একটি ভালোবাসার গল্প

 

লকডাউনে বাড়িতে বসে বসে যখন বোর হচ্ছিলাম, শরীর মন আড়ষ্ট হচ্ছিলো প্রতিনিয়ত, অলস সময় কাটাতে কাটাতে শরীর ম্যাজমেজে হয়ে গিয়েছিলো তখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি এসে আমাকে জড়তা ভাঙার আহবান জানিয়ে যাচ্ছিলো পরোক্ষভাবে।

এর মধ্যেই বাড়ির পাশের ওয়ালে একদিন শব্দ শুনতে পাই। পরিচিত শব্দ হওয়ায় বুঝতে বাকি থাকেনি কীসের সেই শব্দ!
আমি সেই শব্দ আর বৃষ্টির আহবান বুঝতে পারি। এ এমন এক আহবান যে আহবানে নিজেকে ঘরে বন্দী করে রাখা যায়না। এক দুর্নিবার টানে ছুটে চলতে হয় মাঠে।

শুরু হয় এই মৌসুমে পায়ের খেলার হাতেখড়ি।

দুচারদিন যেতে না যেতেই সবার অস্ফুট উচ্চারণ শুনতে পাই, টুর্নামেন্ট! টুর্নামেন্ট!!

এগিয়ে আসলো হালের ক্রেজ ইমরান। রুহুল আর মাসুদকে সামনে রেখে সাজিয়ে ফেললো টুর্নামেন্ট।
আমাকে জানালো, আমাকেও রেখেছে খেলায়। অবাক হলাম যখন জানলাম, আমাকে অধিনায়কত্বও করতে হবে। ভাবলাম, একটু সিনিয়র হিসেবে অধিনায়ক হিসেবে রাখলেও আমার দলের সহ অধিনায়ককেই মূল অধিনায়কত্ব করতে হবে। সো আমার খুব কষ্ট হবেনা।

তবে আমার মাদরাসা লাইফে- মোহাম্মদপুর বা নরসিংদীতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে অনেক ফুটবল ও ক্রিকেট টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ায় অধিনায়কত্বে ভয় ছিলোনা, তবে টিমের অধিকাংশ ছোট খেলোয়াড়দের সাথে ভালোভাবে পরিচিত না হওয়ার দরুন মিস আন্ডার্স্টান্ডিং এর ভয় ছিলো।

এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো “শাহী মসজিদ ক্লাব বার্ষিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২০”

আমার দল নিয়ে অন্যেরা আশাবাদী না হলেও আমি খুব আশাবাদী ছিলাম। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে রাইজিং প্লেয়ার অফ দি টুর্নামেন্ট আন্ডার ফিফটিন শহিদুল, ওমর ফারুক ও বিল্লালের খেলা দেখে আমি মোটামুটি আশ্বস্ত ছিলাম, ইউ উইল!

প্রচন্ড উত্তেজনাকর প্রথম ম্যাচই বার্তা দিয়ে গেলো যে এক জমজমাট টুর্নামেন্ট উপহার পেতে যাচ্ছি আমরা।

কিন্ত আমাদের দলীয় প্রথম ম্যাচেই আমার আশার গুড়েবালি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যাকে আমি টপ স্কোরার ভেবে রেখেছিলাম সেই শহীদুল স্ট্রাইকিং পজিশনে ব্যার্থ। আমরাও খেলাম ৫ গোল।

দ্বিতীয় ম্যাচেও অনুরূপ ঘটনা ঘটলো। তবে পার্থক্য ছিলো, দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথমার্ধে আমরা ২-১ এ এগিয়ে ছিলাম।

এটাই আমাদের আশা জোগালো।

তৃতীয় ম্যাচে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নেমে যখন দেখলাম প্রতিপক্ষে রুহুল, রাশেদ নেই তখন মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হল।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ওমর লাল কার্ডের ধোঁকায় পড়ে আমাদের টেনশনে ফেলে দিলো। তবে শাহাদাতের অসাধারণ এক ফ্রি কিকে বিল্লালের তীক্ষ্ণ ফ্লিকে বল যখন জাহিদ কে ফাকি দিলো তখন ভাবলাম, হয়তো প্রথম রাউন্ডের আগে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিদায় করবেন না।

চতুর্থ ম্যাচে মাসুদদের সাথে ড্র করার নিয়তে খেলতে নামি। কিন্ত দুটি গোল খেয়ে ফেলে আবারো আশাহত হই।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আমাদের টার্গেট ছিলো, জয় অথবা ড্র। আগেই ক্যালকুলেশন করে দেখেছিলাম, একটি জয় বা ড্র আমাদের আশা বাঁচিয়ে রাখবে।

