পর্দাবৃত মডেল
শাশাহাদাত হুসাইন
বোরকা পড়ে বিভিন্ন আইটেমের ছবি ফেসবুকে আপডেট দেওয়া, বিভিন্ন কালার, বিভিন্ন স্টাইলের বোরকা পরা পর্দার কোন বালাই নেই সামান্য হিজাব পড়ে নিজেকে পর্দানশীন দাবি করা আমাদের সমাজে মেয়েদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে ৷ আরে তুই কার অপেক্ষায় আছিস,কার জন্য সময় পার করছিস,কোথায় ছ্যাকা খেয়েছিস তার আপডেট ফেসবুকে দিবি বেশ ভালো কথা ৷ বোরকা পড়ে কেন দিতে হবে ? লাভ স্টিকার দিয়ে পিক ছাড়বি বেশ ভালো কিন্তু বোরকা পড়ে কেন ? হাতে B লিখবে এটাও মেনে নিলাম কিন্তু বোরকা পড়ে কেন ? তোর কোন পার্সোনালিটি না থাকতে পারে পর্দার তো একটা পার্সোনালিটি আছে ৷ আরে বোরকা পড়ে পিক আপডেট দেওয়া,ভিডিও গান বানানোর এই পাওয়ার তোরে কে দিয়েছে ? পর্দা করে ফেসবুকে পিক দেওয়ার উদ্দেশ্য কি? ধার্মিক ছেলেদেরকে পটানো নাকি পর্দার প্রচার-প্রসার করা ? এসব নিয়ে যে কথা বলবে তাকে ইনবক্সে জবাবদিহি করতে হবে তাই না ? অসভ্য ! বেহায়া ! আরে মডেল হওয়ার যদি এতোই শক,সেলিব্রেটি হওয়ার যদি এতোই ধান্দা তাহলে সানি লিয়ন আর শানাইয়ের মত বিবস্ত্র পিক ছাড়তে পারিস না ? পর্দা করে কেন ? মতলব কি ধার্মিক ছেলেদেরকে ভ্রষ্ট করা নাকি নিজেকে ধার্মিক প্রমাণ করা ? ইচ্ছে ছিল জাতির সামনে তোদের নামগুলোও ম্যানশন করবো কিন্তু তোরা যে মুসলিম বোন তাই সম্মানটা ঠিক রাখলাম ৷
রাগের মাথায় অনেক কথা বললাম এবার তোমাদের এক ভাইয়ের মুখে কিছু কথা শুনো,
পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সকল শ্রেণীর ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন তিনি যেন তাঁর স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের নারীদেরকে চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত রাখার আদেশ দেন। কিছু আয়াতে উম্মুল মুমিনীনদেরকেও সম্বোধন করেছেন, কোনো কোনো আয়াতে সাহাবায়ে কেরামকেও সম্বোধন করা হয়েছে। মোটকথা, কুরআন মজীদ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য পর্দার বিধান দান করেছে। এটি শরীয়তের একটি ফরয বিধান। এ বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবি। কিন্তু বেদনার বিষয় এই যে, পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের ‘মুসলিম-সমাজ’ এতটাই প্রভাবিত হয়ে পড়েছে যে, কুরআন ও সুন্নাহর বিধানও তাদের কাছে অপরিচিত ও অপ্রয়োজনীয়! (নাউযুবিল্লাহ)
ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান তো মুসলিম পরিচয় বহনকারীদের দ্বারা আক্রমণেরও শিকার। ঐসব বিধানের মধ্যে একটি হচ্ছে পর্দা । এই সব ‘মুসলিম’ ভাইদের কে বোঝাবে, এটা নিজের পায়ে কুঠারাঘাতের শামিল । ইসলামের এই বিধানগুলো শুধু আমাদের আখেরাতে নাজাতেরই উপায় নয়, আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্থি ও পবিত্রতা । কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অমুসলিমদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে আমরা নিজেদের আর্দশ ত্যাগ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের পরিবার ও সমাজেও পশ্চিমা সমাজের ভয়াবহ উপসর্গগুলো প্রকটভাবে আকার ধারন করেছে । এটা নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। আমরা যদি আমাদের পরিবারিক শান্তি ফিরে পেতে চাই তাহলে নারী-পুরুষ সকলকে পর্দার বিধান মানতে হবে ৷
পর্দার বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার এবং খাঁসভাবে মায়েদের জন্য বিরাট বড় অনুগ্রহ । এই বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা । পর্দা নারীর মর্যাদার প্রতীক এবং ইফফাত ও পবিত্রতার একমাত্র উপায়।
যে কোনো ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিই কুরআন-সুন্নাহর পর্দা সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীসসমূহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এই বাস্তবতা স্বীকার করবেন যে, ইসলামে পর্দার বিধানটি অন্যান্য হিকমতের পাশাপাশি নারীর সম্মান ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছে । এই বিধানের কারণে প্রত্যেককে ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। কৃতঘ্ন হয়ে এ বিধান সম্পর্কে অযথা আপত্তি করা উচিত নয়।
নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমে অন্তরের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। পর্দার এই সুফল আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن
এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
সুতরাং মানবসমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত একমাত্র পর্দার বিধানই যথেষ্ট । বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দার বিধান পূর্ণ অনুসরণ করা আবশ্যক ।
পর্
يا ايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين …
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)
واذا سألتموهن فسئلوهن من وراء حجاب
তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
এই আয়াত থেকেও বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দা-বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে।
এই আয়াতে যখন পর্দার বিধানকে সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীনদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে তখন উম্মতের আর কে আছে যে এই বিধানের বাইরে থাকতে পারে?
قل للمؤمنت يغضنن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن الا ما ظهر منها
তরজমা : (হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর : ৩১)
এই ব্যাখ্যা বুঝা যায় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য।
وليضربن بخمرهن على جيوبهن
তরজমা : তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। … (সূরা নূর : ৩১)
ولا يضربن بارجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن وتوبوا الى الله جميعا ايه المؤمنون لعلهم تفلحون
(তরজমা) তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর : ৩১)
আল্লাহ সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন ৷