শরীফ আহমেদ
বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৷ তিনি হেদায়েতের চেরাগ জ্বালিয়ে দিয়েছেন ৷ দূর করেছেন সকল অন্ধকার ৷ প্রতিষ্ঠা করেছেন ন্যায়,সততা ও ইনসাফ ৷ দিয়েছেন যুগান্তকারী- বিস্ময়কর সব নির্দেশনা ৷ যা হাদীস বা সুন্নাত হিসাবে খ্যাত ৷ বিজ্ঞান সম্মত তার সুন্নাত পালনে রয়েছে পরকালীন এবং ইহকালীন নানাবিধ ফায়দা ৷ রোগ নির্মুলের ক্ষেত্রেও তার চিকিৎসা ও ফর্মুলা অসাধারণ ৷ গবেষকদের জন্য মাইলফলক ৷ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূত্রে বর্ণিত, নবীজি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর আস্সা-ম হলো মৃত্যু।
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৬৫৯)
এই উম্মতের মডেল সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম ৷ তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার সুন্নাত মেনে চলতেন ৷ এবং কালোজিরার গুরুত্ব অনুধাবন করে সব সময় সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিতেন। খালিদ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনে আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম ৷ তখনো তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশোনা করতে আসেন ইবনে আবি আতিক। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এ কালিজিরা সঙ্গে রেখো। এর থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে জয়তুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এদিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে তিনি নবীজি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, এই কালিজিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ওষুধ। আমি বললাম, ‘সাম’ কী? তিনি বললেন মৃত্যু। ( সহীহ বুখারি, হাদিস নং : ৫৬৮৭)
আর বাস্তবেই প্রাচীনকাল থেকে কালিজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
এটি শুধুই একটি মসলা নয়। এর কাজ শুধু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতেই নয়, আয়ুর্বেদিক ও কবিরাজি চিকিৎসায়ও কালিজিরার ব্যবহার হয়। কালিজিরার বীজ থেকে একধরনের তেল তৈরি হয়, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে আছে ফসফেট, আয়রন এবং ফসফরাস। এ ছাড়া কালিজিরা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।
বর্তমান যুগেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, অনেক ওয়েবসাইটে কালিজিরার বহু ধরনের উপকারিতার কথা পাওয়া যায়। যার সবগুলো সত্যি না হলেও বেশ কিছু কার্যকরী গুণ রয়েছে ৷ কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো—
► মাথা ব্যথা সারাতে কালিজিরার তেল দারুণ উপকারী। কালিজিরার তেল কপালে মালিশ করলে এবং তিন দিন খালি পেটে ১ চা চামচ তেল খেলে আরোগ্য লাভ করা যায়।
► চুলপড়া নিরাময়েও কালিজিরার বিশেষ গুণ রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করার পর তা ভালোভাবে শুকিয়ে পুরো মাথায় কালিজিরার তেল ভালোমতো লাগালে চুলপড়া অনেক কমে যাবে।
► হাঁপানির রোগীরা বুকে ও পিঠে কালিজিরার তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
► কালিজিরার তেল ও চূর্ণ ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
► চা বা গরম জলের সঙ্গে কালিজিরার তেল মিশিয়ে পান করলে হৃদেরাগে যেমন উপকার পাওয়া যায়, তেমনি শরীরের বাড়তি মেদও কমে। দই ও কালিজিরার মিশ্রণ প্রতিদিন এক মাস ধরে খেলে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যায় বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় জানা গেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই মিশ্রণ শরীরের মেটাবলিজম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে মেদের পরিমাণ কমতে থাকে। সেই সঙ্গে দ্রুত হ্রাস পায় দেহের ওজন। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ৪৪ জন মেদযুক্ত মানুষের ওপর এ মিশ্রণের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন যদি দই ও জিরার এই মিশ্রণ খাওয়া যায়, তা হলে এক মাসের মধ্যে অন্তত ১৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব।
► পেটের গ্যাসের সমস্যার জন্যও কালিজিরা বেশ উপকারী। এক কাপ দুধ ও এক চা চামচ কালিজিরার তেল একসঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক পান করলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।
► যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কোনো না কোনোভাবে কালিজিরা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গরম ভাতের সঙ্গেও কালিজিরার ভর্তা খেতে পারেন।
► জ্বর হলে সকাল-সন্ধ্যায় লেবুর রসের সঙ্গে কালিজিরার তেল খেতে পারেন। জ্বর দ্রুত সেরে যাবে।
► হাঁটুর ব্যথা সারাতে রোজ রাতে কালিজিরার তেল হাঁটুতে মালিশ করুন, হাঁটুর ব্যথা কমে যাবে। এ ছাড়া বাতের ব্যথা সারাতে কালিজিরার তেল নিয়মিত মালিশ করা যেতে পারে।
► কালিজিরা নারী ও পুরুষের উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য খুব উপকারী। নিয়মিত কালিজিরা সেবনে পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নারীদের স্তনে দুধ বৃদ্ধি করে ৷ ইত্যাদি আরো বেশ কিছু ফায়দা ৷ কালিজিরার উপকারিতা নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। থাকতে পারে ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গি ৷ তাই হাদিসের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রিকাগুলোর আলোকে কালিজিরার উপকারিতা তুলে ধরা হলো । বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনাসহ বিভিন্ন নতুন নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব হচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখনো সেগুলোর প্রতিষেধক বা কোনো ভ্যাকসিন বানানো সম্ভব হয়নি। পবিত্র হাদিসে যেহেতু রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই জিনিসটি সব রোগের মহৌষধ বলেছেন, তাই সব ধরনের ভাইরাস থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক আমাদের খাবারের মেন্যুতে কালিজিরা যোগ করা যেতে পারে। এতে করে অন্তত নবীজির সুন্নত তো আদায় হবে।