নারীদের নামাজ পড়ার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ । প্রিয় দীনি ভাই-বোনেরা ! আমাদের সাইটে আসার জন্য আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন । এখানে আপনারা নারীদের নামাজ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাবেন । ইনশাআল্লাহ। কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক প্রবন্ধটি লিখেছেন মাওলানা শরিফ আহমাদ ।
নারীদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত । এই ইবাদাত প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরজ । নামাজের বিধান সবার জন্য এক হলেও আদায় করার পদ্ধতি এক নয় । নারীদের নামাজ আদায় করার পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হয়েছে । তবে তার পূর্বে জরুরী বিষয়গুলো খেয়াল করুন ।
নামাজের ফরজ সমূহঃ
( নামাজের বাহিরে এবং ভিতরে মোট ১৩ ফরজ ।)
নামাজের বাহিরে ৭টি ফরজ
১.শরীর পাক ।
২. কাপড় পাক ।
৩. নামাজের জায়গা পাক ।
৪. সতর ঢাকা ।
৫.কেবলা মুখি হওয়া ।
৬. ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া ।
৭. নামাজের নিয়ত করা ।
নামাজের ভিতরে ৬ টি ফরজ
১.তাকবীরে তাহরীমা বলা ।
২. দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ।
৩.কেরাত পড়া ।
৪.রুকু করা ।
৫ দুই সিজদা করা ।
৬. আখেরী বৈঠক ।
নোট: নামাজে যদি উক্ত ফরজসমূহের মধ্য হতে কোনটি ছুটে যায় তাহলে ঐ নামাজ বাতিল হয়ে যাবে । পুনরায় ঐ নামাজ পড়তে হবে ।
নামাজের ওয়াজিব ১৪ টি
১. সূরা ফাতিহা পড়া ।
২. সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সুরা মিলিয়ে পড়া ।
৩. রুকু সিজদায় দেরি করা ।
৪. রুকু থেকে সোজা হয়ে খাড়া হওয়া ।
৫. দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
৬. দরমিয়ানী বৈঠক ( দুই রাকাতের পর বসা)
৭. উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া ।
৮. ইমামের জন্য কেরাত আস্তে এবং জোরে পড়া ।
৯. বিতির নামাযে দোয়া কুনুত পড়া ।
১০. দুই ঈদের নামাজে ছয় ছয় তাকবীর বলা ।
১১. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কেরাতের জন্য নির্ধারিত করা ।
১২. প্রত্যেক রাকাতের ফরজগুলির তারতীব ঠিক রাখা ।
১৩. প্রত্যেক রাকাতের ওয়াজিবগুলির তারতীব ঠিক রাখা ।
১৪. আসসালামু আলাইকুম বলে নামাজ শেষ করা ।
নোট: নামাযের ওয়াজিব সমূহের মধ্য হতে ভুলবশত কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে অথবা কোন ওয়াজিব তার নির্ধারিত জায়গা থেকে সরে গেলেই সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়
নামাজে সুন্নাতে মুআক্কাদা ১২ টি
১. দুই হাত উঠানো
২. দুই হাত বাধা
৩. ছানা পড়া
৪. আউযুবিল্লাহ পড়া
৫. বিসমিল্লাহ পড়া.
