শাহাদাত হুসাইন
উস্তাদমহল খুবই আত্মমর্জাদাবোধ সম্পন্ন আর লজ্জাপ্রবণ ৷ না খেয়ে দিনাতিপাত করলেও কখনও কারও কাছে হাত পাতবেন না ৷ শিক্ষকদের শানে বেতন শব্দটা একদম বেমানান ৷ কেননা মাদরাসা মহলে বেতনের পরিবর্তে হাদিয়া ব্যবহার করা হয় ৷ শিরোনামে বেতন ব্যবহার করার যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে ৷ তথাপি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি !
চাকরি নির্ভরতা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ও আল্লাহ্র রসুলের বিধিবিধান মেনে ব্যবসাকে রুজি-রোজগারের মাধ্যম বানানোই হবে যুক্তিযুক্ত ৷ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের মন ভুলানো বুলি না শুনে নিজের আর্থিক সচ্ছলতার দিকে মনোনিবেশ করাই শ্রেয় ৷ মাদরাসা-মসজিদ হোক শুধুমাত্র খেদমতের স্থান ৷ এখনও কি বোধ উদয় হওয়ার বাকি আছে ? যারা খেদমত আর হাদিয়া বলে বলে মিছিল করতো তারা আজ কোথায়? যদি হাদিয়াই হতো তাহলে আজ খেদমত বন্ধ থাকলেও হাদিয়া চালু থাকার কথা ছিল ! কিন্তু….. আসলই তারা মুখে বলে হাদিয়া অন্তরে ঠিকই বেতন মনে করেই টাকা দেয় ৷
চিরদিন জনসাধারণের কাছে হাত না পেতে উলামায়েকেরামের মাথা উঠিয়ে দাঁড়ানোর সময় এসেছে ৷ না খেয়ে, কষ্ট করে আর কতদিন ? নিশ্চিত থাকেন, মাদরাসা অথবা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে কেউ শিক্ষকদের খোঁজ-খবর নিবে না ৷ কথা আর ভাষণের দিক থেকে সবাই একশ হলেও বাস্তবতার দিক থেকে প্রায় সবাই শূন্য ৷ যা করোনা প্রমাণ করে দিয়েছে ৷ মানুষের দ্বারস্থ হওয়ার আগে মনে রাখতে হবে
اليد العليى خير من يد السفلى
অর্থাৎ উপরের হাত নিচের হাতের থেকে উত্তম ৷
লকডাউনের বাজার শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে সবকিছুই রমরমা চলছে ৷ স্বাস্থ্যবিধির মিছিল চললেও বাস্তবতা একদম বিপরীত ৷ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন চালু থাকলেও কঠিন অভাবে পড়েছেন নন এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ৷ লকডাউনের পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এক টাকাও হাদিয়া পাননি ৷ কিভাবে তাঁদের দিনকাল চলছে তা খুব সহজেই অনুমেয় ৷ তবুও মাদরাসার মাতবর সমাজ নীরব ! মাদরাসা খোলা অবস্থায় তাদের মাতব্বরী দেখলে যথারীতি টনক নড়ে যায় ৷ সোজা কথা হলো, মাদরাসা খোলা থাকাকালীন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক হার গলা পরিশ্রম করে, মানুষের উঁচু-নিচু অনেক কথা শুনে কালেকশন করে আর মাতব্বরি করে তথাকথিত মতবর সমাজ ৷ আফসোস মাদরাসা বন্ধ থাকায় তাদের মাতব্বরি বিলুপ্ত প্রায় ৷ মাদরাসা বন্ধ, কালেকশন বন্ধ তাই উস্তাতদের বেতনও বন্ধ ৷ মাদরাসা চালু হওয়ার সাথে সাথেই কচিকাচা নিষ্পাপ শিশুদের কালেকশন শুরু হবে ৷ মাতবরদেরও আনাগোনা শুরু হবে ফাইজলামীর একটা সীমা থাকা চাই ! ধন্যবাদ করোনা ! তুমি না এলে হয়তো এই বদমাইশদের জাতি চিনতোই না ৷
হুজুররা ব্যবসা করলে অনেকের চুলকায় ৷ নাক ছিটকিয়ে কেউ কেউ বলে থাকে হুজুররা কেন ব্যবসা করবে? হুজুররা তো শুধু মসজিদ-মাদরাসা নিয়েই পড়ে থাকবে ৷ এ ধরনের কথা শুনে অনেকে ব্যবসা-বানিজ্য থেকে পিছিয়ে আছেন ৷ বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তবুও নিশ্চুপ ৷ আমি বলি,হুজুররা ব্যবসা থেকে পিছিয়ে থাকার কারণেই আজ ব্যবসা-বানিজ্যে সুদ-দূর্নীতি আর ধোঁকাবাজি ঢুকে পরেছে ৷ কারণ হুজুররা ব্যবসার হালাল-হারাম বুঝেন ৷ শরয়ী সমাধানও খুব ভালো করে জানেন ৷ ব্যবসায় দুই নাম্বারি করলে তার শাস্তিটাও জানার বাকি নাই ৷
আল্লাহ বলেন,
সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ২৭৫
ٱلَّذِينَ يَأْكُلُونَ ٱلرِّبَوٰا۟ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِى يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيْطَٰنُ مِنَ ٱلْمَسِّ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْبَيْعُ مِثْلُ ٱلرِّبَوٰا۟ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلْبَيْعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰا۟ فَمَن جَآءَهُۥ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِۦ فَٱنتَهَىٰ فَلَهُۥ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ
অর্থঃ যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে ৷
উলামায়েকেরামের কাছে খোলা চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ,এগিয়ে আসুন,নিন্দুকের নিন্দাকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে ব্যবসার সিস্টেমটাকে চেঞ্জ করে দিন ৷ ব্যবসা হোক আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলের বাতলানো পথে ৷ পশ্চিমা শক্তির ব্যবসায়ীক সিস্টেম নিপাত যাক ৷ আল্লাহ আমাদের সহায় হোন ৷ আমীন ৷