শবে বরাতের রোজা কয়টি? শবে বরাতের রোজা ২০২২ কত তারিখে? মাওলানা শরিফ আহমাদ

শবে বরাতের রোজা ২০২২ কত তারিখে? শবে বরাতের রোজা কয়টি ?

 

প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা । আজ আপনাদের জানাবো

শবেবরাত সম্পর্কে চারটি জরুরী তথ্য। ১. শবে বরাত- 2022 কবে? ২. শবে বরাতের রোজা ২০২২ কত তারিখে? ৩. শবেবরাতের রোজা কয়টি ? ৪ . শবেবরাতের সহীহ হাদীস । এই চারটি বিষয় জানা এই মুহূর্তে খুব জরুরী । প্রথমে জানুন শবেবরাত ২০২২ ইং এর কথা ।

 

শবে বরাত 2022 কবে ?

 

বাংলাদেশের আকাশে গত ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার কোথাও ১৪৪৩ হিজরী সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি ।‌ ফলে ৪ মার্চ শুক্রবার পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এবং ৫ মার্চ শনিবার থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা শুরু হয়েছে । এই কারণে আগামী ১৮ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাতে পালিত হবে শবে বরাত ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । সুতরাং বৃহস্পতিবার থেকে প্রস্তুতি নিন । জুমার দিন রাতে ঐতিহাসিক বরাত পাবেন ইনশাআল্লাহ ।

 

শবে বরাতের রোজা ২০২২ কত তারিখে?

 

প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা । শবে বরাতের রোজা ২০২২ ইং এর রোজা‌ রাখার‌ জন্য সাহরী খেতে হবে ১৪ শাবানের দিবাগত রাতে । অর্থাৎ যে রাত জেগে ইবাদত করবেন সে রাতেই সাহরী খাবেন। আর একটু সহজ করে বলি ১৮ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাতে সাহরী খাবেন । শনিবার হবে রোজা ।

 

 

 

শবে বরাতের রোজা কয়টি ?

 

প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা । মূলত শবে বারাআতের একটি রোজার কথা এসেছে । এই হাদীসটি লক্ষ্য করুন । হযরত আলী বিন আবু তালিব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত ‌। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে ( শবে বারাআত) তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো আর দিনের বেলা রোজা রাখ নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোন গোনাহ ক্ষমা প্রার্থী আছে কি আমার কাছে ? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো ।‌ কোন রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেবো ।‌

 

শবে বরাতের রোজা

কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি ? আমি তাকে বিপদ মুক্ত করে দেবো‌ । আছে কি এমন ? আছে কি তেমন ? এমন বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত ।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২ )

শবে বারাআতের একটি রোজার পাশাপাশি একান্ত যদি কারো রোজা রাখার ইচ্ছা থাকে তাহলে আইয়ামে বীযের রোজা রাখতে পারেন । আইয়ামে বীজের রোজা রাখার উপযুক্ত সময় এখনই ।

আর একটু বিষয় টি বুঝিয়ে বলি । আইয়ামে বীজ অর্থ উজ্জ্বল রাতের দিনগুলো । চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বীজ বলা হয় । হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসের শেষাংশে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতি মাসে তিনটি নফল রোজা রাখো । কেননা প্রত্যেকটি নেকী কমপক্ষে ১০ গুণ বর্ধিত করে দেওয়া হয় । এভাবে সারা বৎসর নফল রোজা রাখার সওয়াব হবে ।

 

পড়ুনঃ শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত 

 

 

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম )

হযরত আবু যর গিফারী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত।‌ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূ যর ! প্রতি মাসে তিন দিন নফল রোজা রাখতে চাইলে ১৩,১৪ ও ১৫ এই তিন দিন রাখবে । ( জামে তিরমিজি ও নাসায়ী শরীফ )

 

 

শবে বারাআতের একটি নফল‌ রোজা আর আইয়ামে বীজের তিনটি রোজা । মোট চারটি রোজা রাখতে পারেন।‌ আর যদি আইয়ামে বীজের তিনটি রোজা না রাখলেও শুধু শবে বরাতের একটি রোজা রাখতে পারেন । আর যদি‌ একটি রোযাও না থাকেন তাহলে কোন গুনাহ হবে না । শুধু সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন । এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় ।

 

 

 

শবে বরাতের সহীহ হাদীস

 

শবে বরাতের হাদিস

এবার শবে বরাতের অসংখ্য হাদীস থেকে তিনটি উল্লেখ করছি । এগুলো জানা থাকলে নিজের আমলের যেমন গুরুত্ব পাবেন পাশাপাশি শবেবরাতের বিরোধীদের বক্তব্যের অসারতা সহজে বুঝতে পারবেন । পড়ুন তাহলে-

عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن

অনুবাদ: হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তাআলা ১৫ই শাবানের রাতে ( শবে বারাআতে) সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

( ফুটনোট: সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪ সিলসিলাতুল আহাদীছিস আস সহীহাহ-৩/৩১৫)

এই হাদীসের সনদ সহীহ । এ জন্য ইমাম ইবনে হিব্বান একে কিতাবুস সহীহে বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, কাস্তাল্লানী, যুরকাবী, নুরুদ্দীন হাইসামী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এ হাদীসটিকে আমলযোগ্য সহীহ বলেছেন। ( তারগীব তারহীব ২/১১৮, ৩/৪৫৯ লাত্বাইফুল মা‘আরিফ ১৫১-৩, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫, শারহুল সাওয়াহিব-১০/৫৬১)

হযরত আলী ইবনুল হারেস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত ।‌ হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন ।

আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম । তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়লো‌ । যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন

এবং নামাজ শেষ করলেন । তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন হে আয়েশা/ হুমায়রা ! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে যে আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন ? আমি উত্তরে বললাম না ইয়া রাসুলুল্লাহ ।

আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা ? নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি জানো এটা কোন রাত ? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন । তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটা অর্ধ শাবানের রাত । আল্লাহ তাআলা তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন ও অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণ কারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই ।

 

 

(শুআবুল ঈমান-হাদীস নং- ৩৬৩৫)

হাদীসটি ইমাম বাইহাকী রহ. বর্ণনা করার পর সনদের ব্যাপারে বলেছেন, মুরসালুন জায়্যিদুন অর্থাৎ আমলযোগ্য।

عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )

 

অনুবাদ: হযরত আলী বিন আবু তালিব রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত ‌। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে ( শবে বারাআত) তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো আর দিনের বেলা রোজা রাখ ।‌

নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোন গোনাহ ক্ষমা প্রার্থী আছে কি আমার কাছে ? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো ।‌ কোন রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেবো ।‌ কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি ? আমি তাকে বিপদ মুক্ত করে দেবো‌ । আছে কি এমন ? আছে কি তেমন ? এমন বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত ।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২ ) হাদীসের মান জয়ীফ । শুধুমাত্র এই হাদীসটি জয়ীফ ।

আর জয়ীফ হাদীসের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো- ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। (কিতাবুল আযকার-৭, ফাতহুল কাদীর-১/৪৬৭ )

 

 

প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা । পূর্ব ঘোষিত কথা অনুযায়ী আলোচনা করেছি । জীবন ঘনিষ্ঠ প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি । আপনাদের যে কোন প্রশ্ন জানাতে পারেন । দলীল ভিত্তিক দ্রুত জবাব দেবো ইনশাআল্লাহ। আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।

 

 

লিখনে: মাওলানা শরিফ আহমাদ

ঢাকা, বাংলাদেশ ।