নবী-সাহাবীগণের জীবন নির্ভর ফিল্ম নির্মাণের শরয়ী বিধান | শরিফ আহমাদ | শীর্ষবার্তা ডটকম

— শরিফ আহমাদ

আলিফ লায়লার নাম বা গল্প শোনেনি এমন মানুষ কমই আছে ৷ জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা আরব্য রজনীর গল্প নানা দেশে নানাভাবে ছড়িয়ে আছে ৷ অসাধারণ সব গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচিত্র ৷ ভারতীয় টেলিভিশন ধারাবাহিকে ১৯৯৩ সালে প্রথম পর্ব প্রচার করা হয় ৷ রচয়িতা রবীন্দ্র জৈন এর দক্ষতায় ৩০৩ পর্ব ডাবিং করে বাংলাদেশেও সমপ্রচার করা হয় ৷ চমৎকার কাহিনী ও ইসলামী সংলাপে মুগ্ধ বাংলার মুসলমান ৷ পরবর্তীতে অনেক পর্বের চলচিত্র নির্মিত হলেও কেউ আলিফ লায়লার মতো জনপ্রিয় হতে পারেনি ৷
তবে আলোচিত ইউসুফ-এ-পায়াম্বার, দ্য প্রোফেট হল ফারজুল্লাহ সালানশুর পরিচালিত ২০০৮ সালের ইরানি টিভি চলচ্চিত্রটি ৷ যেখানে নবী ইউসুফ(আঃ) -এর ঘটনা কুরআন এবং ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলার দাবী করা হয়েছে। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল এসএ টিভি ধারাবাহিকটি বাংলা ভাষায় ডাবিংয়ের মাধ্যমে ২০১৬ সাল থেকে ইউসুফ জুলেখা নামে সম্প্রচার শুরু করে ৷ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই দুই চরিত্র নিয়ে নির্মিত ধারাবাহিকটি বাংলাদেশ ছাড়াও ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হয়েছে।
এছাড়াও দ্যা মেসেঞ্জার, সুলতান সুলেমানসহ অন্যান্য চলচিত্রগুলো ইসলামি ইতিহাস ভিত্তিক রচিত বিনোদনমূলক সিনেমা। মূলত এগুলো ইসলামি ভাবধারায় তুর্কি ও ইরানিদের তৈরি।
সম্প্রচারের শুরুতেই বিতর্কে পড়ে সিনেমাগুলো। নবী বা সাহাবীদের জীবন চরিত চিত্রনাট্যের মধ্যমে মঞ্চায়ন করা হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে নবী, রাসুল ও তার সাথীবর্গের রচিত কাল্পনিক রুপ। আবার নবী ও সাহাবী জীবনে ঘটে যাওয়া সঠিক ইতিহাস বিকৃতি করে দেখানো হচ্ছে এসব বিতর্কিত সিনোমাগুলোয়। মূলত এ সিনেমাগুলো শিয়া সম্প্রদায়ের ইসলামি আকিদা বা বিশ্বাস মতে বৈধ ও বিশুদ্ধ।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, শিয়া সম্প্রদায়ের চরম বিতর্কিত আকিদা মাপে তৈরি সিনেমাগুলো কি বাংলাদেশের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আকিদা অধ্যুষ্যিত দেশে সম্প্রচার করা ঠিক হচ্ছে? বিশেষ করে ইউসুফ আ. ও মিশরের তৎকালীন সম্রাটকন্যা হযরত জুলাইখার মাঝে ঘটে যাওয়া একটি স্পর্শকাতর ঘটনা নিয়ে রচিত ডাবিংকৃত ইরানি সিনেমা নিয়ে চলছে চরম বিতর্ক। রাসুলদের জীবনে প্রেম কাহিনীর সত্যায়ন করা হচ্ছে এসব সিনেমায়। এতে ইসলাম ও নবীদের সম্পর্কে ভুল তথ্য যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। বিতর্কিত করা হচ্ছে নবীদের নিষ্পাপ চরিত্রকে।
নবী জীবনে আল্লাহ প্রদত্ব আকস্মাৎ বিভিন্ন ঘটনার স্বাক্ষী মুসলিম জাহান। তবে নবী রাসুলদের সেই ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করা ইসলামি আকিদা মতে বৈধ কী? এমনই প্রশ্ন এখন ইসলামি আকিদা ও রীতি পরিপালনে সজাগ সর্বস্তরের জনসাধারণের মনে।
উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত ফাতওয়া মতে নবী রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর নামে কাউকে অভিনেতা বানিয়ে ফিল্ম নির্মাণ করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েজ।
লাজনাতুত দায়িমা সৌদী ফাতওয়া বোর্ডের সর্বসম্মত ফাতওয়া এটাই। এছাড়া উলামায়ে দেওবন্দ এবং সারা বিশ্বের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের ফাতওয়া এটাই।
কারণ- ১
এর দ্বারা নবীদের অবয়ব কাউকে প্রদান করার মাধ্যমে নবীদের প্রতিচ্ছবি অংকিত করে দেয়া হচ্ছে। অথচ উক্ত ব্যক্তির মাঝে নবীর অবয়বের কিছুই নেই। যা সুষ্পষ্ট নবীদের শানের বেয়াদবী।


  • যারা আবু জাহাল ও আবু লাহাব ও অন্যান্য কাফেরদের ভূমিকায় অভিনয় করবে, তারা গল্পের প্রয়োজনে আল্লাহ নবীও সাহাবীদের গালাগাল করবে, দোষ বলবে, যা কোন মুসলমানের জন্য বলা জায়েজ নয়। যা সুষ্পষ্ট কুফরী বক্তব্য।
    ৩-
    দর্শকের চোখে ঐ দৃশ্যপট বারবার ভেসে উঠবে ৷ এবং ওটাকেই সত্য মনে হবে ৷ যা বাস্তবতার সাথে কখনো এক হবে না ৷

মোটকথা কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী নবীদের জীবন চরিত চিত্রনাট্যে কল্পিত ভাবনায় উপস্থাপন করা বা দেখা বৈধ নয়। এটা সম্পূর্ণ শরিয়ত পরিপন্থি। এটার প্রদর্শক ও দর্শক উভয়েই বড় ধরনের গুনাহের সম্মুখিন হবে। সুতরাং এ সিনেমা বানানো, সিনেমা প্রদর্শন বা দেখা পরিহার করা জরুরি।

Leave a Comment