বেদনার রং

বেদনার রং

ইসলাম তরিক

ভাদ্র মাস। প্রচন্ড গরম। গাছের পাতা একটুও নড়ছে না। ভাপসা গরমে শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে অর্পিতার। আজ বিদ্যুৎও খুব বিরক্ত করছে। লম্বা লোডসেডিংএ মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। গ্রামের একতলা পাকাবাড়ি অর্পিতার। সারাদিনের রোদে ছাদ তেতে থাকে। বিদ্যুৎ না থাকলে সন্ধ্যারাতে ঘরে থাকা যায় না। গরমের তীব্রতায় মনে হয়, ঘরে যেন আগুন লেগেছে। প্রতিদিনের মতো আজও একই রকম পরিস্থিতি। তবে অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু লোডসেডিং বেশি। তার ওপর যোগ হয়েছে মানসিক টেনশন। সকাল থেকেই মনের অবস্থা ভালো নেই অর্পিতার। ইদানিং কেন যেন একটুতেই মেজাজ বিগড়ে যায় তাঁর।

বিষন্ন হৃদয়। অফিস থেকে ফিরে কিছুই ভালো লাগছে না। মাথাটা চিনচিন করে ব্যথা করছে। একটু ঘুমাতে পারলে হয়তো মাথাব্যথাটা কমতো। কিন্তু ঘুমানোর পরিস্থিতি নেই। এই গরমে কীভাবে ঘুমাবেন তিনি? ভাপসা গরম থেকে একটু নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য একটি জাতীয় পত্রিকা হাতে নিয়ে, সিঁড়ি বেয়ে ছাদে ওঠলেন অর্পিতা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। পাখিরা ফিরছে আপন নীড়ে। কর্মব্যস্থ মানুষগুলোও ভালোবাসার টানে বাড়ি ফেরা শুরু করেছে। মেঘলা আকাশ। ধীরে ধীরে ঘন অন্ধকারের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদুর পেতে ছাদে বসলেন তিনি। মোবাইলের স্বল্প আলোয় পত্রিকার পাতা উল্টাতে লাগলেন অর্পিতা। কিন্তু কোনো সংবাদই ভালো লাগছে না তাঁর। আজকাল পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে খুন-ধর্ষণের ও রাজনৈতিক নেতাদের কাদা ছোড়াছুড়ির সংবাদ!
সেসব সংবাদ পড়ে বিষন্ন মনটাকে আরও বিষিয়ে তুলতে চান না তিনি। তাই সংবাদপত্র রেখে সাহিত্যম্যাগাজিন পড়ার জন্য তাঁর একমাত্র মেয়েকে ছাদে বসেই ডাক দিলেন।
অঞ্জনা। এই অঞ্জনা…
জ্বি আম্মু আসছি…
আটবছরের অঞ্জনা সিঁড়ি বেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ছাদে উঠল।
জ্বি আম্মু বলো। ডাকছ কেন?
এই গরমে কি করছ নিচে?
কিচ্ছু না আম্মু। মোবাইলে গেম খেলছি।
মোবাইলে গেম খেলছ, আবার বলছ কিচ্ছু করছি না।
অঞ্জনা চুপ করে থাকে। অর্পিতা কয়েক সেকেন্ড বিরতী দিয়ে আবার বললেন-
মোবাইলে গেম খেলে চার্জ নষ্ট করো না মামণি। দেখছ না বিদ্যুতের কী পরিস্থিতি? যাও নিচে গিয়ে আমার টেবিল থেকে মোটা ম্যাগাজিনটি নিয়ে আসো।

অঞ্জনা মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে নাদুস-নুদুস শরীরে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। ম্যাগাজিনটি হাতে নিয়ে সে আবার দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ছাদে যায়। অঞ্জনার হাঁপানো দেখে অর্পিতা ধমকের সুরে বললেন-
তোমাকে না বলেছি দৌড়ে সিঁড়িতে ওঠা-নামা করবে না।
আচ্ছ আর করব না।
প্রতিদিনই তো বলো। কিন্তু সিঁড়িতে পা রাখলে তোমার পা স্থির থাকে না কেন?

