তাশাহুদ আরবি ও বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ( আত্তাহিয়্যাতু ) পড়ার নিয়ম। মাওলানা শরিফ আহমাদ

তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণসহ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ার নিয়ম

 

সুপ্রিয় পাঠক । আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ । আশা করছি সবাই ভালো আছেন । আপনারা ভালো ও সুস্থ থাকুন এই দুআ করি আল্লাহ তাআলার কাছে । এই প্রবন্ধে আজ আপনাদের তাশাহুদ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ ।‌ অতএব ধৈর্য সহকারে পড়ুন এবং সঙ্গে থাকুন ।

 

 

তাশাহুদ কি ও কেন ? আত্তাহিয়াতু কি

 

তাশাহুদ একটি আরবী শব্দ । শব্দটির অর্থ হচ্ছে ঈমানের সত্যায়ন । ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত কিংবা নফল যেকোনো নামাজে দুই রাকাত পর বসতে হয় । অর্থাৎ বৈঠক করতে হয় । প্রথম এবং শেষ বৈঠকে ও তাশাহুদ পাঠ করা ওয়াজিব । তাশাহুদ‌ আত্তাহিয়াতু নামেও বেশ পরিচিত ।

 

তাশাহুদ আরবী

التَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَ عَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ‎.

 

তাশাহুদের বাংলা উচ্চারণ। আত্তাহিয়াতু বাংলা উচ্চারণ 

 

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সলাওয়াতু ওয়াত্বত্বয়্যিবাতু‌ । আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ।‌ আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন । আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

 

তাশাহুদের অর্থ কি ?

 

সমস্ত মৌখিক ইবাদত, সমস্ত শারীরিক ইবাদত এবং সমস্ত পবিত্র বিষয় আল্লাহ তাআলার জন্য । হে নবী আপনার উপর শান্তি ও তার বরকত সমূহ নাযিল হোক । আমাদের প্রতি ও আল্লাহ তাআলার নেক বান্দাদের প্রতি তার শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ তাআলা ব্যাতীত আর কোন মাবুদ নাই । আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল ।

 

 

 

তাশাহুদে বসার  বসার সু্ন্নাত তরীকা

তাশাহুদ

মধ্যবর্তী বৈঠক হোক কিংবা শেষ বৈঠক হোক, বসার সুন্নাত তরীকা হলো ডান পা খাড়া রাখবেন বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসবেন । এটাই প্রসিদ্ধ এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল সম্মত ।‌ তবে অন্য ভাবে বসার তরীকাও‌ হাদীসে আছে । প্রথম পদ্ধতি অনুসরণ করুন ‌। দলীল দেখুন ।

 

আত্তাহিয়াতু সম্পর্কে হাদীস  

 

হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, একদা আমি মদিনায় আসলাম । তো মনে মনে সংকল্প করলাম আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজ দেখবো । দেখলাম তিনি যখন তাশাহুদের জন্য বসলেন বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসলেন । আর ডান পা খাড়া রাখলেন ।

( জামে তিরমিজী, ১/৬৫ ) ইমাম তিরমিজী এই হাদীসটিকে হাসান-সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন অধিকাংশ আহলে ইলমের আমল এই পদ্ধতির উপর ।‌

 

১ নং দলীলঃ

 

হযরত আব্দুল্লাহ তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন সুন্নাত হল (তাশাহুদের বৈঠকে) ডান পা খাড়া রাখবে আর আঙ্গুলসমূহ কেবলা মুখী করে রাখবে এবং বাম পায়ের উপর বসবে। ( সুনানে নাসায়ী,১/১৩০ মতান্তরে ১/১১৩০)

 

আত্তাহিয়াতু কখন পড়তে হয় ?

