প্রেম-ভালোবাসার পোস্টমর্টেম,শাহাদাত হুসাইন–শীর্ষবার্তা

শাহাদাত হুসাইন 

ভালোবাসা নামক শব্দটা শুনলেই মনে ঘৃণার ভাব চলে আসে ৷ শব্দটা শুনার সাথে সাথেই অনেকে নড়েচড়ে বসে ৷ অথচ এই ভালোবাসা নামক শব্দটা আছে বলেই পৃথিবী টিকে আছে ৷ বুক ফুলিয়ে-উঁচু গলায় বলা যায়, যদি এই ভালোবাসা নামক শব্দটা না থাকতো তাহলে পৃথিবীতে প্রজনন পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যেতো ৷ সন্তান দুনিয়ায় আসার সাথে সাথেই গর্ভধারিণী মা তাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলতো ৷ এমনও হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো যে, মা সন্তানকে পেটেই হত্যা করে ফেলতো ৷ পেটে থাকাকালীন সন্তানের দেওয়া অসহনীয় কষ্টের কারণে অনেক মা সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকতো ৷ ভালোবাসা নামক এই শব্দটিকে যদি অভিধান থেকে মুছে ফেলা হয় তাহলে সমস্ত কাফের-মুশরিক ভস্ম হয়ে যাবে ৷ কেননা কাফের মুশরিকরা মহান আল্লাহর নাফরমানি করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি ভালোবাসার কারণে তাদের কাছে রিজিক পৌঁছাচ্ছেন ৷

তৃতীয় বর্ষে পড়াকালীন কোরবানির ছুটিতে ট্রেন যোগে বাড়ি আসছিলাম ৷ রাত তখন আনুমানিক ১১:৩০ হবে ৷ ট্রেনে প্রচন্ড ভীর ! ভাগ্যিস সিট পেয়েছি নইলে দাঁড়িয়ে আসতে হতো ৷ কিচ্ছু ভালো লাগছিল না ৷ তবুও বাড়ি আসতে হবে ৷ ঈদের ছুটি বলে কথা ৷ আমি উর্ধ্বশ্বাসে একটি বই পড়ছিলাম ৷ হঠাৎ এক আধবয়সী মহিলা অভিমানের স্বরে বললেন, হুজুর একটা প্রশ্ন করি ? আমি বই পড়ায় এতোটাই বিভোর হয়ে পড়েছিলাম যে, মাঝখানে তার প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে গেলাম ৷ তবুও মাথা নাড়িয়ে তার কথার সমর্থন করলাম ৷ 
মহিলা বললেন, ‘আপনারা হুজুর মানুষ যদি এমন বই পড়েন তাহলে অন্য মানুষ কী পড়বে ?’
হতভম্ব হয়ে ভদ্র মহিলাকে বললাম, ‘কেমন বই ?’

তিনি বললেন, এই যে আপনি যেমন বই পড়ছেন  “তোমাকে ভালোবাসি হে নারী”

রাগ সংযম করে বললাম, ‘আসলে আন্টি! নারী নয়, নবী ৷ একটু ভালো করে দেখে নিন ৷’ সেদিন তিনি সো সরি বলে সাইড কেটেছিলেন!

মূল কথা হলো, প্রেম-ভালোবাসা শব্দটাকে  আমরা অবৈধ সম্পর্কের অর্থে ব্যবহার করি ৷ তাই বর্তমানে শব্দটা শুনার সাথে সাথেই শব্দটাকে অবৈধ মনে হয় ৷ কেন এই শব্দটা শুনলেই খারাপ ধারণা তৈরী হয়?

প্রতিটি অবৈধ সম্পর্কের সূচনা হায়-হ্যালো দিয়েই হয়ে থাকে ৷ এই হায়-হ্যালোর সম্পর্কটা একদিন হা-হুতাশে পরিণত হয় ৷ সম্পর্কগুলো গোপনীয়তার সাথে শুরু হলেও একদিন সকল কুকর্ম ফাঁস হয়ে যায় ৷ অনেকসময় গোঁপনে করা ভিডিও ক্লিপ কিংবা সেলফি দিয়েও নানান ভাবে হয়রানির শিকার হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ….

সমাজে কোন মেয়ে ধর্ষণ হলে বা প্রতারিত হলে আমাদের টনক নড়ে যায় ৷ কিন্তু কোনদিন কি ভেবে দেখেছি এই ধর্ষণের সূচনা কোথায় ? সমাজের কোন মেয়ে অপর কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে ৷ কারও স্ত্রী অন্য কারও স্বামীর সাথে ভেগে গেলে ৷ সমাজ তাদেরকে বয়কট পর্যন্ত করে ৷ ধর্ষণ বা প্রতারিত হওয়ার পর আমরা মিছিল-মিটিং এমন কি প্রতিবাদ হিসাবে ভিডিও ক্লিপও বানাই ৷ কিন্তু কোনদিন কি চিন্তা করেছি এই অপকর্মের সূচনা কোথায় ? ইভটিজিং ও ধর্ষণ বন্ধ করার স্লোগান আমরা বেশ ভালোই দেই কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে যত উপকরণ দরকার তা সব আমরাই সহজলভ্য করে দিয়েছি ৷ বিড়ালকে শুঁটকির পাহারা দিলে যা হয় !

