জিলহজের প্রথম দশক;নেক আমলের মৌসুম | শরিফ আহমাদ | শীর্ষবার্তা ডটকম


— শরিফ আহমাদ

মহান আল্লাহ বান্দাদেরকে বড্ডো ভালোবাসেন ৷ তাওবা করে কেউ ফিরে এলে তিনি খুব-ই খুশি হন ৷ তিনি চান বান্দারা ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রতি বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ৷ প্রতিটি আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। এমন নেক আমলের মৌসুমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ ৷
আরবি বারো মাসের মধ্যে এ মাসটি অন্যতম ৷ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত ৷
মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি—আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)। আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিস শরিফে এসেছে, ওই মাসগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। পুরো জিলহজ মাস গুরুত্বপূর্ণ হলেও
মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। মর্যাদা বোঝাতে মহান আল্লাহ এ দিনগুলোর কসম খেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ দশ রাতের।’ (সুরা : ফাজর, আয়াত : ১-২)

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই ১০ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৮, সহীহ বুখারি হাদিস : ৯৬৯)
জিলহজের প্রথম ১০ দিনে যতগুলো আমল করা যায় তার মধ্য রোজা রাখা অন্যতম একটি নেক কাজ। তাই এ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা খুবই পুণ্যময়। হুনাইদা বিন খালেদ তাঁর স্ত্রী থেকে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জিলহজ মাসের ৯ তারিখ, আশুরার দিন ও প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন।’ (আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ি) আরাফার দিন রোজা রাখা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, আরাফার দিনের রোজা আগের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম শরীফ )

জিলহজের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হলো হজ ও ওমরাহ করা ৷ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারাস্বরূপ আর কবুল হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫)
কোরবানি আদায় করা। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তারা তো অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। এমনকি যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাদেরও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত। আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে নিঃস্ব ব্যক্তিকেও আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবান করে দিতে পারেন।
এ দিনগুলোয় জিকির-আজকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এ ১০ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পাঠ করো। (বায়হাবি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৭৪)
তাই তো পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি জিকির আজকার বেশি করে এ দিনের সুন্নাত পালন করা উচিত ৷

আর একটি সেরা আমল হচ্ছে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে নিয়ে ১৩ তারিখের আসরের নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়া ৷ এটা নারী-পুরুষ ,ইমাম, মুক্তাদি, মুকিম, মুসাফির, সকলের উপর পড়া ওয়াজিব।
নারীরা নিম্ন স্বরে এবং পুরুষদের উচ্চ স্বরে পাঠ করা কর্তব্য। (ফাতাওয়ায়ে শামি)ভুলে গেলে কোন কাযা নেই ৷ তাওবা ইস্তেগফার করে নিলেই হবে ৷ তাকবিরে তাশরিক হলো, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
গত ২২/ ৭/ ২০২০ ইং রোজ বুধবার বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র ঈদুল আযহার চাঁদ দেখা গেছে ৷ তাই আগামী ১/৮/ ২০২০ ইং শনিবার অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা ৷
অতএব জিলহজের এই নেক আমলের মৌসুমে সকলের নেক আমলের সদাই করা উচিত ৷

লেখক: আলেম, কবি ও আলোচক

Leave a Comment