রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ফজিলত ও আমল

রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ফজিলত ও আমল

 

 

সুপ্রিয় পাঠক পাঠিকা । কালের চাকা ঘুরে আবারো হাজির হলো পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস । রবিউল আউয়াল মাস হল আরবি ১২ মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস । মাস হিসাবে এর অবস্থান তৃতীয় ‌। রবিউল আউয়াল মাস এলেই দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় মিলাদুন্নবী, সিরাতুন্নবী ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন আয়োজন । দিনটিকে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে ও ছুটি ঘোষণা করা হয় । এবং ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত দিনটি উল্লেখ করা হয়েছে । আর সেই দিনটি হলো আগামী ৯ অক্টোবর রবিবার।

 

ওই দিবসে বা এ মাসে কি আমল আছে এগুলো এবার আপনাদের সাথে শেয়ার করা হবে । আমলের নিয়তে পড়তে থাকুন । এবং পাশে থাকুন ।

 

 

রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব

 

হলো রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ, ৯ তারিখ অথবা ১২ তারিখে পৃথিবীতে আগমন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । একই মাসে তার আগমন এবং চলে যাওয়া । মহান নবীর জন্ম নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । মুমিনদের খুশি হওয়ার অন্যতম মাধ্যম । কিন্তু তার চলে যাওয়া আবার কষ্টদায়ক । বেদনা বিধুর ।

 

মূলত পৃথিবীতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন নিঃসন্দেহে মানবতার ইতিহাসে এক মহা ঘটনা । এর চেয়ে বড় ,এর চেয়ে মহান, এর চেয়ে আনন্দের, এর চেয়ে বেশি বরকতময় এবং এর চেয়ে বেশি পবিত্র ঘটনা এ জগতে আর ঘটেনি এবং কেয়ামত পর্যন্ত ঘটবেও না । মহানবীর ছোঁয়ায় অনন্য হয়েছে এ রবিউল আউয়াল মাস । বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে তার জন্য । এবার জানাবো রবিউল আওয়াল মাসের আমলের কথা।

 

রবিউল আউয়াল মাসের আমল

 

রবিউল আউয়াল মাসের আমল

 

রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকলেও মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিশেষ কোন ইবাদতের নির্দেশনা নেই । তবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, আবু কাতাদাহ আনসারী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, সোমবারের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ,এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি আর এই দিনেই আমাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন করা হয়েছে । ( কিংবা তুমি বলেছেন) এদিনেই আমার উপর প্রথম ওহী নাযিল করা হয়েছে । ( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২, আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪২৬)

 

প্রতি সোমবারের পাশাপাশি বৃহস্পতিবারও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রাখতেন । এ সম্পর্কে নবীজির ঘোষণা হলো, বৃহস্পতি ও সোমবার মহান আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয় । তাই আমি চাই আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি ।

( সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২৩৫৮)

অতএব আপনারা যদি প্রকৃত আশেকে রাসুল হতে চান চাইলে প্রতি সোমবার এবং বৃহস্পতিবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত রোজা রাখুন । মূলত রোজার মাধ্যমে প্রমাণিত হবে কে প্রকৃত আশেক রাসূল আর কে মিথ্যাবাদী আশেকে মিষ্টি । অর্থাৎ জিলাপি খোর ।

 

আরো পড়ুন –

 

 

রবিউল আউয়াল মাসের আমলের ফজিলত

 

রবিউল আউয়াল মাসের আরেকটি ফজিলতের বিষয় হল আইয়ামে বীযের রোজা রাখা । আর আইয়ামে বীজ হল প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা । এই রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে । হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসের একাংশে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , প্রতি মাসে তিনটি নফল রোজা রাখ । কেননা প্রত্যেকটি নেকি কমপক্ষে দশ গুণ বর্ধিত করে দেওয়া হয় । এভাবে সারা বছর নফল রোজা রাখা সওয়াব হবে । ( সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

হযরত আবু জর গিফারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, হে আবু যর ! প্রতি মাসে তিন দিন নফল রোজা রাখতে চাইলে ১৩-১৪ ও ১৫ এই তিন দিন রাখবে । ( তিরমিজি ও নাসায়ী )

হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটাআমল কখনো ছাড়তেন না ।

১.আশুরার রোজা রাখা ।

২.জিলহজের ৯ দিন রোজা রাখা ।

৩. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা ।

৪ আর ফজরের ফরজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নাত । (নাসাঈ শরীফ )