অঞ্জনা কোনো উত্তর না দিয়ে অপরাধীর মতো জুলজুল করে মায়ের দিকে তাকায়। অবুঝ শিশুর মনের ভাষা সবাই না বুঝলেও মায়েরা হয়তো ঠিকই বুঝতে পারে। অঞ্জনার না বলা কথাটি হয়তো মা অর্পিতা বুঝে ছিলেন। তাই আর কোনো কথা না বাড়িয়ে অঞ্জনার কপালে আদরের চিহ্ন এঁকে দিয়ে ম্যাগাজিনের দিকে মনোযোগ দিলেন। একটি জাতীয় দৈনিকের ঈদসংখ্যা এটি। অনেক দিন হলো ম্যাগাজিনটি এনেছেন তিনি। পড়ি পড়ি করেও পড়ার সময় হয়নি। নজরকাড়া প্রচ্ছদ ও ভেতরের গেটাপ-মেকাপ দেখে ম্যাগাজিনটি কিনেছিলেন সেদিন। আজও প্রচ্ছদের দিকে তীক্ষœ দৃষ্টিতে তাকালেন অর্পিতা। জলছাপে আঁকানো একটি নারীর অর্ধনগ্ন ছবি দিয়ে প্রচ্ছদশিল্পি কী বুঝাতে চেয়েছেন, তা উদ্ধার করতে পারলেন না অর্পিতা।
এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান না থাকায় নিজেকে একটু ছোট মনে হলো তাঁর।
তবুও প্রবল আগ্রহে সূচিপত্রে লেখকের নাম দেখতে লাগলেন তিনি।
লেখক তালিকায় চার নম্বর সিরিয়ালে শ্যামল কান্তি দাসের নামটি দেখে হৃদগহিনে খুশির ঢেউ বইয়ে গেল। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেল হৃদয়। চৈত্রমাসের মাঠ ফাটা জমিনে একফোঁটা বৃষ্টি যেমন তৃণলতাকে নতুন করে উজ্জিবীত করে, আজ ম্যাগাজিনে শ্যামল কান্তি দাসের নামটি দেখে অর্পিতাও তেমনই উজ্জিবীত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু না পাওয়ার সেই বিষাক্ত ছোবলে অর্পিতার হৃদয় নিমিশেই সদ্য জবাই করা কবুতরের মতো রক্তাক্ত হয়ে গেল।

আরো পড়ুন মৃত ব্যাক্তির নামে কোরআন খতম দেওয়া যাবে কি ?

অর্পিতা ফিরে গেলেন পনেরো বছর পূর্বে। এই সেই শ্যামল কান্তি দাস। যাঁকে আঁকড়ে ধরে অর্পিতার বাঁচার স্বপ্ন দেখতেন। অর্পিতার কাছে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ ছিল একপল্লায় আর অন্যপল্লায় ছিলেন শ্যামল। হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে ভালো বেসেছিলেন শ্যামলকে। কিন্তু বিধিবাম! নিজের করে পাওয়া হলো না শ্যামলকে। অনার্স প্রথমবর্ষেই শ্যামলের প্রেমে পড়েছিলেন অর্পিতা।

