পতিতাবৃত্তির ইসলামী বিধান | শরিফ আহমাদ | শীর্ষবার্তা

পতিতাবৃত্তির ইসলামি বিধান
— শরিফ আহমাদ

ইলেক্ট্রিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় ৷ মূহূর্তেই দেখা যায় পৃথিবীর সবকিছু ৷ জানা যাচ্ছে সকল খবরাখবর ৷ প্রধাণ খবরগুলোর মাঝে পতিতাবৃত্তি অন্যতম ৷ এনিয়ে মানুষের আগ্রহ বা কৌতুহলের শেষ নেই ৷ পতিতাবৃত্তি নিয়ে নির্মিত গল্প-উপন্যাস, নাটক, সিনেমাগুলো তার প্রমাণ ৷
তাই সঙ্গত কারণেই ইসলামি বিধান জেনে নেওয়া আবশ্যক ৷
পতিতাবৃত্তির প্রধান কারণগুলো হলো ১ .আশ্রয়হীনতা। আশ্রয়হীনতার মধ্যে পড়ে, বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা, তালাকপ্রাপ্ত, নদীভাঙা, ঘরপোড়া প্রভৃতি কারণে আশ্রয়হীনতা ইত্যাদি। এইসব আশ্রয়হীনারা গিয়ে পড়ে নারী দালালদের পাতা ফাঁদে। তারপর শেষ আশ্রয় অন্ধকার গলি।
২.ধোকা ও প্রতারণা ৷
জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের মেয়েদেরকে প্রেমের জালে ফেলে কিংবা দুস্থ মেয়েদেরকে চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে। গরিব কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতাদের ভালো ঘরে মেয়ে পাত্রস্থ করে দেবার লোভ দেখিয়ে বা আর্থিক দিক দিয়ে পিতা-মাতাকে বশীভূত করে দালালরা দুস্থ মেয়েদের সংগ্রহ করে। তারপর দালালরা পতিতালয়ে তাদের চড়া দামে বিক্রি করে দেয় ৷
৩. ধর্ষণ ও কামনা ৷
অনেক সময় একটি মেয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণের ফলে উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয় পতিতা খাতায় নাম লেখায় । আবার অনেক ক্ষেত্রে যৌবনের কামনার আগুন সইতে না পেরে বিকল্প রাস্তা হিসাবে সাময়িক পতিতাবৃত্তি বেছে নেয় ৷ কেউ কেউ এটাকে পেশা বানিয়ে জম জমাট বানিজ্য করে ৷ উল্লেখিত কারণে হোক কিংবা দিন বদলের দিনের নতুন কোন প্রেক্ষাপটে হোক ইসলামে পতিতাবৃত্তি হারাম ও জঘণ্য অপরাধ ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় তা একটি অশ্লীল কাজ ও খারাপ পন্থা । [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৩২]
আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,
আর শুধু পার্থিব জীবনে তোমরা কিছু স্বার্থ লাভ করার উদ্দেশ্যে তোমাদের দাসীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করো না, যদি তারা সতীত্ব বজায় রাখতে চায়। ( আন নূর, আয়াত: 33)