অতএব এই ফজিলতগুলো অর্জন করতে হলে অন্য মাসের পাশাপাশি রবিউল আউয়াল মাসে আইয়ামে বীজের রোজা রাখুন । অন্তত এই মাসটাতে রাখুন ।

 

 

রবিউল আউয়ালের ভিত্তিহীন আমল

 

রবিউল আউয়াল পুরো মাসে কিংবা ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কোন নামাজের নির্দেশনা নেই । নেই কোন অন্য ইবাদতের বিধান । পূর্ববর্তী ইমাম-মুহাদ্দিস কেউ কোন আমল করেছেন মর্মে কোন বর্ণনাও নেই । বাজারে প্রতিটা প্রচলিত ছোটখাটো বইয়ের মধ্যে কোন নিয়ম লেখা থাকলে সেগুলো ভিত্তিহীন বর্ণনা । আর জাল ওগুলোর উপর আমল করার কোন সুযোগ নেই ।

আর বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে উক্ত দিবসকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন মিলাদ মাহফিল ও দলীল বহির্ভূত আমল ।

 

 

 

মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ ‌?

 

 

প্রচলিত ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ নয় । নিঃসন্দেহে এটি একটি বিদআত । তবে সাধারণত নবীজিকে নিয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়া কোথাও কোন আলোচনার আয়োজন হলে দোষণীয় নয় । কেননা

পৃথিবীতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন নিঃসন্দেহে মানবতার ইতিহাসে এক মহা ঘটনা । এর চেয়ে বড় ,এর চেয়ে মহান, এর চেয়ে আনন্দের, এর চেয়ে বেশি বরকতময় এবং এর চেয়ে বেশি পবিত্র ঘটনা এ জগতে আর ঘটেনি এবং কেয়ামত পর্যন্ত ঘটবেও না । মানবতার জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর শিক্ষার আলো লাভ হয়েছে । তার পবিত্র সত্তার বরকত নসীব হয়েছে ।

 

এটা এত বড় ঘটনা যে ইতিহাসের কোন ঘটনাই এত বড় হতে পারে না । যদি ইসলামে কারো জন্মোৎসব পালন করা হতো তাহলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন থেকে উত্তম কোন দিন পাওয়া যাবে না যেদিনে উৎসব পালন করা যাবে ও তাকে ঈদ হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে । অথচ নবুওয়াতের পর তিনি ২৩ টি বছর দুনিয়াতে অবস্থান করেছেন এবং প্রত্যেক বছরের রবিউল আউয়াল মাস এসেছে । স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়ালকে জন্ম দিবস হিসেবে পালন করেননি ।

 

বরং তার কোন সাহাবীও ১২ রবিউল আউয়ালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিন বিশেষ পদ্ধতিতে উৎসব পালন করেননি । চার মাযহাবের ইমামগণ , বিশেষ করে ইমাম আবু হানিফা রহ,ইমাম মালেক রহ: ইমাম শাফেয়ী রহ: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ: পালন করেননি । প্রসিদ্ধ কুতুবে সিত্তার ইমামগণ পালন করেননি। তাহলে বর্তমানে যে সব আলেম ঈদে মিলাদুন্নবীর পক্ষে অবস্থান করছে তারা কি ঐ সব মনীষীদের চেয়ে বেশি হাদীস বুঝেছে ? বেশি আমল করছে ? কখনোই নয় । সেটা সম্ভবও নয় ।

 

নবীজির জীবন নিয়ে আলোচনা করতে চান তাহলে সারা বছর করুন । নবীজির আলোচনা শুধু রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে নির্ধারিত করে করা হবে কেন ? তার সিরাত তো মাহফিলে ,মসজিদে ,অফিস, ঘরে ,মাঠে ময়দানে সর্বত্র হওয়া উচিত। এবং বরকত লুফে নেওয়া উচিত । শুধু একটি দিন বা একটি মাসকে তার আলোচনার জন্য খাস করে নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ?

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সত্যটা বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

লিখেছেন: মাওলানা শরিফ আহমাদ

লেখক ও শিক্ষক

 

 

ট্যাগঃ

 

রবিউল আওয়াল মাস

রবিউল আউয়াল মাস
রবিউল আউয়াল মাস ২০২১

রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ আজ
রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ
রবিউল আউয়াল কবে

রবিউল আউয়াল মাসের রোজা
রবিউল আউয়াল মাসের আমল
রবিউল আউয়াল মাসের খুতবা

রবিউল আউয়াল নামের অর্থ কি
রবিউল আউয়াল মাসের ফজিলত

 

 

1 thought on “রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ফজিলত ও আমল”

Comments are closed.