নিষিদ্ধ চিরকুট
জেনারুল ইসলাম
গত সপ্তাহে আটজন মেয়ের সাথে মিট করেছি।
শুক্রবারে তিনজনের সাথে। আর্কেডিয়া কফি হাউজের একটা টেবিল আমার চিরচেনা,খুব পছন্দের একটা জায়গা। আমি সচরাচর সেখানটাতেই বসি। অনেক সময় মেয়েরা তাদের পছন্দের জায়গায় ডাকলে সেখানেও যাই।
সেদিন একজন ক্যাফে ইডেনে ডাকলো। যদিও ক্যাফে ইডেন আমার বাসা থেকে অনেক দূরে। মেয়েদের কথা আমি ফেলতে পারি না স্যার। ধরে নিতে পারেন এটা আমার দুর্বলতা।
আমার অপরাধের জায়গাটাই সেটা -কোন ভক্ত আমাকে কোথাও ডাকলে সময় থাকলে সাড়া দেবার চেষ্টা করি। আমি বিশ্বাস করি আমাকে যারা গড়ে তুলেছেন তাঁদের ডাকে সাড়া দেয়া আমার কর্তব্য। এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে।
আমি জানি ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হয়। কেউ ভালোবাসলে বিনিময়ে তাকেও ভালোবাসতে হয়।
স্যার আমি অস্বীকার করবো না যে, ফাবিহাকে আমি চিনি না বা কোথাও দেখি নি কোন দিন।
কিন্তু সেটাও মানতে পারবো না যে, ফাবিহার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী।
তার মৃত্যুতে আমি শোকাহত। রিতিমতো থমকে গেছি। এমন একজন মানুষের মৃত্যু সহজে মেনে নেয়া যায় না।
স্যার ফাবিহার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় আজ থেকে বছর দুয়েক আগে। অন্তত ২০ টা মেইল করার পর একদিন দেখা করবো বলে কথা দিই। তারপর একদিন ক্রেমো কফিতে দেখা করি।
স্যার গত দুবছরে তাঁর সাথে আমার মাত্র দুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। দ্বিতীয় সাক্ষাৎটি হয় এফডিসির শুট্যিং স্পটে। আমার জন্মদিনের ৩য় দিন “বিগ ফ্যান” ছবির শুট্যিং ছিলো। সে আমাকে না জানিয়েই শুট্যিং স্পটে চলে আসে আমাকে জন্মদিনের গিফট আর সারপ্রাইজ দিবে বলে। শুট্যিং স্পটে এভাবে চলে আসাতে আমি খুব খুশি ছিলাম না। তবে এটা ভেবে ভালো লেগেছিলো একজন ফ্যান আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে দারুণ সারপ্রাইজ দিলো। সেদিন ফাবিহাকে সময় দিতে পারি নি।
আমার সাথে তার যে ছবিগুলো আপনি আমাকে দেখিয়েছেন সে ছবিগুলো সেদিনের তোলা।
আমি এটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম ফাবিহা অন্য দশটা মেয়ে ভক্তের মতো নয়। সে আমার প্রতি বিশেষ দুর্বল। মেয়েটা খুব ইমোশনাল সেটাও আমি বুঝতাম।
কিন্তু তাকে নিয়ে সে রকম কিছু ভাবার সময় তো আমার ছিলো না। আমার ক্যারিয়ার আমাকে এর থেকে দূরে রেখেছে। হতে পারি আমি সেলিব্রেটি, জনপ্রিয় অভিনেতা।
আমিও তো মানুষ। মানুষের মন বুঝার মতো ক্ষমতা আমারও তো আছে।
কিন্তু ফাবিহা এমনটা করে বসবে এটা কল্পনার বাইরে ছিলো। ভাবনার আকাশসীমা ছাড়িয়ে।
আরো পড়ুন – প্রিয়াঙ্কা শামী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন
স্যার এই ঘটনার পর আমার ক্যারিয়ার,ফ্যান,শুভাকাঙ্ক্ষীদে র উপর বিশেষ একটা প্রভাব পড়বে। অনেকেই ধরে নেবেন ফাবিহার এই অপমৃত্যুর জন্য আমি’ই দায়ী। মিডিয়া বিষটিকে নতুন ইস্যু হিসেবে নিচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা আন্দোলনে নেমেছে তাঁরা স্পষ্টতর বলছে – ফাবিহার মৃত্যুর জন্য একমাত্র আমি দায়ী।
– দেখুন মিষ্টার ফয়সাল আপনাকে কোন রকম হয়রানি কিংবা হেনস্তা করার জন্য এখানে আনা হয় নি। ভিকটিমের রেখে যাওয়া কিছু তথ্য আর আমাদের বিশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আপনাকে ডেকেছি। ভিকটিমের মৃত্যুর সাথে আপনার কোন সম্পর্কের প্রমাণ যদি না পাই তবে আমরা অবশ্যই আপনার সময় নষ্ট করবো না।
ভিকটিমের মেইল,ডায়েরী আর ফেইসবুক পোস্টে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে আপনাকে নিয়ে তার দেখা স্বপ্নভঙ্গ,না পাওয়ার হতাশা আর ভালোবাসার অবহেলা তাঁকে ধীরে ধীরে মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।
মৃত্যুর আগে তাঁর ফেইসবুকের কয়েকটি পোস্ট এরকম ছিলো ” যাকে ভালোবাসি তাঁকে যদি না পাই, এ জীবন দিয়ে আমি কী করবো?”