প্রেম নামক এই মহা-প্রলয় থেকে খুব কম ছেলে-মেয়েই বাঁচতে পারে ৷ ইতিহাসকে সাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করলে দেখা যায়, একেকটা ছেলে বা মেয়ে একসাথে কয়েক জনের সাথে প্রেম চালিয়ে যায় ৷ অনেকে প্রেম করা ফ্যাশন হিসাবে গ্রহণ করেছে ৷ যুব সমাজের আইডল সেলিব্রেটিরাই যখন অবৈধ প্রেম ভালোবাসাকে জীবনের মূল মিশন হিসাবে গ্রহণ করেছে তখন ভক্তদের অবস্থাতো নাজেহাল হওয়ারই কথা ৷ অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার প্রাদুর্ভাব বুঝতে একজন ধার্মিক যুবকের একটি গল্পই যথেষ্ট ৷

ছেলেটি বেশ ধার্মিক ৷ অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র স্বভাবের অধিকারী ৷ লোক মুখে তার প্রশংসা অনেকটা ঈর্ষণীয় ৷  সবসময় সে বখাটে ছেলেদের সাথে ঘুরে ৷ তবে তার কমন ডায়লগ তাদের সাথে মিশলেই কি আমি তাদের রং মাখবো? অসম্ভব ! আমার রঙে তাদেরকে রঞ্জিত করবো ইনশাআল্লাহ ৷ প্রেমের নামে নোংরামি তার একদম অপছন্দ ৷ তার চেহারার রং শ্যাম বর্ণ হলেও মানবিক গুণাগুণের কারণে সে মেয়েদের জন্য বিরাট বড় ক্রাশ ৷ তার ভাষ্য মতে, মেয়েদের যন্ত্রনায় কয়েকটা সিম চেঞ্জ করেছে ৷ কয়েকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ করেছে ৷ তার বয়স এখন ২৩ হলেও প্রেমের প্রপোজ পেয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক ৷ কিন্তু সে শয়তানের পাতানো এই ফাঁদে কোনক্রমেই পা দেয়নি ৷ আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন ৷

একটা ভালো ছেলেকে নষ্ট করার পিছনে এতোগুলো মেয়ে ঘুরঘুর করলে বখাটে ছেলেরা তাহলে কতগুলো মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘুরে ? আমাদের দেশের যুবক-যুবতির চরিত্রে এই অশ্লীলতার ছোঁয়া কেন আর কিভাবে এলো ? 

বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে একসাথে হিন্দি বা ইংলিশ মুভি দেখছে ৷ হঠাৎ নায়ক-নায়িকা আপত্তিকর কাজে লিপ্ত হয়ে গেলো ৷ সিনেমা চলতে চলতে হঠাৎ অশ্লীল গানের সাথে নাচানাচি শুরু হয়ে গেলো ৷ অধিকাংশ মুভির মূল চরিত্র হিসাবে গ্রহণ করা হয় অশ্লীল প্রেম-ভালোবাসা ৷ মোট কথা বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, নানা-নানিসহ সবাই একসাথে প্রেমের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ৷ বেহায়াপনা শিখছে ৷ 

ভারতের হিন্দি ও বাংলা সিরিয়ালগুলোর তো মূল চরিত্রই হলো, সংসারে ফাটল সৃষ্টি করা ৷ সিরায়ালে আসক্তি মহিলারা খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অনিয়ম করে ৷ সিরিয়ালের একটি পর্বও যদি মিসটেক হয় তাহলে পুনঃপ্রচার না দেখলে যেন পেটের ভাতও হজম হয় না ৷ অনেকেই এই সিরিয়ালগুলোকে সামাজিক মনে করে পুরো পরিবার একসাথেই ডেক্সটপের পর্দায় চোখ লাগায় ৷ 

ছোটবেলা থেকেই এরকম গান্ধা পরিবেশে বেড়ে উঠা ছেলে-মেয়েগুলো বড় হয়ে কি হতে পারে ? সিনেমা ও সিরিয়ালে দেখা চরিত্র নিজের বাস্তব জীবনে ফিট করতে গিয়ে বিভিন্ন অশ্লীলতার সাথে লিপ্ত হয়ে যায় ৷ সিনেমার চরিত্র অনুযায়ীই তারা অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা এমন কি সেক্সুয়াল কার্যক্রমেও লিপ্ত হয়ে যায় ৷ সিরিয়ালের প্রাদুর্ভাবে সংসার ভাঙ্গনের ঘটনা অহরহ ঘটছে ৷ সিরিয়াল আর মুভি দেখতে দেখতে হঠাৎ একদিন ছেলে কারও একটা মেয়েকে বউ করে নিয়ে আসে ৷ মেয়েটাও বাবা-মায়ের নাক-কান কেটে দিয়ে অন্য কোন ছেলের বউ হয়ে চলে যায় অচিনপুরে ৷ 

একটু ভাবুন, এই সামাজিক ও চারিত্রিক ভাঙ্গনের জন্য কে দায়ি ?

6 thoughts on “প্রেম-ভালোবাসার পোস্টমর্টেম,শাহাদাত হুসাইন–শীর্ষবার্তা”

  1. তথ্যবহুল চমৎকার লেখা। লেখক ও প্রকাশক উভয়কে ধন্যবা।

Leave a Comment