সুপ্রিয় পাঠক! শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিন ৷ ইসলাম ও সমসাময়িক প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর নিত্যনতুন লেখার ব্লগ সাইট শীর্ষবার্তা ডটকমে স্বাগত ৷
আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিকে কথা বলবো ৷ বিভিন্নজন বিভিন্ন রকম বক্তব্য দেয়ায় সূরা ইয়াসিনের ফজিলত নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে ৷ এর খোলাসা করবো আমরা ৷ এবং তা সহজ ও তথ্যপূর্ণ ইনশাআল্লাহ ৷
সূরা ইয়াসিনের পরিচয়
কুরআনুল করীমে মোট ১১৪ টি সূরা রয়েছে ৷ সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ৷ আল্লাহর বাণী ৷ পালনীয় ৷ গুরুত্বের বিচারে পুরো কুরআনই গুরুত্ব বহন করে ৷
আলোচনার বিচারে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতের বক্তব্য সবসময় সামনে রাখা দরকার ৷ সূরা ইয়াসিন এমনই একটি সূরা ৷
একটি সূরার নাম ইয়াসিন। সূরার ধারাবাহিক ক্রমানুসারে এটি কুরআনের ৩৬ নং সূরা।
সূরা ইয়াসিনের বিষয়বস্তু ও আলোচ্য বিষয় :
কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের মুহাম্মাদ ﷺ এর নবুওয়াতের ওপর ঈমান না আনা এবং জুলুম ও বিদ্রূপের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করার পরিণামের ভয় দেখানোই এ আলোচনার লক্ষ্য।
এর মধ্যে ভয় দেখানোর দিকটি প্রবল ও সুস্পষ্ট। কিন্তু বার বার ভয় দেখানোর সাথে যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিষয়বস্তু বুঝাবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
⇄ তিনটি বিষয়ের ওপর যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে:
☞ তাওহীদের ওপর বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী ও সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে।
☞আখেরাতের ওপর বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী, সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তি ও মানুষের নিজের অস্তিত্বের সাহায্যে।
☞মুহাম্মাদী নবুওয়াতের সত্যতার ওপর একথার ভিত্তিতে যে, তিনি নিজের রিসালাতের ক্ষেত্রে এ সমস্ত কষ্ট সহ্য করেছিলেন নি:স্বার্থভাবে এবং এ বিষয়ের ভিত্তিতে যে,
তিনি লোকদেরকে যেসব কথার প্রতি আহবান জানাচ্ছিলেন সেগুলো পুরোপুরি যুক্তিসঙ্গত ছিল এবং সেগুলো গ্রহণ করার মধ্যেই ছিল লোকদের নিজেদের কল্যাণ।
✔ এ যুক্তি প্রদর্শনের শক্তির ওপর ভীতি প্রদর্শন এবং তিরস্কার ও সতর্ক করার বিষয়বস্তু অত্যন্ত জোরে শোরে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে হৃদয়ের তালা খুলে যায় এবং যাদের মধ্যে সত্যকে গ্রহণ করার সামান্যতম যোগ্যতাও আছে তারা যেন কুফরীর ওপর বহাল থাকতে না পারে।
সূরা ইয়াসিনের ফজিলত
ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও তাবারানী প্রমুখগণ মা’কাল ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী ﷺ বলেন, يس قَلْبُ الْقُرْآنِ অর্থাৎ এ ইয়া-সীন সূরাটি কুরআনের হৃদয়।
এটি ঠিক তেমনই একটি উপমা যেমন সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন বলা হয়েছে। ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন গণ্য করার কারণ হচ্ছে এই যে, তার মধ্যে কুরআন মজীদের সমস্ত শিক্ষার সংক্ষিপ্তসার এসে গেছে।
অন্যদিকে ইয়াসীনকে কুরআনের স্পন্দিত হৃদয় বলা হয়েছে এজন্য যে, কুরআনের দাওয়াতকে সে অত্যন্ত জোরেশোরে পেশ করে, যার ফলে জড়তা কেটে যায় এবং প্রাণপ্রবাহ গতিশীল হয়।
এই হযরত মা’কাল ইবনে ইয়াসার থেকেই হযরত ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন যে, নবী ﷺ বলেন, اقْرَءُوا سُورَةَ يسعلى موتاكم “তোমাদের মৃতদের ওপর সূরা ইয়াসীন পাঠ করো।”
এর পেছনে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা হচ্ছে এই যে, এর মাধ্যমে মরার সময় মুসলমানের অন্তরে কেবলমাত্র ইসলামী আকীদা বিশ্বাসই তাজা হয়ে যায় না বরং বিশেষভাবে তার সামনে আখেরাতের পূর্ণ চিত্রও এসে যায় ৷