” মনের অজান্তে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি,চাইলেও ভূলে যেতে পারবো না”
” ভালোবাসার মানুষটি অন্যের হয়ে যাবে,এ দৃশ্য দেখার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো”
মৃত্যুর আধঘন্টা আগেও একটা পোস্ট করেছেন ফাবিহা সেখানে লেখা – ” ভালো থেকো ভালোবাসা, ওপারে থেকেও তোমায় ভালোবাসবো”
মিষ্টার ফয়সাল এ পোস্টে আপনাকে ম্যানশান করা ছিলো।
ভিকটিমের মোবাইল ফোন থেকে আমরা পেয়েছি মৃত্যুর আগে এক সপ্তাহ থেকে সে আপনাকে নিয়মিত কল দিতো। কিন্তু কোন কল আপনি ধরেন নি। গত সপ্তাহে পাঁচটা মেইল করেছে আপনি রিপ্লে দেন নি এমন কি ফেইসবুকে আপনাকে অনেকগুলো ম্যাসেজ করেছে যা আপনি সিন করেন নি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আপনাকে কি আমরা সন্দেহ করতে পারি না। তবুও আমরা বলছি যদি কোন জোরালে প্রমাণ আপনার বিপক্ষে না পাই তবে আপনাকে আমরা অবশ্যই ছেড়ে দেবো।
স্যার আপনি হয় তো পত্রিকায় দেখেছেন বিগত একমাস যাবত আমি সিঙ্গাপুর আর অস্ট্রেলিয়ায় দৌড়াদৌড়ির উপর আছি বিগ বাজেটের সিনেমা “বিগ ফ্যান” এর শুট্যিং নিয়ে। কল উঠানো কিংবা মেইলের রিপ্লে করার মতো সিচুয়েশানে আমি নেই।
স্যার এমন কোন তথ্য কি আপনারা পেয়েছেন যেটা দিয়ে প্রমাণিত হবে আমি কোনভাবে ফাবিহার সাথে প্রতারণা করেছি?
আজকালকার ছেলেরা হয় তো সুযোগ পেলে মেয়েদের ব্যবহার করে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক মিলন করে। সেরকম কোন ইঙ্গিত কি ভিকটিম দিয়ে গেছে কিংবা আপনার গোয়েন্দা প্রতিনিধিদল এমন কোন তথ্য পেয়েছেন?
