নব অতিথী
মোঃ ইব্রাহিম বাহারী
অফিস থেকে বাসায় ফিরতে বেশ দেরি হয়েছে ওসমান সাহেবের নুর নগর বাস ষ্টান্ডে এসে দাড়িয়ে ছিল ঘণ্টা খানেক সময়।এই ছাড়া তার আর কোন উপায় অন্তর ছিল না।আষাঢ়ের ঘন বর্ষা আটকে দিয়েছিল গতি।বর্ষা ভালোভাবে থামেনি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। ওসমান সাহেবের ধৈর্য্য আর বাধ মানে না।বেরিয়ে পড়লেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।আবছা আলো ছায়া, গুড়ি গুড়ি বর্ষা গেটের কাছে আসতেই একটা কাতরান প্রাণীর শব্দ কানে আসল।বাম দিতে চোখ ঘরাতেই সামনে আসল একটা কালো সাদার ডোরা কাটা কুকুর ছানা।মানুষের গন্ধে কুকুর ছানাটি ওসমান সাহেবের খুব কাছে আসল।ওর শরীরটা পুরা পুরি ভেজা।মুখ তুলে দাতিয়ে আছে বড় মায়াবি চাহনী। ফ্যান ফ্যান করে তাকাচ্ছে আর লেজ নাড়াচ্ছে। কুকুর ছানাটির জন্য ওসমান সাহেবের বড় মায়া হলো। কুতুর কুতুর শব্দে ডেকে গেটের ভিতর নিয়ে গেল।
স্ত্রীকে ডাকলেন, নবাগত অতিথিকে সাথে নিয়ে আসার কথা জানালেন।স্ত্রীর বিরক্তির ছাপ চেহারায় ফুটে উঠতেনা উঠতেই ওসমান সাহেব বললেন আচ্ছা ঠিক আছে।আজ রাতটুকু থাক কাল না হয় ওকে বের করে দিবো।হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে বসলেন ওসমান সাহেব।স্ত্রী পাশে বসা।গুড়ি গুড়ি বর্ষাও কমে গেছে।স্ত্রীর মন মানসিকতা ভাল দেখে তিনি বললেন কুকুর ছানাটা আমাদের অতিথি।গেটের পাশে অনেক আগেই এসে অবস্হান করছিল,তোমরা হয়ত জান না।ওকে রাতের খাবার দাও।ওসমান সাহেবের স্ত্রীর নাম জাহানারা।স্বামীর কথা মত একটা দইয়ের মায়শায় করে কিছু ভাত ও মাংশের হাড় হাড্ডি কুকুর ছানাটার মুখের কাছে দিতেই খুশিতে বাগ বাগ।লেজ নাড়িয়ে সাধুবাদ জানিয়ে খেতে শুরু করল।
আরো পড়ুন – করোনা ভাইরাস রহস্য ফাঁস , গ্রেফতার আবিষ্কারক
সব গুলো ভাত হাড় হাড্ডি তৃপ্তি সহকারে খেয়েই শান্ত ভাবে ধানের গলার তলায় ঢুকে পড়ল অতিথি।পরের দিন ওমমান সাহেব কুকুর ছানাটির খোজ নিতে গোলার ধারে যাওয়ার আগেই ও লেজ নাড়তে নাড়তে চলে আসল।ফ্যান ফ্যান করে তাকাতে লাগল।রাতে চেহারাটা ভাল করে বুঝা যায়নি।খুব সুন্দর নাদুস নুদুস লেজ গুলো কদম ফুলের মতো দেখাচ্ছে।কালোর মাঝে সাদা ডোরা কাটা।বেশ তুলতুলে নরম পশম।ওসমান সাহেবের একমাত্র পুত্র সজিব কুকুর ছানাটার কধা শুনে মাকে বলল আম্মু কুকুর ছানাটাকে বের করে দাও ও রাতে ডাকাডাকি করবে,বিরক্তি হবে বাড়ি নোংরা করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।সজিব একটা বাশের কুন্চি তুলে কুকুর ছানাতে আঘাত করতেই ও খ্যাক করে ডেকে উঠল।ফ্যাল ফ্যাল করে সজিবের দিকে তাতালো।সজিবের ও মায়া হলো আর মারলনা।
ওমমান সাহেব ছেলেকে কাছে ডাকলেন, মাধায় হাত বুলিয়ে বললেন-বাবা প্রনীদের মারতে নেই ওরা প্রভূ ভক্ত হয়।ওরা মানুষের সাথে বেইমানি তরে না। দেখবে ও একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।পরিবারে ৫ জন আর কাজের মেয়েটা মোট ৬ জন।নতুন অতিথির দ্বারা পরিবারের সদস্য তখন ৭ জন। অদিথিকে বাড়ির সবায় যত্ন করতে লাগল।সন্ধ্যায় সবুজের পড়ার টেবিলের পাশে চুপ করে বসে পড়া শোনে।আস্তে আস্তে সবুজের বন্ধু হয়ে গেল।সবুজ তখন কুকুর ছানাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারে না।
নব অতিথি তখন বাড়ির সবার সাধে মিলেমিশে থাকতে আর কোন অসুবিধা হয় না। রাতে কোন পাতা নাড়ার খস খস শ্ব্দ হলেও দার শিশু সুলভ আচারনে ডেকে ওঠে।গোলার তলা থেকে বাহিরে আসতে সাহস না করলেও সে সাহসি ভুমিকায় ডাকে।
আজ পনের দিন হলো কুকুর ছানাটি এ বাড়িতে।পেট পুরে খেতে পেরে শরীরটা আগের তুলনায় অনেকটা ভারি হয়ে গেছে।দেখতেও খুব নাদুস নুদুস।ওসমান সাহেব নিত্য দিনে স্ত্রীর কাছে খোজ খবর নেয়; অফিস থেকে বাসায় ফিরে কুকুর ছানাটির যত্ন নেয়। আজ মাঝ রাতে নব অতিথির চেচা মেচি শুনতেই ঘুম ভেঙে গেল।জাহানারাকে আলো জালাতে বলে লাইট নিয়ে বাহিরে এসে দেখল একটা বোড় মদ্দা কুকুর নব অতিথিকে কামড়ে ছিড়ে ফেলেছে। মাটিতে লুটিয়ে শুধু গোঙাচ্ছে।আর বাহির হতে আসা কুকুরটি তখন ছুটে পালালো।
জাহানারা আলো আনতেই নব অতিথি ওসমান সাহেবের মুখ পানে চেয়ে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেল।তার শরীরের রক্তে ভিজে গেল মাটির কিয়াংশ। জাহানারার দিকে ওসমান সাহেব তাকাতেই চোখে পানি টলমল গতিতে কপাল বেয়ে মাটিতে পড়ল।ওসমান সাহেবের অজান্তে চোখ হতে উষ্ম পানি বেয়ে তার হাতের উপর পড়ল। স্বামী স্ত্রী দু`জনে নব অতিথির মৃত দেহের পাশে নিরুপায় হয়ে দাড়িয়ে থাকল তপ্ত অশ্রু নিয়ে।