রোগ মুক্তির দোয়া
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! প্রাণাধিক প্রিয় পাঠকবৃন্দ! দুআ, ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা নিন ৷
স্যোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তি জীবনে অনেক ভাইবোন আছেন ৷ যারা বিভিন্ন সময় রোগমুক্তির আমল সম্পর্কে জানতে চান ৷
আজ আমি জটিল কঠিনসহ সকল রোগ মুক্তির দোয়া ও কুরআনিক আমল নিয়ে কথা বলবো ৷ কুরআন হচ্ছে শিফা ৷
কুরআনিক এবং সুন্নাহসম্মত আমল করলে আল্লাহ শিফা দিবেন ইনশাআল্লাহ ৷ চলুন নিবন্ধে ডুব দিই ৷ মণিমুক্তো কুড়িয়ে আনি ৷
রোগ কেনো হয়?
কেউ অসুস্থ হলে অথবা বিপদে পড়লে সমাজের অনেককে বলতে শোনা যায় যে। সে না ফর মানি করার কারণে রোগে পতিত হয়েছে।
অথবা তার ওপর বিপদ নেমে এসেছে ৷ কিন্তু এর উল্টোটাও দেখা যায় ৷ অনেক ভালো মানুষকে রোগে ভুগতে দেখা যায় ৷
অনেক সৎ ব্যক্তিকেও বিপদে পড়তে দেখা যায় ৷ তবে রোগব্যাধি এবং বিপদ আপদ কেন আসে?
সুস্থতা ও অসুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
তাতে আনুগত্য ও নাফরমানির কোনো সম্পর্ক নেই। নবী-রাসুলরাও অসুস্থ হয়েছেন। যাঁরা ছিলেন সব মাখলুকের সেরা।
আপনারা পড়ছেন – রোগ মুক্তির দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) সব পয়গম্বরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তিনিও কয়েকবার অসুস্থ হয়েছেন। তাঁকেও অসুস্থতার কষ্ট বরদাশত করতে হয়েছে।
এটি আবশ্যক নয় যে অসুস্থতা আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর অসন্তুষ্টির দলিল।
অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ হতে পারে।
মুমিনের জন্য তার গুনাহর কাফফারাও হতে পারে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যের নিকটবর্তী থাকো এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন করো।
মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয়—সব কিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩০৩৮) অসুস্থতা দ্বারা মুমিন বান্দার স্তর উন্নত হয়। অসুস্থতাকে অশুভ নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪৫)
রোগের কোনো নিজস্ব শক্তি আছে কি?
রোগ মূলত আল্লাহর সৃষ্টি ৷ রোগের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। ক্ষমতা নেই ৷ রোগ দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ।
সুস্থতা দানের মালিকও তিনি । কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কাউকে রোগাক্রান্ত করতে পারে না। সুস্থও করতে পারে না।
কোনো রোগকে আল্লাহ যতটুকু আক্রান্ত করার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে এর বাইরে যেতে পারে না ৷
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুল (সা.) ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই বললে জনৈক বেদুইন আরব জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে সেই উটপালের অবস্থা কী।
যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? অতঃপর সেখানে কোনো খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে
এবং সবগুলোকে ওই রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে? (উত্তরে) তিনি বলেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল?
যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্যান্য উটকে আক্রান্ত করেছেন। (মুসলিম, হাদিস :৫৭৪২)
তবে আল্লাহ কোনো রোগে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে।
তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২৮৭৩)
জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তির উপায়
কুষ্ঠ, অন্ধত্ব, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগ-ব্যাধিসহ জটিল ও কঠিন অচেনা-অজানা সব রোগ-ব্যাধির চিকিৎসায়।
মহান আল্লাহর তাসবিহ এবং দোয়া পড়ার মধ্যে রয়েছে শান্তি এবং মুক্তি। কুরআন সকল সমস্যার সমাধান ৷
আধুনিক চিকিৎসার বিরোধিতা আমরা করছি না ৷ বরং আধুনিক চিকিৎসা অবশ্যই আপনি নিবেন ৷ কিন্তু সুস্থ করার মালিক তো আল্লাহ ৷
তিনি সুস্থ না করলে সকল চিকিৎসা ব্যর্থ ৷ তার কাছেই রোগ মুক্তির দোয়া করতে হবে ৷
নিম্নে বর্ণিত আমলগুলো করতে পারেন ৷ তাহলো—
سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ
উচ্চারণঃ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি।’
