সময়ের অনুশোচনা
সিদরাতুল মুনতাহা ইরিন
”এইযে এখুনি বুঝি ট্রেনটি ছেড়ে দিল। দৌড়ের উপর না থাকলে হয়তো আজ সব হারিয়ে ফেলব। ওদিকে সিনজির এত ঠেলা চলা হয়তো আজ আমাকে আর আমার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেনা। কী হবে আজ? ভাগ্য কি দিবে আমার সঙ্গ? নাকি আজও আমি সেই অকেজো শুভই রয়ে যাব?” মিরপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টার ট্রেনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া শুভর মনে এভাবেই নানান চিন্তার খেলা চলতে থাকে।
ঘড়ির কাঁটা সামনে এগুচ্ছে দ্রুত। এমন সময়েও রাস্তায় জ্যাম লেগে গেছে। ট্রেন মিস করলে শুভর যে ক্ষতি হবে, জীবনে তা পুষিয়ে নেয়া বোধহয় সম্ভব নয়। এমন ভাবনার ভেতরে খুরিয়ে খুরিয়ে চলছে শুভর সিএনজি।
নানা দুশ্চিন্তা শুভর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে কী হয়ছিল শুভর? জীবনের কোন জিনিসটাই-বা তার এত প্রয়োজন হয়ে উঠেছিল?চলুন একনজরে দেখে আসি সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা।
”ডাক্তার সাহেব, কী হয়েছে গো শুভর মায়ের?” চিন্তন মন নিয়ে জিঙ্গাসা করছে শুভর বাবা।
”মানে আপনার স্ত্রীর একটু ছোট অ্যাটাক এসেছে ব্রেনে। বেশি বড় কিছুনা। অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে।” আশ্বস্থকণ্ঠে বললেন ডাক্তার।
”কত টাকা লাগতে পারে অপারেশনে?”
”আরে অত বড় কিছুনা। এই ধরেন প্রায় একলক্ষ টাকা। দ্রুত এ সপ্তাহের ভিতরেই জোগার করতে হবে। তাই প্রস্তুতি শুরু করে দেন।”
”কী বললেন? একলক্ষ টাকা!! এতটাকা তো আমি জীবনে নামমাত্রই শুনেছি। আমার সামর্থ্যানুযায়ী একটু ভেবেচিন্তে বলুন ডাক্তার। টাকা কি আর কমানো যায় না?”
আরো পড়ুন –মিডিয়া ছেড়ে ধর্মকর্মে ফিরছেন অভিনেত্রী সুজানা জাফর
”এসব কী বলছেন? আপনার সামর্থ্য দেখেই তো বললাম। এরচেয়ে কম আমি আর করতে পারব না। আর টাকার ব্যবস্থা দ্রুত করুন। নাহলে আপনার রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হবেনা।”
”সবেই তো বললেন ডাক্তার যে এটা বেশি বড় কিছুনা। আবার মূহূর্তেই মতবদল করে বলছেন খানিক দেরি হলে রোগীকে বাঁচানো আর সম্ভব হবেনা। কথা তো সবই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।”
”এই মূর্খের দল, বললাম – এখন বেশি কিছুনা। তবে দেরি হলে তো অনেক বড় কিছুই হবে। সেটা যদি খানিক দেরিও হয়। তাইতো যতটুকু সময় রোগীকে দেয়া যত আপনাদেরকেও ততটুকু সময়ই দিয়েছি টাকা জোগারের জন্য। তাই তর্ক না করে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিন। আর আপনি যদি আমার চেয়ে এতই ভালো জানেন তাহলে আপনিই কেন অপারেশনটা করছেন না?”
”আরে ডাক্তার আপনি তো রাগ করে ফেললেন। ক্ষমা করে দিন। ঠিকই বলেছেন, আমি তো মূর্খ তবে ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে সবটাকা শেষ করে ফেলেছি যেন কেউ তাঁকে মূর্খ বলতে না পারে। তবে আফসোস! ছেলেটা একটুও ভালো হলোনা গো। কী দিই নি তাঁকে? সারাজীবনের রক্ত-পানি করার টাকাই তো তাঁর পিছনে ফেলেছি, এখনও ফেলছি। নিজেরা অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাইনি, ঈদে নতুন-জামা কিনিনি, তিন বছরের ছেঁড়া জুতা আজও চালাচ্ছি। নিজেদের জন্য কোনো পুঁজি রাখিনি। বৃদ্ধ হয়ে গেলে চলব কী করে, তাও ভাবিনি। কিন্তু ছেলের জাঁকজমক ও আরামআয়েশে কোনোরূপ কমতি করিনি। বন্ধুরা জানে সে যেন কোন কোটিপতির ছেলে! তবে তার পরিবারের যে এ দুর্দশা তার খবর কার-বা জানা?”
”সেটা আপনাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমার ফিস ছাড়া আমি অপারেশন করছিনা। যতসব কোথা থেকে যে চলে আসে!”
এগুলো বলতে বলতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে শুভর বাবার। পাশ দিয়ে কানপেতে শুনছিল শুভ। এতদিন সে কিন্তু এত কিছু কখনোই উপলব্ধি করেনি। মা-বাবা যে এত খাটেন তার পিছনে সে কখনো বুঝতেই পারেনি। সারারাত এটা নিয়েই ভাবতে-ভাবতে রাত কেটে গেল তার। ছদিন কেটে গেল। বাবা যেমন-তেমন করে ২৫ হাজার টাকাই আত্মীয়দের নিকট ধার নিতে পারলেন। সকলেই চিন্তায় অস্থির মাত্র একদিনেই কীভাবে ৭৫ হাজার টাকার ব্যবস্থা করবেন? ওদিকে মায়ের অবস্থাও গুরুগম্ভীর। কীভাবে কী হবে?
