স্বামী স্ত্রীর মহব্বত লাভের আমল মাওলানা শরিফ আহমাদ

স্বামী স্ত্রীর মহব্বত লাভের আমল ।

 

 

ভালোবাসা মানুষের মৌলিক এবং স্বভাবজাত একটি চাহিদা। বৈবাহিক জীবনে এই ভালোবাসার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয় । স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে পাগলের মত ভালবাসতে থাকে । কিন্তু…..

সময়ের পরিবর্তনে বিভিন্ন কারণে সেই ভালোবাসা কমতে থাকে। বাড়তে থাকে দূরত্ব। দেখা দেয় মনমালিন্য। তখন সংসার সামলানো বড় কঠিন হয়ে যায় । দিশেহারা হয়ে অনেকে সমাধানের পথ খোঁজেন।কেউ খুঁজেন মহব্বতের দোয়া-দরুদ,কিংবা আমল ।

 

হ্যাঁ এখানে সেই বিষয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। পূর্ণ বিশ্বাস আর নিষ্ঠার সঙ্গে আমলগুলো‌ করুন।আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। উত্তম ফলাফল পাবেন ইনশাআল্লাহ।

 

 

স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার উপায়:

 

কোন স্ত্রী লোকের প্রতি যদি তার স্বামী অসন্তুষ্ট হয় , তাহলে নিম্নলিখিত সূরা বাকারার আয়াতটি পড়ে মিষ্টান্ন দ্রব্যের দম করবেন এবং স্বামীকে তা খাওয়াবেন । স্বামীর অসন্তুষ্টি দূর হয়ে যাবে । পাগলের মত ভালবাসবে ইনশাআল্লাহ।

وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اَنۡدَادًا یُّحِبُّوۡنَہُمۡ کَحُبِّ اللّٰہِ ؕ وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰہِ ؕ وَ لَوۡ یَرَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اِذۡ یَرَوۡنَ الۡعَذَابَ ۙ اَنَّ الۡقُوَّۃَ لِلّٰہِ جَمِیۡعًا ۙ وَّاَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعَذَابِ

(আল বাকারা – ১৬৫)

 

 

স্বামী স্ত্রীর মিল মহব্বতের তদবির:

 

চান্দ্রমাসের প্রথম বৃহস্পতিবারে নিম্নে বর্ণিত আয়াত তিনটি লিখে বালিশের ভিতর রাখবেন । অতঃপর সেই বালিশ স্বামীর অথবা স্ত্রী যার ভালোবাসা কাম্য তার মাথার নিচে রাখবেন । ইচ্ছুক ব্যাক্তি তাতে মাথা রাখলে ও সমস্যা নেই । স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ‌। এটা খুবই উপকারী ও পরীক্ষিত একটি আমল ।

১ নং আয়াত:

وَاِنۡ خِفۡتُمۡ شِقَاقَ بَیۡنِہِمَا فَابۡعَثُوۡا حَکَمًا مِّنۡ اَہۡلِہٖ وَحَکَمًا مِّنۡ اَہۡلِہَا ۚ اِنۡ یُّرِیۡدَاۤ اِصۡلَاحًا یُّوَفِّقِ اللّٰہُ بَیۡنَہُمَا ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیۡمًا خَبِیۡرًا

 

অনুবাদ: যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।(আন নিসা – ৩৫)

২ নং আয়াত:

یُّصۡلِحۡ لَکُمۡ اَعۡمَالَکُمۡ وَیَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَمَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِیۡمًا

 

অনুবাদ: তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (আল আহ্‌যাব – ৭১)

৩ নং আয়াত:

عَسَی اللّٰہُ اَنۡ یَّجۡعَلَ بَیۡنَکُمۡ وَبَیۡنَ الَّذِیۡنَ عَادَیۡتُمۡ مِّنۡہُمۡ مَّوَدَّۃً ؕ وَاللّٰہُ قَدِیۡرٌ ؕ وَاللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

 

অনুবাদ: যারা তোমাদের শত্রু আল্লাহ তাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সম্ভবতঃ বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সবই করতে পারেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।(আল মুম্‌তাহিনাহ্‌ – ৭)

 

স্বামী স্ত্রীর মহব্বত লাভের তাবিজ:

 

 

যদি স্ত্রী স্বামীর অথবা স্বামী স্ত্রীর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় বা ভালোবাসা পেতে চায়, তাহলে হরিণের পাতলা চামড়ায় মেশক ,জাফরান‌ ও গোলাপ পানি দ্বারা নিচের আয়াতটি লিখে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছে রাখবেন। ইনশাআল্লাহ উদ্দিষ্ট ব্যক্তি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে ।

 

عَسَى اللّٰهُ اَنْ یَّجْعَلَ بَیْنَكُمْ وَ بَیْنَ الَّذِیْنَ عَادَیْتُمْ مِّنْهُمْ مَّوَدَّةً١ؕ وَ اللّٰهُ قَدِیْرٌ١ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ. وصلى الله تعالى على خير خلقه سيدنا محمد واله واصحابه اجمعين .

