খরগোশ ভক্ষণ এবং পালন নিয়ে দুটি কথা | শরিফ আহমাদ | –শীর্ষবার্তা


—শরিফ আহমাদ ||

পৃথিবীর জলে-স্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার প্রাণী ৷ প্রত্যকের রয়েছে আলাদা ভুবন ৷ নিজস্ব লাইফ স্টাইল ৷ চেনা-অচেনা এসব প্রাণীর মাঝে নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির প্রাণী হচ্ছে খরগোশ ৷
খরগোশের গোশত খাওয়া হারাম কি-না এই ভেবে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান! তবে জেনে রাখুন, খরগোশের গোশত খাওয়া হারাম নয়। আল্লাহ তায়ালা খরগোশ হারাম করেননি।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)
আয়াতে কারীমা ও হাদীস শরীফের আলোকে
স্পষ্ট হয় যে খরগোশ খাওয়া বৈধ ৷
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম নিজে খরগোশের ভুনা গোশত খেয়েছেন এবং সাহাবীদের খরগোশের মাংস খেতে সম্মতি দিয়েছেন। হাদিস শরীফে এসেছে এক গ্রাম্য ব্যক্তি ভূনা করা খরগোশের গোশত সঙ্গে রুটি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে এনে বললো, নবীজি আমি এর হায়েজ হতে দেখেছি। তখন প্রিয় নবী তার সাহাবীদের বললেন, কোনো সমস্যা নেই, তোমরা খাও এবং গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, খাও। (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ২৪২৭)
অপর একটি হাদীসে এসেছে,
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন (মক্কার অদূরে) মাররায যাহারান নামক স্থানে আমরা একটি করগোশ তাড়া করলাম। লোকেরা সেটার পিছনে ধাওয়া করে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অবশেষে আমি সেটাকে নাগালে পেয়ে ধরে আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি সেটাকে যবেহ্ করে তার পাছা অথবা দু’উরু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে পাঠালেন। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহন করেছিলেন।
( সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ২৪০২)
তাছাড়া বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা বিধানের জন্য বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রয়োজন নতুন নতুন খাদ্য উৎপাদন ও এর সংযোজন। Micro-livestock হিসাবে আখ্যায়িত খরগোশ এমনি একটি বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের উৎস। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভার ঢাকা অনেক বছর যাবৎ খরগোশের লালন পালন, খাদ্য, বাসস্থান, বিভিন্ন রোগ-বালাই, মাংসের গুণাগুণ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে আসছে। দীর্ঘ দিনের গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছেঃ ১. অল্প জায়গায় স্বল্প খাদ্য এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে খরগোশ পালন করা যায়। ২. খরগোশের মাংসের প্রোটিন, এনার্জি, খনিজ এবং ভিটামিনের পরিমাণ অন্যান্য সকল প্রজাতির জীবজন্তুর মাংসের চেয়ে বেশি এবং কোলেস্টেরল ফ্যাট ও সোডিয়াম কম থাকে। এছাড়া এদের মাংস সুস্বাদু ও সহজে হজম হয় এবং সকল ধর্মের মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য। ৩. খরগোশ দ্রুতবর্ধনশীল এবং একটি স্ত্রী খরগোশ প্রতিবারে ২-৮টি বাচ্চা দিতে সক্ষম। এরা নিম্ন মানের খাবার খেয়ে অধিক পুষ্টিসম্পন্ন মাংস উৎপাদন করে। ৪. খরগোশ পালন বেকার যুবক, মহিলা ও ভূমিহীন কৃষকের দারিদ্র বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি পেশাও হতে পারে। খুলতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার ৷ হতে পারে স্বাবলম্বীর হওয়ার মডেল ৷
খরগোশ পালন সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে পশু কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে সংগ্রহ করা যায় এবং যেকোনো ধরনের সহযোগিতা নেয়া যায়।
তাই খরগোশকে সাধারণত সৌখিন প্রাণী হিসেবে পালন না করে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম চালানোর জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো ৷

Leave a Comment