 

নামাজের প্রথম বৈঠক এবং শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়বেন । বৈঠকে এটা পড়া ওয়াজিব । হাদীসের দলীল দিচ্ছি।‌ ভালো করে পড়ুন।‌ বুঝুন ।

 

১. দলীলঃ

হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, তাশাহুদ ব্যতীত নামাজ হয় না । ( সুনানে বায়হাকী হাদীস নং ২৮৮৮)

 

২ নং দলীলঃ

 

হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তাশাহুদ ব্যতীত নামাজ নেই ।( সুনানে বায়হাকী হাদীস নং ২৮৮৯)

প্রিয় পাঠক । স্মরণ রাখবেন বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিবটি হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু ,হযরত জুবাইর রাদিআল্লাহু আনহু ,হযরত আবু মুসা আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু, হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু ও হযরত ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু ত’আলা আনহু থেকে বর্ণিত যে কোন তাশাহুদ পড়ার দাঁড়ায় আদায় হয়ে যাবে ।

 

 

তবে ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত উপরের তাশাহুদটি পড়া উত্তম । কারণ‌ এ তাশাহুদটি হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু মসজিদে নববীর মিম্বরে বসে সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়েছিলেন । তেমনি ভাবে উক্ত তাশাহুদটি হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু, হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু আনহু ,হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু , হযরত সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু আনহু ও হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত ।‌ ( শারহু মাআনিল আছার ,হাদীস নং ১৫৭২ ,১৫৭৩,১৫৭৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা , হাদীস নং ৩০০৭, সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং ২৯১০)

 

আত্তাহিয়াতু শিখা জরুরি কেন ?

 

প্রিয় পাঠক । তাশাহুদ ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না । যদি আপনারা নামাজ কে সত্যিকার অর্থে মাকবুল নামাজ করতে চান , তাহলে সহীহ শুদ্ধ করে তাশাহুদ শিখে নিবেন । এ সংক্রান্ত আরো কয়েকটি হাদীস দেখুন ।

 

১ নং হাদীসঃ

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমরা যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর পিছনে নামাজ পড়তাম তখন আমরা বলতাম আসসালামু আলাল্লাহ ওয়াসসালামু আলা ফুলান ও ফুলান । একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বললেন আল্লাহ নিজেই তো সালাম । তাই যখন তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করবে তখন সে যেন বলে-

ﺍﻟﺘﺤﻴﺎﺕ ﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﻭﺍﻟﻄﻴﺒﺎﺕ -ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻚ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ – ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻭﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ .

কেননা যখন কেউ তা বলবে তখন আসমান ও জমিনের আল্লাহর সকল নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যাবে । এর সঙ্গে -ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ -ﻭﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ

এটাও পড়বে । ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩৫, সহীহ মুসলীম, হাদীস নং ৮৯৫)

 

২. হাদীসঃ

হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন তাশাহুদ ছাড়া কোন নামাজে যথেষ্ট হয় না ।‌( মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, ২য় খন্ড, ২০৬ )

 

৩. হাদীসঃ

 

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু ও জাবের রাদিআল্লাহু আনহু বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাশাহহুদ ওইভাবে শেখাতেন যেমন কোরআনের কোন সূরা শেখাতেন ।

(সহীহ মুসলিম, সুনানে নাসায়ী, মেশকাত ৮৫ পৃঃ)।

 

প্রিয় পাঠক।‌ তাশাহুদ শেখা সম্পর্কে আরও অনেক হাদীস রয়েছে । সেগুলো উল্লেখ করে আলোচনাকে দীর্ঘ করতে চাইনা । একান্ত কারো প্রয়োজন হলে কমেন্ট করুন । সব লিখে দেবো ইনশাআল্লাহ ।‌

 

 

তাশাহুদে আঙ্গুল উঠানোর নিয়ম

 

তাশাহুদ এর মধ্যে আশহাদু আল( اشهد ان ) বলতে বলতে হাতের হলকা বাধা অর্থাৎ ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল এর অগ্রভাগ এবং মধ্যমার অগ্রভাগ মিলানো এবং কনিষ্ঠ ও অনামিকাকে হাতের তালুর সঙ্গে মিলানো । এটা মুস্তাহাব পদ্ধতি । লা ইলাহা বলতে বলতে শাহাদাত আঙ্গুলকে উপর দিকে ওঠানো । এতোটুকু ওঠানো যেন তার অগ্রভাগ কেবলামুখী হয়ে যায় ।