না না স্মার্টনেস বা পয়সাঅয়ালা ছেলের বিলাসবহুল্যতা দেখে শ্যামলের প্রেমে পড়েননি তিনি। সাহিত্যের প্রতি ছোটবেলা থেকেই প্রবল আকর্ষণ ছিল বলেই অনার্সে বাংলাতে ভর্তি হয়েছিলেন অর্পিতা। শ্যামলও তাঁর সঙ্গে বাংলায় পড়তেন। অসম্ভব মেধাবী ছিলেন অজপাড়া-গাঁয়ের শ্যামল কান্তি দাস। শ্যামলা রঙের পাঁচফিট তিনইঞ্চি লম্বা ছেলেটি এত তী² মেধার অধিকারী হতে পারে তা শ্যামলকে না দেখলে বুঝা দুষ্কর। প্রথমবর্ষ থেকেই শ্যামল জাতীয় পত্রিকায় কলাম লিখতেন। শুধু ছাত্ররা নয়, বাংলাবিভাগের স্যারেরাও শ্যামলের কলাম নিয়োমিত পড়তেন। তাঁর মতো ছাত্র পেয়ে বাংলাবিভাগের স্যারেরা গর্ববোধ করতেন। অবশ্য কলামের তেমন ভক্ত ছিলেন না অর্পিতা। কলামের চেয়ে শ্যামলের লেখা প্রবন্ধ ও গল্প খুব ভালো লাগত তাঁর। শ্যামলের এক একটি প্রবন্ধ পড়ে তিনি খুঁজে পেতেন নতুন দিগন্ত। আর গল্পের হাজারও শব্দে খুঁজে পেতেন জীবনের রং। শ্যামলের লেখাগুলো পড়ে তিনি প্রায়ই ভাবতেন, এই পুচকি ছেলেটি কীভাবে এত সুন্দর করে লিখে? মনে ক্ষাণিকটা ঈর্ষাও জাগত। কিন্তু দিনের পর দিন শ্যামলকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে অর্পিতা শ্যামলের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলেন তা নিজেও জানতেন না। প্রথমত অর্পিতা শ্যামলের ভালো বন্ধু ছিলেন। ভালো বন্ধুত্বের বিশালতায় একসময় সৃষ্টি হয় অবুঝ মনের ভালোবাসা।
শ্যামল কান্তি দাস ছিলেন গরিব ঘরের সন্তান। টিউশনি করে নিজের খরচ যোগাতেন। তাতে লেখালেখি ও পড়াশোনার সমস্যা হতো। কিন্তু কী করবেন? এ ছাড়াতো আর কোনো উপায় নেই। অর্পিতা যখন বিষয়টি জানতে পারলেন, তখন থেকেই প্রতিমাসে শ্যামলের মেসভারাসহ হাতখরচ দিয়ে দিতেন। যাতে শ্যামল লেখালেখিতে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন। লেখালেখির জন্য অর্পিতা শ্যামলকে একটি কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলেন। শর্টফিল্মে শ্যামলের খুব আগ্রহ ছিল। তাই শর্টফিল্ম করার জন্য একটি উন্নতমানের ক্যামেরাও কিনে দিয়েছিলেন তিনি। শ্যামল অর্পিতার দেওয়া টাকা এবং জিনিসগুলো নিয়েছিলেন এই শর্তে যে, সুযোগমত তিনি অর্পিতাকে সব পরিশোধ করে দিবেন। শ্যামলের শর্তের কথা শুনে অর্পিতা শুধু মুচকি হাসতেন। কারণ, তিনি তো ফেরতের আশায় শ্যামলকে এগুলো দিচ্ছেন না। যা কিছু করছেন তার সবটাই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার টানে করছেন। অর্পিতা যে খুব ধনী ঘরের সন্তান তাও নয়। তবে মোটামোটি স্বচ্ছল ছিল তাঁর পরিবার। অনেক কষ্টে এবং কৌশলে তিনি টাকাগুলো যোগার করে শ্যামলকে দিতেন। কারণ একটাই, তিনি শ্যামলকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। শ্যামলকে তিনি নিজ ব্যাংকের ট্রেজারি ভাবতেন। এখনও প্রতিটি নিঃশ্বাস শ্যামলের জন্যই প্রবাহিত হয় অর্পিতার। শ্যামল আছে বলেই অর্পিতা বেঁচে আছেন। শ্যামলকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্নটি ধুলিসাৎ হলেও শ্যামল আজও আছে অর্পিতার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে। শ্যামল অন্য মেয়েকে নিয়ে ঘর বাঁধলেও শয়নে-স্বপনে অর্পিতা শ্যামলের জন্য মঙ্গল কামনা করেন। যতদিন অর্পিতার ফুসফুস থেকে নিঃশ্বাস বেরুবে ততদিন তিনি শ্যামলের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করে যাবেন।

