সন্তান কেন মা-বাবার আকৃতিতে হয় ?
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ । প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোনেরা । সন্তান দেখতে কেন মা-বাবার মতো হয় আজ এই টপিকের উপর আলোচনা করবো । নিত্য নতুন যুগোপযোগী বিষয়ভিত্তিক কলাম পেতে আমাদের সাইটের সঙ্গে থাকুন । জাযাকাল্লাহ ।
আপনাদের কারো চেহারা হয়তো পিতার মত । আবার কারো আকৃতি হয়তো মায়ের মত । পিতা-মাতার বাইরে অন্য কোন গড়নও হতে পারে । তবে সেটা একেবারে কম । আপনারা হয়তো মানুষের মুখে এটাও শুনে থাকবেন আপনার চোখ দুটি মায়ের মত । আপনার নাকটি আপনার বাবার নাকের মতো । লম্বাতে আপনি ঠিক আপনার ফুফুর মত । এভাবেই একই পরিবারের সদস্যদের চেহারায় কিছুটা হলেও মিল হতে পারে। এটাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় জেনেটিক ফ্যাক্টর বলা হয় ।
এবার বিজ্ঞানের থিউরি রেখে কোরআন সুন্নাহর দিকে আসুন । কোরআন এবং হাদীসের মধ্যে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর ও সমস্যাবলীর সমাধান রয়েছে।
কোরআনের আলোকে মানুষের পরিচয়
মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা । আল্লাহর বিস্ময়কর এক সৃষ্টি। মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা-
لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫
অনুবাদ: আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে। (সুরা আত ত্বীন – ৪)
কোরআনে বর্ণিত মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
মানুষের সুন্দরতম অবয়ব গঠনের আলোচনা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এসেছে । এতে যেমন আছে মানুষের দেহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া । তেমনই আছে দেহের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাধারণ বর্ণনা । আবার আছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংযত ব্যবহারের নির্দেশনা । আরো আছে অসংযত ব্যবহারের ভয়াবহ পরিণতির কথা । নিম্নে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কিছু আয়াত তুলে ধরা হলো ।
১. হাত:
یُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ وَاَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ .
অনুবাদ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর। ( আল মায়িদাহ – ৬)
২. হাতের তালু:
وَاُحِیۡطَ بِثَمَرِہٖ فَاَصۡبَحَ یُقَلِّبُ کَفَّیۡہِ عَلٰی مَاۤ اَنۡفَقَ فِیۡہَا وَہِیَ خَاوِیَۃٌ عَلٰی عُرُوۡشِہَا وَیَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُشۡرِکۡ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا
অনুবাদ: অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে ( হাতের তালু ) আক্ষেপ করতে লাগল। বাগনটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগলঃ হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম। (আল কাহাফ – ৪২)
৩. হাতের বাহু:
قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَکَ بِاَخِیۡکَ وَنَجۡعَلُ لَکُمَا سُلۡطٰنًا فَلَا یَصِلُوۡنَ اِلَیۡکُمَا ۚۛ بِاٰیٰتِنَاۤ ۚۛ اَنۡتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَکُمَا الۡغٰلِبُوۡنَ
অনুবাদ: আল্লাহ বললেন, আমি তোমার বাহু শক্তিশালী করব তোমার ভাই দ্বারা এবং তোমাদের প্রধান্য দান করব। ফলে, তারা তোমার কাছে পৌছাতে পারবে না। আমার নিদর্শনাবলীর জোরে তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা প্রবল থাকবে। ( সুরা কাসাস – ৩৫)
চেহারাঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ .
অনুবাদ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর । (আল মায়িদাহ – ৬)
চোখ ,দাঁত, নাক ও কান :
وَکَتَبۡنَا عَلَیۡہِمۡ فِیۡہَاۤ اَنَّ النَّفۡسَ بِالنَّفۡسِ ۙ وَالۡعَیۡنَ بِالۡعَیۡنِ وَالۡاَنۡفَ بِالۡاَنۡفِ وَالۡاُذُنَ بِالۡاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ ۙ وَالۡجُرُوۡحَ قِصَاصٌ ؕ فَمَنۡ تَصَدَّقَ بِہٖ فَہُوَ کَفَّارَۃٌ لَّہٗ ؕ وَمَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الظّٰلِمُوۡنَ
অনুবাদ: আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম। (আল মায়িদাহ – ৪৫)
৬. গাল
وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ ۚ
অনুবাদ: অহংকারবশে তুমি ( গাল ফিরিয়ে নিও না) মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (লোকমান – ১৮)
৭. চিবুক
وَیَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَیَزِیۡدُہُمۡ خُشُوۡعًا ٛ
অনুবাদ: তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ( চিবুকে র ওপর ) ভুমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরো বৃদ্ধি পায়।
(বনী-ইসরাঈল – ১০৯)
৮. চুল ও দাড়ি
قَالَ یَبۡنَؤُمَّ لَا تَاۡخُذۡ بِلِحۡیَتِیۡ وَلَا بِرَاۡسِیۡ ۚ اِنِّیۡ خَشِیۡتُ اَنۡ تَقُوۡلَ فَرَّقۡتَ بَیۡنَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ وَلَمۡ تَرۡقُبۡ قَوۡلِیۡ
অনুবাদ: তিনি বললেনঃ হে আমার জননী-তনয়, আমার শ্মশ্রু ও মাথার চুল ধরে আকর্ষণ করো না; আমি আশঙ্কা করলাম যে, তুমি বলবেঃ তুমি বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা স্মরণে রাখনি।
(ত্বোয়াহ – ৯৪)
৯. কপাল
فَلَمَّاۤ اَسۡلَمَا وَتَلَّہٗ لِلۡجَبِیۡنِ ۚ
অনুবাদ: যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তার ছেলেকে কপাল নিচু করলো । ( কাত করে শোয়াল)
(আস ছাফ্ফাত – ১০৩)
১০. জিহ্বা ও ঠোঁট
وَلِسَانًا وَّشَفَتَیۡنِ ۙ
অনুবাদ: জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয় ? (আল বালাদ – ৯)
১১. মাথা
وَامۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ
অনুবাদ: তোমাদের মাথা মাসাহ করবে । ( আল মায়েদা ৭)
১২. পা
وَاَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ
তোমরা পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে ।
( সুরা মায়েদা – ৭ )
১৩. মাথার পিছনের দিক
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ اٰمِنُوۡا بِمَا نَزَّلۡنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ نَّطۡمِسَ وُجُوۡہًا فَنَرُدَّہَا عَلٰۤی اَدۡبَارِہَاۤ اَوۡ نَلۡعَنَہُمۡ کَمَا لَعَنَّاۤ اَصۡحٰبَ السَّبۡتِ ؕ وَکَانَ اَمۡرُ اللّٰہِ مَفۡعُوۡلًا
অনুবাদ: হে আসমানী গ্রন্থের অধিকারীবৃন্দ! যা কিছু আমি অবতীর্ণ করেছি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, যা সে গ্রন্থের সত্যায়ন করে এবং যা তোমাদের নিকট রয়েছে পূর্ব থেকে। (বিশ্বাস স্থাপন কর) এমন হওয়ার আগেই যে, আমি মুছে দেব অনেক চেহারাকে এবং অতঃপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পশ্চাৎ দিকে কিংবা অভিসম্পাত করব তাদের প্রতি যেমন করে অভিসম্পাত করেছি আছহাবে-সাবতের উপর। আর আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যই কার্যকর হবে।
(আন নিসা – ৪৭)
১৪. মাথার সামনের চুল
یُعۡرَفُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ بِسِیۡمٰہُمۡ فَیُؤۡخَذُ بِالنَّوَاصِیۡ وَالۡاَقۡدَامِ ۚ
অনুবাদ: অপরাধীদের পরিচয় পাওয়া যাবে তাদের চেহারা থেকে; অতঃপর তাদের কপালের চুল ও পা ধরে টেনে নেয়া হবে। (আর রহমান – ৪১)
১৫. কণ্ঠনালী
کَلَّاۤ اِذَا بَلَغَتِ التَّرَاقِیَ ۙ
অনুবাদ: কখনও না, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে।
(আল ক্বিয়ামাহ্ – ২৬)
১৬. গলা
اِذۡ جَآءُوۡکُمۡ مِّنۡ فَوۡقِکُمۡ وَمِنۡ اَسۡفَلَ مِنۡکُمۡ وَاِذۡ زَاغَتِ الۡاَبۡصَارُ وَبَلَغَتِ الۡقُلُوۡبُ الۡحَنَاجِرَ وَتَظُنُّوۡنَ بِاللّٰہِ الظُّنُوۡنَا