৬.আলহামদু শেষে আমিন বলা
৭. প্রত্যেক উঠা বসায় আল্লাহু আকবার বলা
৮. রুকুর তাসবীহ পড়া
৯. রুকু হইতে উঠিবার সময় সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদা বলা ।
১০. সিজদার তাসবীহ পড়া
১১. দরুদ শরীফ পড়া।
১২. দোয়া মাসুরা পড়া ।
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা ! এবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নারীদের নামাজের সঠিক নিয়ম গুলো ফলো করুন।
★ ফরজ নামাজগুলো দাঁড়িয়ে পড়া ফরজ । তাই সর্বপ্রথম সর্বাঙ্গ সোজা রেখে কেবলামুখী হয়ে দন্ডায়মান হওয়া ।
★ জায়নামাজ বা পবিত্র স্থানে দুই পা একত্র করে মিলিয়ে দাঁড়ানো । নামাজের নিয়ত বাঁধার পূর্ব পর্যন্ত হাতছাড়া অবস্থায় রাখা ।
★ উভয় পায়ের উপর ভর করে দাঁড়ানো । শুধু এক পায়ের ওপর সম্পূর্ণভাবে দাঁড়ানো মাকরুহ ।
★ নিয়ত করা ফরয। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা উত্তম । নিয়ত আরবী- বাংলা কিংবা নিজস্ব ভাষায় করা যায়। প্রচলিত আরবীতে করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই ।
★ নিয়ত বাধার সময় কাপড়ের মধ্য থেকে হাত বের করবে না । নিয়ত বাঁধার জন্য হাত সিনা পর্যন্ত উঠাবে । এমনভাবে যেন আংগুলের অগ্রভাগ কাঁধ পর্যন্ত উঠে যায় ।
তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলা ফরজ ।
★ নারীরা বুকের উপর হাত বাঁধবে। অর্থাৎ হালকাভাবে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে ।
★ দাঁড়ানো অবস্থায় চোখের দৃষ্টির সিজদার জায়গায় রাখা । তারপর ছানা পড়া সুন্নাত । আউযুবিল্লাহ- বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত । সূরা ফাতিহা পুরো পড়া ওয়াজিব । সূরা ফাতিহার পর আমীন বলা সুন্নাত । আস্তে আমিন বলা সুন্নাত ।
★ সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা মিলানোর পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত- মুস্তাহাব । সূরা মিলানো ওয়াজিব।
★ রুকুতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা সুন্নাত । রুকু করা ফরজ । সামান্য ঝুঁকে রুকু আদায় করা । রুকুতে উভয় হাতের আংগুলসমূহ মিলিত রেখে হাঁটুর ওপর হাত রাখবে । হাটু ধরবে না এবং হাতের বাহু পাজরের সাথে মিলিত রেখে অল্প ঝুঁকে রুকু করবে এবং হাঁটু সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখবে আর পিঠ সামান্য বাঁকা রাখবে ।
রুকুতে চোখের দৃষ্টি দুই পায়ের মধ্যভাগের আঙ্গুলগুলোর বরাবর রাখা । রুকুতে কমপক্ষে তিনবার এই তাসবিহ সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়া । রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ওয়াজিব ।
দাঁড়ানোর সময় সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা বলা তারপর রব্বানা লাকাল হামদ বলা সুন্নত ।
★ সিজদাতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা সুন্নাত । দুই সিজদা করা ফরজ ।
সিজদা করার সময় প্রথমে মাটিতে দুই হাটু লাগবে। তারপর দুই হাত। তারপর নাক। তারপরে কপাল । সিজদার তাসবিহ সুবহানা রব্বিয়াল আলা কমপক্ষে তিনবার পড়া সুন্নাত । সিজদা অবস্থায় চোখের দৃষ্টি নাকের দিকে নিবদ্ধ রাখা । এবং হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে হাটু বরাবর রাখা । সিজদার সময় শরীর একেবারে মিশিয়ে সিজদা করা । পুরুষদের মত সিজদা না করা ।
★ সিজদা থেকে ওঠার সময় প্রথমে কপাল তারপর নাক তারপর হাত জমিন থেকে ওঠানো সুন্নত ।
★ দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ওয়াজিব । অনেকে স্থির না হয়ে তাড়াতাড়ি রুকুতে চলে যায়। তাদের ওয়াজিব তরক হয়। এজন্য ধীর-স্থিরভাবে বসে দুই সিজদার মাঝখানে এই দোয়াটি পড়া
اللهم اغفر لي وارحمني وارزقني واهدني
প্রথম সিজদার পর দ্বিতীয় সিজদা করা ফরজ ।
