কৃষ্ণচূড়া

 কৃষ্ণচূড়া ||

পাপিয়া (কবিতা) ||

“আবার সেই দিন চলে এলো তাইনা?”
হুম,চলে এলো। তাকিয়ে দেখো আমি তোমার পছন্দের সেই একি লাল পাড় সাদা শাড়িটা পড়েছি।
হ্যা দেখেছি। এই শাড়িটা পড়লে তোমাকে চমৎকার সুন্দর লাগে!তোমাকে বার বার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।তোমাকে লক্ষবার আপন করে পাওয়ার সাধ জাগে। তোমার চোখের মায়াতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। রমলা তুমি কি জানো তুমি কতো সুন্দর?
“হুম জানি।তোমার মুখে হাজারবার শুনেছি।তবু বার বার শুনতে ভালো লাগে।”
“এই নিরব রাস্তা,চারিদিকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের নানান উপকরণের মধ্যে ওইযে দেখো দূরে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যায়।তোমাকে ওই গাছটার মতো সুন্দর লাগছে।দেখেছো পুরো গাছময় কৃষ্ণচূরা ফুটে আছে!কি সুন্দরই না লাগছে।”
রুদ্র!
হ্যা বলো রমলা?

আরো পড়ুন – শুক্রবার মারা গেলে কি কবরের আজাব মাফ?

“তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো?”
তোমার ভালোবাসাই তো আমার অস্তিত্ব! তাহলে তোমাকে না ভালোবেসে উপায় কি?আচ্ছা রমলা,তুমি তো কখনো বলোনি যে তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো?
তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো রমলা?
জানিনা!
তুমি কি আমাকে ঐ দূর আকাশে জমে থাকা মেঘের মতো করে ভালোবাসবে?মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার পরও আবার যেভাবে একটু একটু করে মেঘ জমতে থাকে আকাশের বুকে,এভাবে অভিমান ঝরিয়ে দিয়ে আবার ভালোবাসবে আমায়?
তুমি কি আমাকে নদীর মতো ভালোবাসবে রমলা? নদীর জল যেমন সারাজীবন বয়ে চলে, তেমনি ভাবে আমার ভালোবাসা বয়ে বেড়াবে-তো?
ঠিক কতোটা ভালোবাসো তুমি আমায়?বলোনা রমলা!
একি!বৃষ্টি শুরু হলো যে!চলো ওই সামনের গাছটার নিচে দাঁড়াই।
“না,না রমলা।চলো আজ দুজনে মিলে ভিজি।”
তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে রুদ্র।
হলাম নাহয় একদিন অসুস্থ। তাতে কি খুব কিছু আসবে যাবে?
তোমার মনে আছে রুদ্র, সেদিনও তুমি হুবহু এই কথাগুলোই বলেছিলে আমায়।তারপর….
হ্যা সব মনে আছে আমার। তারপর বাদল ছুটে এলো! হাঁপাতে হাঁপাতে…..
হুম। হাঁপাতে হাঁপাতে আমার থেকে খানিকটা দূরে নিয়ে তোমাকে কিছু একটা বললো। আর তুমি আমার কাছে ফিরে এসে বললে-“ভালোবেসে তোমাকে এখনো কিছু দিতে পারিনি,এবার যদি তোমাকে স্বাধীনতা উপহার দেই তুমি নিবে না? আজ তোমার জন্য এক স্বাধীন বাংলা আনতে যাবো। ফিরতে দেরি হতে পারে।তুমি অপেক্ষা করো!”
স্বাধীনতা পেলাম কিন্তু তুমি কোথায় রুদ্র? তুমি যে বললে ফিরে আসবে?তুমি যে আমাকে অপেক্ষা করতে বললে? জীবনের চল্লিশটি বছর অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিলাম কিন্তু তোমার দেখাতো আর মিললো না রুদ্র!এখন জীবন-মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও তোমার জন্য অপেক্ষা করছি!শুধুই তোমার জন্য!
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না যে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসতাম?? আমি তোমাকে ততটাই ভালোবাসতাম যতটা ভালোবাসলে মৃত্যু অবধি অপেক্ষা করা যায়।
এখনো তোমার ভালোবাসাকে স্মরণ করতে এই পুরোনো জায়গাটাতে ফিরে আসি,বারবার সেই পরুনো তোমার শরীরের গন্ধ মেশানো বৃষ্টিতে ভিজি।এই চল্লিশ বছরে তেমন কিছুই বদলায়নি জানো!সেই রাস্তা, সেই লাল পাড় সাদা সাড়ি,সেই কৃষ্ণচূড়া, সেই বৃষ্টি আর অবিকল সেই ভালোবাসা।
সামান্য কিছু পরিবর্তন এসেছে মাত্র!রাস্তাটা একটু ক্ষয় হয়েছে,আর শাড়িটার টকটকে লাল পাড়টা কেমন একটু ফেকাসে হয়ে গেছে। তখন কৃষ্ণচূরা গাছটা দেখার জন্য -৪.৭৫ পাওয়ারের চশমাটা লাগতো না কিন্তু এখন ওটা ছাড়া দেখতে পাইনা। বার্ধক্যের ছাপও পড়েছে চোখে মুখে। এখন আর আমাকে কৃষ্ণচূড়া গাছটার মতো সুন্দর দেখায় না।

Leave a Comment