এবং সে জানতে পারে দুনিয়ার জীবনের মনযিল অতিক্রম করে এখন সামনের দিকে কোন্ সব মনযিল পার হয়ে তাকে যেতে হবে। এ কল্যাণকারিতাকে পূর্ণতা দান করার জন্য আরবী জানে না এমন ব্যক্তিকে সূরা ইয়াসীন শুনাবার সাথে সাথে তার অনুবাদও শুনিয়ে দেয়া উচিত। এ
ভাবে উপদেশ দান ও স্মরণ করিয়ে দেবার হক পুরোপুরি আদায় হয়ে যায়।কুরআনে কিছু সূরা রয়েছে যেগুলোর অতিরিক্ত কিছু ফযিলত রয়েছে যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
সুরা ইয়াসিন সেই সুরাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সূরা ইয়াসিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
তিরমিযি শরীফে এসেছে
” إن لكل شيء قلبا وقلب القرآن يس ومن قرأ يس كتب الله له بقراءتها قراءة القرآن عشر مرات”. ( سنن الترمذي، فضل يس، رقم:2887)
‘‘প্রত্যেক বস্তুর একটি হৃদয় রয়েছে, আর কুরআনে হৃদয় হচ্ছে ‘ইয়াসিন’। যে ব্যক্তি ‘ইয়াসিন’ পড়বে আল্লাহ তার আমলনামায় দশবার পূর্ণ কুরআন পড়ার নেকী দান করবেন।
দারেমী শরীফে এসেছেঃ
عن عطاء بن أبي رباحٍ قال: بلغني أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: من قرأ یٰٓس في صدر النہار قضیت حوائجہ۔ (رواہ الدارمي) (فضائل اعمال / فضائل قرآن ۱؍۵۲ إشاعۃ دینیات دہلي)
হজরত আতা বিন আবি রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করা হবে।’
সূরা ইয়াসিন কখন পড়তে হয়
অন্যত্রে এসেছেঃ
عن شہر بن حوشب قال: قال ابن عباس رضي اللّٰہ عنہ : من قرأ یٰسٓ حین یصبح، أعطي یسر یومہ حتی یمسي، ومن قرأ ہا في صدر لیلۃ أعطي یسر لیلتہ حتی یصبح۔ (المسند للإمام الدارمي، بحوالہ: أحکام القرآن للقرطبي ۲؍۱۵)
হজরত ইয়াহইয়া ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে।’
এই হাদীসের আলোকে আমরা জানলাম সূরা ইয়াসিন সকাল সন্ধ্যা আমল করা যায় ৷ তবে যখন খুশি তখনও পড়া যাবে ৷
عن جندب بن عبد اللّٰہ رضي اللّٰہ عنہ قال: قال رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم: من قرأ یسٓ في لیلۃ ابتغاء وجہ اللّٰہ غفرلہ۔ (رواہ ابن السني، عمل الیوم الولیلۃ ۶۷۴، الترغیب والترہیب مکمل ص: ۳۶۳ رقم: ۲۴۶۶ بیت الأفکار الدولیۃ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তার ওই রাতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন।’
عن أنس رضي اللّٰہ عنہ قال: قال رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم: إن لکل شيء قلبًا وقلب القرآن یٰسٓ، ومن قرأ یٰسٓ کتب اللّٰہ لہ بقراء ۃ القرآن عشر مراتٍ، زاد في روایۃ: دون یٰسٓ۔ (الترغیب والترہیب ۲؍۲۵۴ رقم: ۲۱۷۵)
۔হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুরই একটা হৃদয় থাকে আর কুরআনের হৃদয় হল সুরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন একবার পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার পুরো কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন।’
عن أنس رضي اللّٰہ عنہ أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: من دخل المقابر فقرأ سورۃ یسین خفف اللّٰہ عنہ وکان لہ بعدد من فیہا حسنات۔ (شرح الصدور ۳۰۴)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেছেন,যে ব্যাক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করে,আল্লাহ তায়ালা কবর বাসীর আযাব হালকা করে দেন,এবং তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান ছওয়াব লেখা হয়।
তবে কিছু উলামায়ে কেরামদের মত হলো কুরআনের অন্যান্য আয়াত তেলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরে যে পরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায় এই সূরা তেলাওয়াত করলেও তার প্রতিটি অক্ষরে সেই পরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যাবে।