অতপর এ দোয়া পড়ুন—
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِمَّا عِنْدَكَ، وَأَفِضْ عَلَىَّ مِنْ فَضْلِكَ، وَانْشُرْ عَلَىَّ رَحْمَتَكَ، وَأَنْزِلْ عَلَىَّ مِنْ بَرَكَاتِكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিম্মা ইনদাকা ওয়া আফিজ আলাইয়্যা মিন ফাদলিকা ওয়ানছুর আলাইয়্যা রাহমাতাকা ওয়ানজিল আলাইয়্যা বারকাতাকা।’ (তাবারানি ফি মুজামুল কাবির)
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমর কাছে যা আছে আমি তাই তোমার কাছে চাই।
তোমার অনুগ্রহের একটু ধারা আমার দিকে প্রবাহিত করো। এবং তোমার রহমতের একটু বারি আমার ওপর বর্ষণ করো।
আর তোমার বরকতসমূহ থেকে একটুখানি আমার প্রতি নাজিল করো।
আমলঃ সকাল-সন্ধ্যায় তথা ফজর ও মাগরিবের ফরজ নামাজের পর তাসবিহ তিনবার এবং দোয়াটি একবার নিয়মিত আমল করা।
এটি খিচুনিসহ যাবতীয় রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য আমল করা যেতে পারে ৷
পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া
পেট ব্যাথা করলে পৃথিবী নিরস মনে হয় ৷ মজার খাবারও বিষম ঠেকে ৷
তবে খাওয়া-দাওয়া বা অনিয়ম কিংবা বদ হজমের কারণেও অনেক সময় পেট ব্যথা হয়ে থাকে ।
পেট ব্যথা যে কারণেই হোক না কেনো তা মানুষের জন্য মারাত্মক অস্বস্থির কারণ। না শুয়ে থাকা যায়, না বসে ৷
কোনো কারণে যদি মানুষের পেট ব্যথা হয় তবে তা থেকে মুক্ত থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।
চিকিৎসাগ্রহণ ছাড়াও পেট ব্যথাসহ যে কোনো ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে রয়েছে কুরআন ও হাদিসের কার্যকরী আমল।
যে আমলে মানুষ পেট ব্যথাসহ যাবতীয় ব্যথা থেকে হেফাজত থাকা সম্ভব।
পেট ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে কুরআনুল কারিমের একটি আয়াত তুলে ধরা হলো।
যা নিয়মিত পাঠ করলে পেট ব্যথা থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর তাহলো-
لَا فِیۡہَا غَوۡلٌ وَّ لَا ہُمۡ عَنۡہَا یُنۡزَفُوۡنَ ﴿۴۷﴾
উচ্চারণ : লা ফিহা গাওলুওঁ ওয়া লা হুম আনহা ইয়ুংযাফুন।’ (সুরা আস-সাফফাত : আয়াত ৪৭)
আপনারা পড়ছেন রোগ মুক্তির দোয়া
অর্থঃ তাতে থাকবে না ক্ষতিকর কিছু এবং তারা এগুলো দ্বারা মাতালও হবে না।
আর غول অর্থ নেশা, মাতলামি, মাথাব্যথা ও পেটের পীড়া।
দাঁত ব্যাথার দোয়া
দাঁত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ ৷ যার দাঁত নেই সে দাঁতের সক্রিয়তা পুরোপুরি টের পায় ৷ প্রবাদ আছে ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নাই’ ৷
দাঁতে পোকা বা বিভিন্ন কারণে দাঁতের ব্যথা হতে পারে ৷ এটি মারাত্মক ব্যাথা । দাঁতের ব্যথা মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে।
যা সহ্য করা অনেক কঠিন। আর শীতকালে দাঁতের ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। কুরআন-সুন্নাহর আমলে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।
মেসওয়াক করলে দাঁতের ব্যাথা বা দাঁতের বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায় ৷ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এ আর্টিকেলটি পড়তে পারেন ৷
মিসওয়াক ব্যাবহারের গুরুত্ব ও ফজিলত
যারা প্রত্যেক নামাজের সময় নিয়মিত মেসওয়াক করে তাদের দাঁতের যাবতীয় রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকে।
দাঁতের ব্যথামুক্ত থাকতে কুরআনের একটি আমলও রয়েছে। নিম্নে বর্ণিত আয়াতটি ৷
قُلۡ ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَکُمۡ وَ جَعَلَ لَکُمُ السَّمۡعَ وَ الۡاَبۡصَارَ وَ الۡاَفۡـِٕدَۃَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۲۳﴾
উচ্চারণ : কুল হুয়াল্লাজি আংশাআকুম ওয়া জাআলালাকুমুস সাম্আ ওয়াল আব্ছারা ওয়াল আফয়িদাতা ক্বালিলাম্মা তাশকুরুন।’ (সুরা মুলক : আয়াত ২৩)
অর্থঃ বল, ‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তকরণসমূহ দিয়েছেন। তোমরা খুব অল্পই শোকর কর’।
এটি নিয়মিত আমল করলে উপকার পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ ৷
মাথা ব্যাথার দোয়া
সব রোগই রোগীর জন্য গুরতর ৷ শরীরের যে কোনো অঙ্গেই সমস্যা হলে পুরো শরীরই সমস্যাক্রান্ত হয় ৷
এর মধ্যে মাথা ব্যথা বেশ যন্ত্রণার একটি বিষয়। দিনভর মাথা ব্যথা নিয়ে কাজ করা বেশ অস্বস্তিকর। কষ্টসাধ্য ৷
