আদর্শ ছেলের গল্প
✍✍মোঃমারুফ আহমেদ
ছোট্ট ছেলে সাফিন।মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। ছোট বড় সকলকে সালাম দেয়।সবার সাথে ভালোভাবে কথা বলে।ছোটদের কে আদর ও বড়দের শ্রদ্ধা করে।প্রানিদের সাথে ভালো আচরন করে।সবাই তাকে ভালোবাসে।দোয়া করে সে যেনো দেশের সম্পদ হয়ে যায়।দেখতে ফর্সা, পাঞ্জাবী পড়া, চুল নেই বললেই চলে। খুব মার্জিত ভাবে হাটাচলা করে। দৌড়াদৌড়ি তো কখনো করে না।একদিন ছেলেটি তার হুজুরের সংগে বাসে উঠেছিলো গ্রামের বাড়ি যাবে,বাবা মা সবাই ঐখানে থাকে।বাসে উঠেই দেখতে পেলো মহিলাদের সিটে পুরুষ বসে আছে আর মহিলাটি বাচ্চা কোলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে মহিলাটিকে বসতে দিলো।মহিলাটি প্রান ভরে দোয়া করে দিলো।মহিলাটি বললো, বাবা কে তুমি?? তা আমি জানি না, তবে তুমি আমার যে উপকার করেছো আল্লাহ তোমাকে এর উত্তম যাযাহ দান করুক।তোমাকে আল্লাহ দেশের একজন খাদেম বানিয়ে দিক।হুজুর ও খুব খুশী হয়ে গেলো,এমন এক ছাত্র পেয়ে। তারপর বাস থেকে নামার পথে দেখতে পেলো একটি পিপড়া নামছে। সাফিন সাথে সাথেই থেমে গেলো।তার মাথায় হুট করে মনে পড়লো,ঐ হাদিসটির কথা সমগ্র সৃষ্টিই আল্লাহর পরিজন।অর্থাৎ পিপড়া আল্লাহর একটি মাখলুক একে মারা ঠিক হবে না।তারপর পিপড়াটি যেনো সাফিনের জায়গা ছেড়ে দিয়ে বললো,যাও ভাই যাও, আল্লাহ তুমাকে অনেক বড় করুক।বাস থেকে নেমে গেলো সাফিন। হুজুর বাড়ি আরো দূরে তাই হুজুর নামলো না।হুজুরকে বিদায় দিয়ে সাফিন হাটা শুরু করলো।হাটতে হাটতে সাফিন খুব ক্লান্ত। পানি কিনে অল্প একটু পানি খেয়ে বাকি পানি রেখে দিলো।তারপর আবার হাটা শুরু করলো।তবে সাফিন হাটতে হাটতে কি যেনো বলছিলো??লক্ষ্য করা যাক।হ্যাঁ, সুবহানাল্লাহ ইবে হামদি সুবহানাল্লাহ হিল আযিম।এই দুইটা বাক্য হাটতে হাটতে পরছিলো।কারন সাফিন জানে এই দুটি বাক্য আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়।আর কেউ যদি কোনো জমিনের উপর দিয়ে এই দুটি বাক্য পরতে পরতে যায় তাহলে কিয়ামতের দিন জমীনের চারপাশে যা ছিলো সবাই সাক্ষ্য দিবে।তো তারপর সাফিন সামনে দেখতে পেলো এক গড়িব বৃদ্ধাকে।
আরো পড়ুন – নিজ মেয়েকে ধর্ষণ, পিতার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
আহারে পেটের কি অবস্থা মনে হয় এক বছর যাবৎ খায় না।সাফিনের খুব কষ্ট লাগলো। সাফিনের কাছে ২০টাকা ছিলো তা দিয়ে দুটি পাউরুটি আর একটি কলা আর তার হাতে যা পানি ছিলো দিয়ে দিলো।বৃদ্ধাটি দেখে খুব খুশী হয়ে গেলো যেনো আল্লাহর আরশ খুশী হয়ে গেলো।তারপর বৃদ্ধার সাথে সাফিন অনেক্ষন কথা বললো। আর সবচেয়ে আজব বিষয় ছিলো সে বলেছিলো, দাদি আপনার এই অবস্থা কেনো??বৃদ্ধা কখনো দাদি ডাকটাই শুনতে পায় নি।অনেক্ষন বৃদ্ধাটি হাসলো যেনো কত খুশী হয়েগিয়েছিলো।বৃদ্ধাটি মনে মনে দুয়া করলো হে আল্লাহ তুমি এই ছেলেকে জাতির নেতা বানিয়ে দাও তাহলে আর আমাদের এই অবস্থা থাকবেনা।সাফিন তারপর বৃদ্ধার কাছ থেকে সালাম দিয়ে বিদায় নিয়ে আবার পথ ধরা শুরু করলো।যেতে যেতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো দেখলো মাঠের আশেপাশে থেকে ছোট ছোট ছেলেরা খেলে বের হচ্ছে। সাফিন তাদের সাথে সালাম বিনিময় করে সুন্দর করে কথা বললো এবং পকেটে থাকা কয়েকটা লজেন্স হাতে ধরিয়ে দিলো। ছেলেগুলো খুব খুশী মনে চলে গেলো।সাফিনের বাড়িতে যেতে যেতে রাত্র হয়ে গেলো।বাসায় মা জিজ্ঞেস করে বসলো,কিরে সাফিন দেরি হলো কেনো??কখন রওয়ানা দিয়েছিলি।সাফিন বললো আম্মু আমি রওয়ানা দিয়েছিলাম সকালে। কিন্তু সারাদিনটা শুধু মানুষের সেবা করতে করতে শেষ হয়ে গেলো।বিশ্বাস করো আম্মু আমি চাইছিলাম দিনটা যাতে শেষ না হয় আমি যাতে আরো মানুষের জন্য সেবা করতে পারি। মানুষের সাথে যেনো আরো ভালো করে কথা বলতে পারি। আম্মু আমার খুব ইচ্ছা আমি একদিন দেখবো এদেশে কোনো মানুষ আর রাস্তায় হাত পেতে বসে নেই।কেউ আর গড়ীব নেই। বরং সবাই হবে মধ্যবিত্ত। আমার খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি মানুষ রাস্তায় পরে কাদঁছে।থাম বাবা থাম মায়ের চোখ অশ্রুতে ভিজে গেছে বিছানো পাটিতে টপটপ করে পরছে।মা দোয়া করলো,হে আল্লাহ তুমি আমার ঘরে এক আদর্শ ছেলের জন্ম দিয়েছো। এর জন্য তোমার কাছে শুকরিয়া। হে আল্লাহ তুমি ওকে তোমার বন্ধু করে নিও।আমিন।সাফিন তারপর এশার নামাজ শেষ করে সকলের জন্য ও নিজের জন্য দোয়া করে কোরআন নিয়ে বসলো।সারাদিন কোরআন টা পড়া হয়নি।কান্নামাখা সুরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলো।সবশেষে ঘুমিয়ে পড়লো তারাতারি। যাতে সকালে উঠে ফজরের নামাজ পরতে পারে।