তবে কুরআনে মাত্র কয়েকটি সূরা রয়েছে যেগুলোর অতিরিক্ত কিছু ফযিলত রয়েছে যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সহীহ হাদীসে সূরা ইয়াসিনের অতিরিক্ত কোনো ফযিলত বর্ণিত হয় নি। দু একটি দুর্বল হাদীসে এ সূরার বিভিন্ন ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে।
একবার সূরা ইয়াসিন পাঠে দশবার কোরআন পড়ার সাওয়াব
এ সম্পর্কিত হাদীস একাধিক হাদীস রয়েছে। যেমন-
১. জামি’ তিরমিযীতে (হাদীস নং ৬৩৪৬) আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে,
২. বাইহাকী শুআবুল ঈমানে (হাদীস নং ২২৩৮) আবু হুরাইরা রাযি. থেকে,
৩.বাইহাকী শুআবুল ঈমানে (হাদীস নং ২২৩২) প্রসিদ্ধ তাবিঈ হাসসান ইবন আতিয়্যাহ রহ. থেকে,
৪.মুসতাগফিরির ফাযায়েলুল কোরআনে (হাদীস নং ৮৬৫) আনাস রাযি. থেকে,
৫. প্রাগুক্ত কিতাবে (হাদীস নং ৮৬৫) বারা ইবন আযিব রাযি. থেকে।
এসব হাদীসের মূলপাঠে শব্দগত কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও বক্তব্য অভিন্ন।
যেখানে বলা হয়েছে, একবার সূরা ইয়াসিন পাঠকারী দশবার কোরআন পড়ার সাওয়াব পায়। দীর্ঘায়িতা এড়ানোর লক্ষে আমি এখানে শুধু জামি’ তিরমিযীর মূলপাঠ পেশ করছি-
عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ قَلْبًا، وَقَلْبُ القُرْآنِ يس ، وَمَنْ قَرَأَ يس كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِقِرَاءَتِهَا قِرَاءَةَ القُرْآنِ عَشْرَ مَرَّاتٍ
অর্থাৎ, আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর হৃদয় থাকে, কোরআনের হৃদয় হল সূরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি একবার সূরা ইয়াসিন পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার সমগ্র কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন।
এ সম্পর্কিত হাদীসগুলো সনদের দিক থেকে কিছুটা দুর্বল হলেও মওজু বা জাল নয়। আর অভিন্ন বক্তব্যসম্বলিত হাদীস একাধিক থাকলে উসূলে হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী ওই হাদীসগুলো হাসান বা সহীহের পর্যায়ে চলে আসে।
দ্বীতিয়ত, হাদীসগুলো কিছুটা দুর্বল হলেও ফাজায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য। এটি উসূলে হাদীসের অন্যতম একটি নীতিমালা।
যেমন সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহ. বলেন-
قال العلماء من المحدثين والفقهاء وغيرهم يجوز ويستحب العمل فى الفضائل والترغيب والترهيب بالحديث الضعيف ما لم يكن موضوعا
একটি মূলনীতির কথা আমরা সবাই জানি ৷ মুহাদ্দিসীন ও ফুকাহায়েকেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়েকেরাম বলেন, দুর্বল হাদীসের উপর ফাযায়েল ও তারগীব তথা উৎসাহ প্রদান ও তারহীব তথা ভীতি প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে আমল করা জায়েয ও মুস্তাহাব। যখন উক্ত হাদীসটি জাল না হয়। (আল আজকার-৭-৮)
এ মূলনীতি নিম্ন বর্ণিত বিজ্ঞ ব্যক্তিগণও বলেছেন-
১- মোল্লা আলী কারী রহ. (মওজুয়াতে কাবীর-৫, শরহুন নুকায়া-১/৯)
২- ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী রহ. (মুস্তাদরাকে হাকেম-১/৪৯০)
৩- আল্লামা সাখাবী রহ. (আল কাওলুল বাদী’–১৯৬)
৪- হাফেজ ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী রহ. (মাজমুআ ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-১/৩৯)
অতএব, যারা বলে থাকেন যে, এ সম্পর্কিত হাদীস মওজু বা জাল; তাদের মূল উদ্দেশ্য, উম্মতকে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ -এর সুন্নত ও নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ।
তাদের এই হীন চক্রান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আমল থেকে বিরত রাখার ষড়যন্ত্র শুভকর নয় ৷
কোনো মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে গিয়ে যদি কেউ ৪০ দিন সুরা ইয়াসিন পাঠ করে