মাথা ব্যথার কারণে মানুষ স্বাভাবিক কাজ-কর্মও করতে পারে না।
যন্ত্রণার তীব্রতায় রশি বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে মাথা বেধে কেউ আরামবোধ করেন ৷ ঘুমও আসে না তখন ৷
সুস্থ সুন্দর ও আরামদায়ক জীবন যাপনে মাথা ব্যথাসহ সব ধরনের রোগ থেকে সুস্থ থাকা খুবই দরকারী।
কারো মাথা ব্যাথা সূর্যোদয় হলে শুরু হয় ৷ যারা মাইগ্রেনসহ বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন।
তাদের এ ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই জরুরি। চিকিৎসাপদ্ধতি ছাড়াও কুরআনিক আমল আমরা করতে পারি ৷
আসুন জেনে নিই মাথা ব্যথা হলে কোরআনুল কারিমের যে দোয়াটি পড়তে হবে-
মাথা ব্যাথার দোয়া আরবি উচ্চারণ :
لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ
মাথা ব্যাথার দোয়া বাংলা উচ্চারণ :
‘লা ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইয়ুংযিফুন।’ (সূরা: ওয়াকিয়া, আয়াত : ১৯)।
উল্লেখিত আয়াতটি পড়বেন: যখন কারো মাথা ব্যথায় হয়।
তখন তার ডান হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে দুরূদ, ইস্তেগফার পড়ে ৩ বার এই দোয়াটি পাঠ করবেন। ইনশাআল্লাহ! মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
اللهم اني اسالك واتوجه اليك بنبيك محمد نبي الرحمه اني توجهت بك الى ربي في حاجتي هذه لتقضي لى اللهم فشفعه في
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির রহমাতি ইন্নি তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা রব্বি ফি হাজাতি হাজিহি লিতুকদ্বা লি, আল্লাহুম্মা ফাশাফফি’হু ফিয়্যা।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নবী, দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.) এর (দোয়ার) মাধ্যমে।
আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম।
যাতে আমার এই প্রয়োজন পূর্ণ করে দেওয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তাঁর সুপারিশ কবুল করো।
উপকার : উসমান ইবনে হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সা.) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী!
আমার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বলেন, তুমি কামনা করলে আমি দোয়া করব
আর তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল, তাঁর কাছে দোয়া করুন।
বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে অজু করার হুকুম করলেন এবং এই দোয়া করতে বললেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৮)
রোগ মুক্তির দোয়া
রোগমুক্তির জন্য বিশ্বনবী সাঃ কর্তৃক অনেক আমল বর্ণিত হয়েছে ৷ এর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হচ্ছে নিম্নের দুআ ৷
এই দোয়াটি আমরা সর্বদা আমল করতে পারি ৷
رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شَافِيَ إِلاَّ أَنْتَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বান-নাসি মুজহিবাল বা’সি, ইশফি আনতাশ-শাফি, লা শাফি ইল্লা আনতা শিফায়ান লা য়ুগাদিরু সুকমা।
অর্থ: হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী; আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ অবশিষ্ট না থাকে।
হাদিসে এসেছে, আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়-ফুঁক করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৪২)
বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
বিপদে পড়েনি এমন মানুষ পাওয়া ভার ৷ পৃথিবীর যত সুখী মানুষকে আমরা জানি, তারাও নানা বিপদে আছে ৷
বিপদ আমাদের নিত্যসঙ্গী ৷ বিপদ ও সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে কুরআন-সুন্নায় অসংখ্য দোয়া ও আমলের কথা বর্ণনা রয়েছে। যা কার্যকর এবং পরীক্ষিত।
বিপদে পড়লে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই ৷ মুমিনরা বিপদে হতাশ হয় না ৷ নবি-পয়গাম্বরদের থেকে শুরু করে অসংখ্য নেককার বনি আদমের বাস্তব জীবনেই তা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত।
নিম্নের দোয়াটি বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ব্যাপক কার্যকর ৷ প্রয়োজনে মুখস্থ করে নিন ৷
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِن ضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজাল।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও মিশকাত)
