আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় মাওলানা শরিফ আহমাদ

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

 

মহান আল্লাহ সকলের স্রষ্টা । সবাই তার সৃষ্টি । সৃষ্টি হয়ে তার নৈকট্য লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করা সবার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত । অনেকে এই উদ্দেশ্য লালনও করে থাকেন । কিন্তু কিভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন তার সঠিক পদ্ধতি অনেকের জানা নেই । আবার অনেকের জানা থাকলেও আমল নেই । তাই আজ এই কলামে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে । যেন সকলে আমলের প্রতি মনোযোগী হতে পারেন।আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় ৷

 

পড়েছেন কি? ঘুমানোর আগের আমল 

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভের পূর্বশর্ত

 

আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের পূর্ব শর্ত হলো ঈমান আনা । ইসলামে ঈমানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি । ঈমানের বিষয়গুলো সংক্ষেপে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ঈমানে মুফাসসালের মধ্যে-

امَنْتُ بِاللهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرَسُوْلِه وَالْيَوْمِ الْاخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ

অনুবাদ: আমি ঈমান আল্লাহ তাআলার উপর , তার ফেরেশতাদের উপর ,আসমানী কিতাবসমূহের উপর , তার রাসুলগণেরর উপর , কেয়ামত দিবসের উপর , তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর , এবং মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর ‌।‌

 

ঈমান আনার পর ঈমানকে বৃদ্ধি করা, তাকওয়ার চেতনা জাগ্রত করে চলা প্রধান একটি কাজ । ঈমানদার হওয়া ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা কখনোই সম্ভব নয় ।

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়
আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে নামাজ

 

 

মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের প্রধান উপায় হল নামাজ আদায় করা। নামাজের সিজদার মাধ্যমে বান্দা খুব সহজে আল্লাহর নৈকট চলে যেতে পারে। এজন্য নামাজের সিজদারত অবস্থায় দোয়া কবুল হওয়ার কথাও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ( সুনানে কুবরা, হাদীস নং ১০৪৪৭)

পবিত্র কুরআনুল কারীমের ৮২ আয়াতে নামাজের কথা বলা হয়েছে । হাদীসের কিতাবে গুরুত্বপূর্ণভাবে উঠে এসেছেন নামাজের বর্ণনা । ফিকাহের কিতাবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে নামাজের মাসআলা। অতএব দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বিকল্প নেই । ফরজ নামাজের পাশাপাশি ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে । কুরআনুল কারীমের বর্ণনা–

اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِدُلُوۡکِ الشَّمۡسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیۡلِ وَقُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ ؕ اِنَّ قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ کَانَ مَشۡہُوۡدًا .

وَمِنَ الَّیۡلِ فَتَہَجَّدۡ بِہٖ نَافِلَۃً لَّکَ ٭ۖ عَسٰۤی اَنۡ یَّبۡعَثَکَ رَبُّکَ مَقَامًا مَّحۡمُوۡدًا

অনুবাদ:সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখোমুখি হয়। রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। ( তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন ) এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। (বনী-ইসরাঈল,৭৮–৭৯)

 

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে তাহাজ্জুদ

 

 

মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে তাহাজ্জুদের ভূমিকা অপরিসীম । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন । দৈনিক এ নামাজ পড়তে তিনি উম্মাতকে উৎসাহিত করেছেন । শুনিয়েছেন বহু ফজিলতের কথা ‌।

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : افضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم وافضل الصلاة بعد الفريضة صلوة الليل. رواه مسلم في كتاب الصيام.

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহরমের রোজা । আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হল তাহাজ্জুতের নামাজ। ( সহীহ মুসলিম ও নাসায়ী)

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: افضل الصلاة بعد المفروضة صلوة في جوف الليل .

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সমস্ত নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার নামাজ হলো রাতের গর্ভের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ । (সহীহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ )

عن ابي مالك الاشعري رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ان في الجنة غرفا يرا ظاهرها من باطنها وباطنهما من ظاهرها. اعد الله لمن اطعم الطعام وافشى السلام. وصلى بالليل والناس نيام .

