হায়েজ অবস্থায় সহবাস করার হুকুম
প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোনেরা । আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ । আশা করছি সকলে ভালো এবং সুস্থ আছেন । আপনারা অনেক অনেক ভালো থাকুন এই দোয়া এবং শুভকামনা রইল ।
ফিরে আসি কাজের কথায়। সহবাস করা মানুষের মৌলিক স্বভাবজাত চাহিদা । এটার বাইরে যাওয়া কোন নারী- পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয় । সম্ভব হবেও না কোনদিন । কিন্তু এই সহবাসের রয়েছে অনেক নিয়ম- কানুন । রীতিনীতি । উত্তম ও নিষিদ্ধ সময় ।
মুমিন- মুমিনা হিসেবে সেগুলো জেনে রাখা একান্ত প্রয়োজন । তাই আজ আপনাদের সাথে হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাসের হুকুম সংক্রান্ত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ ।
পুরো লেখাটি ধৈর্য সহকারে পড়ার আমন্ত্রণ রইল ।
হায়েজ অবস্থায় সহবাস করা যাবে কি ?
প্রিয় দীনি ভাই-বোনদের জানিয়ে রাখছি । হায়েজ অবস্থায় সহবাস করা নিষেধ । এটা হারাম কাজ ।
পবিত্র কোরআন ও হাদীসে নববীতে এ সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে । দলীল হিসেবে প্রথমে আপনাদের পবিত্র কুরআনের আয়াত দেখাচ্ছি। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَیَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡمَحِیۡضِ ؕ قُلۡ ہُوَ اَذًی ۙ فَاعۡتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الۡمَحِیۡضِ ۙ وَلَا تَقۡرَبُوۡہُنَّ حَتّٰی یَطۡہُرۡنَ ۚ فَاِذَا تَطَہَّرۡنَ فَاۡتُوۡہُنَّ مِنۡ حَیۡثُ اَمَرَکُمُ اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَیُحِبُّ الۡمُتَطَہِّرِیۡنَ
অনুবাদ: আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (আল বাকারা – ২২২)
আলোচ্য আয়াতে স্পষ্ট করে হায়েজ অবস্থায় সহবাস করা নিষেধ করা হয়েছে । পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে । এ ব্যাপারে হাদীসের নির্দেশনা থাকায় উক্ত বিধানটি দলীলের ক্ষেত্রে আরো মজবুত হয়েছে ।
এবার হাদীসটি দেখুন ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ.
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঋতুবর্তীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকট যায় নিশ্চয়ই সে মুহাম্মদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে । ফুটনোট-তিরমিযী, হাদীস নং-১৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৯০)
উক্ত হাদীসে তিনটি বিষয়ের ভয়াবহতা বর্ণনা করা হয়েছে ।
১. হায়েজ অবস্থায় সহবাস
২. পশ্চাৎদ্বারে সহবাস
৩. গণকের কাছে যাওয়া ।
মারাত্মক ওই তিনটি অপরাধ থেকে সকলের বেঁচে থাকা একান্ত কর্তব্য ।
হায়েজ অবস্থায় সহবাস করার হুকুম
আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন হায়েজ অবস্থায় সহবাস করা হারাম । এবার আপনাদের জানাবো ঐ অবস্থায়স্ত্রীর থেকে কতটুকু শারীরিক উপকৃত হতে পারেন তার কথা । হায়েজ চলাকালীন সময়ে সহবাস জায়েজ নেই । সহবাস ছাড়া আর সবকিছুই জায়েজ । অর্থাৎ একসঙ্গে খানাপিনা করা, বিশ্রাম ও শয্যা গ্রহণ করা জায়েজ ।
( আল বাহরুর রায়েক, খণ্ড নং ১)
স্বামী তার স্ত্রীর নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্থানে হাত বা কোন অঙ্গ লাগাবে না । এমন কি দেখবে না । নাভির উপর থেকে মাথা পর্যন্ত অন্যান্য স্থানে হাত লাগাতে পারবে । চুমু দিতে পারবে । কেননা হায়েজ অবস্থায় মহিলাদের শরীর ও মুখের লালা পবিত্র ।
