- সমাজে বহুল প্রচলিত একটি কথা রয়েছে ৷ বিশেষ করে মুরুব্বি টাইপের ব্যক্তিদের মুখে এটা বেশি শোনা যায় ৷ স্বামীর পায়ের নিচে নাকি স্ত্রীর বেহেশচত ৷ কথাটা আদৌ ঠিক কিনা! এর দালিলিক প্রমাণ আছে কিনা তা আমরা খুঁজে দেখবো ৷ যদিও স্বামীর সম্মান ও উঁচু মার্যাদা বোঝাতে গিয়ে অনেকেই কথাটি এভাবে বলেন যে, স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত। কুরআনে বা হাদীসে হুবহু এ কথাটি নেই ৷
মূলত স্ত্রীর কাছে স্বামীর মর্যাদা অনেক বেশি। কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনা অনুযায়ী সব সময় স্বামীর আনুগত্য থাকার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত’ হাদিসের বর্ণনায় এ জাতীয় কোনো কিছু নেই। ইসলামেও বিষয়টি প্রমাণিত নয়।
পুরুষগণ মহিলাদের কর্তা, নেতা, শ্রেষ্ঠ হাকিম এবং যখন অবাধ্য হবে তখন আদব শিক্ষা প্রদানকারী।
এর কারণ দুটি:
১. আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব, আল্লাহ তা‘আলা নিজেই পুরুষদেরকে মহিলাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষদের দৈহিক শক্তি, কর্মক্ষমতা, সাহস ও ধৈর্য ইত্যাদি নারীদের থেকে বহুগুণে বেশি দিয়েছেন। ফলে পুরুষদের দ্বারা যে কাজ হয় নারীদের দ্বারা সেরূপ কাজ হয় না। এজন্য নবুওয়াত কেবল পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অনুরূপভাবে রাজত্ব পরিচালনা করাও পুরুষদের হাতেই। কারণ পুরুষের শাসনে রাষ্ট্রে যে নিয়ম-শৃঙ্খলা বহাল থাকবে, নারী পরিচালিত রাষ্ট্রে তা বহাল থাকবে না।
তাই যখন রূমবাসী তাদের প্রেসিডেন্ট মহিলাকে নির্বাচিত করল তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً
এমন জাতি কখনো সফলকাম হবে না যারা তাদের নেতৃত্বের দায়িত্বভার কোন মহিলার ওপর অর্পণ করে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪২৫)
২. পুরুষদের স্ব-উপার্জিত সম্পদ দ্বারা ব্যয়ভার বহন করে। একজন নারীকে ইসলাম উপার্জনের নির্দেশ দেয়নি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করবে স্বামী আর স্বামীর ঘর সংরক্ষণ করবে স্ত্রী। একজন নারী যদি অর্থ উপার্জন করতে যায় তাহলে সাংসারিক, সন্তান-সন্ততি ও দৈহিক এবং ধর্ম-কর্ম ইত্যাদি সর্বদিক থেকে সমস্যা সৃষ্টি হবে।
(حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّٰهُ)
‘লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষিত করতে বলেছেন, তা হিফাযত করে।’অর্থাৎ স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব এবং স্বামীর সম্পদ হেফাযত করবে।
এরূপ আনুগত্যশীল নারীদের অনেক ফযীলত রয়েছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মহিলাদের মধ্যে সেই উত্তম যখন তুমি তার দিকে তাকাবে তখন সে তোমাকে আনন্দ দেবে, যখন নির্দেশ দেবে তা পালন করবে এবং যখন তুমি অনুপস্থিত থাকবে তখন সে নিজেকে এবং তোমার সম্পদ হেফাযত করবে। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীর তাবারী, হা: ৯৩২৫, সহীহ)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন কোন নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযানের সিয়াম পালন করে, স্বীয় লজ্জাস্থান হিফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমার যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা। (সহীহুল জামে হা: ৬৬০, সহীহ, আহমাদ ১/১৯১)
‘মুসনাদে আহমাদ’র এক হাদিসে স্বামীকে স্ত্রীর জন্য জান্নাত-জাহান্নাম বলে উপমা দেয়া হয়েছে। স্বামীকে অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। হাদিসে পাকে এসেছে,এক নারী সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কথা বলা সম্পন্ন করলে তিনি (বিশ্বনবি) তাকে বললেন, ‘হে নারী! তোমার স্বামী আছে কি?সে বলল, ‘জ্বি-হ্যাঁ’, আছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তার জন্য কেমন?সে বলল, আমি তার আনুগত্য ও খেদমতে কমতি বা অবহেলা করি না। তবে যেটা করতে অসমর্থ (অক্ষম) হই তা ব্যতীত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি খেয়াল রেখ যে, তুমি তার হৃদয়ের কোথায় অবস্থান করছ? কেননা সে তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম। (মুসনাদে আহমাদ, ১৯০২৫ )
অন্যত্র এসেছে, মু‘আয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী করীম (ছাঃ)-কে সিজদা করেন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বলেন, হে মু‘আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর হক আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর হক আদায় করতে সক্ষম হবে না (ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৯৫)।
তবে স্ত্রীর কাছে স্বামী অনেক মর্যাদাশীল। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় স্ত্রীদের এ মর্মে নসিহত পেশ করেছেন যে, তারা যেন স্বামীর আনুগত্য করে। তাদের মেনে চলে। স্বামীর মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে ৷ কিন্তু তাই বলে সমাজে প্রচলিত কথা স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত তা সঠিক নয় ৷
লেখকঃ
দীদার মাহদী
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল
দারুলহুদা মডেল মাদরাসা
কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