বিপদ থেকে মুক্তির উপায় কী?|দীদার মাহদী |শীর্ষবার্তা ডটকম
বিপদ থেকে মুক্তির উপায় কী?
দীদার মাহদী
পৃথিবী ঘুরে এমনও মানুষ কি পাওয়া যাবে, যার জীবনে অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই? নেই কোনো কষ্ট ৷ দুঃখ ৷ বেদনা ৷ হতাশা ৷ সমস্যা ৷ পাওয়া যাবে না ৷ যাদের আমরা সফল দেখি ৷ বাহ্য দৃষ্টিতে মনে করি লোকটি পারফেক্ট ৷ কোনো মুশকিলে নাই ৷ তার খুব গভীরে গিয়ে দেখুন ৷ নানা জটিলতায় জর্জরিত সে ৷ উপরের হাসিমুখটি তা আড়াল করে রেখেছে ৷ কিন্তু আমরা নিজের কষ্টটুকুই দেখি ৷ আর খেই হারিয়ে অবান্তর কথাও বলে ফেলি ৷ এবং তা মুখফুটেই ৷
“আল্লাহ্ বারবার আমাকে এত সমস্যায় ফেলছেন কেন? ঘুরেফিরে আমাকেই দেখেন ৷ এত পরীক্ষা করছেন কেন আমাকে? আমি কি আল্লাহর খুবই অপছন্দের কেউ?” এমন আরো কথা ৷
বিপদ কেনো আসে? আমাদের যাচাই করার জন্য ৷
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদ আসে না ৷ এটাই মহাসত্য কথা ৷ কুরআনের ভাষ্যের দিকে লক্ষ্য করুন ৷ কুরআন বলছে,
مَاۤ اَصَابَ مِنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ نَّبۡرَاَہَا ؕ اِنَّ ذٰلِکَ عَلَی اللّٰہِ یَسِیۡرٌ ﴿ۚۖ۲۲﴾
যমীনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
[সূরা হাদীদ, আয়াত-২২]
আল্লাহর এটা কৌশল ৷ তিনি বিপদে ফেলে আমাদের যাচাই করে নেন ৷ টি-ব্যাগের কথাই ধরুন ৷ ওটার ভেতরে কী আছে তা গরম পানিতে ছাড়লেই বেরিয়ে আসবে ৷ বিপদে বন্ধুর পরিচয় বলে একটা কথা আছে না? আমাদের নানাবিধ সমস্যায় ফেলে মহান রব পরীক্ষা করতে চান ৷ তিনি দেখে নিতে চান বিপদে পড়ে মানুষ অধৈর্য হয় কিনা ৷ ভরসা হারিয়ে ফেলে কিনা ৷ হতাশ হয়ে অকৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত হয় কিনা ৷
আমাদের সংশোধনের জন্যও বিপদ আসে ৷
প্রাক্টিক্যাল শিক্ষাটা মানুষ মনে রাখে বেশ ৷ ছোট্ট শিশুর কথাই ধরুন ৷ তাকে আগুনের কাছে যেতে নিষেধ করা হলো ৷ সে আগুনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বোঝে না ৷ তাকে যদিও বলা হলো আগুন পুড়িয়ে দেয় ৷ কিন্তু অসাবধানতাবশত একবার আগুনে তার হাত পুড়লে সে পুরো সতর্ক হয়ে যাবে ৷ এবার আগুনের মত অন্য কিছু দেখলেও সে সাবধান হবে ৷ এটা হচ্ছে সরাসরি শিক্ষা ৷ পবিত্র কুরআনে নজর দিই ৷ কুরআন বলছে,
وَ لَنُذِیۡقَنَّہُمۡ مِّنَ الۡعَذَابِ الۡاَدۡنٰی دُوۡنَ الۡعَذَابِ الۡاَکۡبَرِ لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ ﴿۲۱﴾
আর অবশ্যই আমি তাদেরকে গুরুতর আযাবের পূর্বে লঘু আযাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।
[সূরা সাজদা, আয়াত-২১]
আমাদের ওপর ছোটোখাটো বিপদ হলো সতর্কতা ৷ বড় বিপদ থেকে বাঁচার জন্য ৷ আমরা প্রায়শই সুস্বাস্থ্য, অর্থ ও সম্পর্ককে তুচ্ছ করে দেখি ৷ কিন্তু এর একটাকে হারিয়ে ফেললেই টের পাই কী হারিয়েছি ৷ বাবা-মা থাকতে তার কদর আমরা করি না ৷ তাদের কেউ চলে গেলেই বুঝি এ বন্ধনটা কত গুরুত্বপূর্ণ ৷
বিপদ আপনাকে বাঁচিয়েও দেয় ৷
অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই ৷ বিপদ তো মুসিবত ৷ তা আবার বাঁচায় কী করে ৷ বাস্তব গল্প দিয়েই বুঝাই ৷ আপনি বাস স্টপিজে গিয়ে দেখলেন বাসটা চলে গেলো ৷ আরেকটা ছাড়বে ঘণ্টাখানেক পর ৷ খুব বিরক্ত হলেন ৷ অথবা আপনার চাকরিটা চলে গেলো ৷ খুবই হতাশ হলেন ৷ মাথার চুল ছেড়ার যোগাড় ৷ কিন্তু পরক্ষণেই যদি শুনতে পান, বাসটি এক্সিড্যান্ট করে সব যাত্রীই পরপারের যাত্রী হয়েছে ৷ অথবা আপনার চাকরি করা কোম্পানীটি দেউলিয়া হয়ে গেছে ৷ বা আপনার অফিসটিতে আগুন ধরে ধ্বসে পড়েছে ৷ এবার আপনি বলবেন, ‘আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন ৷’ এটাই বাস্তবতা ৷ আমরা ভবিষ্যত জানি না ৷ কিসে আমাদের কল্যাণ আর কিসে অকল্যাণ তা আল্লাহই জানেন ৷ সুতরাং হতাশ কেনো হোন?
মুক্তির উপায় কী? সহজ পন্থা ৷
আমাদের জীবনে যতই সমস্যা আসুক ৷ আসুক বিপদাপদ ৷ আমরা অধৈর্য হব না ৷ হা-হুতাশ করব না ৷ অকৃতজ্ঞতা পোষণ করব না ইন শা আল্লাহ ৷ সমস্যাগুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অনুগ্রহ ভাববো ইন শা আল্লাহ্। কেননা সমস্যার আড়ালে তো আল্লাহ আমাদের গাইড করছেন ৷ না হয় পরীক্ষা করছেন ৷ নতুবা আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করছেন ৷ নইলে আমাদের আরও বড় কোনো বিপদাপদ থেকে রক্ষা করছেন। আর না হয় আমাদের চরিত্রকে আরও নিখুঁত করে তুলছেন। যা হচ্ছে ৷সব তো আমাদের ভালোর জন্যই ৷ সম্পূর্ণ আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে ৷
- Advertisement -