হায়েজের কারণে তাদের শরীর নাপাক হয় না । অতএব হায়েজ অবস্থায় তার শরীরের সাথে ছোঁয়া লাগলে বা স্বামী-স্ত্রীর মুখের মধ্যে জিহ্বা প্রবেশ করালে তাতে কোন ক্ষতি নেই ।
তবে হায়েজ অবস্থায় এসব না করাটাই উত্তম । কেননা অনেক ক্ষেত্রে ব্যালেন্স হারিয়ে সহবাস পর্যন্ত চলে যেতে পারে । আর ওই পর্যন্ত গেলে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধান লংঘন করা হবে । আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আইন ভঙ্গ করা মারাত্মক অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয় । এছাড়া ডাক্তারদের মতেও এ সময় স্ত্রী সহবাস করা অনুচিত ।
ঐ সময় তাদের স্রাবের রক্তের সাথে বিভিন্ন রোগের জীবাণু বের হয় । যা সহবাসের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বিশেষ করে ক্যান্সার, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ হয়ে যায় ।
তাই শরীয়তের বিধানের পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি মতেও ঐ সময় সহবাস থেকে বিরত থাকা উচিত ।
স্মরণ রাখতে হবে হায়েজ অবস্থায় স্ত্রীর সম্মতিতে সহবাস হলে স্ত্রী ও পুরুষের পাশাপাশি গোনাহগার সাব্যস্ত হবে ।
হায়েজ অবস্থায় সহবাসের কাফফারা
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা । স্বামী স্ত্রী বৈধ সময়ে পরস্পর সহবাস করলে সওয়াব হয় । অথচ নিষিদ্ধ অবস্থা করলে গোনাহ । গোনাহ করার কি প্রয়োজন ? মাত্র তিন থেকে দশ দিনের ব্যাপার । এরপরে তো স্ত্রী পবিত্র হয়ে যায় । তখন না হয় …..
কেউ যদি না জেনে অজ্ঞতাবশত করে তাহলে তাওবা ইস্তেগফার অবশ্যই করতে হবে । ভবিষ্যতে আর ওই কর্ম না করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করতে হবে ।
আর জেনে বুঝে করলে তো আরো বড় অন্যায় । কাটি দিলে তাওবা- ইস্তেগফারের পাশাপাশি কাফফারা দিতে হবে । কাফফারা হলো এক দীনার বা অর্ধ দিনার গরীব- মিসকীনদের দান করতে হবে ।
মনে রাখবেন , দীনার একটি স্বর্ণমুদ্রা। যা বর্তমান হিসেবে ৪.৩৭৪ গ্রাম সমপরিমাণ স্বর্ণ। বাজার মূল্য কম-বেশি হয় । তাই খোঁজ খবর নিয়ে নির্ধারিত টাকা দান করে দিবেন ।
(ফুটনোট- জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৭, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২০১, আল বাহরুর রায়েক ১/১৯৭, ফাতহুল কাদীর ১/১৪৭,আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৮)
প্রিয় দ্বীনি ভাই বোনেরা। জীবন ঘনিষ্ঠ প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি । ইতোমধ্যে অনেক লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে । আরো দৈনিক পোস্ট করা হচ্ছে । আমাদের সাইটের লেখাগুলো ঘুরে আসতে পারেন । আরও যদি কোন কোন বিষয় বাদ পড়ে থাকে কিংবা জলদি আপনাদের প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের কমেন্ট করুন । অথবা আমাদের ফেসবুক পেজে জানান। কথা দিচ্ছি দ্রুত দলীল ভিত্তিক কনটেন্ট উপহার দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ । আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।
পড়ুন – স্ত্রী সহবাসের ইসলামীক নিয়ম
লিখেছেনঃ
মাওলানা শরিফ আহমাদ
ট্যাগঃ হায়েজ অবস্থায় সহবাস করার হুকুম