রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি? মাওলানা শরিফ আহমাদ

রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করার বিধান

 

 

সুপ্রিয় দ্বীনি ভাই বোন । ইবাদতের বসন্তকাল হচ্ছে মাহে রমজান ।‌ প্রতিযোগিতামূলক ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিধানগুলো জেনে রাখা উচিত । তাহলে ভুল ভ্রান্তি দূর হবে এবং সঠিকভাবে ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে ‌।‌

 

অসংখ্য জরুরী বিধানাবলীর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা । অনেকেই ইনহেলার বিধান সম্পর্কে জানে না । যেহেতু কোরআন ও হাদীসে স্পষ্ট আকারে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যায় না এজন্য এ নিয়ে বিভিন্ন রকম বক্তব্য পাওয়া যায় ‌। তাই আজকে আপনাদের সঠিক বিষয়টি জানাবো । পুরো লেখাটি পড়ুন । আপনারা উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ ।

 

 

ইনহেলার কি ?

 

ইনহেলার হলো একটি চিকিৎসা যন্ত্র যা একজন ব্যক্তির জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঔষধ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয় ।‌

 

 

ইনহেলার কেন ব্যবহার করা হয় ‌?

 

শীতে শ্বাসকষ্ট অনেকের বেড়ে যায় । শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে ইনহেলার ব্যবহার করতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।‌

আবার অনেকক্ষেত্রে গরমে ঘেমে ও বৃষ্টিতে ভিজে হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট অনেক বেড়ে যায় । শ্বাসকষ্টের জন্য হাঁপানি রোগীদের মূলত ইনহেলার নিতে হয় ।

 

 

ইনহেলার ব্যবহারে কি রোজা ভাঙ্গে ?

 

ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে । শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য ঔষধটি মুখের ভেতরে স্প্রে করা হয় । এতে যে জায়গায় শ্বাসরুদ্ধ হয় ওই জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে যায় । ফলে শ্বাস চলাচলে আর কোনো কষ্ট থাকে না ।

রোজা রেখে ইনহেলার ব্যাবহারের বিধান

ওষুধটি যে শিশিতে যে পরিমাণে থাকে ঐ শিশির মুখ একবার টিপলে শিশির আকারভেদে ওই পরিমাণে র একশত কিংবা দুইশত ভাগের এক ভাগ বেরিয়ে আসে । অতি অল্প পরিমাণে গ্যাস বের হওয়ার কারণে কেউ ওষধটিকে বাতাস জাতীয় মনে করতে পারে । কিন্তু বাস্তবে এমন নয় বরং ওষুধটির দেহবিশিষ্ট । কাঠ ইত্যাদি কোন বস্তুতে স্প্রে করলে দেখা যায় যে ঐ বস্তুটি ভিজে গেছে তাই এতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে ‌।

 

বিষয়টি আরো ভালো করে বুঝুন ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে । শ্বাস গ্রহণের রাস্তা দিয়ে কোন ঔষধ উদাহরণ স্বরূপ ইনহেলার ব্যবহার করলে তার ১০% উপকরণ সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছায় । বাকী ৯০% উপকরণ পরিপাকযন্ত্র শোষন করে । আর এ অবস্থায় ঔষধ সরাসরি রোগীর পেটে গিয়ে পৌঁছায়।

 

যেহেতু ইনহেলার গ্রহণের রাস্তা সেটাই যেটা দ্বারা খাদ্য পেটে যায়, বা খাদ্য পৌঁছানোর নালির নিকটবর্তী শিরা দিয়ে তা গ্রহণ করা হয়,তাই এর দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। সতর্কতা এটাই। সতর্কতা হিসেবে শরয়ী অনেক বিধানই সাব্যস্ত হয়। যেমন-

ঘুমকে অযু ভঙ্গের কারণ সাব্যস্ত করা। এ হিসেবে যে, ঘুমিয়ে গেলে নিতম্ব জমিন থেকে উঠে যেতে পারে, ফলে বায়ু বের হয়ে যায়। যদিও ঘুম অযু ভঙ্গের কারণ নয়, বরং বায়ু বের হওয়া হল অযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু যেহেতু ঘুমিয়ে গেলে এসব ব্যাপারে কোন খবর থাকে না, তাই ঘুমটাকেই সতর্কতাস্বরূপ অযু ভঙ্গের কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। (বাদায়েউস সানায়ে-২/৫৩৫)

 

একটি বিভ্রান্তির সহজ সমাধান

 

অনেককে বলতে শোনা যায় যে ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় তাই এটা রোজা ভঙ্গ হবে না । কথাটা একেবারে হাস্যকর । কেননা কেউ যদি ক্ষুধায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে অতি প্রয়োজনীয় কিছু খেয়ে ফেলে তাহলে কি অতি প্রয়োজনে খাওয়ার কারণে তার রোজা ভঙ্গ হবে না ? অবশ্যই হবে । অতি প্রয়োজনের সময় রোজা ভাঙলে পরবর্তীতে কাযা করা ও গোনাহ না হওয়া ভিন্ন কথা ।