তাশাহুদ

ইল্লাল্লাহ বলার সময় নিচের দিকে নামানো । তবে বৈঠকের শেষ পর্যন্ত রানের সাথে না মিলিয়ে উঁচু করে রাখা নিয়ম ‌।‌ এই হলকা বৈঠকের শেষ পর্যন্ত রাখবেন ।

 

তাশাহুদে আঙ্গুল নাড়ানোর হাদীস

 

১ নং হাদীসঃ

 

হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যখন দুআ করার জন্য (তাশাহুদের বৈঠকে) বসতেন তখন ডান হাত স্বীয় ডান উরুর ওপর এবং বাম হাত বাম উরুর উপর রাখতেন । আর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন । (এ সময়) তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি কে মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন এবং বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর রাখতেন ।

( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৯ )

 

২ নং হাদীসঃ

 

হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়ার সময় যখন বসতেন (বৈঠক করতেন) তখন স্বীয় দুই হাত দুই হাঁটুর উপর রাখতেন । আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এর পার্শ্ববর্তী (শাহাদাত) আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাম হাত বাম হাঁটুর উপর আলতো ভাবে ছড়িয়ে রাখতেন ।

( সহীহ মুসলিম , হাদীস নং ৫৮০)

 

৩ নং হাদীসঃ‌

 

হযরত ওয়াইল ইবনে হুজুর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি ( মনে মনে) বললাম যে আমি অবশ্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর নামাজ দেখবো তিনি কিভাবে নামাজ পড়েন ? তিনি বলেন অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে কেবলা মুখী হলেন এরপর তাকবীরে তাহরীমা বললেন…. । এরপর তিনি বসলেন ও বাম পা পিছিয়ে দিলেন এবং স্বীয় বাম হাত কে বাম রানের উপর এবং ডান হাতকে ডান রানের উপর রাখলেন । এবং দু’আঙ্গুল তথা কনিষ্ঠ ও অনামিকাকে মুষ্টিবদ্ধ করে ( বাকি আঙ্গুলগুলো দ্বারা) একটা বৃত্ত বানালেন ।

(রাবী বলেন) আর আমি তাকে এভাবে করতে দেখেছি বলে বিশর নামক রাবীটি বৃদ্ধাঙ্গুল মধ্যমা দ্বারা একটা গোল বৃত্ত বানালেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন । ( সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৭২৬ )

 

নোট: কিছু কিছু দীনি ভাইয়েরা বৈঠকে বসে শাহাদাত আঙ্গুল ধীরে ধীরে ওঠানামা ও নাড়াচাড়া করায় । এটি তাদের একটি ভুল আমল । কেননা হাদীসে নবীজি ইশারা-ইঙ্গিত করতে বলেছেন । হরকত বা তাহরীক (নাড়াচাড়া) করতে বলেননি । হরকত এবং ইশারার মধ্যে তো পার্থক্য আছে । আরেকটু বুঝিয়ে বলি হরকত হলো যা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যায় না বরং বারবার ক্রিয়াটি ঘটতে থাকে । আর ইশারা-ইঙ্গিত হলো যা দ্বারা কোন কিছুর দিকে এক মুহুর্ত ইশারা করে বোঝানো হয় । সহজ কথায় বললে এভাবে বলা যায় হরকত হলো দীর্ঘ সময়ব্যাপী আর ইশারা হলো মুহূর্তকাল অর্থাৎ অল্প সময়ব্যাপী ।

 

আপনারা পড়ছেন – আত্তাহিয়াতু বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

 

হাদীসে নবীজি ইশারা করতে বলেছেন । হরকত করতে বলেননি। কিন্তু ওই ভাইয়েরা ইশারাকে হরকত বানিয়ে দিয়েছে। তারা হাদীস ভুল বুঝেছে । তাই ওদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন। যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ।

 

তাশাহুদে অযু ভেঙ্গে গেলে করণীয় কি ?

