শেখ রাসেল দিবস রচনা

শেখ রাসেল দিবস রচনা 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা! সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি ৷ আজ আমরা জাতির অতন্ত্র প্রহরী বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জীবনী সম্পর্কে রচনা শেয়ার করবো ৷

 

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি উদ্যোগে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে ৷

 

রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের সহযোগিতা করবে ইনশাল্লাহ ৷ আজ আমরা লিখবো আমাদের শেখ রাসেল কে নিয়ে রচনা। অকালে ঝরে যাওয়া এক সম্ভাবনা, ছোট্ট সোনামনিকে নিয়ে। মাত্র ১১ বছর বয়সে, ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্ট কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যদের হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন।

শেখ রাসেল দিবস রচনা

 

পৃথিবী আসলে থাকার জায়গা না ৷ এখানে যেই জন্ম লাভ করেছে তার একদিন মৃত্যু হবে ৷ পৃথিবীতে আসার সিরিয়াল আছে ৷ কিন্তু যাওয়ার কোন সিরিয়াল নাই ৷ বাবাকে সামনে রেখে সন্তান চলে যায় ৷ বড় ভাইকে সামনে রেখে ছোট ভাই চলে যায় ৷

 

পড়ুন – শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে কবিতা

 

দাদাকে সামনে রেখে নাতি চলে যায় ৷ এরকম ঘটনা ভুরি ভুরি ৷ পৃথিবীতে যে আগে আগমন করেছে সেই যে আগে চলে যাবে বিষয়টি এমন নয় ৷ সবার হায়াত সমান নয় ৷ কেউ কেউ জন্ম লাভ করার পরপরই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় ৷ আবার কেউ কেউ শত বছর পর্যন্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকে ৷ পৃথিবীবাসীকে কিছু দিতে পারে ৷

শেখ রাসেল দিবস রচনা ১০০ শব্দ

 

শেখ রাসেল সেইসব ব্যক্তিদের একজন যারা পৃথিবীতে অল্প হায়াত নিয়ে এসেছিল ৷ মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্মম বুলেটের আঘাতে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিল ৷

 

বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে যার নাম প্রথম চলে আসে তিনি হলেন বাঙালি জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৷ বিপদগামী কিছু সৈন্যের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি সপরিবারে নিহত হন ৷ ফুটফুটে শিশু শেখ রাসেলও সেদিন অকল্পনীয়ভাবে ফুটন্ত একটি ফুল অকালেই ঝরে গেল ৷

 

শেখ রাসেলের জন্ম

 

সময়টা ছিল হেমন্তকাল ৷ বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে নতুন ফসল তোলার আনন্দ হিল্লোল বয়ে যাচ্ছিল ৷ ধানের গন্ধে মৌ মৌ করছিল চারদিক ৷ হেমন্ত উৎসব এবং পিঠাপুলির ধুম পড়েছিল ৷ ঠিক এমনই এক মুহূর্তে আনন্দঘন পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিল শেখ রাসেল ৷ শেখ রাসেলে জন্মেছিলে ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে।

 

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে মায়ের কোল আলো করে জন্ম নেন শেখ রাসেল। রাসেলের জন্ম হয়েছিল তার বড় বোন শেখ হাসিনার ঘরে। রাসেলের জন্মের কিছুক্ষন পর, বড়বোন শেখ হাসিনা এসে, একটা ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন। জন্মের সময় রাসেল ছিলেন স্বাস্থ্যবান। তার জন্ম যেন শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবারেরই নয়, সমগ্র জাতির আনন্দ ছিল।

শেখ রাসেলের নামকরণ

 

সন্তান জন্ম লাভ করলে মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন তার একটি চমৎকার নাম রাখার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন ৷ অনেক পিতা-মাতা সন্তান গর্ভে আসার পরেই সম্ভাব্য নাম ঠিক করে রাখেন ৷ এই নামের পেছনেও থাকে ইতিহাস ৷ স্বপ্ন ৷

 

ঠিক তেমনি শেখ রাসেলের নামকরণের পেছনে রয়েছে এক চমৎকার ইতিহাস ৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন শান্তিকামী মানুষ ছিলেন ৷ তিনি কখনোই হানাহানি মারামারি পক্ষে ছিলেন না ৷ যুদ্ধবিগ্রহ তার অপছন্দের তালিকায় ছিল ৷ তবে স্বাধীনচেতা ছিলেন ৷ দেশ মাটি-মৃত্তিকাকে দেশের শত্রু জাতির শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য আপসহীন ছিলেন ৷

 

বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্বশান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষে এবং যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। এজন্য তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক, বার্ট্রান্ড রাসেলের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। একদিকে বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন যেমন নোবেলবিজয়ী দার্শনিক এবং সমাজবিজ্ঞানী, অন্যদিকে তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের নেতা।

