কন্যাকে সম্পত্তি দানের কলাকৌশল | শরিফ আহমাদ | শীর্ষবার্তা


— শরিফ আহমাদ

প্রিয় দীনি ভাই! আপনি হয়তো টগবগে পূর্ণ যুবক ৷ আপনার শক্তি-সামর্থ্য আছে ৷ হয়তোবা বিয়ের কথা ভাবছেন ৷ আরে ভাই আকাশ-পাতাল ভাবার কিছু নেই ৷ দ্রুত বিয়ে করুন ৷ জীবনের মর্ম বুঝে আসবে ৷ ঈমান পরিপূর্ণ হবে ৷ বিবাহ সংক্রান্ত একটি হাদীস শুনুন ৷ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক ঈমান (দীন) পূর্ণ করে । অতএব বাকী অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে। [ আল-জামিউস সাগীর, হাদীস নং ৬১৪৮ ]
আর যদি শুভ কাজ সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে তো আরো ভালো ৷ এবার বংশবাতি আনুন ৷ অধিক পরিমানে ৷ ক্রমান্বয়ে সুখের ফুল ফুটবে সংসারে ৷ সুবাস ছড়াবে দিকবিদিক ৷ আর আগে থেকেই যদি সন্তানাদি থাকে তবে তাদের রিজিক নিয়ে চিন্তিত ও অস্থির হবেন না ৷ কিংবা ভরণ-পোষণের ভয়ে তাদের আগমন পথ বন্ধ করবেন না ৷ কারণ রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ৷
আল কোরআনে এসেছে, পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার ওপর ন্যস্ত। (সূরা হুদ: আয়াত নং ৬)। অতএব সাময়িক বিপদ-আপদে হা-হুতাশ না করে ধৈর্য্য ধারণ করুন ৷ রিজিকের জন্য শক্তি এবং প্রতিভা কাজে লাগান ৷

ছেলে-মেয়েকে ঘিরে হাজার চিন্তা মাথায় আসবে ৷ ঘুরপাক খাবে ৷ এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার ৷ ছেলে সন্তান হলে তো অতো চিন্তা নেই ৷ শুধু মেয়ে সন্তান হলেই তার ভবিষৎ নিয়ে চিন্তার শেষ থাকে না ৷
কেননা আধুনিক সমাজে এখনো নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে নারীরা। আর এসব বঞ্চনার মধ্যে পরিবারের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা অন্যতম। সমাজ ব্যবস্থার পরির্বতনে এখনো অনেক নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতনও নয়। এ ক্ষেত্রে আপনার করণীয় হচ্ছে ইসলাম মোতাবেক সবকিছু করা ৷ এমনকি অসিয়তসহ সম্পত্তি বন্টন করে যাওয়া ৷ কিভাবে কতটুকু কাকে দিবেন কুরআনে তার সমাধান দেখুন, একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর সমান। আর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তাহলে তাদের জন্যে ওই ত্যাজ্য মালের তিন ভাগের দুই ভাগ। আর যদি (কন্যা) একজনই হয় তাহলে সে জন্য অর্ধেক।’ (সুরা নিসা: আয়াত নং ১১)।

আর একটু ভালো করে বুঝুন ৷ ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার অর্জিত সম্পদের একক মালিকানা তার হাতেই থাকে। তাতে যাচ্ছেতাই হস্তক্ষেপের অধিকার তার রয়েছে। এতে কেউ হক দাবী করার অধিকার রাখে না। হ্যাঁ, মৃত্যুর পরের কথা ভিন্ন। তখন শরয়ী নীতিমালা অনুপাতে সম্পদ বন্টন করতে হয়। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির একজন মেয়ে থাকলে এবং কোনো ছেলে না থাকলে মেয়ে মৃত ব্যক্তির মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। যদি একাধিক মেয়ে থাকে এবং ছেলে না থাকে মেয়েরা মোট সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে এবং এ অংশ সব মেয়েদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে। এখন ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি তাঁর স্ত্রীও বেঁচে না থাকেন, তাহলে তাঁদের পুরো সম্পত্তির অর্ধেক তাঁর মেয়ে পাবে। তাঁর মেয়ে অর্ধেক পাওয়ার পর বাকি সম্পত্তি অন্য ওয়ারিশরা পাবে। আর যদি তার স্ত্রী বেঁচে থাকেন তাহলে তাঁর স্ত্রী সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ পাবেন এবং মেয়ে সম্পত্তির অর্ধেক পাবে এবং বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে।

সুতরাং যে কেউ তার একমাত্র বা একাধিক মেয়েকে জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় সম্পত্তি দান করে যেতে পারেন। তবে এ দান করতে হবে যথাযথ উপায়ে এবং দানের সব আইন শর্ত মেনে। শর্তটি হচ্ছে দানটি অবশ্যই ঘোষিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত দানকৃত সম্পত্তি মেয়ের দখলে দিয়ে দিতে হবে বা হস্তান্তর করে দিতে হবে এবং দানের লিখিত দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। কন্যা যদি এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক হয় তবে সম্পত্তির দখল মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরই হস্তান্তর করে দিতে হবে। মেয়েকে সম্পত্তি দিয়ে দেওয়া মানে এ নয় যে, বাবা-মাকে সম্পত্তি ছেড়ে চলে যেতে হবে। বাবা-মা মেয়ের সঙ্গেই অবস্থান করতে পারবেন। আর মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলে যদিও মেয়ের নামে সম্পত্তি রয়েছে, তবু মেয়ের সম্পত্তিতে বাবা-মা বসবাস করতে আইনত কোনো বাধা নেই। আর মেয়েকেও খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মায়ের দান করা সম্পত্তির মালিক হয়ে যেন বাবা-মাকে বঞ্চিত করা না হয়। বাবা-মাকে বঞ্চিত করলে বাবা-মারও অধিকার রয়েছে আইনের আশ্রয় নেওয়ার। অনেককেই বলতে শোনা যায়, মেয়েকে উইল করে যাবে। মনে রাখতে হবে মেয়েকে উইল করে গেলে পুরো সম্পত্তির,,,⅝ এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। এর বেশি উইল করলে অন্যান্য উত্তরাধিকারীর সম্মতি লাগবে। আর উইল কার্যকর হবে উইলকারীর মৃত্যুর পর।
অতএব ঝামেলা এড়াতে জীবিত থাকাকালীন সময়ে কন্যাকে তার হক বুঝে দেওয়া উচিত ৷ অগ্রিম দান করে যাওয়া প্রয়োজন ৷
কারণ জীবিত ও সুস্থ্য অবস্থায় ব্যক্তির সম্পদে আপন ভাই বা তার সন্তানেরা কোন সম্পদ পায় না।
লেখক: আলেম, কবি ও আলোচক

Leave a Comment