড়েছেন বিশাল পৃথিবী ৷ বাস্তবেই নারী-পুরুষ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ৷ দুজন মিলেই সাজে একটি পরিবার। পরিবার থেকে পর্যাক্রমে সমাজ এবং রাষ্ট্র ৷ একটি পরিবার আবাদ করতে উভয়েরই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে। আর তাই উভয়ের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট অধিকার ও মর্যাদা ৷ দাম্পত্য জীবনকে আবেগঘন, মধুময় করতে হৃদয়-নিংড়ানো ভালবাসা সর্বাগ্রে প্রয়োজন ৷ শুধু আইনগত ব্যবস্থা কিংবা শাসন দিয়ে জীবন সুখী হয় না ৷ কখনো হতে পারে না। নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করলে সহজেই বুঝে আসবে ৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা তোমাদের পোষাক আর তোমরা তাদের পোষাক। আয়াতটির তাৎপর্য ব্যাপক। পোষাক শরীরে মিশে থাকে। পোষাক শোভা। পোষাক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করে। পোষাকে রয়েছে ব্যক্তিত্বের বিকাশ। সবগুলো ব্যাপারেই উভয়ের মধ্যে তুলনীয়। দাম্পত্যে জীবন সফল করতে নারী-পুরুষ সবাই চায় ৷ কিন্তু যথাসময়ে সঠিক গাইডলাইন পায় না ৷ তাই এ বিষয়ক কিছু টিপস জেনে রাখা আবশ্যক ৷ নিম্নে কয়েকটি মূল পয়েন্ট বর্ণনা করা হলো—

১। স্বামী-স্ত্রী বন্ধুত্ব স্থাপন করা :
দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই দুজন মানুষের মধ্যে বন্ধুভাবাপন্ন মানসিকতা তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন অচেনা-অজানা মানুষ বন্ধু হলে পরস্পরকে বুঝবে ৷ আর একজন বন্ধুর কাছেই মানুষ তার ভালো-মন্দ লাগা, ভয়, অভিমান, প্রত্যাশার কথা, সমস্যার কথা নির্দ্বিধায় শেয়ার করে সমাধানের পথ পায় ৷

২। সঙ্গীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা:
পরস্পরকে সম্মান করা ৷ মিষ্টি মধুর নামে ডাকা ৷ কেননা অধিকাংশ মতভেদ সৃষ্টি হয় অসম্মানের কারণে ৷ সুষ্ঠ সমাধান না হলে বাড়তে বাড়তে বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে দেখা যায়। মনে রাখা উচিত শ্রদ্ধাবোধ যে কোন সম্পর্ককে আরও নতুন মাত্রা দেয়। কখনো এমন কোন কথা না বলা বা কাজ না করা যা অন্য ব্যক্তি মানুষটার আত্মসম্মানে আঘাত করে। প্রত্যেক মানুষেরই নিজের কাছে তার আত্মসম্মান বোধ রয়েছে।

৩। মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া:
সর্বদা নিজের মতামত কে জাহির করা এবং তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকা ৷ প্রত্যেক মানুষেরই কিছু ইচ্ছে বা মতামত থাকতে পারে। মাঝেমাঝে পরিস্থিতি ভেদে অন্যের মতামত শোনা এবং মূল্যায়ন করা ৷ কোনকোন ক্ষেত্রে আপনার মতামত থেকে অপর মানুষটির মতামত বেশি উত্তম এবং যৌক্তিক হতে পারে ।

৪ । সন্দেহ সমস্যার সমাধান করা:
সন্দেহ করা ক্যান্সার থেকেও ভয়ানক রোগ। যা একবার মন কে গ্রাস করলে যে কোন সুন্দর কিছুকে মুহূর্তেই ধূ-ধূ মরুভূমি করে দিতে পারে।
সন্দেহ নামক শব্দটিকে সিলগালা করে রাখার চেষ্টা করা ৷ আর যদি সন্দেহ জীবনে প্রবেশ করেই ফেলে তবে দ্রুত উদ্যোগী হয়ে সমাধান করা ৷ সন্দেহকে মনের ঘরে জায়গা না দেওয়া ৷

৫। Sacrifice করার জন্য প্রস্তুত থাকা:
দাম্পত্য জীবনে সবকিছু মন মত হবে বা সাপোর্টে থাকবে এমনটি সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে জেদ ধরে বসে না থেকে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া ৷নিজের ইচ্ছে বা মতামত কে মাঝেমাঝে sacrifice করা ৷ ফলাফল স্বরূপ যে কোন সমস্যার সমাধান হবে, সেইসাথে অন্যকারোর মধ্যে sacrifice করার মানসিকতা তৈরি হবে।

৬। বিশ্বাসের বন্ধন মজবুত করা:
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়াটা নির্ভর করে বিশ্বাস কতটা শক্ত তার অপর। বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা যায় না ৷ বিশ্বাস ছাড়া বছরের পর বছর একই ছাদের নিচে বসবাস করার পরও দেখা যায় দুজনার মধ্যে প্রচুর বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে। কিন্তু তারা সংসার করছে কেবল সম্মানহানি হবে বলে এবং বিশৃঙ্খলার ভয়ে অথবা ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। এভাবে কি আর সুখে সংসার করা সম্ভব! এজন্য নিজেদের বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিশ্বাসের ভিত্তি মজবুত করে নেওয়া ৷

৭। ভুল স্বীকারের মানসিকতা রাখা:
মানুষ মাত্রই ভুল হবে। সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এমন কখনো মাথায় গেঁথে রাখবেন না যে, আমি কখনো ভুল করতে পারি না। ভুল বোঝাবুঝির দেয়াল বাড়তে দেবেন না। নিজের ভুল বুঝতে পারার সাথে সাথেই তা স্বীকার করে ফেলুন এবং দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলুন।

৮। সারপ্রাইজ দেবার চেষ্টা করা:
দাম্পত্যজীবন মধুর করার ক্ষেত্রে সারপ্রাইজ ম্যাজিকের মত কাজে দেবে।
যেমনঃ চিরকুটে কোন রোম্যান্টিক বাক্য, বা চিঠি, অথবা গোলাপ, চক্লেট অথবা সঙ্গীর পছন্দের খাবার রান্না, অন্যান্য জিনিস উপহার দিয়ে চমকে দেওয়া ৷
বিশেষ দিনক্ষণ বা মূহূর্ত মনে রেখেও চমক দেওয়া যায় ৷ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ডায়েরী ব্যবহার করা ৷

৯। আনন্দ- উৎসব করা:
ছোট ছোট মুহূর্ত উৎযাপন করা ৷ যেমনঃ বর্ষার কোন দিনে সঙ্গীকে হাতে একগুচ্ছ কদমফুল দিয়ে তার হাত ধরে হাটা ৷ অথবা কোন জোছনা ভরা রাতে ছাদে/ আঙিনায় বসে চাঁদ দেখে গল্পগুজব করা ৷ মজার জোকস শোনানো ৷ এতে সম্পর্কে নতুন প্রানের সঞ্চার হবে।
এসব উপায় গুলোর যথাযথ প্রয়োগ যদি কেউ দাম্পত্যজীবনে করতে পারে তবে তার থেকে সুখী দম্পতি আর কেউ হবে না এটাই নিশ্চিত ৷ কারো মনে সন্দেহ থাকলে পয়েন্টগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন ৷

আলেম, কবি ও আলোচক

Leave a Comment