হাদীসে পাকে পতিতাবৃত্তিকে জঘণ্য অপরাধ হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে ৷
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত দিবসে তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না; বরং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হলো বয়োবৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী রাষ্ট্রনায়ক ও অহংকারী দরিদ্র। [সহীহ মুসলিম,মিশকাত, হাদীস নং ৫১০৯]
পতিতাবৃত্তি তো দূরের কথা শরীআত পর্দা ফরয করেছে ৷ নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছে এবং গায়ের মাহরাম স্ত্রীলোকদের সঙ্গে নির্জনে মিলিত হওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এভাবে ব্যভিচারের সকল উপায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তা সত্ত্বেও কোন নারী-পুরুষ যদি ব্যভিচার করে তার জন্য নির্ধারিত শাস্তির বিধান রয়েছে ৷
বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে না মরা পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। এভাবে সে তার কাজের উপযুক্ত পরিণাম ভোগ করবে এবং হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল এখন তেমনি করে যন্ত্রণা উপভোগ করবে। আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীদেরকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে এটাই শরীআতের সর্বোচ্চ শাস্তি। একদল মুমিনের সামনে অর্থাৎ জনতার সামনে খোলা ময়দানে এ শাস্তি কার্যকর করতে হবে, যাতে সে অপমানের চূড়ান্ত হয়। একই সঙ্গে তাকে এক বৎসরের জন্য অপরাধ সংঘটিত এলাকা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এরূপ ব্যবস্থা চালু হলে ব্যভিচারের মাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ ৷ আর হ্যাঁ শাস্তির বিধান কার্যকর করবে সরকার বা বিচার বিভাগ ৷ সকলের এ কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে রিজিকের একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালা ৷ সবার নির্ধারিত রিজিক সময়মতো আসে ৷ তিনি পাঠিয়ে দেন ৷ সামান্য অভাব ও দারিদ্র শরয়ী কোন ওজর নয় ৷ শরিয়তের বিধান লঙ্ঘনের কোন সুযোগ নেই ৷ তারপরও যদি কেউ পতিতাবৃত্তিকে ভরণপোষণের পেশা বানায় তাহলে সে জঘণ্য অপরাধ করবে ৷ নিকৃষ্ট হবে তার সকল আয় ৷
আবু মাসুদ আল আনসারি বর্ণিত ৷
আল্লাহর বার্তাবাহক কুকুরের মূল্য, পতিতাবৃত্তি থেকে অর্জিত অর্থ এবং জাদুকরের আয়করা অর্থ নিতে নিষেধ করেছেন। ( সহীহ বুখারী)

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আজ স্বদেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন পতিতাপল্লী, রেস্টহাউজ, হোটেল, পার্কে অবৈধ যৌনাচার চলে ৷ বিষয়টি পারস্পরিক কেনাবেচার ব্যাপার, দুটো পক্ষের দরকষাকষি ও দেনা-পাওনার মতো তাই এক পক্ষের কারণে পতিতা ব্যবসা চলতে পারে না। মূল কারণ পুরুষদের দিকের। চাহিদা না থাকলে যেমন জোগানের প্রশ্ন আসে না, চাহিদার কারণেই মূল্যবৃদ্ধি ও চোরাচালান পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই চাহিদাই প্রধান। পুরুষের চাহিদা মেটাবার জন্যই নারী ব্যবসা। ব্লু-ফিল্ম, পর্নোসাহিত্য ও অশ্লীল ম্যাগাজিন পুরুষদের যৌন উত্তেজনার অন্যতম কারণ। ব্লু-ফিল্ম, অশ্লীল ম্যাগাজিন ও তথাকথিত যৌন উত্তেজক গল্প-উপন্যাস এবং বিদেশী যৌন উত্তেজক ছায়াছবির ব্যাপক ছড়াছড়ি যুবকদের দেহমনে কামনার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তখনই তারা অবৈধ নারী সংসর্গ কামনায় পাগলপারা হয়ে ওঠে। যে কোনো উপায়ে নারী ধর্ষণের চেষ্টা করে, না পারলে ছোটে পতিতালয়ের উদ্দেশ্য।
দেরিতে বিয়ে করাও অবৈধ পথে যাওয়ার একটি কারণ। যত কারণই থাক ধর্মহীনতা ও নৈতিকতার অবক্ষয় সকল অপকর্মের মূল কারণ। তা যেমন যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।
তাই ধর্মীয় বিধান মানার পাশাপাশি অন্যকে সাবধান করা জরুরী ৷ যেন সমাজের অপরাধ বীজ, সংসারে অশান্তির আগুন ,ভয়াবহ এইডসসহ অন্যান্য রোগ থেকে সবাই নিরাপদ হতে পারে ৷ তাই জঘণ্য এই পতিতাবৃত্তি বন্ধের আওয়াজ তোলা সময়ের দাবী ৷

লেখক: আলেম, কবি ও আলোচক

Leave a Comment