শেখ রাসেল দিবস রচনা

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পুরো পৃথিবী যখন সম্ভাব্য একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছে ৷ তখন যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। এমনই মহান ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে অনুপ্রাণিত ছিলো বঙ্গবন্ধুর পরিবার। এই অনুপ্রেরণা থেকেই বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন শেখ রাসেল।

শেখ রাসেলের ছেলেবেলা

 

কিছু মানুষ জন্মই গ্রহণ করে তুমুল ঝঞ্ঝাট ঝড়কে মোকাবেলা করার জন্য ৷ শেখ রাসেলের ছোটবেলাটা অন্য দশটা ছেলের মত আনন্দঘন ছিল না ৷ রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশে সে জন্মলাভ করে ৷ উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শেখ রাসেল দীর্ঘদিন বাবার সান্নিধ্য থেকে দূরে ছিলো ৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হয়ে প্রথমে ঢাকায় পরবর্তীতে পাকিস্তানে কারাগারে থাকেন ৷

 

শোনা যায় বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলেন রাসেল। মাত্র দু বছর বয়সের রাসেল তার আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন – “তোমার বাবা কে কি আমি বাবা বলে ডাকতে পারি?”। অর্থাৎ সে কি তার আপার বাবা, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে কি বাবা বলে ডাকতে পারে?

 

তার মানে তার বাবা তার কাছে একেবারেই অপরিচিত মানুষের মতো ছিলেন। যখন সে ভালোভাবে চিনতে পারে। তখন সে বাবার কাছ থেকে আসতে চাইতো না। তখন তাকে বোঝানো হয়েছিল জেলই বাবার বাড়ি। সেখানে বাবা থাকেন।

শেখ রাসেল দিবস রচনা

 

ঘটনাটি কতটা হৃদয়বিদারক এবং মর্মন্তুদ তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ রাজনীতি দেশ ও মানুষের জন্য ৷ দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে এমন হাজারো রাজনৈতিক নেতা তাদের পরিবারকে সঠিক এবং সুষ্ঠ সময়ে দিতে পারেন না ৷ প্রতিটি জালিম শাসককে একথা মনে রাখা দরকার, প্রতিটি অন্যায়ের একদিন সুবিচার হবে ৷

 

যারা হাজারো সন্তানকে বাবার আদোর, স্নেহ ভালোবাসা থেকে দূরে রেখেছে ৷ তাদের একদিন কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে ৷ আজকের এই দিনেও যারা জুলুমবাজি করছে পৃথিবীর দিকে দিকে ৷ তাদেরও এক সময় আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে ইনশাআল্লাহ ৷

 

শেখ রাসেলের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে। ১১ বছর বয়সে যখন তার নির্মম মৃত্যু হয়, তখন সে সেই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলো ৷

 

শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকান্ড

 

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট এর সেই অভিশপ্ত রাত সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা, দেশি বিদেশি বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রে, সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলে। একে একে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে হত্যা কারে। সেইদিনই শেষ রাতে বঙ্গবন্ধু, এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে হত্যাকারীরা।

শেখ রাসেল দিবস রচনা

 

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত কর্মচারী মহিতুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, রাসেল দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন, জানতে চান – সেনারা তাকেও মারবে কিনা। এমতাবস্থায় একজন সেনা কর্মকর্তা এসে মহিতুলকে চড় মারে। রাসেল ভয় পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। সে কাঁদতে থাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সময় একজন ঘাতক বলে ওকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও। তখন একজন ঘাতক রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।

শেখ রাসেল দিবস রচনা

 

এতোটুকুন বাচ্চার কি অপরাধ ছিল? তাকে রাজনীতির নির্মম বলি হতে হল ৷ তার কি এটাই অপরাধ তার বাবা বাংলাদেশের অপমার জনতার মুক্তি চেয়েছিল? চেয়েছিল তাদেরকে সুখে-শান্তিতে রাখতে?

 

শেষ কথা

 

শেখ রাসেল দিবসে আমাদের এই প্রত্যাশা থাকবে আর যেন কোন মায়ের কোল এভাবে খালি না হয় ৷ আর যেন কোনো শেখ রাসেল এভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার না হন ৷ আর যেন কোন রাসেল এভাবে পিতা মাতাকে না হারান ৷ গুম খুন ও জখমের শিকার না হন ৷

 

লিখেছেন

মাওলানা দীদার মাহদী 

অধাক্ষ্য দারুল হুদা মডেল মাদ্রাসা

 

1 thought on “শেখ রাসেল দিবস রচনা”

Comments are closed.