 

যদি কারো তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর আগে অযু ভেঙ্গে যায় তাহলে কথাবার্তা না বলে অযু করে এসে সালাম ফিরালে নামাজ হয়ে যাবে । নতুবা নতুন করে নামাজ পড়া ওয়াজিব ।

সালাম না ফিরিয়ে ফুলে উঠে গেলে, মসজিদ থেকে না বের হয়ে থাকলে এবং কথা না বলে থাকলে, বসে প্রথমে সাহু সিজদা করবেন । তারপর তাশাহুদ ,দরুদ শরীফ ,দোয়া মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরাবেন ।‌ এরকম না করলে নামায মাকরূহে তাহরীমী হয়ে নামাজ টি পুনরায় পড়া ওয়াজিব হয়ে যাবে ।

তবে কথা বলে ফেললে নামায হবে না। নতুন করে পড়া ওয়াজিব। 

فى الجوهرة النيرة- ( قوله : فإن سبقه الحدث أو غلبه انصرف ) السبق بغير علمه وقصده والغلبة بعلمه لكن لم يقدر على ضبطه ، ولو عطس فسبقه الحدث أو تنحنح أو سعل فخرج بقوته ريح فإنه لا يبني هو الصحيح

 

আত্তাহিয়াতুর শানে নুযুল বা ইতিহাস

 

ইমাম কুরতুবী রহঃ স্বীয় তাফসীরে কুরতুবীতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তথা ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে লিখেনঃ

হযরত হাসান বসরী রহঃ, হযরত মুজাহিদ রহঃ, হযরত জাহহাক রহঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় এ আয়াত মিরাজের ঘটনার সময়কার। এমনিভাবে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকেও কিছু বর্ণনায় তা পাওয়া যায়।

তবে কেউ কেউ বলেছেনঃ পূর্ণ কুরআন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে নিয়ে এসেছেন এ আয়াত ছাড়া। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের রাতে শুনেছেন।

আর কেউ কেউ বলেন, এ আয়াত মিরাজের ঘটনার সময়কার নয়। কেননা, মেরাজের ঘটনা হয়েছে মক্কায়। আর এ পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে মদীনায়।

তবে যারা বলেন যে, এ আয়াত মেরাজের রাতে নাজিল হয়েছে তারা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আসমানে উঠলেন এবং উঁচু স্থানে পৌঁছলেন সাথে ছিলেন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম। এমনকি তারা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলেন। তখন তাঁকে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, নিশ্চয় আমি এ স্থান অতিক্রম করতে পারবো না। আর আপনাকে ছাড়া আর কাউকে এ স্থান অতিক্রম করার অধিকার দেয়া হয়নি। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অতিক্রম করলেন এবং এমন স্থানে পৌঁছলেন যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁকে পৌঁছাতে চাইলেন। তখন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে (নবীজি) ইশারা করলেন, আল্লাহ তাআলাকে সালাম করার জন্য। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত ত্বায়্যিবাতু। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইলেন সালামের একটি অংশ উম্মতীদের জন্যও বরাদ্দ হোক। তাই তিনি বললেন, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালেহীন। তারপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এবং আসমানবাসী সবাই বলতে লাগল, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু।

( তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে সূরা বাকারা, আয়াত নং-২৮৫-২৮৬।

একই বর্ণনা এসেছে- বাহরুল উলুম তথা তাফসীরে শমরকন্দী, তাফসীরে সূরা বাকারা, আয়াত নং-২৮৫-২৮৬।

নোট: উল্লেখিত এই শানে নুযুল বা ইতিহাসটি হচ্ছে তাফসীর গ্রন্থের আলোকে প্রমাণিত । কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো কিছু বক্তা এবং বাজারে প্রচলিত কিছু বইয়ে এটিকে আরো রঙ-ঢঙ দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে । যা কখনো সমীচীন হয়নি । কিতাবে যতোটুকু আছে ততটুকুই বলা উচিত ছিল ।

শেষকথাঃ

প্রিয় পাঠক ।‌ আশা করছি আপনারা তাশাহুদ সংক্রান্ত অতি সংক্ষেপে যাবতীয় তথ্য পেয়েছেন । এবং উপকৃত হয়েছেন । এরপরেও আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করুন । দলীল ভিত্তিক জবাব দেবে ইনশাআল্লাহ । আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।