★ এইভাবে দুই রাকাত নামাজ পুর্ণ হলে বসে আত্তাহিয়াতু পাঠ করা ওয়াজিব । যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয় তবে আত্তাহিয়াতুর পর দরুদে ইবরাহীম পাঠ করা । তারপর দোয়া মাসুরা পড়া ।
নারীগণ বসা অবস্থায় নিতম্বের উপর বসবে। এবং উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে । এবং যথাসম্ভব আঙ্গুলগুলো কেবলা মুখী করে রাখবে ।
★ তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে আত্তাহিয়াতুর পরে দাঁড়িয়ে বাকি রাকাতগুলো পূর্বের নিয়মে আদায় করবে । তারপর আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ বলে প্রথম ডানদিকে পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবে ।
আপনারা পড়ছেন – নারীদের নামাজ পড়ার নিয়ম
নোট: তারপর একবার আল্লাহু আকবার । তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ ও দরুদ শরীফ পাঠ করে দোয়া করবে কিংবা অন্যান্য আমল করবে। মনে রাখতে হবে দোয়া নামাজের কোন অংশ নয় । দোয়া আলাদা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ।
নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্যঃ
নারীদের নামাজের পোশাকঃ
নারীদের সর্ব অবস্থায় ফরজ ও সুন্নাত পোশাক হল কামিজ বা মেক্সি । যা গলা থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুলাবে । কামিজ বা মেক্সির হাতা কব্জি কিংবা হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত লম্বা হতে হবে । আর মাথায় এমন হিজাব বা ওড়না পরিধান করতে হবে যাতে কোনোভাবেই গলা, ঘাড় ,কান , মাথা ও জুলফির চুল কিংবা বুকের কোন অংশ দেখা না যায় ।
মেক্সির নিচে পায়জামা অথবা সায়া পরিধান করতে হবে । স্বামী ছাড়া পরিবারের অন্য সবার সামনে এই রকম পোশাক পরা নারীদের জন্য ফরজ ।
বাড়ি কিংবা ঘরের বাহিরের কাজকর্ম করাসহ সর্বাবস্থায় এই রকম পোশাক পরিধান করা ফরজ এবং এটি সুন্নাতি পোশাক ।
যেহেতু সর্বাবস্থায় এই রকম পোশাক পড়া ফরজ তাই নামাজের ক্ষেত্রেও নারীকে ঐ রকম পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করতে হবে । শাড়িতে নারীকে সুন্দর দেখায় । কিন্তু শাড়িতে পর্দার বিধান বেশি লংঘন হয় । অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেট-পিঠসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখা যায় । এতে যেমন গোনাহ হয় তেমন নামাজও আদায় হয় না ।
মনে রাখতে হবে যদি কারো কাপড় ঘরে না থাকে সে পুরুষ হোক কিংবা নারী । একাকী ঘরে কিংবা অন্ধকার ঘরে নেংটা হয়ে নামাজ আদায় করলেও নামাজ হয়ে যাবে । কিন্তু যদি কাপড় আছে আর অবহেলা করে পোশাক না পরে , সতর প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে নামায আদায় হবে না । এজন্য বর্তমানে নারীদের নামাজের জন্য আলাদা সুন্নাতি হিজাব পাওয়া যায় সেগুলো সংগ্রহ করা যেতে পারে। ডিজিটাল বোরকার মত যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । কেননা আজকাল অধিকাংশ বোরকা দ্বারা পর্দা রক্ষা হয় না ।
শুধু ফ্যাশন করা হয় । অতএব নারীদের নামাজসহ ফরজ পোশাক ঠিক আছে কিনা এ বিষয়ে পুরুষদের খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন । দায়িত্ব আদায় করা জরুরী । কেননা হাশরের মাঠে প্রত্যেক দায়িত্ববানকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে ।
তাই আল্লাহ তাআলা দীনি ভাই- বোনদেরকে সত্যটা বুঝার তৌফিক দান করুন । আমিন ।
নারীদের নামাজের স্থানঃ
নারীদের নামাজের উত্তম স্থান হচ্ছে তাদের ঘর । ঘরের মধ্যে আলাদা করে নামাজের স্থান তৈরি করা । এ সম্পর্কে হাদীসটি লক্ষ্য করুন ।
নারীদের নামাজ সম্পর্কিত হাদিসঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন সুআইদ আল আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে আবু হুমাইদ আস সাঈদী এর স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল !
আমি আপনার সাথে নামাজ পড়তে পছন্দ করি । তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি জেনেছি যে তুমি আমার সাথে নামায পরতে পছন্দ করো ।
অথচ তোমার একান্ত রুমে নামাজ পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়ার চেয়ে।
আর তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামাজ পড়ার চেয়ে ।
আর তোমার বাড়িতে নামাজ পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে ।
আর তোমার এলাকার মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামাজ পড়ার চেয়ে ।
তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোনে একটি রুম বানাতে । আর সেটিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেললেন । তারপর সেখানে নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত ।
( সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং ১৬৮৯
মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ১৭০৯০ সহীহ ইবনে হিব্বান; হাদীস ২২১৭ )
এই হাদীস কি প্রমাণ করছে ? মহিলারা মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়ার নির্দেশ নবীজি দিয়েছেন । সুতরাং নারীরা ঘরের ভিতরে নির্দিষ্ট একটা জায়গা তৈরি করে সেখানে নামায আদায় করবে ।
মহিলাদের মসজিদে নামাজ আদায়ঃ
মহিলাদের জন্য মসজিদে নয় বরং ঘরেই নামাজ পড়া উত্তম । নারীদের জন্য মসজিদে বা ঈদগাহে জামায়াতে নামাজ পড়তে যাওয়া মাকরূহ ও নিষিদ্ধ ।
সাহাবাদের যুগ থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা চলে আসছে । তবে কখনো যদি স্বামী পিতা বা ছেলে প্রমুখ মাহরাম পুরুষ ঘরে জামাতের সাথে নামায পড়েন তাহলে তাদের পিছে ইক্তেদা করে নামাজ পড়তে পারবে । নারীদের মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ সম্পর্কে হাদীসগুলো লক্ষ্য করুন:
১. হযরত আসমা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত । নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , মহিলাদের আজান, একামত, জুমআ ও জুমআর গোসল নেই । ( সুনানে বায়হাকী ,খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ১৭০ , হাদীস নং ১৯৬০)
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন । নারী আপাদমস্তক আবরণীয় ।
যখন সে বাইরে বের হয় শয়তান তার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ।
নারী যতক্ষণ ঘরের ভিতরে থাকে আল্লাহর রহমতের অধিক নিকটে থাকে ।
( জামে তিরমিযী, হাদীস ১১৭৩ মুসনাদে বায্যার, হাদীস ২০৬১)
৩. হযরত আবু হোরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন । যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করেছে সে যেন আমাদের সাথে এশার নামাজে শরীক না হয় ।
( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯০ )
৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
মহিলার জন্য ঘরের আঙ্গিনায় নামাজ অপেক্ষা তার ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। আর ঘরে নামাজ অপেক্ষা নিভৃত ও একান্ত কোঠায় নামাজ পড়া উত্তম । ( সুনানে আবী দাঊদ, হাদীস নং ৫৭০ )
পড়ুন – কসর নামাজ পড়ার নিয়মঃ
৫. হযরত আমর শাইবানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি ( এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ফকিহবিদ ) সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু কে দেখেছি ,
তিনি জুমআর দিনে মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন তোমরা ঘরে চলে যাও তোমাদের জন্য এটাই উত্তম ।
( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১
মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১
আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫। )
আপনারা পড়ছেনঃ মহিলাদের নামাজ পড়ার নিয়ম।
৬. হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন , যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতেন যে মহিলারা ( সাজসজ্জা গ্রহণে ,সুগন্ধি ব্যবহারে ও সুন্দর পোশাক পরিধানে ) কি পন্থা অবলম্বন করেছে
তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন । যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনি ইসরাইলের নারীদেরকে ।
( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৬৯ )
আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা এ কথা যখন বলেছেন তখন ছিল খাইরুল কুরূন তথা ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ তিন যুগের সময়কাল ।
তখন তাবেয়ীগণের সাথে সাথে অনেক সাহাবী ও জীবিত ছিলেন । লক্ষণীয় হল যে বিষয়টি খইরুল কুরুন যুগেও নবীজির অনুমোদন প্রার্থীর যোগ্যতা রাখে না । তাহলে প্রায় পনেরো শত বছর পরে নৈতিক অবক্ষয়ের জয়-জয়কার জামানায় কিভাবে অনুমোদন হতে পারে ?
তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহিলাদের মসজিদে আসার অনুমোদন ছিল । পরবর্তীতে সেটা কি নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে । তখন মহিলাদের ২ জিনিসের উপর ভিত্তি করে মসজিদে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ।
১. ইসলামের সূচনা লগ্ন হওয়ায় দীনি ইলেমের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের স্বার্থে পুরুষ মহিলাসহ সকলের জন্য মসজিদে এসে সরাসরি নবীজির কাছ থেকে হুকুম-আহকাম জানার প্রয়োজন
২. ফিতনার আশঙ্কা না থাকা । আর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে যাওয়ার প্রায় ১৫ শত বছর পরে এসে ইলমের ব্যাপক প্রচার-প্রসার হয়েছে এবং ফিতনার আশংকাতে ভরে গেছে । এই কারণেই সাহাবা-তাবেয়ীন দেয়ার মত হক্কানি ওলামায়ে কেরাম নারীদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে আসছেন ।
নারীদের ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়মঃ
মহিলাদের জন্য ঈদগাহে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়া মাকরুহ । তবে যদি কেউ নামাজ পড়ে তাহলে আদায় হয়ে যাবে ।
মনে রাখতে হবে নারীদের নামাজের আসল স্থান হল তাদের বসবাসের ঘর । নারীদের মসজিদে এসে নামাজ পড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন না ।
তবে যেহেতু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার নবী ছিলেন । আর তার কাছে ওহী নাযিল হতো তাই নারীরা ওহীর বাণী শুনতে আসতো । কিন্তু নবীজির ইন্তেকালের পর এই প্রয়োজনীয়তা বন্ধ হয়ে গেছে ।
আর একটু সহজ করে এভাবে বলা যায়- প্রয়োজনীয় দ্বীন শিক্ষা প্রতিটি নর-নারীর জন্য ফরজ । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ইলমের বাহক ছিলেন । তাই তার কাছে পুরুষ সাহাবীদের সঙ্গে নারী সাহাবীরা এসে ইলেম শিক্ষা করতো এবং সেই সময়ে ফিতনার কোন আশঙ্কা ছিল না ।
কিন্তু বর্তমানে সেই ফিতনা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে । তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম নারীদেরকে ঈদগাহে ও মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন । এটা নাজায়েজ কোনো কাজ নয় । তবে এটা মাকরুহ । তাছাড়া নারীদেরকে সাজগোজ করে বাইরে বের হওয়া পবিত্র কোরআনে নিষেধাজ্ঞা এসেছে ।
নারীরা সাওয়াবের আশায় মসজিদে যাতায়াতের সময় আরো কতগুলো গুনাহ করে ফেলে সেটা একবার সচেতন মহল ভেবে দেখুন । তাহলে কিছুটা অন্তত বুঝতে পারবেন । যে হাদীসে নবীজি ঋতুবর্তী মহিলাদেরকে পর্যন্ত ঈদগাহে শরীক হতে বলেছিলেন তার বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে ।
মুহাদ্দিসগণ চমৎকার সমাধান দিয়েছেন । তার মধ্যে প্রধান এই যে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের সংখ্যা কম ছিল । তাই নবীজি কাফেরদেরকে সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্যই নারীদেরকে তখন ঈদগাহে আসতে বলেছিলেন । আর এখন তো সেই প্রয়োজনীয়তা নেই । অতএব নারীরা ঈদগাহে আসার কোনো প্রয়োজনও নেই ।
নারী-পুরুষের নামাজ কি এক ?
