কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া | কোরবানীর গরু জবেহ করার দোয়া

কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া | কোরবানীর গরু জবেহ করার দোয়া

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আপনাদের সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ৷ আপনাদের ঈদ অত্যন্ত আনন্দময় এবং শান্তিপূর্ণভাবে কাটুক এই প্রত্যাশা করছি মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে ৷ আজ আমরা কথা বলবো কোরবানির পশু যাবেহ করার নিয়ম এবং কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে ৷ অনেকেই ভয়ে কোরবানির পশু আলেম শ্রেণীর কাউকে দিয়ে জবাই করান ৷ তারা মনে করেন এই কাজ আলেমদের ৷ সুতরাং তাদের ভুল ভাঙ্গা ও কোরবানির পশু জবাই দেয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷

আরও পড়ুনঃ ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

কুরবানীর পশু যবেহ করার পদ্ধতি

কোরবানির পশু আমাদের দেশে সাধারণত আলেম, হাফেজ এবং মসজিদের ইমাম সাহেবদেরকে দিয়েই জবাই করানো হয় ৷ তবে একথা জেনে রাখা দরকার যে, নিজের কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করাই উত্তম। নিজে যবেহ করতে না পারলে যবেহের সময় সামনে থাকা ভাল।

অধিকাংশ মানুষ কুরবানি নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া না জানার কারণেই নিজের কুরবানি নিজেরা করেন না। অথচ কুরবানির নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া সহজ। তবে পশু জবাইয়ের সময় সুন্নাতের অনুসরণে জবাই করাই উত্তম।

  • প্রথমে কুরবানীর পশুকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে তার মুখ কিবলামুখী করবে এবং যে যবেহ করবে তার মুখও কিবলামুখী করে দাঁড়াবে। এটা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। এরপর এই দুআ পড়বে (এটা পড়া উত্তম। তবে অপরিহার্য নয়।)
কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া | কোরবানীর গরু জবেহ করার দোয়া
কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া | কোরবানীর গরু জবেহ করার দোয়া

কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া

اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

“আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি, যিনি আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই। “আমার নামায, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরীক নেই এবং আমি এর জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। আমি আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে প্রথম। হে আল্লাহ! এ কুরবানী তোমার পক্ষ থেকে এবং তোমারই সন্তুষ্টির জন্য। ”

অতঃপর এটা بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر বলে যবেহ শুরু করবে। যদি কেউ উক্ত দুআ পড়তে না পারে তা হলে শুধু বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবেহ করলেও চলবে। শুধু তাই নয়, যদি যবেহকারী بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر বলতে ভুলে যায় তথাপি যবেহ হয়ে যাবে এবং জন্তু খাওয়া হালাল হবে।

তবে যদি যবেহকারী বা তাকে সহযোগিতাকারী, যে ছুরিতে হাত লাগায়, এদের কেউ যদি ইচ্ছাপূর্বক যবেহের সময় বিসমিল্লাহ না বলে, তা হলে জন্তু হারাম হয়ে যাবে। এছাড়া যবেহ শুদ্ধ করার জন্য পশুর চারটি রগ কাটতে হবে। তবে চারটার জায়গায় তিনটা কাটলেও জায়েয হবে। যদি তিনটির কম কাটে, তা হলে সে পশু মৃত বলে গণ্য হবে এবং খাওয়া হারাম হয়ে যাবে। চারটি রগ যথাক্রমে শ্বাসনালী, খাদ্যনালী ও দুইটি রক্তনালী বা শাহরগ । এভাবে পূর্ণাঙ্গ যবেহের পর এই দুআ পড়বে-

اللَّهُمَّ تَقَبَّلُهُ مِنِى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مُحَمَّدٍ وَخَلِيْلِكَ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِمَا الصَّلوةُ وَالسَّلَامُ

“হে আল্লাহ তুমি এ কুরবানীকে আমার পক্ষ থেকে কবুল কর যেমনিভাবে তোমার হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তোমার খলীল ইবরাহীম আ.-এর পক্ষ থেকে কবুল করেছিলে।” কুরবানীদাতা একাধিক হলে مني এর স্থলে منا বা منه এর স্থলে منهم বলতে হবে ৷