এই ম্যাচে জয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও শেষ মূহুর্তের ‘তারে’র দেওয়া গোলে ম্যাচ ড্র করেই ফিরতে হয়।
তাকিয়ে থাকি গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ – মাসুদ বনাম রুহুলের ম্যাচের দিকে।

নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে ম্যাচ শুরু হয়। হিসাব দাড়িয়েছে এমন –
মাসুদরা জিতে গেলে সেমিতে উঠে যাই আমরা,
মাসুদরা হেরে গেলে সেমিতে উঠে যায় হিম্মতরা,
মাসুদরা ড্র করলে সেমিতে উঠে যায় রুহুলরা !!!
কী উত্তেজনা!!!!!!
মাঠের দুই দলের বাইরেও আরো দুইটি দলের ভাগ্য ঝুলে আছে এই খেলায়৷

মাসুদরা ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরেও স্কোর যখন হয়ে গেলো ২-২, এর কিছুক্ষণ বাদে ২-৩ তখন বাদ পড়ার আশংকায় সত্যি মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্ত!
লাস্ট কয়েক মিনিটের ব্যবধানে স্কোর হয়ে গেল ২-৪!!
ইয়াহু! মাসুদ উইন! আমরা সেমিতে!!💚

ইমরানের দলের স্ট্রাইকার না থাকা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট ছিল। ওরা মূলত ডিফেন্স নির্ভর টিম। আমরাও হয়তো তাই ছিলাম। তাই আমাদের পরিকল্পনা ছিলো, শুধু ইমরান কে আটকাও! ওমরকে লাগিয়ে দিলাম ওর পেছনে। ব্যাস! ওরা গোলের দেখা পেলোনা। এর মধ্যেই আমার কর্ণার কিকে শাহাদাতের গোলে আমরা ফাইনালে পৌঁছে গেলাম। মনে পড়লো শাহাদাতের কথা! ও বলেছিলো, ‘ভাই, এর আগের মোটামুটি সব টুর্নামেনটেই (অথবা অধিকাংশ) আমি ফাইনাল খেলেছি।’ এবারো ফাইনাল খেললো শাহাদাত।

ও হ্যা! এর মধ্যে লাস্ট টিন ম্যাচে আমরা গোল খেয়েছি মাত্র একটা! হ্যা! মাত্র একটা!! দুইটি কাজ করেছিলাম লাস্ট তিন ম্যাচে। ক, শহীদুলকে পার্মানেন্ট গোলকি দাড় করিয়েছি। যদিও ওকে নিয়ে আমার টপ স্কোরার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেছে আরো আগেই। তবে ও গোল দিতে না পারলেও গোল ঠেকাতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
খ, আমি স্ট্রাইকিং পজিশন থেকে ডিফেন্সে নেমে এসেছি।

এভাবেই ফাইনালে চলে আসি আমরা।

আমাদের টিমের একটা মানসিক প্রব্লেম ছিলো, আমরা আগে একটা গোল খেয়ে ফেললে খেই হারিয়ে ফেলি। প্রথম দুই ম্যাচের মতই ফাইনাল ম্যাচেও একটি বাজে গোল খেয়ে ফেলার পর আমরা আবারো লাইনচ্যুত হই। ফলাফল, ৪-১😓

তবে আমি আমার টিমের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই অসাধারণ খেলার জন্য। বিশেষত মাহিম ও সিমান্তকে।ওরা শেষ দিকে দারুণ খেলেছে। মাই টিম, টেক লাভ❤

#টুর্নামেন্টের সেরা ছয়!

★স্ট্রাইকারঃ মাসুদ।

পায়ে কিংবা মাথায়, মূহুর্তে গোল আদায় করা যার ওয়ান টুর ব্যাপার তাকেই এই পজিশনে রাখছি।
আর হ্যা, আমার এই টিমে একজনই স্ট্রাইকার।

★এটাকিং মিড ফিল্ডারঃ রিয়াদ।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা রিয়াদ কে স্ট্রাইকার পজিশনে না দিয়ে এই পজিশনে রাখার কারণ, ও অনেকটা একক কর্তৃত্বে মাঝ মাঠ থেকে গোল গুলো দিয়েছে। পক্ষান্তরে মাসুদ, সাজ্জাদের কাছ থেকে যথেষ্ট এসিস্ট পেয়েছে। যাকে তুলনা করলে অনেকটা মেসি – ইনিয়েস্তার মত করে বলা যায়। মাসুদ এ ক্ষেত্রে মেসির ভূমিকায় ছিল।