– মিষ্টার ফয়সাল আপনি একজন গুণী অভিনেতা। আপনার মান হানিকর করা আমাদের উদ্দেশ্য না। আপনি আমাদের বুঝার চেষ্টা করুন। আমরা যা করছি এদেশের আইনের ধারাবাহিকতায় করছি। আমরা আশা করবো আপনি আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তাটুকু করবেন।
স্যার, ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেতে হবে। ঘর সংসার করতে হবে। বিয়ে করতে হবে নয়তো ভালোবাসা যাবে না। এরকম কোন বিশ্বাসে আমি বিশ্বাসী নই। প্রিয় মানুষটিকে কতো ভাবেই তো ভালোবাসা যায়। কাছে থেকে দূরে থেকে,দেখায় -অদেখায়। যাকে আমি ভালোবাসি তাঁকে অন্য কেউ ভালোবাসতে পারবে না এ ধারণা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। না হয় হাজারো ফাবিহা এভাবে আকাশের তারা হয়ে যাবে।
একজন সেলিব্রেটি অভিনেতার কয়েক কোটি ফ্যান বা ভক্ত থাকে। যাদের অধিকাংশই মেয়ে। আপনি যদি মনে করেন একজন বিগ ফ্যানের সাথে দেখা করা মানেই তার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে এটা বোকামি ছাড়া কিছুই না। ভক্তটা যদি তাকে পাওয়ার প্রত্যাশা করেন,ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন সেটা কি পূরণ করার মতো। আমার কি ইচ্ছে – অনিচ্ছের দাম নেই। নাকি ফ্যানদের সময় দেয়া,সাথে দুটো ছবি তোলা,একটু হেসে কথা বলাটুকু অন্যায়।
স্যার প্রেম, ভালোবাসা এগুলো একতরফা হয় না। আর আমি যে ভালোবাসার কথা বলছি সেই ভালোবাসা মানে এই নয় যে আপনাকে আমার জীবন সঙ্গি করতে হবে।
আমি মনে করি ফাবিহা যেটা করেছে সেটা অতি আবেগে বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
স্যার আমি আসি এবার…..!
আপনাদের প্রয়োজনে ডাকলে আবার আসবো।
এভাবেই কথোপকথন হচ্ছিল ডিবি কর্মকর্তা ও অভিনেতা ফয়সাল আবেদিনের মধ্যে।
ফয়সাল আবেদিন কোটি ভক্তের ভালোবাসা নিয়ে জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা। ফাবিহার অপমৃত্যুর মামলায় ডিবিপুলিশ গতকাল মাঝরাতে ডিবির হেডকোয়ার্টারে তুলে নিয়ে আসেন। এতোক্ষণ ডিবি কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন।
ক্লীন ইমেজের অভিনেতা হিসেবে পরিচিত এ অভিনেতা আজ পত্রিকার শিরোনামে। হেডলাইন ভাসছে,
“তরুণীর আত্মহত্যাঃ সুইসাইড নোটে অভিনেতা ফয়সাল আবেদিনের নাম”!
আপনি এটাও পড়তে পারেন – মুহিবুল্লাহ ফুয়াদের গল্প – লিচু চোর
ফয়সাল আবেদিন গাড়ীতে বসা। ড্রাইভিং সিটে বসে ডিবির অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন। হঠাৎ অপরিচিত নাম্বারে মোবাইল ফোনটি বেঁজে উঠলো।
অভিনেতা ফয়সালের মন সেদিকে নেই। ফোন বাঁজছে তো বাঁজছেই।
ভাবনায় পড়ে গেলেন ফয়সাল। হাজারো প্রশ্ন ঘোর পাক খাচ্ছে তার মাথায়।
কাউকে ভালোবেসে তাঁর জন্য প্রাণ দেয়াটা কি সত্যিকার ভালোবাসার বহির্প্রকাশ?
যে নিজের জীবনকেই ভালোবাসতে জানে না সে অন্যকে ভালোবাসার কতটুকুই বা ক্ষমতা রাখে?
কাউকে ভালোবাসতে গেলে কি ভাবতে হয় আমি তার যোগ্য কি না?
আচ্ছা ভালোবাসলে কোন কিছু চাইতে নেই কেনো? চাইলে কি আর ভালোবাসা থাকে?
মনে পড়ে গত সপ্তাহে একটা জাতীয় দৈনিকে অভিনেতা ফয়সাল আবেদিনের একটা সাক্ষাৎকার ছেপেছিলো। সেখানে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে ফয়সাল আবেদিন বলেছিলেন আপাতত ক্যারিয়ার নিয়েই আছি অন্যকিছু ভাবনার সময় নেই।
অন্য একটি বিনোদন ম্যাগাজিনে অভিনেত্রী মৌরির সাথে ফয়সালের গোপন সম্পর্কে ভিত্তিহীন নিউজ করেছিলো। যা তাঁর ভক্তদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
ফয়সাল আবেদিন বাসায় এসে ফাবিহার দেয়া উপহারটি খুলে দেখলেন। যদিও মাস পাঁচেক আগে পেয়েছিলেন তবে খোলা হয় নি। হলুদ রঙের একটি পাঞ্জাবি আর কয়েকটি চিরকুট রয়েছে তাতে।
একটা চিরকুট হাতে নিয়ে পড়তে থাকলেন নিমগ্ন চিত্তে!