সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য | এসএম মেহেদী হাসান | শীর্ষবার্তা

0 172

মুসলিম পরিবারে স্বামী – স্ত্রীর প্রীতিময় পবিত্র পারিবারিক পরিমন্ডলে শিশুর জন্ম হয় এবং পিতা -মাতা, আত্মীয় – স্বজনের হ্নদয় নিংড়ানো আদর স্নেহ ও মায়া মমতায় লালিত হয়ে সন্তান বড় হয়ে আদব – কায়দা শিখে উন্নত শিক্ষা দীক্ষায় গড়ে ওঠে। পিতা – মাতার বিশেষ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা সংক্ষিপ্ত ভাবে দেয়া হলো।

√ সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য ৩. নেক সন্তানের দোয়া। (মুসলিম, মিশকাত)

√ সন্তানের ভরণ পোষণের সকল দায়িত্ব পিতার উপরই বর্তায়। দু’ বছর পর্যন্ত সন্তান মায়ের দুধ পান করে। এ সময় সন্তানের মাকে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ভরণ- পোষণের ব্যবস্থা করবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন
وَ عَلَى الْمَوْلُوْدِ لَهٗ رِزْقُهُنَّ وَ كِسْوَتُهُنَّ…
তাদের আহার ও পোষাকের দায়িত্ব পিতার উপর।

√ কানে আযান দেয়া, সন্তান দুনিয়াতে আসার পর তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বযে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার কোন ক্ষতি না করতে পারে।
আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান ইবনে আলীর কানে আযান দিতে দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ)

√ উত্তম নাম রাখা যেমন_আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ইত্যাদি। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। বালিকাদের জন্য উত্তম হলো আমাতুল্লাহ, আমাতুর রহমান ইত্যাদি।

√ আকিকা করা_শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। সুতরাং তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে, মাথার চুল মুণ্ডন করবে ও নাম রাখবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করবে। (বায়হাকি)

√ কুরআন শিক্ষা দান, ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরয। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান দাও।

√ শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া সন্তানকে নম্রতা, ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেছেন, পিতা স্বীয় সন্তানকে শিষ্টাচার অপেক্ষা উত্তম কিছু শিক্ষা দিতে পারে না। (তিরমিজি, মিশকাত)

√ একাধিক সন্তান থাকলে বিশেষ করে পুত্র ও কন্যা থাকলে স্নেহ ও ভালবাসা এবং আহার, পোষাকের সমতা বজায় রাখা পিতা – মাতার জন্য অপরিহার্য। কন্যা সন্তানের উপর পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য না দেয়া।

√ শিশু যখন যৌবনে পদার্পণ করে এবং সে কন্যা সন্তান হয়, তাহলে উপযুক্ত পাত্রের সাথে বিবাহ দেয়া। আর যদি পুত্র হয় এবং সে সংসারে সকল দয়- দায়িত্ব বহন করতে সক্ষম হয়, তাহলে তাকেও বিবাহ দেয়া কর্তব্য।

√ দৈহিক কার্যকলাপের ন্যায় এ সময় মায়ের মানসিক কার্যকলাপের প্রভাবও সন্তানের উপর প্রতিফলিত হয়। সে জন্য অত্যন্ত প্রতিকুল অবস্থাও নিজেকে সংযত রেখে ঋগড়া- বিবাদ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকা মায়ের জন্য অপরিহার্য।

√ যখন শিশু শব্দ উচ্চারণ করতে আরম্ভ করে, তখন সর্ব প্রথম কালিমা তাইয়েবা ও কালেমা শাহাদাত শিক্ষা দেয়া। এ সময় তাকে আদব – কায়দা আচার – ব্যবহার ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া এবং সে যেন ভবিষ্যৎ জীবনে অনুসরণ করতে পারে।

√ দুর্ভাগ্যবশত কোনো কন্যা যদি স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা হয় অথবা বিধবা হয়ে যায় তাহলে তাকে আশ্রয় দেয়া এবং ভরণ পোষণ করানো অপরিহার্য।

√ সন্তানকে দ্বীনি পথের শিক্ষা দেয়া পিতা – মাতার আবশ্যিক দায়িত্ব। রাসূল সাঃ বলেছেন _ তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছরের সময় নামাজের জন্য আদেশ দেও এবং দশ বছরের সময় (প্রয়োজনে) প্রহার করো।

√ মায়ের বিশেষ দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানদের সঠিক ভাবে তত্ত্ববধান করা। কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন _ নারী তার স্বামীর পরিজনের এবং সন্তানের অভিভাবিকা। স্ত্রীরও দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সহীহ্ বোখারী

√ সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা পিতা- মাতার অন্যতম কর্তব্য। সন্তানদের আদর্শ নাগরিক এবং দেশ প্রেমিক হিসেবে পিতা- মাতার সর্বাগ্রে এগিয়ে আসা উচিত।

এস এম মেহেদী হাসান
কামিল প্রথম বর্ষ
ডামুড্যা হামিয়া কামিল মাদ্রাসা
ডামুড্যা, শরীয়তপুর

- Advertisement -