 

অনুবাদ: অসম্ভব নয় যে, আজ তোমরা যাদের শত্রু বানিয়ে নিয়েছো আল্লাহ তা’আলা তাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন এক সময় বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ্‌ অত্যন্ত ক্ষমতাবান। আর তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়।(মুমতাহিনাহ:আয়াত: ৭)

 

 

যে আমলে স্বামী পাগলের মত ভালবাসবে :

 

কোন মিষ্টি দ্রব্যে (بدوح ) বাদুহুন শব্দ লিখে যাকে খাওয়াবেন সে ওই ব্যক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে যাবে এবং তাকে মহব্বত করতে শুরু করবে । আর যদি ওই শব্দটি চাকুর উপর লিখে সেই চাকু দিয়ে কোন জিনিস কেটে সেটি কাউকে খাওয়ানো যায় ,তাহলে সেটাকে মহব্বত করতে শুরু করবে ।

 

 

স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার আমল :

স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার আমল
স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার আমল

কোন স্বামী যদি তার স্ত্রী ভালোবাসা পেতে আগ্রহী হয় । কোন কারনে স্ত্রী যদি স্বামীকে ভালো না বাসে কিংবা স্বামীর প্রতি নিরাশক্ত হয়ে পড়ে , তাহলে সূরা ইউসুফ লিখে স্বামী বাহুতে বাধবেন ।‌ স্ত্রী অন্তর থেকে মহব্বত করবে ইনশাআল্লাহ ।

 

 

ইয়া ওয়াদুদু অর্থ কি?

 

ইয়া ওয়াদুদু অর্থ: হে অত্যন্ত স্নেহময় এবং প্রেমময়। অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি অত্যন্ত স্নেহময় এবং প্রেমময়।

 

আল ওয়াদুদু নামের ফজিলত:

আল ওয়াদুদু (الودود ) আল্লাহর এই পবিত্র সিফাতি নামটি এক হাজার বার পাঠ করে কোন খাদ্য দ্রব্যের দম করে যদি স্ত্রীর সঙ্গে একসাথে খাওয়া হয় ,তবে স্ত্রী তাকে প্রাণাধিক ভালবাসবে এবং সর্বদা তার অনুগত থাকবে ।

 

 

স্বামী স্ত্রীর মহব্বত লাভের আমল

স্বামী স্ত্রীর মহব্বত লাভের আমল
স্বামী স্ত্রীর মহব্বত লাভের আমল

আল কাবিরু ( الكبير ) আল্লাহর এই গুণবাচক নামটি এই বেশি বেশি পাঠ করলে ইলম হেকমত ও প্রজ্ঞা হাসিল হবে । এই পবিত্র নামটি পাঠ করে কোন খাদ্যদ্রব্যে দম করে যদি স্বামী-স্ত্রীকে খাওয়ানো হয়, তবে তাদের মধ্যে গভীর প্রণয় ও হৃদ্যতা পয়দা হবে ।

 

 

স্ত্রীর মহব্বত লাভের আমল:

 

আল মুগনি ( المغني ) মহান আল্লাহর এই পবিত্র নামটি এক হাজার বার পাঠ করলে প্রচুর সম্পদের মালিক হবে । স্ত্রী সহবাসের সময় মনে মনে পাঠ করলে স্ত্রী তাকে নিবিড় ভাবে ভালবাসবে ।

 

স্বামীকে সন্তুষ্ট করার তদবির

 

কোন কারনে স্বামী যদি স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হয় এবং স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা কমে যায় তবে নিজের আয়াতটি পাঠ করে কোন মিষ্টি দ্রব্যের উপর ফুঁক দিয়ে তার স্বামীকে খাওয়াবেন । এমন ভাবে খাওয়াবেন যেন স্বামী টের না পায় যে, তাকে তদবীর করা হচ্ছে ! এই আমলের ফলে ইনশাআল্লাহ স্বামীর আগের মনোভাব পরিবর্তন হয়ে স্ত্রীকে ভালবাসতে শুরু করবে ।

وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اَنۡدَادًا یُّحِبُّوۡنَہُمۡ کَحُبِّ اللّٰہِ ؕ وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰہِ ؕ وَ لَوۡ یَرَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اِذۡ یَرَوۡنَ الۡعَذَابَ ۙ اَنَّ الۡقُوَّۃَ لِلّٰہِ جَمِیۡعًا ۙ وَّاَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعَذَابِ

 

অনুবাদ:আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। (আল বাকারা – ১৬৫)

 

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধির আমল :

 

শুক্রবার অর্ধ রাতের পর নিচের আয়াতটি তিনবার তেলাওয়াত করবেন ।

فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَقُلۡ حَسۡبِیَ اللّٰہُ ۫٭ۖ  لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ؕ  عَلَیۡہِ تَوَکَّلۡتُ وَہُوَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِیۡمِ ٪

 

অনুবাদ: এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি। (আত তাওবাহ্ – ১২৯)

তারপর নিচের দোয়াটি পাঠ করবেন –

اللهم انت الرب حسبي من فلان بن فلانه و…… فلانة بنت فلانة اعطف قلبه او قلبها الي ذلله او ذللها الي .

বিশ্বের দ্রষ্টব্য : فلان بن فلان এর স্থানে যার মোহাব্বত প্রয়োজন তার নাম এবং তার মায়ের নাম উল্লেখ করবেন । এক্ষেত্রে পুরুষ হলে ( قلوبه ) আর মহিলা হলে (قلوبها ) বলবেন । মায়ের নাম জানা না থাকলে ابن حواء অথবা بنت حواء বলবেন। এই তদবিরটি অত্যন্ত পরীক্ষিত ।

 

স্বামী স্ত্রীর মহব্বত লাভের আমল

 

গ্রন্থনা: মাওলানা শরিফ আহমাদ

লেখক ও শিক্ষক