কারণ, শ্যামলের কোনো দোষ ছিল না। অনার্স প্রথমবর্ষেই শ্যামল তাঁর পিসির মেয়েকে বিয়ে করেন। তাঁর নাম পুষ্পিতা। পুষ্পিতার দুকূলে কেউ ছিলেন না। রোড অ্যাকসিডেন্টে তাঁর বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানীসহ কাছের আত্মীয়-স্বজন সবাই মারা যান। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বাসে চড়ে যাচ্ছিলেন সবাই। পথে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে, বাসটি নদীতে পড়ে যায়। পুষ্পিতাসহ দুএকজন যাত্রী সেযাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন। পুষ্পিতার দুক’লে কেউ ছিলেন না বলে মানবিক দিক বিবেচনা করে শ্যামলের মা তাঁর বোনের সর্বস্ব হারা মেয়ের সঙ্গে অল্প বয়সেই শ্যামলের বিয়ে দেন। শ্যামলও কোনো আপত্তি করেননি। বাধ্য ছেলে হয়ে মায়ের আদেশ মেনে নেন। কিন্তু শ্যামলের বিয়ের কথা তাঁর ভার্সিটির কেউ জানতেন না। এমনকি অর্পিতাও নন। বহুদিনের লালন করা মনের কথাটি যেদিন অর্পিতা তাঁর মনের মানুষকে জানিয়েছিলেন সেদিনই আকাশ ভেঙে মাথায় বাজ পড়েছিল অর্পিতার। মনের লালিত বহুদিনের স্বপ্নটি সেদিনই ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছিল। সেদিন আর শ্যামলকে কিছু বলার ছিল না তাঁর। সব তো নিয়তীর খেলা! ইশ্বরের কাছে তিনি তো কোনো অপরাধ করেননি। তবে কেন তাঁর জীবনে নেমে এলো এমন ঘন অন্ধকার?

অর্পিতা ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলেন। সিম্পুল জীবন-যাপন পছন্দ করতেন। ছিল না উচ্চাকাক্সক্ষা। কতজন কত কিছুই না চান ঈশ্বরের কাছে। কিন্তু অর্পিতা ঈশ্বরের কাছে কোনো দিন কোনো কিছু চেয়েছেন বলে মনে পড়ে না। ঈশ্বরের কাছে একটি জিনিসই তিনি বরাবর চাইতেন। আর সেটা শ্যামলকে। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর সেই একটি চাওয়াই পূর্ণ না করে সারাজীবনের জন্য পুঙ্গু করে রেখে দিলেন।
শ্যামল কান্তি দাস আজ বড়মাপের সাহিত্যিক। অর্পিতা শ্যামলকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখতেন শ্যামল আজ ঠিক তেমনই হয়েছেন। একনামে তাঁকে সারাবাংলা চিনেন। শ্যামলের বানানো শর্টফিল্ম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরুস্কৃত হয়েছে। অর্পিতা দূর থেকে শ্যামলের সাফল্যে করতালি দেন। কায়মনে প্রার্থনা করেন শ্যামল আরও দূরে যাক। পৃথিবীর শেষ অব্দি তাঁর নাম পৌঁছে যাক।