আর তারপরপর দিনই শুভর সকালে ঘুম ভাঙ্গে মোবাইলের রিংটোনে।
‘আপনি আজ থেকেই চাকরি জয়েন করুন।আমরা আপনার পারফর্মেন্স দেখে খুবই খুশি। আর সাথে থাকছে আপনার একমাসের বেতন এডভান্স।’
শুনে তো আত্মহারা শুভ! সে কয়েকদিন থেকেই চাকরির জন্য অনেক জায়গায় আবেদন করছে। আজ পরিশেষ এক জায়গা থেকে ফোন এসেই গেল। সেখানে মাসিক বেতন ৭৫ হাজার টাকা!!
তাই সে আজ সে প্রচুর আনন্দিত। অবশেষে সে তার মা-বাবার জন্য কিছু করতে পারবে। হয়তো এটি আল্লাহরই একটি ইশারা – তাঁর মাকে অসুস্থ করা, তারপর তার মনে অনুতপ্ত ভাবোদয় করা। আর উনার ইশারায়েই তার মাকে আবার সুস্থ করে তোলার পথ দেখানো। আলহামদুলিল্লাহ! ইয়া রব্বুল আলামিন।
এভাবেই শুভ চাকরিতে প্রথমদিন শেষ করে ছুটে চলছে তার মায়ের কাছে। চাকরির পর সে ভেবেছিল পরিবারকে নিয়েই মিরপুর সেটেল হয়ে যাবে। অফিস থেকে বের হয়ে সে সর্বপ্রথমেই তার মায়ের অপারেশনের টাকা বিকাশ করেছে। এখন শুধু দেখার পালা মাকে।
আরো পড়ুন – দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা | দীদার মাহদী
তবে রাস্তার জ্যাম পেরিয়ে সে কখন পৌঁছবে মায়ের কাছে? কখন গিয়ে জড়িয়ে ধরবে মাকে? এসব কথা ভেবে তার প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে। সে সাহায্য চাইছে আল্লাহ থেকে। তখনই সিএনজির স্টার্টের শব্দ আসে। “একি? হঠাৎ করে জ্যাম ছেড়ে দিল কীভাবে??”
তখনই সিএনজিওয়ালা বলে উঠল, “স্যার, সামনে এক মুরগি-ট্রাকের সব মুরগিগুলো রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল। তাই রাস্তা আটকে ছিল। এখন মালিক সব মুরগি ট্রাকে উঠিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে।”
তবে শুভ মুচকি হেসে মনে-মনে বলল, ”আমি জানি আল্লাহ, তুমি বান্দাকে নিরাশ করোনা। আর এটা তারই উদাহরণ।”
আর এভাবেই শুভ সময়মতো স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন ধরে এবং ধীরে-ধীরে সকল বাধা পেরিয়ে পৌঁছে যায় মায়ের কাছে। এসেই তার বাবা বলে উঠে, “শুভ জানিস, তোর মায়ের অপারেশন সাকসেসফুল রে বাবা! এখন সে শুধু তোকেই দেখতে চায়। কখন থেকে তোর অপেক্ষা করে আছে। যা দেখা করে আয় মায়ের সাথে।”
রুমে ঢুকে শুভর ‘মা’ ডাক দিতেই চোখ খুলেন মা।
”শুভ বাবা গো, তুই এসেছিস? আজ মা তোর উপর অনেক গর্বিত রে।” একথা শুনেই শুভর মন ভরে। যেয়েই সে মাকে জড়িয়ে ধরে। আজ সে সফল! খুশিতে অশ্রু বইতে থাকে তার চোখ দিয়ে।
আর এভাবেই আল্লাহর উপর আস্থা শুভর মতো সবাইকেই তাদের গন্তব্যে পৌঁছাবে, ইনশা আল্লাহ।
বাহ! চমৎকার!
Well done!
Impressive
Ma Sha Allah, khub sundor!
Wow,so good.
খুব সুন্দর গোছানো লেখা,,চমৎকার
Onek valo hoyeche.
সুন্দর হয়েছে
Eto shundor golpo likhte paro sheta ami agey jantam nah doa kori shamne aro shundor shundor golpo jno likhte paro😃
Well done! Very impressive story…Wish your good luck
Good
Very good! May allah bless you!
Good!
Well done, go ahead to reach your aim in life.
খুবই সুন্দর হয়েছে ❤️
মোঃএমাম হোসেন
মাশাল্লাহ। অনেক ভালো হয়েছে। দোয়া করি অনেক দূর এগিয়ে যাও।
Well done.
তোমার গল্প অতুলনীয়।
Osadharon dear❤️
মাশাল্লাহ। অনেক ভালো হয়েছে। দোয়া করি অনেক দূর এগিয়ে যাও।
সুন্দর হয়েছে লেখাটা। 😊
Wow onk beshi sundor akta golpo amar kase khub vlo lagase❤️❤️
Golpoti onek sundor❤️❤️
I wish u to move forward with this talent. I always believe that you won’t give up in this pandemic situation. I have faith on u. MOVE forward, and your story is very awesome.thats it my besty.