অনুবাদ: যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে। (আল আহ্যাব – ১০)
১৭. মাংস
ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَۃَ عَلَقَۃً فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَۃَ مُضۡغَۃً فَخَلَقۡنَا الۡمُضۡغَۃَ عِظٰمًا فَکَسَوۡنَا الۡعِظٰمَ لَحۡمًا ٭ ثُمَّ اَنۡشَاۡنٰہُ خَلۡقًا اٰخَرَ ؕ فَتَبٰرَکَ اللّٰہُ اَحۡسَنُ الۡخٰلِقِیۡنَ ؕ
অনুবাদ: এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। (আল মুমিনূন – ১৪)
১৮. হাড়
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِیَ خَلۡقَہٗ ؕ قَالَ مَنۡ یُّحۡیِ الۡعِظَامَ وَہِیَ رَمِیۡمٌ
অনুবাদ: সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে? (ইয়াসীন – ৭৮)
১৯. রক্ত
وَاِذۡ اَخَذۡنَا مِیۡثَاقَکُمۡ لَا تَسۡفِکُوۡنَ دِمَآءَکُمۡ وَلَا تُخۡرِجُوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ مِّنۡ دِیَارِکُمۡ ثُمَّ اَقۡرَرۡتُمۡ وَاَنۡتُمۡ تَشۡہَدُوۡنَ
অনুবাদ: যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পর রক্ত পাত করবে না এবং নিজেদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করবে না, তখন তোমরা তা স্বীকার করেছিলে এবং তোমরা তার সাক্ষ্য দিচ্ছিলে। (আল বাকারা – ৮৪)
২০. গায়ের চামড়া
اَللّٰہُ نَزَّلَ اَحۡسَنَ الۡحَدِیۡثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِہًا مَّثَانِیَ ٭ۖ تَقۡشَعِرُّ مِنۡہُ جُلُوۡدُ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّہُمۡ ۚ ثُمَّ تَلِیۡنُ جُلُوۡدُہُمۡ وَقُلُوۡبُہُمۡ اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ ہُدَی اللّٰہِ یَہۡدِیۡ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَمَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ ہَادٍ
অনুবাদ: আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (আয্-যুমার – ২৩)
২১. মেরুদণ্ড
یَّخۡرُجُ مِنۡۢ بَیۡنِ الصُّلۡبِ وَالتَّرَآئِبِ ؕ
অনুবাদ: এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে। (আত তারিক্ব – ৭)
২২. লজ্জাস্থান
وَالَّذِیۡنَ ہُمۡ لِفُرُوۡجِہِمۡ حٰفِظُوۡنَ ۙ
অনুবাদ: এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
(আল মুমিনূন – ৫)
২৩. ঘাড়ের রগ
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ وَنَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِہٖ نَفۡسُہٗ ۚۖ وَنَحۡنُ اَقۡرَبُ اِلَیۡہِ مِنۡ حَبۡلِ الۡوَرِیۡدِ
অনুবাদ: আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
(সূরা ক্বাফ – ১৬)
২৪. চোখের পাতা
الَ الَّذِیۡ عِنۡدَہٗ عِلۡمٌ مِّنَ الۡکِتٰبِ اَنَا اٰتِیۡکَ بِہٖ قَبۡلَ اَنۡ یَّرۡتَدَّ اِلَیۡکَ طَرۡفُکَ ؕ
অনুবাদ: কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। ( সুরা নামল-৪০)
মাতৃগর্ভে মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
আর অবশ্যই মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে । এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি । অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি। এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি। অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। (আল মুমিনূন – ১৪)
আলোচ্য আয়াত থেকে স্পষ্ট হলো মানব সৃষ্টির সাতটি স্তর রয়েছে। এক মাটির নির্যাস । দুই রক্তপিণ্ড বা জমাট রক্ত । তিন মাংসপিণ্ড । চার অস্থি পিঞ্জর বা হাড় পাঁচ অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করণ । ছয় সৃষ্টির পূর্ণতা বা রুহ সঞ্চার করণ ।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে মহান আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা মোতায়ন করেন। ফেরেশতা বলেন হে রব ! এখনো তো ভ্রণ মাত্র । হে রব ! এখন জমাট বাঁধা রক্ত পিন্ডে পরিণত হয়েছে । হে রব ! এবার গোশতের টুকরায় পরিণত হয়েছে ।
আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান তখন ফেরেশতা বলেন হে আমার রব ! সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে হবে ? পাপী নাকি নেককার ? রিজিক কি পরিমান ও আয়ুকাল কত হবে ? অতএব তাকে তার তাকদীর মাতৃগর্ভেই লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয় । (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৮৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ মাতৃগর্ভে মানব শিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে ।
তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন । জমাটবাধা রক্তের পরিণত হয় ৪০ দিন । গোশত আকারে ৪০ দিন । এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা কে পাঠান । এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার শিশুর আমল ,রিজিক, আয়ুকাল, ভাল না মন্দ সব লিপিবদ্ধ করে ।
অতঃপর তার মধ্যে রুহ ফুকে দেওয়া হয় । (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৬৮)
মানব দেহের কিছু বিশ্বয়কর তথ্যঃ
* প্রত্যেক সন্তান মায়ের পেটের তিনটি অন্ধকারে থাকে। যাকে আবরণ বলা হয় । ১. পেট ২. রেহেম ৩. জরায়ুর ফুল । ( সূরা আল মুমিনুন,১২-১৭ )
* মাতৃগর্ভে রুহ প্রবেশ করে ১২০ দিন পর । ( মুসলিম, মেশকাত)
* মানবদেহে ৩৬০ টি জোড়া রয়েছে । প্রত্যেকটি জোড়ার জন্য একজন করে ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন ।
( সহীহ মুসলিম, আহমাদ -হাদীস নং ২২৯৮)
* মানবদেহের বারোটি ছিদ্র । তা হলো দুটি চোখ । দুটি কান । দুটি নাকের ছিদ্র । একটি মুখ । দুটি স্তন । দুইটি লজ্জাস্থান ও নাভি ।
* মানবদেহের হাড় ২৪৮ টি । মানুষের পাঁজর ২৪ টি । মানবদেহের রেখা ২৪ টি । যা কোমরে ১৭ টি এবং স্কন্ধে সাতটি ।
* চোখের ভিতরে দশটি ভাগ রয়েছে । একটি চোখের ভিতর ১৩ কোটি আলোক গ্রহ রয়েছে । চোখের অভ্যন্তরভাগের শেষ প্রান্তে রয়েছে তিন কোটি বোটা ,৩০ লাখ মৌচা। এর কম হলে দেখায় ব্যাঘাত ঘটবে ।
* কানের ভেতরে রয়েছে এক লক্ষ শ্রবণকোষ । দুই কানে দুই লক্ষ টেলিফোন লাগানো হয়েছে । এক লক্ষ পর্দা রয়েছে । যেগুলো কানের রগসমূহের মাধ্যমে মাথার ভেতর যুক্ত হয়েছে । এর কম হলে শোনা যেত না ।
* মাথার মগজের ভিতরে ১০ লক্ষ স্নায়ুকোষ রয়েছে । ১৫৫ টি হাড়ের সমন্বয়ে মানুষের মস্তিষ্ক গঠিত । মস্তকের উপর ৬ টি হাড় রয়েছে । উপরের অংশে রয়েছে ১২৪ টি । নিচের জোড়ায় দুটি ।
* জিহ্বার মধ্যে দুটি দরজা আছে । মানুষের জিহবায় রয়েছে ৩ হাজার স্বাদ আস্বাদন । আরও তিন হাজার ছোট ছোট স্বাদ কোষ রয়েছে । এবং অতি সূক্ষ্ম আস্বাদন রয়েছে জিব্বায় ৯ হাজার ।
* প্রত্যেক ব্যাক্তির পাকস্থলীতে তিন কোটি ৫০ লক্ষ তার রয়েছে । তা থেকে রস বের হয়ে খাদ্য হজমে সহায়তা করে । খাদ্য হজমের জন্য একশো হাজার কোটি কোষ রয়েছে । কয়েক বছর পরপর কোষ বদলে যায়। যখন বদলে যায় তখন ডিএন এর নিঃসরণ ঘটে । এর গতি হয় ১ ঘন্টায় দশ হাজার মাইল ।
* মানুষের দুটি কিডনী আছে । আর দুটি কিডনীতে মোট বিশ লক্ষ মুত্রগ্রন্থী রয়েছে ।
* মানবদেহের শিরাগুলো একত্রে জোড়া দিয়ে লম্বা করলে দৈর্ঘ্য হবে ১২ হাজার মাইল ।
* মহিলাদের দুটি স্তন রয়েছে । প্রত্যেক স্তনে ৩২ টি করে মোট ৬৪ টি ছিদ্র রয়েছে । এ ছিদ্র দিয়ে দুধ বের হয়ে আসে । চোষা দিলে বাচ্চার মুখে প্রয়োজন মতো দুধ আসে । আর দুধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেরেশতা থাকে ।
পুরুষের বীর্য থেকে পুত্র আর নারীর বীর্য থেকে কন্যা জন্মায়
ان انس بن مالك رضي الله عنه حدثهم: عن ام سليم حدثت، انها سالت نبي الله صلى الله عليه وسلم عن المراه ترى في منامها ما يرى الرجل،فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رات ذالك المراة فلتغتسل،فقالت ام سلمت واستحيت من ذلك ،قالت وهل يكون هذا فقال نبي الله صلى الله عليه وسلم نعم،فمن اين يكون الشبه ، ان ماء الرجل غليظ ابيض ، وماء المراة رقيق اصفر ،فمن أيهما عالا او سبق يكون منه الشبه.