অনেক সময় দেখা যায়, একই স্থানে একাধিক কুরবানীর পশু থাকে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ কুরবানীতে একাধিক ব্যক্তির নাম লিপিবদ্ধ করে যবেহকারীর হাতে দেন। এ সময় একটা সমস্যা হয়, তা হলো একজন কাগজ হাতে দিয়ে রাখছে আর অন্যজন তার পশু শুইয়ে দিয়ে হুযুরকে ডাকছেন। হুজুর সহজ মনে করে আগে শুয়ানোটা যবেহ করে ফেলেছেন। তখন একজনে বললো যে, আপনি একজনের পশুর কুরবানী আরেক জনের নামে যবেহ করেছেন, এটা কুরবানী হয়নি।

এসব ধারণা নিতান্তই ভুল। যবেহের সময় মূলত এ ধরনের নামের লিস্টের কোন দরকর নেই। কুরবানীদাতার নিয়তের উপরই কুরবানী হয়ে যাবে। এখানে আর একটি বিষয় হলো, যবাই করার পর জানোয়ার ঠাণ্ডা হওয়ার পূর্বে চামড়া খসানো বা হাত পায়ের রগ কাটা, হাত পা ভাঙ্গা বা মাথা বিচ্ছিন্ন করা সবই মাকরূহ। কসাইরা অনেক সময় ছুরি গলার ভেতর দিয়ে সিনায় খোঁচা দিয়ে রক্ত প্রবাহ ত্বরান্বিত করতে চায়, তাও মাকরূহ। স্বাভাবিকভাবে পশুটির প্রাণ বের হতে দেওয়া উচিৎ। এ সকল বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে ।

 

গোশত বণ্টনের মাসআলা

গোশত বণ্টনের সময় একান্নবর্তী অর্থাৎ যৌথ পরিবারের সদস্যগণ যদি একসাথে কুরবানী করেন, তা হলে তা বণ্টনের কোন প্রয়োজন নেই। আর যদি ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের লোকেরা ভাগে কুরবানী করেন, তা হলে গোশত অনুমান করে বন্টন করা যাবে না। কেননা, এতে কমবেশি হয়ে গেলে গুনাহগার হতে হবে। সুতরাং বাটখারা দিয়ে মেপে সমান ভাগ করতে হবে।

কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়া ও পরিবারের লোকদের খাওয়ানো, আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়ানো, গরিব-মিসকীনদের বা ধনীদের দেওয়া সবই জায়েয। তবে মোস্তাহাব পদ্ধতি হলো, তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ও এক ভাগ গরিব মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া। আর কুরবানী যদি মান্নতের হয় বা কোন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার সম্পদ থেকে কুরবানী করার অসিয়ত করে গিয়ে থাকেন, তা হলে এই দুই ধরনের কুরবানীর গোশত কুরবানীদাতা তার ছেলে-মেয়েদেরকে বা পরিবারের লোকদের খাওয়াতে পারবেন না; বরং পুরোটা গরিবদের মাঝে সাদকা করা ওয়াজিব। আক্বীক্বার গোশত বণ্টন করার নিয়মও কুরবানীর গোশতের ন্যা৷য়।

আরও পড়ুনঃ ইব্রাহীম আঃ এর কোরবানীর ইতিহাস

কুরবানীর চামড়া সম্পর্কিত মাসআলা

কুরবানীর পশুর চামড়া কুরবানীদাতা নিজে ব্যবহার করতে চাইলে তা জায়েয আছে। অন্য কাউকে হাদিয়া হিসেবে দিতে চাইলে তাও দেওয়া জায়েয। যদি সে ব্যক্তি অভাবী নাও হন। তবে বিক্রি করলে অবশ্যই গরীব-মিসকীনদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে এবং ঐ টাকাই দিতে হবে। টাকার নোটের মধ্যে কোন প্রকার অদল-বদল করা চলবে না। টাকার নোট পরিবর্তন করা যদিও প্রয়োজনে জায়েয তবে তা উত্তম নয়।

কুরবানীর চামড়া ও তার মূল্য স্কুল নির্মাণ এমনকি মসজিদ- মাদরাসার নির্মাণ কাজে বা কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়াও জায়েয নেই। তবে এসব ঝক্কি-ঝামেলায় না গিয়ে গোটা চামড়া কোন গরিব-মিসকীনকে দিয়ে দেওয়াই উত্তম। আর গরিবদের মাঝে যারা নামাযী, এমন লোককে দেওয়া আরও ভাল।

শেষ কথা

আপনাদের কুরবানী ভালোভাবে কাটুক ৷ কোরবানী হোক আত্মত্যাগের সোপান ৷ আমাদের লেখাগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহু খাইরান ৷

কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া | কোরবানীর গরু জবেহ করার দোয়া
কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া | কোরবানীর গরু জবেহ করার দোয়া