★মিড ফিল্ডারঃ সাজ্জাদ।

এই পজিশনে আমার সেরা পছন্দ সাজ্জাদ। পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করে, অসাধারণ সব ড্রিবলিং করে স্ট্রাইকারকে এসিস্ট করতে এবং প্রয়োজনে নিজেও গোল (৬টি) দিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে সে।

★ডিফেন্সঃ আমি দুজন ডিফেন্ডার রাখবো আমার দলে।

১, আব্দুল্লাহ।
যদিও ওর অধিনায়ক ওকে স্ট্রাইকিং পজিশনে খেলিয়েছে তথাপি ওর ডিফেন্স এই মূহুর্তে শাহী মসজিদে সেরা। বিশেষত লং লফটেড শট গুলো হেডে অপর প্রান্তে আছড়ে ফেলতে ওর জুড়ি নেই।

২, ইমরান।
চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মনির এই পজিশনে খেললেও আমার পছন্দ ইমরান। পুরো টুর্নামেন্টে ইমরানের গোলকিপারের সাথে প্রতিপক্ষের বলের দেখা হয়েছে মাত্র ছয়বার। এতেই এই পজিশনে ইমরানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়।

★গোলরক্ষকঃশহীদুল।

টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়া শহীদুলের বিকল্প নেই এই পজিশনে।
প্রথম দুই ম্যাচে শহীদুলের দল ১০ গোল খাওয়ার পরেও পরের চার ম্যাচে শহীদুল গোল বারে দাঁড়ানোর পর মাত্র ৩ বার তার চোখ ফাঁকি দিতে পেরেছে বল! ভাবা যায়!!!

★অধিনায়কঃ

কুলেস্ট প্লেয়ার অফ দি টুর্নামেন্ট কেই অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিচ্ছি। তাকে সহযোগিতা করবে ইমরান।

অসাধারণ এই ফুটবল টুর্নামেন্ট টি যাতে শুধু মাঠেই শেষ না হয়ে যায়, তাই একে মঞ্চ পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসার প্লান করি। খোঁজ নিয়ে দেখি এই প্লান ইমরানও করেছে। ও জানালো, অন্য বারের মতই চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ টিম এবং টপ স্কোরারকে পুরস্কার দেওয়া হবে।

এদিকে আমার পক্ষ থেকে আগেই তিনটি পুরস্কারের ঘোষণা ছিলো।

১, সেরা অধিনায়ক।
ছয় দলের সকল খেলোয়াড়ের ভোটে এটা নির্বাচিত হবে।

২, কুলেস্ট প্লেয়ার অফ দি টুর্নামেন্ট।
খেলোয়াড় ও দর্শকের ভোটে এটা নির্বাচিত হবে।

৩, সেরা উদীয়মান তারকা খেলোয়াড়।
ছয় দলের অধিনায়ক এইটা ডিসাইট করবে। ১৫ বছরের নিচে যারা খেলবে, এটা তাদের মধ্য থেকে হবে।

ভাবলাম, এটা শুধুই একটি টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরনী নয়, বরং আমাদের শাহী মসজিদ ফ্যামিলির একটা মিলন মেলা। তাই কচি কাচা, কিশোর-তরুণদের এই আয়োজনকে আরো কীভাবে সৌন্দর্য মণ্ডিত করা যায় তা ভাবতে থাকলাম।

অন্যদিকে জমকালো একটি সন্ধার অপেক্ষা কিশোর তরুণ হৃদয়ে ছিল। পুরস্কার বিতরণী হবে, খাওয়া-দাওয়া হবে, হৈ হুল্লোড় হবে, মোজ-মাস্তি হবে এমন সুপ্ত বাসনা সবারই ছিলো। আমারো ছিলো।

আমিও চেয়েছিলাম এমন একটি আয়োজন। যেখানে একশো গজের ভেতর এলাকার অন্তত একশো সন্তান কে পাওয়া যাবে। সবার সাথে পরিচিত হওয়া যাবে, গল্প করা যাবে, হারিয়ে যাওয়া যাবে হারানো দিনে। যে দিন গুলিতে আমরা শাহী মসজিদের উদ্যোগে এমন কত জমায়েত করেছি এবং জমায়েত বদ্ধ হয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।

আমাদের ছোট সময়ে আমাদের একাডেমিক অনেক কার্যক্রমের সাথে সাথে আমাদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনেক অনুষ্ঠানও প্রিয় এই মসজিদকে কেন্দ্র করে হতো।

