টয়লেটে যাওয়ার নিয়ম । বিস্তারিত নিয়ম-কানুন ।
প্রাকৃতিক প্রয়োজনে টয়লেটে যেতে হয় । সেটাই উপযুক্ত স্থান । অন্য ধর্মালম্বীরা নিজেদের ইচ্ছামত গেলেও মুসলমানদের জন্য ইসলামের বিধি-বিধান জেনে রাখা একান্ত প্রয়োজন। নিম্নে টয়লেটে যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হচ্ছে।
টয়লেটে যাওয়ার নিয়ম
টয়লেটে যাওয়ার পূর্বে মাথা ঢেকে নেওয়া মুস্তাহাব । পুরুষ হলে মাথায় টুপি গামছা ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে নেওয়া । আর নারী হলে ওড়না, আঁচল বা অন্য কিছু যারা মাথা ঢেকে রাখা । জুতো/ স্যান্ডেল পরিধান করে যাওয়া । প্রথমে ডান পায়ের জুতো পরিধান করা । নামাজের কাপড় ব্যতীত অন্য কাপড়ে টয়লেটে যাওয়া উত্তম । সেটা সম্ভব না হলে নাপাকি থেকে খুব সতর্ক থাকতে হবে । অতঃপর দোয়া পাঠ করে বাম পা আগে দিয়ে প্রবেশ করতে হবে । খোলা স্থান হলে কাপড় উঁচু করার সময় দোয়া পড়তে হবে । আর মনে না থাকলে টয়লেটে প্রবেশের বা কাপড় উঠানোর পর মনে মনে দোয়া পড়া যাবে । মুখে উচ্চারণ করে নয় ।
টয়লেটে যাওয়ার সুন্নাত ১৫ টি
১. টয়লেটে যাওয়ার পূর্বে দোয়া পাঠ করা। দোয়াটি এই
بِسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খবাইছ ।

অনুবাদ: আমি আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট নারী ও পুরুষ উভয় প্রকার দুষ্ট জিন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৬০৫, ত্ববারানী আউসাত, হাদীস নং ২৮০৩)
২. বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা ।
৩. জুতা/ সেন্ডেল পায়ে দিয়ে প্রবেশ করা ।
৪. জুতার স্যান্ডেল পরিধানের সময় বিসমিল্লাহ পড়া ।
৫. যথাসম্ভব নামাজের কাপড় ছাড়া অন্য কাপড় পরিধান করা ।
৬. মনে মনে ইস্তেগফার পড়া ।
৭. বসে কাজ সম্পাদন করা ।
৮. বাম পায়ে ভর করে বাসা ।
৯. মাথা ঢেকে রাখা ।
১০. মাথা ঢাকার সময় বিসমিল্লাহ পড়া ।
১১. ঢিলা- কুলুক ( টিস্যু) ব্যবহার করা ।
১২. কমপক্ষে তিনটি ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা ।
১৩. পানি খরচ করা ।
১৪. ডান পা দিয়ে বের হওয়া ।
১৫. বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া । দোয়াটি এই
غُفْرَانَكَ اَ لْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذٰى وَعَافَانِيْ
বাংলা উচ্চারণ: গুফরনা আলহামদু-লিল্লাহিল্লাজি আযহাবা আন্নিল আযা- ওয়াআ-ফানি ।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন ।
( সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩০,সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ০৭/ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩০১)

টয়লেটের সময় ১৪ টি কাজ করা নিষেধ
১. কোরআন তেলাওয়াত করা।
২. জিকির করা ।
৩. কাউকে সালাম দেওয়া ।
৪.সালামের উত্তর দেওয়া ।
৫. মেসওয়াক করা ।
৬. কোন কিছু লেখা ।
৭. কোন কিছু পড়া ।
৮. কোন কিছু পানাহার করা ।
৯.কারো সাথে কথা বলা ।