হযরত আবু মালেক আশআরী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন জান্নাতে এমন কিছু সুন্দর কক্ষ আছে, যার ভেতর থেকে বার দেখা যায় আর বার থেকে ভেতর দেখা যায় । আল্লাহ তায়ালা সেগুলি ওইসব লোকদের জন্য তৈরি করেছেন যারা মেহমানদারি করে, বেশি বেশি সালাম করে এবং রাতের বেলায় নামাজ পড়ে যখন অন্য মানুষ ঘুমন্ত থাকে । (সহীহ ইবনে হিব্বান )

عن ابي امامة الباهلي رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: عليكم بقيام الليل فانه داب الصالحين قبلكم وهو قربه لكم الى ربكم ومغفرة للسيئات ومنهات عن الاثم .

হযরত আবু উমামা বাহিলি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন ,নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো । কেননা তাহাজ্জুদের নামাজ হল তোমাদের পূর্ববর্তী নেক লোকদের তারীকা এবং তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তোমাদের নৈকট্য লাভের উপায় আর তোমাদের গুনাহ মোচনকারী ও গুনাহ থেকে বাধা দানকারী । ( মুস্তাদরাক হাকেম)

 

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে নফল নামাজ

 

 

আগে যত আল্লাহর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন কিংবা দুনিয়া জুড়ে বিখ্যাত হয়েছেন তারা সকলেই নিয়মিত তাহাজ্জুদের পাশাপাশি অন্য সকল নফলের প্রতি যত্নবান ছিলেন । কেননা নফলের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ । এ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ এই হাদীসটি ।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ ইরশাদ করেন, যে আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা প্রদান করেছি। আমার বান্দা কোনো পুণ্যের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারবে না ফরজ ছাড়া। আর ফরজের পর যদি সে সর্বদা নফল আদায় করে তাহলে আমার অধিক নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। অবশেষে আমি তাকেই ভালোবাসতে থাকি। অতঃপর আমি তার কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শুনতে পায়; আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে পাকড়াও করে; আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। আর সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে অবশ্যই তা প্রদান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করি। ( সহীহ বুখারী: হাদীস নং ৬৫০২)

 

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে দোয়া

 

দুআ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । দুআ একটি আরবী শব্দ ৷ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো— ডাকা, আহবান করা, চাওয়া, প্রার্থনা করা ইত্যাদি ৷ শরীয়াতের পরিভাষায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে উত্তম জিনিস কামনা করা ও মন্দ জিনিস থেকে পানাহ চাওয়াকে দুআ বলে ৷

দুআর সমার্থক শব্দ মুনাজাত ৷ শব্দ দুটোর মাঝে তেমন একটা পার্থক্য নেই ৷ আর মুনাজাত মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ৷ দুআ ইবাদাতের মগজ ৷ মুমিন বান্দার সবচেয়ে বড়ো একটি হাতিয়ার ৷ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ যুগে যুগে দুআর মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করেছেন ৷ বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৷ কামনা-বাসনা পূর্ণ করেছেন ৷ রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৷ শত্রুর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন ৷ এককথায় যাবতীয় সমস্যার সমাধান তারা দুআর মাধ্যমে করেছেন ৷

 

হযরত আদম আলাইহিস সালাম, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামসহ সমস্ত নবী-রাসূলগণ দুআ করেছেন ৷ তাদের প্রার্থনার ভাষাগুলো কুরআনের অনেক স্থানে বর্ণিত হয়েছে ৷ একটি হাদীসে পরিষ্কার এসেছে- হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত ৷ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে একটি করে কবুল দুআর অধিকার দেওয়া হয়েছিল আর প্রত্যেক নবী (দুনিয়াতে) সে দুআ করেছেন এবং তা কবুলও হয়েছে ৷ কিন্তু আমি আমার দুআকে কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের সুপারিশের জন্য রেখে দিয়েছি ৷( সহীহ বুখারী ও মুসলিম: বুখারী হাদীস নং৬৩০৪)

