করোনাভীতিতে অমানবিক না হই
দীদার মাহদী
মানুষের জীবন সুখে-দুঃখে মিশ্রিত ৷ শতভাগ সুখী ও টেনশনমুক্ত মানুষ পৃথিবীতে নেই ৷ সম্ভবও না ৷ পৃথিবী চির সুখের জায়গা নয় ৷ দুনিয়াবী চরম সুখের মুহূর্তে এমন দুঃসংবাদও আমাদের শুনতে হয়, যদ্দরুন হাসিমাখা মুখ মিলিয়ে যায় বাতাসে ৷ তবে একজন মুমিন সহজেই মুষড়ে পড়ে না ৷ বিপদ আপদকে সে স্বাভাবিক মনে করে ৷ এবং সে এটাও জানে এই অসুবিধা স্থায়ী নয় ৷ সম্পূর্ণ ভরসা করে আল্লাহর ওপর ৷ তিনিই বিপদ দেন এবং রক্ষা করেন ৷
মৃত্যু চরম সত্য ও বাস্তবতা ৷ এর থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না ৷ সুতরাং মুমিনের এমন কোনো আচরণ কাম্য নয়, যাতে করে মনে হবে সে মৃত্যু থেকে পালাচ্ছে ৷ আল্লাহর ওপর ভরসার ক্ষেত্রে সামান্যও সন্দেহ হয় এমন কোনো আচরণ মুমিনের থাকতে পারে না ৷
করোনা ভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারি ৷ কারো মৃত্যু যদি এই ভাইরাসে হবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তবে সে সিন্দুকের ভেতরে ঢুকলেও নিস্তার পাবে না ৷ তদুপরি আমরা কেনো যেনো মৃত্যুর ভয়ে প্রায়শই অমানবিক আচরণ করছি । জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট হচ্ছি ৷ কত শত দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে ঘুরঘুর করছে ৷
আপন সন্তান তার মা-বাবার লাশ ফেলে, বোন তার ভাইকে ফেলে, সন্তান তার বাবাকে ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে । এটা যে কী পরিমাণ নিষ্ঠুরতা তা বলার অপেক্ষা থাকে না ৷ মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে থাকা এটা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না ।
অথচ পবিত্র কুরআন কী বলছে?
قل لن يصيبنا الا ما كتب الله لنا هو مولانا وعلى الله فليتوكل المؤمنون. سوره التوبه -٥١
তুমি বলে দাও: “আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা ছাড়া অন্য কোনো বিপদ আমাদের ওপর আসতে পারে না। তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক। আর সকল মুমিনের কর্তব্য হলো যে, তারা যেন নিজেদের যাবতীয় কাজে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। “
সুরা তাওবা-51
কুরআন আরো বলছে—
قل ان الموت الذي تفرون منه فانه ملاقيكم ثم تردون الى عالم الغيب والشهاده فينبئكم بما كنتم تعملون. سوره الجمعه-٨
“বল যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তারপর তোমাদেরকে অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে।”
সুরা জুমআ-০৮
কত চমৎকার কথা ৷ আমরা যারা করোনার ভয়ে অমানবিক হয়েছি ৷ আপন স্বজনদের সাথেও রূঢ় আচরণ করছি, তাদের জন্য এটা পরম নির্দেশিকা ৷ আমাদের তো করোনাকে নয় বরং করোনার স্রোষ্টাকে ভয় করা উচিত ৷ সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে ৷ তাই বলে পাষাণ ও নির্দয় হওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয় ৷ চরিত্রও নয় ৷
উপরেল্লিখিত দুটি আয়াত এবং এই আয়াতের সারমর্ম আমাদের সকল সময় স্মরণ রাখা উচিত ৷ মাঝে মাঝেই এই দুটি আয়াত তেলাওয়াত এবং এ আয়াতের মর্মার্থ অনুধাবন করা উচিত ৷ তবে আমাদের মনে মরণের ভয় থাকবে না ৷ এর মাধ্যমে মুমিনের অন্তরে সাহস সৃষ্টি হবে। মুমিন যে কোন বিপদের সময় সান্ত্বনা খুঁজে পাবে। ভরসা খুঁজে পাবে।
সতর্কতার পাশাপাশি সকল প্রকার ভরসা হবে আল্লাহর ওপর। আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য যখন যা লিখে রেখেছেন তা ঘটবে ৷ এতে কোনো সন্দেহ নাই ৷ এই বিশ্বাস আমাদেরকে রাখতে হবে। তাহলে মুমিনের অন্তরে সাহস সৃষ্টি হবে ৷ মুমিন কখনো ভীত-সন্ত্রস্ত হয় না, হতে পারে না ৷ পরাক্রমশালী আল্লাহ যার ভারসাস্থল তার ভয় কিসের!
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে কোরআনের এই আয়াত দুটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন ৷