১০. মুখে দোয়া ও তাসবিহ পড়া ।
১১.যৌনাঙ্গের দিকে ঘন ঘন দৃষ্টিপাত করা ।
১২.মূল মূত্রের দিকে নজর দেওয়া ।
১৩. আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ।
১৪. মলমূত্রের উপর কফ, থুতু ইত্যাদি ফেলা ।
টয়লেটে ১০টি জিনিস ব্যবহার করা নিষেধ ।
১. যেকোনো খাদ্যদ্রব্য ।
২.শুকনো গোবর ।
৩. হাড্ডি ।
৪.কয়লা ।
৫. কাঁচ ।
৬. গাছের কাঁচা পাতা ।
৭. কাগজ । (টিস্যু পেপার ব্যবহার করা যাবে ) ৮.জমজমের পানি ।
৯.ব্যবহৃত ঢিলা ।
১০.ডান হাত দ্বারা ।
( সহীহ বুখারী, মুসলিম তিরমিযী )
৬ টি জিনিস নিয়ে টয়লেটে যাওয়া নিষেধ
১. আল্লাহ তাআলার নাম ।
২. নবী-রাসূলগণের নাম ।
৩.ফেরেশতাগণের নাম ।
৪.কোরআনের আয়াত বা আয়াতের অংশ ।
৫. হাদীস বা হাদীসের টুকরা ।
৬.কোন দোয়া কালাম ।
১২ টি স্থানে টয়লেট করা নিষেধ
১. অজু ও গোসলের স্থানে ।
২.কোন গর্তের মধ্যে ।
৩.মানুষের সম্মুখে ।
৪.মসজিদের আঙ্গিনায় ।
৫.ঈদগাহে ।
৬. ছায়াদার ও ফলদার গাছের নিচে ।
৭.কবরস্থানে ।
৮.মানুষ চলাচলের রাস্তায় ।
৯.বিনা ওজরে ঘরে বা বিছানায় ।
১০.বিনা ওজরে পানিতে ।
১১.মানুষ আরামের জন্য বসতে পারে এমন স্থানে ।
১২. প্রবাহিত নদীর নালায়।
৭ ভাবে টয়লেট করা নিষেধ
১. কিবলার দিকে মুখ করে ।
২.কিবলার দিকে পিঠ করে ।
৩. চন্দ্রের দিকে মুখ করে ।
৪ চন্দ্রের দিকে পিঠ করে ।
৫.প্রবল বাতাসের দিকে মুখ করে ।
৬.দাঁড়িয়ে বা হেঁটে ।
৭.একেবারে উলঙ্গ হয়ে ।
টয়লেটে গিয়ে কখন কাপড় খুলবেন ?
হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম যখন পেশাব-পায়খানার ইচ্ছা করতেন তখন জমিনের তথা বসার নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত কাপড় উঠাতেন না । ( আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪, তিরমিজী, হাদীস নং ১৪ )
ঢিলা কুলুখ ( টিসু) ব্যবহার করার নিয়ম
পুরুষগণ প্রথম ঢিলা-টিসু পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে নিয়ে আসবে । দ্বিতীয়টি সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে এবং তৃতীয়টি পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে এই নিয়মে কুলুখ-টিসু ব্যবহার করবে । তবে পুরুষের অন্ডকোষ যদি বেশি ঝুলে থাকে তাহলে সামনের দিক থেকে শুরু করবে । আর মহিলারা সর্ব অবস্থায় সামনের দিক থেকে শুরু করবে ।
বেজোড় সংখ্যায় ঢিলা ব্যবহার করবেন
হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন অজু করে তখন সে যেন নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে ফেলে এবং ঢিলা ব্যবহার করার সময় বেজোড় সংখ্যক ব্যবহার করে । আর ঘুম থেকে উঠে অজুর পাত্রে হাত প্রবেশ করানোর পূর্বে তা যেন ভালোভাবে ধুয়ে নেয় । কেননা তোমাদের কারো জানা নেই যে , ঘুমের সময় তার হাত কোথায় ছিল ? ( সহীহ বুখারী ও মুসলিম , বুখারী হাদীস নং ১৬২)
গ্রন্থনা: মাওলানা শরিফ আহমাদ
লেখক ও শিক্ষক
1 thought on “টয়লেটে যাওয়ার নিয়ম মাওলানা শরিফ আহমাদ”
Comments are closed.