মুরগি ড্রেসিং প্রসঙ্গে শরিয়তের বিধান। মাওলানা শরিফ আহমাদ

মুরগি ড্রেসিং প্রসঙ্গে শরিয়তের বিধান

প্রশ্নঃ মুরগি ড্রেসিং প্রসঙ্গে শরিয়তের বিধান কী ?

উম্মে রুফাইদা, শরীয়তপুর ।

উত্তরঃ-      بسم الله الرحمن الرحيم

মুরগি বা অন্য হালাল প্রাণীগুলো খাওয়া হালাল হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত ‌।

১. প্রাণীটিকে আল্লাহর নামে জবাই করতে হবে ।‌ আল্লাহর নামে জবাই করা না হলে সেটি খাওয়া বৈধ হবে না ‌।

২. প্রাণীটিকে অবশ্যই জবাই করতে হবে । অন্য কোন পদ্ধতিতে হত্যা করা হলে যেমন গলাটিপে হত্যা,গুলি করে হত্যা ইত্যাদি করা হলে খাওয়া যাবে না ‌।

৩. প্রাণীটির সামনের দিক থেকে জবাই করা । এবং কমপক্ষে তার তিনটি রগ কর্তন করা ।

৪. প্রাণীটির গর্দান একেবারে আলাদা না করা ।

উল্লেখিত চারটি পদ্ধতিতে জবাই করা সুন্নাত । শুধু প্রথম দুটি পদ্ধতি পাওয়া গেলেও প্রাণীটি খাওয়া যাবে ।

 

মুরগী ড্রেসিং বিষয়ে কুরআন‌ থেকে দলীলঃ (এক)

 

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌ ۗ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ ۚ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ ۙ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٥:٣

অনুবাদ: তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর।

 

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল। ( সূরা মায়িদা-৩)

মুরগি ড্রেসিং প্রসঙ্গে শরিয়তের বিধান

কুরআন থেকে দলীলঃ ( দুই)

وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ ۗ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰ أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ ۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ [٦:١٢١

অনুবাদ: যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় নি, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ করা গোনাহ। নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে-যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে। (সুরা আনআম-১২১)

মুরগি ড্রেসিং হাদীস‌ থেকে দলীলঃ (এক)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، ” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِيَ زَيْدَ بْنَ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ بِأَسْفَلِ بَلْدَحٍ، قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الوَحْيُ، فَقُدِّمَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُفْرَةٌ، فَأَبَى أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا، ثُمَّ قَالَ زَيْدٌ: إِنِّي لَسْتُ آكُلُ مِمَّا تَذْبَحُونَ عَلَى أَنْصَابِكُمْ، وَلاَ آكُلُ إِلَّا مَا ذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ،

অনুবাদ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ওহী নাজিল হবার আগে জায়েদ বিন নুফাইল এর সাথে আসফালি বালদাহ নামক স্থানে সাক্ষাৎ হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দস্তরখান বিছানো হয়। (আর কিছু গোস্ত উপস্থিত করা হয়) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেতে অস্বিকৃতি জানালেন।

 

তারপর জায়েদ বলেন, আমি সে প্রাণী খাই না, যা তোমরা মুর্তির নামে জবাই কর। আমি শুধু ঐ প্রাণীই ভক্ষণ করি যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে। ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮২৬, ৩৬১৪)

 

হাদীস থেকে দলীলঃ‌ (দুই)

 

عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ أَحَدُنَا أَصَابَ صَيْدًا وَلَيْسَ مَعَهُ سِكِّينٌأَيَذْبَحُ بِالْمَرْوَةِ وَشِقَّةِ الْعَصَا؟ فَقَالَ: «أَمْرِرِ الدَّمَ بِمَا شِئْتَ، وَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ»

অনুবাদ: হযরত আদী বিন হাতিম রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাদের মাঝে কেউ শিকারের প্রাণী ধরে। তারপর তার কাছে ছুড়ি না থাকে, এমতাবস্থায় সে কি কাঁচ ও লাকড়ির কঞ্চি দিয়ে জবাই করতে পারে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যেটা দিয়ে চাও রক্ত প্রবাহিত কর। আর রক্ত প্রবাহিত করার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে নাও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮২৪)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো যে প্রাণীর গোস্ত খাওয়া বৈধ হওয়ার জন্য প্রথমে জবাই করতে হবে । আর জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নিতে হবে ।অর্থাৎ পড়তে হবে – বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার

(আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮১০)

মুরগি ড্রেসিং প্রসঙ্গে শরিয়তের বিধান

প্রাণী জবাইয়ের জরুরী পর্ব শেষ করে এবার মুরগি ড্রেসিং প্রসঙ্গ ।

বাজারের দোকানগুলোতে সাধারণত যে পদ্ধতিতে মুরগি ড্রেসিং করা হয় তাতে ওই মুরগির গোশত খাওয়া নাজায়েজ বা মাকরুহ হয়ে যায় না । কারণ মুরগি গরম পানিতে যতটুকু সময় চুবিয়ে রাখা হয় এতে মুরগির ভেতরের নাপাকির প্রভাব গোশতে পৌঁছে না ।

বরং এর দ্বারা শুধু লোম ঢিলা ও নরম হয়ে যায় । অবশ্য ড্রেসিং করা মুরগিকে পবিত্র পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া কর্তব্য । আর যদি লম্বা সময় তপ্ত গরম পানিতে মুরগিকে চুবিয়ে রাখা হয় যার ফলে নাপাকির প্রভাব ও গন্ধ গোশতের ভেতরে চলে যায় তাহলে ওই মুরগির গোশত খাওয়া জায়েজ হবে না ।

স্মরণ রাখতে হবে ড্রেসিংয়ের পানি আগে থেকে মুরগির রক্ত-বিষ্ঠা বা অন্য কোনো কারণে নাপাক হয়ে থাকলে সে নাপাক পানিতে চুবানোর কারণে গোশতের স্বাদ-ঘ্রাণে পরিবর্তন হলে সেই মুরগিও‌ হারাম হবে । আর গোশতের স্বাদ-ঘ্রাণে পরিবর্তন না হলে তা খাওয়া যাবে । (ফাতওয়ায়ে শামি ১/৫৪৪,আহসানুল ফাতাওয়া ২/৯৬)।

 

সতর্কতার জন্য মেশিনের ড্রেসিং না করে নিজের হাতে করে নেওয়া ভালো‌ । মুরগি অনেক হলে, নিজের ক্ষমতা না থাকলে, বড় কোন অনুষ্ঠানে বা বিদেশ ভ্রমণে হলে তখন ড্রেসিং ছাড়া উপায় থাকে না । সুতরাং সচেতন ও সঠিক লোকেদের ড্রেসিং করা মুরগি খাওয়া যায় । যদি নাজায়েজ হওয়ার শক্ত প্রমাণ বা কারণ না থাকে ।

 

( জামিউল ফাতাওয়া , ইসলামী ফিকাহ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ )

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে: শরিফ আহমাদ

শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ ।

আমাদের প্রশ্ন করুন –

প্রিয় পাঠক। ইসলামের যেকোন বিষয়ে জানতে।  আপনার যেকোন সমস্যার শরীয়া সমাধান পেতে আমাদের কাছে আপনার  প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। আমাদের কাছে প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা।

[email protected]