পনের বছর পর

পনেরো বছর পর

– মোঃ মারুফ আহমেদ

মি.তাপস অফিসে চাকরি করে।একদিন তার ফ্যামিলিকে নিয়ে খেতে এসেছে রেস্টুরেন্টে। তবে মি.তাপস আসতে একটু লেট করে ফেলেছে। তার আবার ২জন সন্তান ও রয়েছে। তো লেট করে আসায়, তার সন্তান ও ওয়াইফের রাগ হয়েছে।
     ওয়াইফঃ দেরী হলো কেনো? কি করতে ছিলেন শুনি মশাই। আপনার তো সবসময় ই দেরী।
     মি.তাপসঃ সরি, আজকে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।
     ওয়াইফঃ আধঘন্টা যাবৎ বসে রয়েছি আপনার তো কোনো খবর ই নেই। তা বললেন নাতো, কি কাজ ছিলো আপনার?
     মি.তাপসঃ বলতে দিলে কই? অফিসে ব্যাপক কাজ ছিলো। তাই আর কি……
     ওয়াইফঃ আপনার তো সবসময় অফিস অফিস।
এমন সময় ছেলে বলে উঠলো,
     ছেলেঃ বাবা তুমি ভুল করেছো তোমাকে সরি বলতে হবে।
     মি.তাপসঃ বললাম তো বাবা, একবার।
     ছেলেঃ না, আবার বলতে হবে।
     মি.তাপসঃ আচ্ছা, সরি। নাও,এবার তো খাবার অর্ডার করো।
     কিছুক্ষণ পর, আরেক জুটি এসে তাদের পাশের টেবিলে বসলো। মি.তাপস এদিক সেদিক তাকানোর ফলে তাকে দেখতে পেলো। এবং মহিলাটি কে দেখে চিনতে পারলো। সে এসেছে তার স্বামী, ও মেয়েকে নিয়ে। মি.তাপস মনে মনে বলেই ফেললো,[এ তো আমার কলেজ লাইফের সেই ছোটবেলার সখ দেখি।] আসলে মহিলাটির নাম, সোখিন। আদর করে মি.তাপস সখ ডাকতো।
     তাকে দেখে মি.তাপসের সেই পনেরো বছর আগের একদিন এর কথা মনে পরে গেলো।
মি.তাপসঃ আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি, সখ। আমাকে রেখে অন্যকে বিয়ে করো না।
     সোখিনঃ আমার কিছু করার নেই। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার বাবা মা তোমাকে মেনে নেয় নি। তোমার কোনো চাকরি ও নেই। কিভাবে মেনে নেবে?
মি.তাপসঃ আজ চাকরি নেই, কাল হয়তো হয়ে যাবে।
     সোখিনঃ আমার বাবা মা ছেলে ঠিক করে ফেলেছে। বিদেশ থাকে। একটি কোম্পানির মালিক। ভালো সেলারি আছে। আমি তার সাথে সুখেই থাকবো। আমাকে পারলে মাফ করে দিও। আর কোনো দিন আমাকে ফোন দিও না। কারন আগামি সপ্তাহে আমার বিয়ে। তারপর আমিও বিদেশ চলে যাবো।
     তারপর থেকে আর মি.তাপস তার কোনো খোঁজ ও পায় নি। আর কোনো চেষ্টাও করে নি। প্রায় ২ মাস পর, মি.তাপস চাকরি পায়, আর বিয়ে করে লাইফ স্যাটেল করে ফেলে। আর আজকে সেই সখ এর সাথে দেখা।
     ভাবতে ভাবতে চোখে পানি চলে আসে মি.তাপসের। আর ততক্ষনে ওয়াইফ বলে উঠলো,
ওয়াইফঃ কি হলো তোমার,কি ভাবছো? আবার দেখি চোখে পানি। কি হয়েছে?
মি.তাপসঃ না কিছু না। এমনি আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। তোমরা খাও।
মি.তাপস বাইরে থেকে মুখ ধুয়ে এসে দেখতে পেলো,সখ এর স্বামী তার ওয়াইফ এর সাথে, এমনকি সখ ও তাদের পরিচয় আলাপ হচ্ছে। আসলে সখ এর স্বামী ছিলো মি.তাপসের ওয়াইফ এর বন্ধু।
    সখ এর স্বামীঃ কি খবর আমাকে চিনেছো?
     তাপসের ওয়াইফঃ না, তুমি রাফি কি?
     সখ এর স্বামীঃ জ্বী। চিনেছো তাহলে। এই আমার ওয়াইফ,সোখিন।
     সোখিনঃ কেমন আছেন?
    তাপসের স্ত্রীঃ ভালো,আপনি কেমন আছেন?
     সোখিনঃ ভালো।
এমন সময় তাপস এসে টেবিলে বসলো।
তাপসের ওয়াইফ বললো আমি এদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।
     তাপসের ওয়াইফঃ এই হচ্ছে আমার বন্ধু রাফি। আর এটা তার ওয়াইফ সোখিন।
     তাপসঃ সালাম দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করলো।
    সোখিন বলে উঠলোঃ তুমি তপু না। সেই কলেজ লাইফের সবচেয়ে বেস্ট স্টুডেন্ট।
    তাপসঃ ইচ্ছে করেই না চেনার ভান ধরলো। বললো না।
তারপর সোখিন একটু বাইরে চলে গেলো। আর এখানে তাপস ও বাইরে চলে এলো। এবার তাপস সোখিন কে জিজ্ঞেস করলোঃ
     তাপসঃ কেমন আছো তুমি? সখ
     সোখিনঃ সখ আমায় একমাত্র আমার তপু ডাকতো। তুমি কি তাহলে?
     তাপসঃ হ্যাঁ ঠিক ধরেছো। আমি সেই চাকরি না পাওয়া তাপস।
     সোখিনঃ প্রায় পনেরো বছর পর তুমি জিজ্ঞেস করছো?  আমি কেমন আছি? এতবছর কোথায় ছিলে?
     তাপসঃ তুমি আমাকে বলেছিলে তোমার কোনো খোজ খবর নিতে না তাই।
     সোখিনঃ আমি এখন বলবো না,কেমন আছি?  আবার যখন দেখা হবে তখন বলবো আমি কেমন আছি? কান্না মাখা সুরে।
     তাপসঃ খুব সুখে আছো নিশ্চয়ই। কোম্পানির মালিককে নিয়ে। আমিও আজ চাকরি করি। আমিও একটি কোম্পানির মালিক আজ। কান্না মাখা সুরে। তবে ভালো থেকো।
     সোখিনঃ তুমিও তো খুব সুখে আছো,আমাকে ছেড়ে অন্যকে বিয়ে করে ফেলেছো? সন্তান ও হয়ে গিয়েছে।
     তাপসঃ তুমি সার্থপর হলে আমার বিয়ে করতে দোষ কোথায়?
এই বলে তাপস চলে আসলো। আর সোখিন কিছুক্ষণ কান্না করলো। তারপর চলে আসলো।
আর এই বিষয়গুলো তাপসের ওয়াইফ ও সোখিন এর স্বামী জানতো। তারপর ও তাদের মানসিকতার উপর ছেড়ে দিয়েছিলো।
অতঃপর ২ জুটিই তাদের খাবার শেষ করে ফিরে এলো।

Leave a Comment