সম্পদ বৃদ্ধি করা যায় কোন পথে?
দীদার মাহদী
পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে অর্থের ওপর ৷ অর্থ ছাড়া কিছুই চলে না ৷ কম হোক বেশি হোক অর্থ লাগবেই ৷ এই অর্থের জন্যই মানুষ এত পরিশ্রম করছে ৷ করছে এত চেষ্টা প্রচেষ্টা ৷ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অমানুষিক খাটুনি খাটছে ৷ দেশের মায়া ত্যাগ করে বিদেশ বিভূঁইয়েপাড়ি জমাচ্ছে ৷ মূলে সেই অর্থ ৷ একটু সুখে থাকার জন্যই এইসব কসরত ৷ এজন্য অনেক মানুষ বৈধ অবৈধতার ধার ধারে না ৷ কালো টাকার পাহাড় জমায় ৷ কিন্তু অর্থবিত্ত হলেই কি শান্তি আসে! প্রশান্তি তো মহান রবের দান ৷ তিনি ইচ্ছে করলে খেজুর পাতার ছাউনির নিচেও শান্তির ফল্গুধারা বইয়ে দিতে পারেন ৷ আবার অর্থের ওপর আয়েশ করে শুইলেও নিরাপদ ঘুম দেন না কাউকে ৷
নিরাপদ রিজিক সবার প্রত্যাশা ৷ এই রিজিক অন্বেষণ কোনো খারাপ কাজ নয় ৷ বরং হালাল রিজিক খোঁজ করা ফরজ ৷ আর রিজিক বৃদ্ধি বা বরকতের জন্য বিশেষ কিছু আমল করা প্রয়োজন ৷ অঢেল সম্পদ অর্জন করার পরও তাতে বরকত না থাকলে তা কোনো উপকারে আসে না ৷ আর স্বল্প রুজিতেও যদি আল্লাহ বরকত ঢেলে দেন তবে ধনীরাও তার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারে না ৷ রিজিক সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়াটা জরুরী নয়; বরং আল্লাহ্ যে রিযিক দিবেন তাতে বরকত হওয়াটা জরুরী। আমরা কী কী বিশেষ আমলের সাহায্যে আমাদের রিজিক বৃদ্ধি ও বরকতে তৎপর হতে পারি তা জানবো ৷
১ ৷ তাকওয়া ৷
রিযিক বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় আমল হচ্ছে এটি ৷ আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া হলো মুনিরে ভূষণ ৷ যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে তথা সকল ফরয-ওয়াজিব সম্পাদন করবে এবং সকল হারাম থেকে বেঁচে থাকবে, তাকে আল্লাহ্ রিযিক দান করবেন। তাকওয়াবান ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হতে পারেন না ৷
কুরআন বলছে,
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দিবেন এবং তাকে কল্পনাতীত উপায় থেকে রিযিক দান করবেন”। [সূরা ত্বালাক: ২-৩]
সুবহানাল্লাহ ৷ আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করলে অভাবনীয় পন্থায় রিজিক চলে আসবে ৷
সুতরাং আল্লাহর ভয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে যদি আপনি অবলম্বন করেন তাহলে আল্লাহ্ আপনাকে রিযিক দান করবেন ।
২ ৷ তাওবা-ইস্তেগফার ৷
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ৷ গোনাহ হলে সাথে সাথে তাওবা করা ৷ তাছাড়া সদা সর্বাদ তাওবা করা ও ইস্তেগফার পাঠ করা ৷ খুব বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়লে এর মাধ্যমে আল্লাহ রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন।
কুরআন বলছে,
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে মুষলধারে উপকারী বৃষ্টি দান করবেন, তোমাদেরকে প্রচুর ধন-সম্পদ ও সন্তান দান করবেন, আর তোমাদের যে ফসলের বাগিচা রয়েছে সেটাকে তিনি সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের নদী গুলোকে প্রবাহিত রাখবেন”।
[সূরা নূহ: ১০-১২]
তাওবার পদ্ধতি মেনে তাওবা করা ৷ গোনাহ হলে অনুতপ্ত হওয়া ৷ ক্ষমা তাওয়া ৷ পরবর্তীতে গোনাহ না করার প্রতিজ্ঞা করা ৷ এই সিস্টেমে তাওবা করতে পারলে রিজিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৷
৩ ৷ দান ৷
দান করলে রিযিক বৃদ্ধি পায়। আমরা আপাত দৃষ্টিতে দেখি দান করেছে তো কমেছে ৷ কিন্তু না ৷ দান করলে আল্লাহ সেটা দ্বিগুণ থেকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেন ৷
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ماَ نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ
সাদাকা করলে বান্দার সম্পদ কমে না। [মুসলিম]
শুধু কি তাই! বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা দান করে তাদের জন্য ফেরেশতা দোয়া করে এবং বলে,
اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا
“হে আল্লাহ্ তুমি তার এই দানের বিনিময়ে তার সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও”। (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং দান করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই ৷
৪ ৷ আত্মীয়তা রক্ষা করা ৷
এই সময়ে আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা লোকজনের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে ৷ আপন মা-বাবারই খোঁজখবর রাখে না এমন হতভাগাও চোখে পড়ে ৷ আত্মীয়দের সাথে ওঠাবসা চলা ফেরায় কিছু সম্পদের নুকসানের বিষয় দৃশ্যমান হলেও হাদীস তার বিপরীত কথা বলছে ৷ আশার কথা হলো, আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও রিযিক বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ رِزْقُهُ ، أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার হায়াত বাড়িয়ে দেয়া হোক এবং রিযিক বৃদ্ধি করা হোক, তাহলে সে যেনো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখে চলে।’
[সহীহ বুখারী]
৫ ৷ দুআ ৷
দুআর কোনো বিকল্প নাই ৷ আল্লাহর কাছে চাইতে হবে ৷ আল্লাহই আমার অভাব পূরণ করবেন ৷ তিনিই রাজ্জাক ৷ রিজিকের মালিক ৷ মহান রবের কাছে বিনীত হয়ে বলতে হবে,
হে আল্লাহ্ আমার রিযিক বাড়িয়ে দিন ৷আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন ৷
কুরআন বলছে,
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
‘হে আমার রব, আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, এবং পরকালেও কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন ।’
এই জন্য আল্লাহর কাছে সর্বদা বরকত কামনা করতে হবে।
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুআটি পড়তেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نَافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।”
অতএব রিযিক হলেই হবে না সেটা যেনো পবিত্র হয় তা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
সর্বোপরি যেটুকু রিযিক আল্লাহ্ দিবেন তাতে যদি বান্দা সন্তুষ্ট হয়, তাহলে সেটা তার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কেননা অনেক ধনী মানুষ আছে, যাদের অনেক সম্পদ রয়েছে কিন্তু তারা সন্তুষ্ট না তৃপ্ত না। তাদের লোভ লালসা এতো বেশি যে যতই পায় ততই চায়। ফলে ঐ রিযিক তাদের কোন উপকারে আসে না।
হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে কল্যাণময় পবিত্র ও উপকারী রিযিক দান করুন এবং তাতে বরকত দিন। আমীন