শরীয়তপুরে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেন স্বামী
শরীয়তপুরে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেন স্বামী
মুহাঃআবু সুফিয়ান আল মাহমুদ
শরীয়তপুর সদর পৌরসভায় যৌতুক ও ঠুনকো অভিযোগে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। নির্যাতনের কারণে ওই গৃহবধূ দুচোখে দেখতে পারছেন না। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ওই গৃহবধূর বাবা তিনজনকে আসামী করে সদরের পালং মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আনিকা আক্তার (১৯) নামে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে তার বাবার বাড়ি থেকে ঢাকা শেরেবাংলা নগর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সদর পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের স্বর্ণঘোষ গ্রামের আবু তালেব খান ও ফাহিমা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে তিনি। তারা এক ভাই এক বোন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের হুগলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
থানায় অভিযোগ ও আনিকার পরিবার সূত্র জানায়, পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের হুগলি গ্রামের আলী আহাম্মদ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসেন মোল্লার (৩০) সঙ্গে অনিকা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর। সাদ্দাম ঢাকা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে অফিস সহায়ক হিসেবে মাষ্টার রুলে চাকরি করছেন।
বিয়ের পর থেকে যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাতে আনিকাকে মারধর করে আসছেন তাঁর স্বামী সাদ্দাম হোসেন, শশুর আলী আহম্মদ (৬০) ও শাশুড়ি রোকেয়া বেগম (৫০)। শেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সাদ্দামের ওই চাকরি নিয়মিত ও বাড়ি করবেন বলে আনিকাকে বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা আনতে বলেন তাঁর স্বামী, শশুর ও শাশুড়ি। আনিকা টাকা আনতে অস্বীকার করলে তাকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটান তাঁরা। একপর্যায়ে সাদ্দাম আনিকার চুলের মুঠি ধরে ওয়ালের সঙ্গে মাথা টাকাতে থাকেন। আনিকা অজ্ঞান হয়ে পরেন। জ্ঞান ফিরলে মাথার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। এরপর কাঁচি দিয়ে আনিকার মাথার চুল কেটে দেন সাদ্দাম। তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। আনিকা ভয়ে এ বিষয়ে বাব-মাকে কিছু বলেননি।
যতদিন যাচ্ছিল আনিকা চোখে ঝাপসা দেখছিলেন ও মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়। জানতে পেরে আনিকাকে তাঁর বাবা আবু তালেব খান উদ্ধার করেন। পরে আনিকাকে গত ৩ মার্চ গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আই হসপিটাল এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা শেরেবাংলা নগর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করাতে বলেন। পরীক্ষা করে পরেরদিন আনিকাকে পরিবার শরীয়তপুরের বাড়িতে নিয়ে আসে।
শুক্রবার (৫ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আনিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাকে এম্বুলেন্সে করে আবার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন দু’চোখে দেখতে পারছেন না আনিকা। তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছেন।
আনিকার মা ফাহিমা বেগম বলেন, সাদ্দাম ও তাঁর মা-বাবা মিলে আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। মেয়ের মাথা ওয়ালের সঙ্গে টাক দিছে। আমার মেয়ে এখন চোখে দেখেনা। মেয়ের মাথার চুল কেটে দিছে। শরীর ও মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি। মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। ওরা আমার মেয়ের অবস্থা এরকম করেছে। মেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি এর বিচার চাই।
আনিকার বাবা আবু তালেব খান বলেন, চাকরি ও বাড়ি করবেন বলে সাদ্দামও তাঁর পরিবার আমার মেয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চায়। মেয়ে বলছে, বাবা গরিব সামান্য ছোট একটি দোকান করে। এতো টাকা পাবে কোথায়? বলার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের স্বামী সাদ্দাম, শশুর আলী আহম্মদ ও শাশুড়ি রোকেয়া আনিকাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে সাদ্দাম আনিকার চুলের মুঠি ধরে ওয়ালের সঙ্গে মাথা টাকাতে থাকেন। মেয়ে ভয়ে আমাদের কিছু বলেনি। মেয়ের মাথার সুন্দর চুলগুলোও কেটে ফেলেছে। জানতে পেরে উদ্ধার করে চিকিৎসা করাচ্ছি। ওরা দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছে।
এদিকে, নির্যাতনের বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন মোল্লা মুঠোফোনে বলেন, আমি কেন আমার স্ত্রীকে মারধর করবো? কেনইবা চুল কাটবো! আমি শুনেছি আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাই শশুরের মোবাইলে বার বার ফোন দিচ্ছি, তিনি ধরছেন না।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আসলাম উদ্দিন বলেন, গৃহবধূর নির্যাতনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
- Advertisement -