যে কোনো মুসলমানকে চাই সে জীবিত হোক বা মৃত হোক নফল ইবাদতের সওয়াব পৌঁছানো যাবে, এবং সওয়াব পৌছবে।
আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ.এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এভাবে তুলে ধরেন।তিনি বলেনঃ
ﻭﺍﻷﺻﻞ ﻓﻴﻪ ﺃﻥ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻟﻪ ﺃﻥ ﻳﺠﻌﻞ ﺛﻮﺍﺏ ﻋﻤﻠﻪ ﻟﻐﻴﺮﻩ ﺻﻼﺓ ﺃﻭ ﺻﻮﻣﺎ ﺃﻭ ﺻﺪﻗﺔ ﺃﻭ ﻗﺮﺍﺀﺓ ﻗﺮﺁﻥ ﺃﻭ ﺫﻛﺮﺍ ﺃﻭ ﻃﻮﺍﻓﺎ ﺃﻭ ﺣﺠﺎ ﺃﻭ ﻋﻤﺮﺓ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻋﻨﺪ ﺃﺻﺤﺎﺑﻨﺎ ﻟﻠﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ
মূলকথা হলঃ মানুষ তার আমলের সওয়াব অন্যর জন্য দিতে পারবে, সে আমল চাই নামায, রোজা, সদকা, কোরআন তেলাওয়াত, যিকির, তাওয়াফ, হজ্ব,উমরা বা অন্য কিছুই হোক না কেন। এসবের সওয়াব পৌঁছানোর দুআ করা যাবে ৷
এটা আমাদের উলামাদের কাছে কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।(বাহরুর রায়েক,হজ্ব অধ্যায়;৩/৬৩)
যেমনঃ- আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺟَﺎﺅُﻭﺍ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِﻫِﻢْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻨَﺎ ﻭَﻟِﺈِﺧْﻮَﺍﻧِﻨَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺳَﺒَﻘُﻮﻧَﺎ ﺑِﺎﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻌَﻞْ ﻓِﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻨَﺎ ﻏِﻠًّﺎ ﻟِّﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺭَﺅُﻭﻑٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ
‘আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না।
হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।(সূরাঃ-হাশর-১০)
এই আয়াতে ঐ সমস্ত মুসলমান ভাইদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করা হচ্ছে, এবং দু’আ করতে মুসলমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যারা এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে অনেক আগেই চলে গেছেন।
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ-
ﻓَﺎﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮْ ﻟِﺬَﻧﺒِﻚَ ﻭَﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣُﺘَﻘَﻠَّﺒَﻜُﻢْ ﻭَﻣَﺜْﻮَﺍﻛُﻢْ
‘জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত’।(সূরাঃ-মুহাম্মদ-১৯)
হাদীসে ঈসালে সওয়াব বা মৃতদের জন্য সওয়াব পৌঁছানো
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﻦ ﻋﺮﻭﺓ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻗﺎﻝ ﻟﻠﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺃﻣﻲ ﺍﻓﺘﻠﺘﺖ ﻧﻔﺴﻬﺎ ﻭﺃﺭﺍﻫﺎ ﻟﻮ ﺗﻜﻠﻤﺖ ﺗﺼﺪﻗﺖ ﺃﻓﺄﺗﺼﺪﻕ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﻧﻌﻢ ﺗﺼﺪﻕ ﻋﻨﻬﺎ-
তরজমাঃ হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি নবীজী সাঃ কে এসে বললঃআমার মা হঠাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন,আমি মনে করি যদি তিনি কথা বলতেন,তাহলে তিনি সদকা করতেন,আমি তার পক্ষ্য থেকে কি সদকা করতে পারব?
নবীজী সাঃ তদুত্তরে বললেনঃহ্যা পারবে।তুমি তার পক্ষ্য থেকে সদকা কর।(সহীহ বুখারী-২৬০৯)
মৃত ব্যক্তির জন্য সুরা ইয়াসিন পড়া হলে তার কবরে এর সোয়াব পৌছাবে।
তবে মৃত ব্যক্তির কবরের সামনে টানা ৩৯ দিন না যেন ৪১ দিন সূরা ইয়াসিন পড়ার কোনো নিয়ম শরীয়তে নাই।
এবং তার কবরের আযাব কিয়ামত পর্যন্ত মাফ করে দেয়া হয় এটাও বিশুদ্ধ নয়।
আসুন পাঠকবৃন্দ! আমরা কুরআন অর্থসহ পড়ে আমল করি ৷ আর বিশেষ সূরার আমল নিয়মিত জারি রাখি ৷
লেখকঃ
হাফেজ মাওলানা দীদার মাহদী
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা
কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