ছেলে সন্তান লাভের দোয়া
বিয়ের পর অনেক দম্পতি সন্তান না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে ৷ কারো আবার ছেলে সন্তান না হওয়ায় তীব্র যাতনায় ভোগে৷
মাজারে মাজারে ঘোরে ৷ ভন্ড পীরদের নজর নিয়াজ করে ৷ হাদিয়া তোহফা দেয় ৷ সময় গড়ায় সন্তান হয় না ৷
বিভিন্ন রকম চিকিৎসার পরও তারা হতাশ হয়ে পড়েন। নানা দুশ্চিন্তায় তারা নানা ধরনের মাধ্যম গ্রহণ করতে চান। অথচ আল্লাহর কাছে সন্তান চাওয়া সর্বোত্তম।
সন্তান-সন্ততি দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার। মাজারের মৃত ব্যক্তির কোন ক্ষমতা নাই ৷
কোনো পীর বাবারও নাই ৷ মাজারে বা কোনো পীরের কাছে সন্তান চাওয়ার অর্থ হলো শিরক করা ৷
আল্লাহ যাকে সন্তান দান করেন— কোনো অসুস্থতা ও দুর্বলতা কিংবা কোনো সমস্যাই তার জন্য বাঁধা হয়ে দাড়ায় না।
আর আল্লাহ তাআলা যাকে সন্তান দান করেন না, অতি তুচ্ছ কারণেই সে সন্তান লাভ করতে ব্যর্থ হয় ।
জাকারিয়া (আ.) এর নাম আমরা শুনেছি ৷ তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নিঃসন্তান ছিলেন। যখন আর কেউ সন্তান জন্মদানে সক্ষম থাকে না ৷
মারিয়াম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একদিন তিনি দেখলেন, আল্লাহ তাআলা মৌসুম ছাড়াই মারইয়াম (আ.)-কে ফল দান করেছেন। অমৌসুমে ফল ৷
যখন আমের সিজন না তখন আম পেলে আমরা অবাক হই না? বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা করে বারোমাসি ফল করার প্রয়াস হচ্ছে ৷ সেসময় এসব ছিলো না ৷
এ ঘটনা দেখে তখন তার মনে সন্তান লাভের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল। তিনি ভাবলেন যে।
যে আল্লাহ বিনা-মৌসুমে ফল দিতে পারেন, সে আল্লাহ বৃদ্ধদম্পতিকেও সন্তান দান করতে পারেন। তাই তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন—
আরবি :
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء
উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)।
আমরাও এ দুআটি বেশি বেশি পড়লে সন্তান লাভ করতে পারবো ৷ যাদের ছেলে সন্তান দরকার তারাও এ আমলটি করতে পারেন ৷
মাজা ব্যাথার দোয়া
কোমড় ব্যাথা খুবই যন্ত্রণাদায়ক ৷ নানা কারণে কোমড় ব্যাথা করতে পারে ৷ আর বর্তমান সময়ে মানুষের রোগ-ব্যধির মধ্যে ব্যথা-বেদনা অন্যতম।
সবাই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত ৷ এসব ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসা ও চেষ্টার শেষ নেই।
শরীরের যে কোনো স্থানের ব্যথা নিরাময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সাহাবিকে শিখিয়েছেন আমল ও নিয়ম।
হাদিসে ব্যথা নিরাময়ে রয়েছে অনেক আমল ও দোয়া। হাদিসের বর্ণনায় ব্যথা নিরাময়ের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
হজরত উসমান বিন আবুল আস আস-সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মারাত্মক ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হলাম।
যে ব্যথা আমাকে প্রায় অকেজো করে ফেলেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেন-
‘তুমি তোমার ডান হাত ব্যথার স্থানে রাখ, ৩ বার- بِسْمِ اللَّهِ বিসমিল্লাহ বল এবং ৭ বার বল-
أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আউজু বিইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আঝিদু ওয়া উহাজিরু।
অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আল্লাহর অসীম সম্মান ও তাঁর বিশাল ক্ষমতার ওসিলায় আমার অনুভূত এই ব্যথার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (ইবনে মাজাহ)
নিয়ম : ব্যথার স্থানে ডান হাত রেখে ৩ বার বিসমিল্লাহ বলা এবং ৭ বার এ দোয়া পড়তে থাকা আর ব্যথার স্থান মর্দন করা।
তো আজকের মত এখানেই শেষ করছি। সামনে হয়তো আবারো কোন বিষয় নিয়ে হাজির হব ইনশাআল্লাহ।
ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শীর্ষবার্তার সাথেই থাকুন।
এছাড়াও আপনার যেকোন বিষয়ে কিছু জানার থাকলে আমাদের মেইল করতে পারেন।
আমাদের ইমেইলঃ shershabartafb@gmail com
লেখকঃ
হাফেজ মাওলানা দীদার মাহদী
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা
কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷
1 thought on “রোগ মুক্তির দোয়া – মাওলানা দীদার মাহদী”
Comments are closed.