 

 

আর রোযা ভঙ্গ না হওয়া ভিন্ন কথা । তবে হ্যাঁ যদি মুখে ইনহেলার স্প্রে করার পর না গিলে থুতু দিয়ে তা বাইরে ফেলে দেওয়া হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না । এভাবে কাজ চললে তো বিষয়টি আরও সহজ হয়ে যাবে । এতে শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার পাশাপাশি রোজা ভঙ্গ হলো না ।

 

 

রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম

 

কোন কোন চিকিৎসক বলেন, সাহরীতে এক ডোজ ইনহেলার নেওয়ার পর সাধারণত ইফতার পর্যন্ত আর ইনহেলার নেওয়া প্রয়োজন পড়ে না । তাই এভাবে ইনহেলার ব্যবহার করে রোজা রাখা উচিত । যদি কারো বক্ষব্যাধি এমন জটিল ও মারাত্মক আকার ধারণ করে যে ইনহেলার নেওয়া ব্যতীত ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না তাদের ক্ষেত্রে শরীয়তের সুযোগ রয়েছে যে তারা প্রয়োজনবোধে ইনহেলার ব্যবহার করবে ও পরবর্তীতে রোজার কাজা করে নিবে ।

রোজা রেখে ইনহেলার ব্যাবহারের নিয়ম

আর কাযা সম্ভব না হলে রোজার ফিদিয়া আদায় করবে । এটাই কোরআনের বিধান ।‌

( ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা, পৃষ্ঠা নং ৩২৩-৩২৪)

 

 

ইনহেলার ব্যবহারে সাধারণ নিয়ম

 

 

* প্রথমে হাত সাবান নিয়ে ধুয়ে নিবেন । তারপর ইনহেলারটি বুড়ো ও তর্জনী দিয়ে ধরুন । ব্যবহারের আগে ইনহেলারটি তিন থেকে চার বার ঝাঁকিয়ে নিবেন ।

* প্লাস্টিকের বহিরাবরণ বা আ্যাকচুয়েটরের মাউথপিস থেকে ঢাকনাটি সরিয়ে ফেলুন ।

 

* মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে বাতাস বের করে দিতে থাকুন

যতক্ষণ না পর্যন্ত ফুসফুস খালি হয় ।‌ অতঃপর নিঃশ্বাস ধরে রাখুন ।

 

* ইনহেলারটি দুই পাটি দাঁতের মাঝে থাকুন ।

প্লাস্টিকের বহিরাবরণের মাউথপিস নিজের ঠোঁট দিয়ে এমনভাবে ধরুন যেন কোন ফাঁক না থাকে ।

 

* ধীরে ধীরে শ্বাস টানুন এবং একই সঙ্গে ইনহেলারের উপরিভাগের ধাতব পদার্থে বা ক্যানস্টার একটি চাপ দিন । চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গভীর ভাবে শ্বাস টানুন। শিশু , বৃদ্ধ ও অন্যান্য রোগী যাদের হাতে জোর কম তারা এক হাত দিয়ে উপরিভাগে আলতো ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে না পারলে ঠিকমতো ওষুধ বের হবে না । এজন্য তাদের দুইহাত একসঙ্গে ব্যবহার করা উচিত ।

 

* ইনহেলার মুখের ভেতর থেকে বের করন এবং ৫_৭ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস ধরে রাখুন । তারপর ছাড়ুন ।

 

 

ইনহেলার যত্নের নিয়ম

 

প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার ইনহেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করুন । অ্যাকচুয়েটর মাউথপিস কভার বা ঢাকনাটি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । শুকানোর জন্য কোন শুষ্ক স্থানে রাখুন । ক্যানিস্টার ও মাউথপিসের ডাকনাটি সঠিক জায়গায় স্থাপন করুন। ক্যানস্টার কখনোই পানিতে ভেজাবেন না ‌।

শেষকথাঃ

 

প্রিয় দ্বীনি ভাই বোন । জীবন ঘনিষ্ঠ প্রশ্নোত্তর কিংবা যেকোনো সমস্যার সমাধান পেতে কমেন্ট করুন । দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে ইনশাআল্লাহ । যে যেখানে থাকুন ভালো থাকুন ।‌ সুস্থ থাকুন । শীর্ষ বার্তার সঙ্গে থাকুন । আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।

 

 

 

লিখনে: মাওলানা শরিফ আহমাদ

ঢাকা, বাংলাদেশ ।

 

 

 

 

 

 

 

ট্যাগঃ রোজা রেখে ইনহেলার,  রোজা রেখে ইনহেলার, রোজা রেখে ইনহেলার