অতএব বুঝা গেলো মুনাজাত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ৷ আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার মজুবত নেটওয়ার্ক ৷ মুনাজাত ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র চাবিকাঠি ৷

 

আল্লাহর নিকট্য লাভে জিকির ‌

 

জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ । পবিত্র কুরআনের জিকির সংক্রান্ত একাধিক আয়াত এসেছে । আধ্যাত্মিক সংশোধনের জন্য এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ অর্জন করার জন্য এই জিকির হলো মৌলিক একটা বিষয় । জিকিরের শত শত ফায়দা রয়েছে । তার মধ্যে একটা বড় ফায়দা হল জিকির দ্বারা কলবের ময়লা পরিষ্কার হয় । হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন ,সব জিনিসের একটি রেচ আছে । কলবের রেত হল আল্লাহর জিকির ‌।

 

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন আমি আমার বান্দা সঙ্গে থাকি যখন সে আমার জিকির করে এবং আমার উদ্দেশ্যে তার ওষ্ঠদ্বয় নড়তে থাকে ‌

( সহীহ বুখারী, মুসতাদরাক হাকেম)

অন্য হাদীসে এসেছে সর্বোত্তম জিকির হলো কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা । তাই কোরআন পাঠের পাশাপাশি প্রচলিত জিকিরের শব্দগুলো বেশি বেশি পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সহজ হবে ইনশাআল্লাহ ।

 

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইস্তেগফার

 

আল্লাহর নিকট্য লাভে তাওবা ইস্তেগফারের গুরুত্ব অপরিসীম । কেননা মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে । গুনাহ করে থাকে । যতবার গুনাহ হবে ততবার তাওবা ইস্তেগফার করতে হবে । ভবিষ্যতে আর গুনাহ করবে না এরকম খেয়াল অন্তরে পোষণ করতে হবে । তাওবা ইস্তেগফার কে জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিতে হবে । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন অসংখ্যবার তাওবা ইস্তেগফার পাঠ করতেন । অথচ তিনি ছিলেন নিষ্পাপ । তারপরও এতবার তাওবা করে উম্মতকে তাওবা করা শিক্ষা দিয়ে গেছেন । তাই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করতে হবে। তাওবা ইস্তেগফার সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত ।

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করাকে আকড়ে ধরে আল্লাহ তার জন্য করে দেন সব ধরনের সংকীর্ণতা ও জটিলতা থেকে মুক্তির পথ এবং সব ধরনের চিন্তা পেরেশানি থেকে স্বস্তি । আর তার রিজিকের ব্যবস্থা এমন স্থান থেকে করেন যার সে কল্পনাও করেনা । ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কত খুশি হন আরো একটি হাদীস পাঠ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে ।

 

হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তার বান্দার তাওবায় অত্যন্ত বেশি খুশি হন যখন সে তাওবা করে, সেই ব্যক্তি চেয়েও বেশি খুশি হন যার সওয়ারী থাকে নির্জন মরুভূমিতে, যে সাওয়ারীতে থাকে তার খাদ্য পানীয়। অতঃপর সে সাওয়ারী পালিয়ে যায় । তখন সে সাওয়ারী পাওয়া থেকে নিরাশ হয়ে একটা বৃক্ষের কাছে এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে ।‌

 

এমতাবস্থায় অকস্মাৎ সে তার সাওয়ারীটিকে তার কাছে দণ্ডমন দেখতে পায় । সে সাওয়ারীটির লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে ,হে আল্লাহ তুমি আমার গোলাম আর আমি তোমার খোদা । প্রচন্ড আনন্দে সে এ রূপ ভুল বলে ওঠে । কেননা প্রকৃতপক্ষে কথাটা হবে, হে আল্লাহ তুমি আমার খোদা । আর আমি তোমার গোলাম । (সহীহ মুসলিম )

 

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে বুজুর্গদের সান্নিধ্যে

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে বুজুর্গদের সান্নিধ্যে লাভের কোন বিকল্প নেই । তাদের সান্নিধ্য অর্জনের ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন-

