হিংসা মাদকতার চেয়েও জঘণ্য
দীদার মাহদী
হিংসা ৷ ছোট্ট একটি শব্দ ৷ ভয়ানক ক্ষতিকর পাপ ৷ শুধু পাপ নয় ৷ আমল খেকো পাপ ৷ হিংসার কারণে মুমিনের নেক আমল ধ্বংস হয় ৷ হিংসা মানুষের পূণ্য খেয়ে ফেলে ৷ আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলার মতো ৷ একেবারে ছাইয়ে পরিণত করে ৷ কুরআন এবং সুন্নাহ হিংসার বিরুদ্ধে তাই কঠোর ৷ হিংসার ভয়াবহ পরিণাম হাদিসে এসেছে ৷ এসেছে কুরআনেও ৷
হিংসুটে ব্যক্তি পুরোই অশান্তিতে থাকে ৷ হিংসার মানেই হচ্ছে অন্যের ভালো দেখতে না পারা ৷ কোনো ব্যক্তিকে আরাম-আয়েশ বা প্রাচুর্যপূর্ণ অবস্থায় দেখে তার সে নেয়ামত দূরীভূত হয়ে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা। হিংসা এজন্য অত্যন্ত জঘন্য একটি ব্যাধি ৷ রোগ ৷ এই রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন ৷
হিংসার জন্ম হয় মানুষের হীন মনমানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, সম্পদের মোহ, পদমর্যাদার লোভ-লালসা থেকে ৷ ধীরে ধীরে তা ডালপালা বিস্তার করতে থাকে ৷ বিকাশ লাভ করতে করতে হিংসুটের মগজে গেঁথে বসে ৷
আল্লাহতায়ালা হাদিসে কুদসিতে বলেন : ‘আমার বান্দার ওপর নেয়ামত দেখে হিংসাকারী কেমন যেন আমার ওই বণ্টনের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট যা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে করেছি ।’ নাউজুবিল্লাহ।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন— ‘হিংসা নেকিসমূহকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয় যেমন আগুন শুকনো লাকড়িসমূহকে জ্বালিয়ে দেয় ৷’ [আবু দাউদ হাদিস নং-৪৯০৩]।
হিংসা নিজের ঘর বা সমাজে অশান্তি বয়ে আনে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ হিংসুক মানুষ একসময় সে তার চেয়ে বেশি সম্মানিত আর ভালো অবস্থানে থাকা সমাজের অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে হেয় করার চেষ্টা করতে থাকে। তার দৃষ্টিতে সে একাই সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি, বাকিরা সবাই তার চেয়ে নগণ্য ৷
বর্তমানে এই জঘণ্য হিংসায় লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে সমাজের আলেম শ্রেণিকে ৷ এর কারণও অবশ্য আছে ৷ ইলম এবং হিংসার সহবাস ৷ হিংসা হচ্ছে মদ খাওয়ার মতই হারাম ৷ কোন মুসলমানকে শক্র মনে করা মদ খাওয়ার মতই হারাম কাজ ৷ তবে মদ খেলে একটি গুনাহ হয় আর হিংসা করলে গুনাহ তো হয়ই অন্যদিকে নেক আমল পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সে জন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে?’ [সুরা আন-নিসা, আয়াত :৫৪]
হিংসুকের হিংসা যখন এক সময় প্রকাশ হয়ে পড়ে, তখন আর কেউ তাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখে না; সবার মাঝে তার প্রতি একটা খারাপ ধারণা জন্ম নেয়। সমাজে অন্য সবার সঙ্গে বসবাস করলেও মানুষের মনে তার জন্য কোনো স্থান থাকে না ৷
হজরত লোকমান (আ.) স্বীয় পুত্রকে বললেন :’হিংসুকের তিনটি চিহ্ন রয়েছে- পিঠ-পেছনে গিবত করে, সামনাসামনি তোষামোদ করে এবং অন্যের বিপদে আনন্দিত হয়।’ [আল খেসাল, পৃষ্ঠা ১২১, হাদিস নং ১১৩]
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :’নিশ্চয়ই যেভাবে আগুন কাঠকে ভক্ষণ করে (জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে) ‘হিংসাও ইমানকে ভক্ষণ করে।’ [আল কাফি, খণ্ড -২, পৃষ্ঠা ৩০৬, হাদিস নং ১]
এই হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান- হিংসা আমাদের ইমান ধ্বংস করে। আর ইমান চলে যাওয়া মানে কাফের হয়ে যাওয়া। এটি আঁতকে ওঠার মতো একটি বিষয়। আর কাফেরের পরিণতি কখনোই ভালো হতে পারে না।
ইমাম সাদিক বলেছেন : ‘একে অপরের সঙ্গে হিংসা করা থেকে বিরত থাকো। কেননা, হিংসা হলো কুফরের ভিত্তিস্বরূপ।’
যে হিংসা সমাজে অশান্তি বয়ে আনে; মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে; নেক আমল আর ইমান ধ্বংস করে কুফরের দিকে নিয়ে যায়, সেই হিংসা কারও মনেই কাম্য নয়। আসুন, সবাই এই জঘন্য হিংসা করা থেকে বিরত থেকে ভালোবাসা অটুট রাখি।
হিংসা নামের এ ভয়াবহ আধ্যাত্মিক ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। এ জন্য হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য পবিত্র কোরআনে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, ‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে।’ [সূরা আল ফালাক, আয়াত : ৫ ] ৷
আল্লাহতায়ালা আমাদের ক্রোধ ও হিংসাসহ সব আত্মিক ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।