আজ ঈদসংখ্যায় শ্যামলের গল্পটি পড়ে অর্পিতা দুচোখের অশ্রæ ধরে রাখতে পারলেন না। শ্যামলের লেখা “গল্পের ভেতরে গল্প” গল্পটি পড়ে অর্পিতা বুঝতে পারলেন এ গল্পটি তাঁকে নিয়েই লেখা। এ গল্পের নায়িকা অর্পিতা নিজেই। ষোলো-সতেরো বছর পূর্বে ভার্সিটির সেই লাজুক ও ত্যাগী মেয়েটি তো আর কেউ নয়, সেতো অর্পিতা নিজেই। শ্যামল নিপূণভাবে অর্পিতার চরিত্রটি বর্ণনা করেছেন। পুরো গল্পটিতে মিশে আছে বেদনার নীল রং। না পাওয়া চরম আকুতি। অর্পিতাকে না পেয়ে শ্যামল ভালো নেই। সংসার জীবনে এতগুলো বছর পাড়ি দিয়ে আজ তাঁর মনে হচ্ছে অর্পিতাকে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি বড্ড ভুল করেছেন। সাহিত্যমনা অর্পিতাকে সহধর্মিনী হিসেবে পেলে হয়তো তাঁর জীবনটি ষোলো কলায় পূর্ণ হতো। অর্পিতার মন-তনুতে শ্যামল যে ভালোবাসার রং দেখেছেন শ্যামল এখনও যে সেই ভালোবাসার অপেক্ষায় মনদরজা খুলে বসে আছেন। কিন্তু সেটা কি আজ আদৌ সম্ভব? তবুও চাতক পাখির মতো অপেক্ষার প্রহর গুনছেন শ্যামল। আজও কিচিরমিচির করে পাখিডাকা মিষ্টি সকালে অথবা পরন্ত বিকালের গোধূলিলগ্নে শ্যামল অপেক্ষা করেন অর্পিতার সেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা জন্য। অর্পিতা ফিরে আসবেন। শ্যামলের জীবন কানায় কানায় পূর্ণ করবেন। এমন অংসখ্য কামনা বাসনায় ভরা গল্পের প্রতিটি শব্দ।

অর্পিতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গল্পের প্রত্যেকটি শব্দ মনোযোগসহকারে পড়ছেন। দুচোখের অশ্রু দিয়ে তাঁর বুক ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে তাঁর কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। হৃদয়ে চলছে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ। চিনচিনানি ব্যথা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। ব্যথার চোটে তাঁর দোম বন্ধ হয়ে আসছে। ভাবনার খেই নেই। অসংখ্য ভাবনায় বিভোর তিনি। মেয়ে অঞ্জনার কথায় তাঁর ভাবনায় ছেদ পড়ল।
মা তুমি এখনও ছাদে বসে আছ? বিদ্যুৎ তো অনেক আগেই এসেছে মা। তুমি নিচে যাবে না?
মেয়ের ডাকে অর্পিতা স্বাভাবিক হওয়ার অব্যর্থ চেষ্টা করলেন। কিন্তু মেয়ের কাছে ধরা পড়লেন।

মা তুমি কাঁদছ কেন? কী হয়েছে তোমার?
অর্পিতার মুখে কোনো কথা নেই। আবারও অঞ্জনার প্রশ্ন-
মা আব্বু কি তোমাকে বকা দিয়েছে? আচ্ছা, আব্বু আসুক আমিও আব্বুকে বকা দেবো। চলো নিচে যাব।
আধো আধো ভাঙা গলায়, মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে, মেয়ের প্রতি বড্ড মায়া জন্মে অর্পিতার।
মায়ের হাত ধরে অঞ্জনা টানাটানি করে বলে-
ওঠো মা, ওঠো, অ… মা ওঠো না…
মেয়েকে ভর করে দাঁড়ানো চেষ্টা করেন অর্পিতা। কিন্তু একটু দাঁড়াতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল।
সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ছাদে লুটিয়ে পড়লেন অর্পিতা।

সান্তাহার,বগুড়া।

Leave a Comment