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَکُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ

অনুবাদ:হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (আত তাওবাহ্ – ১১৯)

এখন জেনে রাখা প্রয়োজন কারা সত্যিকার বুজুর্গ আর কারা ভন্ড ? কেননা বর্তমানে মহামারীর চেয়ে ভন্ড পীর- বুজুর্গের সংখ্যা অনেক বেশি ।

হাক্কানী পীর বা বুজুর্গের দশটি আলামত নিচে উল্লেখ করা হচ্ছে ।

১. পীরের প্রয়োজন মাফিক ইলেম থাকতে হবে । যাতে অন্তত তিনি নিজেকে এবং মুরিদদেরকে আমল ও আকীদা-বিশ্বাস নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন ।

২. আমল আখলাক ও আকিদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে শরীয়াতের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হতে হবে ।

৩. সুন্নাতে নববীর অনুসারী হতে হবে । বিদআতী হওয়া যাবে না ।

৪. দুনিয়া বিমুখ হতে হবে এবং নিজেদেরকে কামেল দাবি না করতে হবে ।

৫. কোন কামেল শায়খের কাছ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে ।

৬. সমকালীন ন্যায় পরায়ণ ওলামায়ে কেরাম এবং মাশায়েকগণ তাকে ভালো জানতে হবে ।

৭. তার সোহবতে কিছুকাল অতিবাহিত করার দ্বারা আল্লাহর মোহাব্বত বৃদ্ধি এবং দুনিয়ার মোহাব্বত কমে যাচ্ছে এমন হতে হবে ।

৮. মুরিদদের অধিকাংশ শরীয়তে অনুসারী হতে হবে ।

৯. তালিম তালকিন ও শিক্ষা দীক্ষার ব্যাপারে মুরিদদের অবস্থার ওপর দয়াপরবস হতে হবে এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে ।

১০. পীর নিজেও জিকির আযকার ও অন্যান্য আমলের সর্বদা মশগুল থাকতে হবে ।

উপরোক্ত গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে কেবল হক্কানী বুজুর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে ‌। বুজুর্গ ও বা আল্লাহর অলি হওয়ার জন্য কারামত প্রকাশিত হওয়ার জরুরী নয় ‌। আর কারামত প্রকাশ করা কোন বুজুর্গ ওয়ালীদের ইচ্ছাধীন বিষয় ও নয় ।

 

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভে রোজা

 

 

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভে রোজার ভূমিকা অপরিসীম । অন্যান্য আমলের সওয়াব আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের মাধ্যমে প্রদান করলেও রোজার সওয়াব স্বয়ং তিনি নিজ হাতে দিবেন বলে হাদীসে কুদসীতে ঘোষণা এসেছে ।

রোজা এমন একটি ইবাদত যা শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্যই রাখা হয় । এজন্য রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ।

রমজান মাসসহ ইসলামে যত ক্ষেত্রে রোজার কথা বলা হয়েছে সেগুলো পালন করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট লাভ করা খুব সহজ ।

 

 

আল্লাহর নিকট্য লাভের নেক আমল

 

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে নেক আমলের কোন বিকল্প নেই । কোন বিকল্প হতে পারে না । পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে নেক আমলের তাগাদা দেওয়া হয়েছে । নেক আমলের প্রতিযোগিতা করার আহ্বান এবং পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে ।

اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنّٰتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًاۙ

অনুবাদ: তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আপ্যায়নের জন্য থাকবে ফেরদৌসের বাগান। (সুরা: আল-কাহাফ,আয়াত নং :-১০৭)

আর নেক আমল বলতে কি বুঝায় সেটা কম বেশি সকলে বোঝে । অতএব এ নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব ।

 

 

গ্রন্থনা: মাওলানা শরিফ আহমাদ

লেখক ও শিক্ষক

 

 

 

 

 

 

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়
আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

 

1 thought on “আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় মাওলানা শরিফ আহমাদ”

Comments are closed.