শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ত ও নিয়ম মাওলানা শরিফ আহমাদ

শবে বরাতের ‌নামাজ পড়ার  নিয়ত ও‌ নিয়ম

 

 

প্রিয় দীনি ভাই-বোনেরা । শবে বরাত- ২০২২ এখন নাকের ডগায়। কদিন পরে আমরা পেতে যাছি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মুক্তির রাত । আমরা ঐ রাতে কিভাবে কতটুকু সময় কি ইবাদাত করবো তার একটা প্ল্যান থাকা দরকার। কেননা প্ল্যানিং করে এগিয়ে গেলে প্রত্যেকটি কাজে সফলতা সহজে আসে ।

প্ল্যানটি আপনারা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিবেন। সবার আগে রাখবেন নামাজ । আর নামাজ নিয়ে করবো‌ আজকের আলোচনা । কথা না বাড়িয়ে চলুন এবার শুরু করা যাক।

 

নামাজ নিয়ে দুটি কথা

 

সত্যি কথা বলতে কি শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম কেউ কোন নামাজ নির্ধারিত করে করে যাননি । তবে শবে বরাতের ইবাদাত যেহেতু নফল তাই নফল নামাজের প্রতি আপনারা ‌মনোযোগী হতে পারেন । কেননা নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যা অন্য কোন ইবাদতে হতে পারে না ।

 

আরো একটি সত্য বড়ো কথা হচ্ছে নফল নামাজের নির্ধারিত কোন বিশেষ নিয়ম বা নিয়ত নেই । অন্য সকল নামাজের মতই নিয়ত করে পড়তে হয় ‌। এ ব্যাপারে ইসলামী স্কলারগণ একমত ।‌ অন্য নামাজের কথা রেখে এবার নফল নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয় তার সহীহ তরীকা দেখাবো এখন ।

 

শবে বরাতের নামাজের  নিয়ত

 

নিয়ত শব্দটির আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা, সংকল্প, স্পৃহা ইত্যাদি ৷ আর শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের ইচ্ছায় কোনও কাজের দিকে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলে। নিয়তের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে ৷

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

অন্তরে যে কোন ইবাদাত করার খেয়াল থাকলেই নিয়ত হয়ে যায় ৷ তবে মুখে উচ্চারণ করা ভালো ৷ খটকা দূর হয়ে যায় ৷ নিয়ত মুখে উচ্চারণ করলে আরবীতে করা যায় ৷ আরবীতে করা ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয় । আপনারা এবার দুই রাকাত নফল নামাজের আরবী নিয়ত দেখুন-

নফল নামাজের আরবী নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتِ صَلَوةِالْنَفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

 

বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতু আন উসল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতি সলাতিল নফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা ইলা জিহাতিল

কাবাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার ।

 

শবে বরাতের  নামাজের বাংলা নিয়ত

 

আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার ।

নোট: আবারো বলছি এভাবে নিয়ত করাটা জরুরী নয় । নমুনা দেখিয়ে আপনাদের শুধু ধারণা দিতে চেষ্টা করলাম । আপনারা এভাবে কিংবা নিজের মতো করে নিয়ত করে নফল নামাজ শুরু করুন ।

 

শবে বরাতের  নামাজ আদায় করার নিয়ম

 

নফল নামাজ আদায় করার জন্য প্রথমে আপনাদের

নাপাকি থেকে শরীরের পবিত্র করে নিবেন । তারপর পবিত্র কাপড় পরিধান করে নামাজের সময়ে পবিত্র স্থানে সোজা কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন ।‌ এবার নামাজের নিয়ত করবেন ।‌ অতঃপর আল্লাহু আকবার বলতে বলতে পুরুষ হলে নাভির নিচে হাত বাঁধবেন আর নারী হলে বুকের উপর হাত রাখবেন । পুরো নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টির সিজদার স্থান বরাবর রাখবেন । এরপর ছানা পড়বেন । ছানা হচ্ছে এই-

سبحانك اللهم وبحمدك، وتبارك اسمك وتعالى جدك، ولا إله غيرك».

হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন বলতেন,সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুক। ( আবু দাঊদ ৮৬০, মুসতাদরাকে হাকেম, ৮৬০)‌

 

 

তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়বেন । তারপর সূরা ফাতিহা পুরোটা পড়বেন এবং সূরা ফাতিহা পড়ার সময়ে প্রত্যেকটা আয়াত ওয়াকফ করে পড়বেন। সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলবেন ।

 

পড়ুন – শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত 

 

অতঃপর কুরআনে কারীমের যেকোন জায়গা থেকে‌ কিংবা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সুরা থেকে একটি পাঠ করবেন । তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবেন । রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম তিনবার, পাঁচ বার, সাতবার যত ইচ্ছা বেজোড় সংখ্যায় পড়বেন । তারপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদা, রব্বানা লাকাল হামদ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবেনা যেন প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আপন আপন স্থানে স্থির থাকে ।

 

তারপরে আবার আল্লাহু আকবার বলতে বলতে সিজদায় চলে যাবেন । এবং সিজদার তাসবিহ সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পাঠ করবেন । আবার আল্লাহু আকবার বলে উঠৈ বসবেন । দুই সিজদার মাঝখানে এই দোয়া পাঠ করবেন । হযরত হুযাইফা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাতের নামাযে ) দুই সিজদার মাঝে (এই দুআ) পড়তেন- রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী।

 

 

( সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮৯৭, নাসায়ী কুবরা,৬৬০ সহীহ ইবনে খুযাইমা ৬৮৪, মুসতাদরাকে হাকেম,১০০৩) তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পাঠ করে আল্লাহু আকবার বলে সোজা দাড়িয়ে যাবেন ‌।

 

 

এভাবে প্রথম রাকাতের নিয়মে দ্বিতীয় রাকাত পূর্ণ করে বসবেন । তারপরে আত্তাহিয়াতু পাঠ করবেন।

 

আত্তাহিয়াতু বাংলায় দেখুন ।

 

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসলাওয়াতু ওয়াত্বত্বয়্যিবাতু, আসসালামু ‘আলাইকা আইয়ুহাননাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু। ( সহীহ বুখারী, ১২০২,৬২৩০, সহীহ মুসলিম ৪০, ৪০২)

তারপরে দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পাঠ করে ডানে-বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন ।

এভাবে শবে বরাতে যত রাকাত নামাজ পড়তে ইচ্ছে হয় দুই রাকাত করে পড়বেন । যদি ক্লান্তি লাগে তাহলে মাঝখানে বিরতি দিয়ে অন্য আমল করবেন । এনার্জি ফিরে এলে আবার নামাজ পড়া শুরু করবেন । এভাবে আপনাদের পূর্বে করা প্লানকে বাস্তবায়িত করবেন ।

 

 

নোট: বাজারে প্রচলিত অনেক ছোটখাটো বইয়ে কিংবা অনেক সাইটে ভুল তথ্যের ছড়াছাড়ি । তারা বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন কিছু নিয়ম-নীতি লিখে দিয়েছে । ওগুলো থেকে সাবধান ।

শবে বরাতের নামাজ পড়া কি জায়েজ ? 

একটি প্রশ্ন উত্তর

আপনাদের কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে শবে বরাতের নামাজ পড়া কি জায়েজ ?  উত্তরে বলবো অবশ্যই জায়েজ । হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসের সারমর্ম এই যে “শবে বরাতে রাত্রি জাগরন করো” । আর রাত্রি জাগরন করতে গিয়ে অনেক রকম ইবাদাত আমরা করতে পারি । তারমধ্যে নামাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তবে এই নামাজ পড়া কোন বাধ্যতামূলক নয় । নফল নামাজ পড়লে সওয়াব পাবেন । না পড়লে কিন্তু কোন গোনাহ হবে না । 

 

শবে বরাত

শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাত? 

অনেকেই জানতে চান শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাআত।  আপনি যদি উপরের লেখা গুলো মনযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তবে আপনার মনে এখন আর এই প্রশ্নটি নেই। যেহেতু শবে বরাতের জন্য স্পেসিফিক কোন নামাজ নাই তাই। শবে বরাতের রাতে আমরা নফল নামাজ পড়তে পারি। আর নফল নামাজের রাকাআত সংখ্যা নির্দিষ্ট নাই। আপনার যত ইচ্ছে পড়তে পারেন।

 

 

 

শেষ কথাঃ

 

প্রিয় দীনি ভাই ও বোনেরা । নামাজের তরীকা তো মোটামুটি আপনাদের জানা আছে । তাই সংক্ষেপে নফল নামাজের নিয়ম উল্লেখ করেছি । কারো যদি বুঝতে সমস্যা হয় কমেন্টে জানান । দলীলসহ বিস্তারিত লিখে দেবে ইনশাআল্লাহ । আজকে এখানে রাখতে চাচ্ছি । এতক্ষণ ধৈর্য ধরে লেখাটি পড়ার এবং সঙ্গে থাকার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । এবং আজকের মত বিদায় নিচ্ছি । আল্লাহ হাফেজ ।