মনে পড়ে, আমাদের নান্নু হুজুর প্রতি সপ্তাহের ৩৫ ওয়াক্ত নামাজিকে ভিউ কার্ড উপহার দিতেন। যে কার্ডে ঘোড়ার ভেতর থেকে এক হাত বের হয়ে থাকতো। এই কার্ডটার প্রতিই অধিকাংশের আগ্রহ বেশি থাকতো। এই হাতটাকে অলৌকিক মনে করা হত।

সবাই মনে মনে চাইলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ফাইনাল পরবর্তী সন্ধাকে কীভাবে রাঙানো যায় তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলাম।

আমি যদিও ভেবে রেখেছিলাম,
ফাইনাল পরবর্তী অনুষ্ঠানে একটা রম্য বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকতে পারে। যার টপিক হবে, ‘করোনার এই পরিস্থিতিতে টুর্নামেন্ট আয়োজন যৌক্তিক’ এর পক্ষে -বিপক্ষে। কিন্ত ভেবে দেখলাম, এই টপিকে অধিকাংশই বিব্রত হতে পারে। তাই চিরন্তন একটা টপিক ঠিক করলাম, ‘ব্রাজিল বিশ্ব সেরা’। আমি ভয়ে ছিলাম, এই টপিকের বিপক্ষে অবস্থান কারীরা মুখে আঁটার কুলুপ কোথায় পাবে!😋 এ কারনেই কীনা কে জানে, শেষ মেষ আর ডিবেট টা হয়নি। আসলে ফাইনাল ম্যাচ ও ট্রফির ছক আঁকতে গিয়ে আমিই পুরোপুরি গুছিয়ে তুলতে পারিনি। তাই সবাইকে ডিবেটের জন্য প্রস্তত করা হয়নি। ইনশাআল্লাহ, আমাদের পরবর্তী যে কোনো আয়োজনে রিলেটেড ডিবেট রাখার প্রস্তাবনা আমার থাকলো।

সেমির আগেই একদিন ইমরানকে ডাকলাম। আলাপ করলাম। ও জানালো, পুরস্কার বিতরণী নিয়ে খুব বেশি ও ভাবতে পারেনি। তাই তখনই ছোট্ট করে আমরা দুজন মিলে একটা খসড়া করলাম। আগত সবাইকে মিষ্টি মুখ করিয়ে, ফাইনালিস্টদের জন্য প্রাইজ ও আমি ঘোষিত পুরস্কার গুলো বিতরণ করা হবে। সেই সাথে আমি আরেকটা প্রস্তাব রাখলাম, একটি কুইজের আয়োজন করা। যাতে ছোট থেকে বড় সবার উপযোগী প্রশ্ন থাকবে এবং সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারবে। এটা লিখিত বা তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিকও হতে পারে। তবে অধিকাংশ পার্টিসিপ্যান্ট শিশু ও কিশোর হওয়ায় আমরা লিখিতের পক্ষে একমত হলাম।

ভেবে রেখেছিলাম, কুইজ রাখবো একটা। কুইজ সাজালাম, প্রশ্ন গুলো প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে সাজানোর চেষ্টা করলাম। উল্লেখযোগ্য যে প্রশ্ন গুলো ছিলো,

# জাজিরা কত সালে উপজেলা হয়েছে?
# আমাদের জেলা কার নামে হয়েছে?
# শরীয়তপুরে মোট কতটি উপজেলা আছে?
# ফুটবলের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কে?
এমন চমৎকার সব প্রশ্ন দিয়ে সাজানো ছিলো কুইজের পাতা!

সেমি ফাইনালের আগেই প্রোগ্রামের ইভেন্ট ও প্রাইজ ইত্যাদি নিয়ে চূড়ান্ত একটা মিটিং হলো সৌরভ সুপার মার্কেটে। এতে রুহুল, মাসুদ, হিম্মত, ইমরান ও আমি ছিলাম।

মোটামুটি আগের প্লান অনুযায়ীই সব ফাইনাল হলো। কিন্ত এতে চমক ছিলো, গরু খিচুড়ি। যা বাজেট সংকুলানের ভয়ে আমরা ভাবিনি। কিন্ত ব্যবসায়ী রুহুল, উদার আয়োজক ইমরানের হিম্মতে একটি হাম্বাময় খিচুড়ির পরিকল্পনাই চূড়ান্ত হলো।