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । উম্মে সুলাইম রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা ঘুমে পুরুষ যা দেখে তাই দেখতে পায় । ( অর্থাৎ পুরুষের ন্যায় যে মহিলার স্বপ্নদোষ হয় )
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যখন মহিলা এরূপ স্বপ্ন দেখবে তখন সে গোসল করে নিবে । হযরত উম্মে সুলাইম রাদিআল্লাহু আনহা বললেন এ কথায় আমি লজ্জাবোধ করলাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন মহিলাদের কি এমন হয় ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ মহিলাদের এরূপ না হলে ছেলে-মেয়ে তার সাদৃশ্য কোত্থেকে পায় ? পুরুষের বীর্য হচ্ছে গাঢ় ও সাদা আর মহিলাদের বীর্য পাতলা ও হলুদ ।
উভয়ের মধ্যে থেকে যার বীর্য উপরে যায় (বেশি শক্তিশালী হয় ) অথবা আগে চলে যায় সন্তান তারই সাদৃশ্যে হয় ।
( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৩ )
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আজাদ কৃত গোলাম হযরত সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষের বীর্য সাদা আর মহিলাদের বীর্য হলুদ । যখন উভয়ের বীর্য একত্র হয় এবং পুরুষের বীর্য মহিলাদের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় । আর যখন মহিলার বীর্য পুরুষের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় ।( সহীহ মুসলিম ,হাদীস নং ৬০৯ )
ছেলে মেয়ে মা-বাবার আকৃতিতে কেন হয় ?
হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । এক ইহুদী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করল ছেলে মেয়ে মা-বাবার আকৃতিতে কেন হয় ?
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যদি পুরুষের বীর্য মহিলাদের উপর বিজয়ী হয় তখন আল্লাহর হুকুমে ছেলে হয় এবং মায়ের আকৃতিতে হয় । আর যদি স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের উপর বিজয়ী হয় তখন কন্যা সন্তান হয় । কন্যা হলে বাবার আকৃতিতে হয় । অর্থাৎ যার বীর্য বিজয়ী বা সহবাসে স্থায়িত্ব বেশি তার বিপরীত আকৃতি পায় ।
( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )
ছেলে শক্তিশালী ও মেয়ে দুর্বল কেন হয় ?
হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর জামানায় দুজন মহিলা দুটি সন্তান নিয়ে ঝগড়া শুরু করল । তাদের মধ্যে একটি শিশু বালক একটি বালিকা । দুজনে বালক শিশুকে দাবি করে । হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুকে বিচারের দায়িত্ব দিলেন । হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু বললেন দুজন মহিলা স্তনের দুধ বের করে বাসনে রাখুন। যার দুধ গাঢ় তার ছেলে সন্তান ।
আর যার দুধ পাতলা তার মেয়ে সন্তান । হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন এর দলীল কি ? হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু বললেন পবিত্র কুরআনের সূরা নিসায় আছে-
একজন পুরুষের অংশ দুইজন নারীদের সমান ।
তাই ছেলে হলে মায়ের দুধ গাঢ় হয় । আর গাঢ় দুধ পান করে ছেলে শক্তিশালী হয় । মেয়ে হলে দুধ পাতলা হয় । পাতলা দুধ পান করে মেয়ে দুর্বল হয় ।
অনেক ক্ষেত্রে পিতা-মাতার বাইরে সন্তানের চেহারা পূর্বসূরী কারো মত কিংবা অন্য রকম হতে পারে । এটা নিয়ে টেনশনের কিছু নেই । এগুলো সম্পূর্ণ আল্লাহপাকের ইচ্ছাধীন বিষয় । তিনি যেমন চেয়েছেন তেমন হয়েছে । অতএব অনর্থক বিতর্ক এবং সন্দেহ এড়িয়ে যাওয়া উচিত ।