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে । বিশেষ হেকমতের কারণেই তিনি মানুষকে পুরুষ এবং নারীতে বিভক্ত করেছেন । মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষের তেমন পার্থক্য না থাকলেও মৌলিকভাবে অনেকগুলো পার্থক্য রয়েছে । যেমন:
১. লিঙ্গের দিক দিয়ে পার্থক্য
২.গড়নের দিক দিয়ে পার্থক্য
৩. বুঝ-বুদ্ধির দিক দিয়ে পার্থক্য
৪. শক্তির দিক দিয়ে পার্থক্য
৫. ব্রেনের দিক দিয়ে পার্থক্য
৬. রঙের দিক দিয়ে পার্থক্য
৭.কথাবার্তার মধ্যে পার্থক্য
৮.আকর্ষণের মধ্যে পার্থক্য
৯.লাবণ্যতার মধ্যে পার্থক্য
১০. কোমলতার মধ্যে পার্থক্য
১১.আওয়াজের মাধ্যমে পার্থক্য
১২.চাল-চলনের মধ্যে পার্থক্য
১৩. লাজুককতার মধ্যে পার্থক্য
১৫. লজ্জা-শরমের মধ্যে পার্থক্য
১৬. সাহসিকতার মধ্যে পার্থক্য
১৭. চাহিদার মধ্যে পার্থক্য
১৮. মায়া-মমতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে পার্থক্য।
অতএব বিধানগত ভাবে নারী-পুরুষের ইবাদত এক হলেও আদায় করার পদ্ধতি আলাদা। যা কোরআনের আয়াত ও হাদীসের আলোকে স্পষ্ট ।
নারী-পুরুষের নামাজের পার্থক্য
নারী এবং পুরুষের নামাযের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে । সরাসরি হাদীস থেকে দলীল দেখুন:
১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলাম । এরপর নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বললাম, এই হল ওয়াইল ইবনে হুজর । আপনার দরবারে এসেছে । ভয়ে বা আশায় আসেনি । বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসায় এসেছে । তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন , হে ওয়াইল ইবনে হুজর ।
তুমি যখন নামাজ পড়বে তখন তোমার হাতদ্বয় কান বরাবর উঠাবে। আর মহিলা তার হাতকে সীনা বরাবর উঠাবে। ( তাবারানী কাবীর ২২/২০ )
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন নারী হলো সতর অর্থাৎ আবৃত থাকার বস্তু ।
( তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ১১৭৩ সহীহ ইবনে খুযাইমা ৩/৯৩ হাদীস নং ১৬৮৬)
এই হাদীসে নারীদেরকে আবৃত থাকার বস্তুর বলা হয়েছে । কাজেই তারা নামাজের মধ্যে পুরুষের ন্যায় হাতকে আঁচলের ভিতর থেকে বের করবে না ।
এ কথার সমর্থনে মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে আরো একটি হাদীস পাওয়া যায় ।
৩ । হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত ।
রাসুলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা নামাজরত দুজন মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন । তখন তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা তখন সিজদা করবে তখন দেহের কিছু অংশকে জমীনের সাথে মিলিয়ে রাখবে । কেননা মেয়েরা এক্ষেত্রে পুরুষের মতো নয় ।
( মারাসীলে আবূ দাউদ , হাদীস নং ৮৭)
৪. মহিলা যখন রুকু করবে তখন জড়োসড়ো হয়ে থাকবে । হাতদ্বয়কে পেটের সাথে মিলিয়ে নিবে । এবং যথাসম্ভব সংকুচিত হয়ে থাকবে । আর যখন সিজদা করবে তখন হাতদ্বয়কে দেহের সাথে মিলিয়ে রাখবে । পেট ও সীনাকে রানের সাথে মিলিয়ে রাখবে । এবং সম্ভাব্য সংকুচিত হয়ে থাকবে ।
( মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৭ হাদীস নং ৫০৬৯)
৫. হযরত কাতাদা রহ. থেকে বর্ণিত অপর একটি বর্ণনায় এসেছে নারী দুই সিজদার মাঝখানে বাম পার্শের উপর বসবে এবং উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে । ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১৩৯ হাদীস নং ৫০৭৫)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল নারী-পুরুষের নামাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে । সুতরাং যারা বলবে নারী-পুরুষের নামাজে কোন পার্থক্য নেই তাদের কথা ঠিক নয় । বিস্তারিত জানতে আহলে হক ওলামায়ে কেরামগণের লেখা বইগুলো পড়ুন । ( কোন বইয়ের নাম, প্রকাশনী ও কুরিয়ার নাম্বার জানতে কমেন্ট করুন )
মহিলাদের নামাজের সতর
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- হে বনী-আদম প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করে নাও আর ( হালাল বস্তু তৃপ্তির সঙ্গে খাও) ও পান করো । কিন্তু অপচয় করো না নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না ( সূরা আরাফ: ৩১)
অত্র আয়াতের প্রথম অংশে বলা হয়েছে নামাজের জন্য পুত-পবিত্র ও সুন্দর পোশাক পরিধান করার জন্য । অতএব বোঝা গেল ঈমান আনার পর লজ্জাস্থান আবৃত করে রাখা মানুষের প্রথম ফরজ কাজ ।
বিশেষ করে নামাজও তাওয়াফে তা অপরিহার্য । আয়াতের বাচনভঙ্গি থেকে বোঝা যায় নামাজে কেবল গুপ্তাঙ্গ আবৃত করাই যথেষ্ট নয় এর পাশাপাশি সুন্দর সাজসজ্জার পোশাক পরিধান করাও কর্তব্য ।
নারীদের সতর কতটুকু এ সম্পর্কে হাদীসের বর্ণনাটি লক্ষ্য করুন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন পুরুষদের সতর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের সতর মুখমন্ডল, হাতের তালু এবং পদযুগল ছাড়া অবশিষ্ট দেহ ।
ঢেকে রাখা অঙ্গগুলোর কোন একটির এক-চতুর্থাংশ বা এর অধিক ইচ্ছাকৃত এক মুহূর্তের জন্য খুলে ফেললে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে ।
আর যদি অনিচ্ছাকৃত এক-চতুর্থাংশ বা ততোধিক খুলে যায় । তাহলে তিন তাসবীহ ( ৩ বার সুবহানাল্লাহ বলা পরিমাণ ) সময় খোলা থাকলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে ।
এক চতুর্থাংশের কম হলে তার ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক নামাজ নষ্ট হবে না । মহিলাদের চুল ও সতরের অন্তর্ভুক্ত । অতএব নারীদের সাবধানতার সঙ্গে হিজাব পরিধান করে নামাজ পড়া উচিত ।
শেষকথাঃ
আলহামদুলিল্লাহ। নারীদের নামাজ আলোচনার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এখন বিদায় নেবার পালা। মহিলাদের নামাজ নিয়ে দলিল ভিত্তিক আজকের আলোচনা থেকে আমাকে আপনাকে আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।
বিঃদ্রঃ আজকের আলোচনার উপর কোন আপত্তি থাকলে দলিল ভিত্তিক কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইলো। আমরা জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ ৷