কিন্ত

কিন্ত সময় যত ঘনিয়ে আসতে লাগলো, আমাদের বাজেট ভাবনা তত ভারী হতে লাগলো। এক পর্যায়ে ভেবেই বসলাম, ‘হাম্বা’ নয়, ‘হেন’ দিয়েই খিচুড়ি করতে হবে। কিন্ত নাটকের এ পর্যায়ে আবির্ভূত হলো আমাদের আরেক ড্যাশিং বয় নাদিম। ইমরানের সাথে পুরো অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সমান ভাবে কাঁধে তুলে নিলো। ফাইনালের কিছুক্ষণ আগে ওরা জানালো, ভাই, আল্লাহ ভরসা, গরুই হবে। ওদিকে আমাদের প্রিয় আরিফ, আশরাফ সহ অন্যান্য প্রবাসী বন্ধুরাও পাশে দাঁড়ালো।

আমি আশান্বিত হলাম। ওরা অনুষ্ঠানের খাবার, পুরস্কার ক্রয়, ডেকোরেশনে মনোযোগ দিলো, আমি কুইজ, অনুষ্ঠান শিডিউল, অনুষ্ঠানমালা আর ফাইনাল বিজয়ের স্বপ্নে মনোযোগ দিলাম।

৪-১ গোলে আমরা রানার্সআপ হয়ে গেলাম। আর ওরা বাবুর্চি নিয়ে রান্নার আয়োজন শুরু করে দিলো।

মাগরিবের নামাজ শেষে কুইজ বিক্রির ধুম পড়ে গেলো। দুই টাকা মূল্যের এই কুইজ মূহুর্তেই ১০০ কপি শেষ হয়ে গেলো। পরবর্তীতে আরো ৫০ কপি আনা হলে তাও শেষ হয়ে গেলো নিমেষেই। আল ইসলাম আকাশের দায়িত্বে বিক্রিত এই কুইজ গুলো সঠিক উত্তর দেওয়ার পর রিয়াদ জমা সংগ্রহ করে সঠিক উত্তর দাতাদের মুড়ি গুলো একটা বক্সে রেখে দিলো।

এসবই চলছিলো অন্ধকারে। মাঠে তখনো আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। রাশেদের সহযোগিতায় র‍্যাকেট খেলার লাইট জ্বালিয়ে অবশেষে রাত ৯ টার দিকে পুরো মাঠ আলোয় আলোকিত করা হয়। ঘোষণা হয় আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মূল অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে।

জাহিদুল ইসলাম শাকুরির কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটিং কার্যক্রম গুলো স্বচ্ছ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে অত্যন্ত সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়।

চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মনির ও রানার্সআপ দলের সহ অধিনায়ক (অধিনায়ক, লেখক নিজেই। তিনি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছিলেন।🤦‍♂️) শাহাদাত শুভেচ্ছা অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

আয়োজক মাসুদ ও ইমরান তাদের বক্তব্য রাখেন।

রাব্বি, জহির, শাহকামাল ও দুলাল বক্তব্য রাখেন।

জুবায়ের মাদক না নেয়া, নামাজ পড়া, নিয়মিত পড়াশোনা করা ও পিতামাতার কথা মেনে চলার শপথ পাঠ করান।

সবশেষে পুরস্কার বিতরণী পর্বে সবাইকেই নানা ভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
এই পর্বে আরিফের প্রেরণায় আমাদের মহল্লা থেকে এবারে এস এস সি ও দাখিল পরীক্ষায় কৃতকার্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

বিদ্যুতের আলোয় আমরা মুহুর্মুহু হর্ষ ধ্বনি দিয়ে অনুষ্ঠান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি আর ওদিকে হাফিজ আর রুহুল অন্ধকারে হেটে হেটে অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার প্রচেষ্টায় ছুটতে থাকে। এক অফুরন্ত আন্তরিক শক্তি নিয়ে ওদের ছুটে চলায় এই ফ্যামিলির প্রতি ওদের যে দায়িত্ব বোধ ও ভালোবাসা আমি দেখতে পেয়েছি তা বর্ণনাতীত।

ওদিকে আবু জাফর, শরীফ, রুবেল সহ অন্যান্যের সুশৃঙ্খল পরিবেশনা শতাধিক মানুষের জন্য আয়োজিত খাবার প্রায় সার্ধশত মানুষের মুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে দেয়। আর সবাই পরিতৃপ্ত হৃদয়ে বাড়ির পথে পা পাড়ায়।💚

(ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়, ১৫/০৭/২০২০)

হাসান বিন হাশেমী
হাশেমী হাউজ
রাত ৮: ২০
অক্টোবর, ১৬, ২০২০

Leave a Comment