শরিফ আহমাদ ||
বন্ধু ! ছোট্ট একটি শব্দ ৷ পছন্দের একটা ধ্বনি ৷ ভালোলাগার একটা পূর্ণ আকাশ ৷ বন্ধু শব্দটি উচ্চারণে সহজ কিন্তু শব্দটির মর্ম ও তাৎপর্য বিস্তৃত ৷ জীবন চলার পথে বন্ধুর প্রয়োজন হয়। বন্ধুত্বের পবিত্র বন্ধন মানুষকে কাছে টানে ৷ সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে বন্ধুত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষের কর্ম, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় বন্ধুত্বের কল্যাণে। এ কারণে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে এবং কাদের বর্জন করতে হবে এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা আমাদের পথ দেখিয়েছেন। দিয়েছেন যুগান্তকারী নির্দেশনা ৷ পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয় এবং…. ( সূরা আত তওবা: ৭১)
অত্র আয়াত থেকে স্পষ্ট হলো যে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, যারা ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান।
বিষয়টি অনেকে উপলব্ধি করে বন্ধু খোঁজে ৷
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বন্ধুত্ব করতে হবে পুরুষ পুরুষের সাথে এবং মহিলা মহিলার সাথে। কোন বিপরীত লিঙ্গের গায়রে মুহাররমের সাথে জাস্ট,গুড এবং বেস্ট ফ্রেন্ড নামক সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। কিন্তু ফেইসবুকের যে ফ্রেন্ডশীপ হয়ে থাকে, এর সাথে সত্যিকার বন্ধুত্বের মূলত কোন সম্পর্ক নেই। এটি কেবলি একটি বাহ্যিক বন্ধুত্ব।
তবে অনেক সময় তা সত্যিকার বন্ধুত্বেও রূপ নেয় ৷ তাই ফেইসবুককে দেখতে হবে অফলাইনের জীবনের অবস্থা অনুপাতে। যেমন অফলাইনে বেগানা নারীদের সাথে অহেতুক কথা বলা, তাদের সাথে দেখা করা, তাদের ছবি দেখা হারাম। তেমনি অনলাইনের বিধানও তা’ই হবে। অফলাইনে যেমন বেগানা নারীদের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েজ, দ্বীনী দাওয়াত দেয়া জায়েজ, কিন্তু আকৃষ্ট হবার আশংকা থাকলে কথা বলা বৈধ নয়। তেমনি অনলাইনেও বেগানা নারীদের দ্বীনী দাওয়াত দেয়া, ও প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েজ আছে। কিন্তু ছবি দেখা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, আকৃষ্ট হবার শংকা থাকলে বন্ধুত্ব করা ও চ্যাটিং করা কোনটিই বৈধ হবে না।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
সমাজের চরম বাস্তবতা হলো প্রথমে বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হওয়া সম্পর্কের শেষ পরিণতি অনেক সময় ব্যভিচারে রূপান্তরিত হয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপরে ফোনে কথা বলা, এরপরে ক্যাম্পাসে অথবা কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা কোন পার্কে গিয়ে পাশাপাশি বসা অথবা হাত ধরে হাটা ,গল্প করা ইত্যাদি ৷ এরপরে থাকে বিভিন্ন আবদার পর্ব ৷ আর তা পূরণ করতে গিয়েই খোলে বেহায়াপনার দরজা । অথচ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “(হে রাসুল সাঃ) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত ও নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। – সুরা আন-নুর। (আয়াত ৩০-৩১)
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
বন্ধুত্ব থাক দূরের কথা কোন বেগানা নরীর দিকে তাকানও নিষেধ এ বিষয়ে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে -হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী থেকে মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিস মতে-ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোন বেগানা নারীর উপর দৃষ্টি পতিত হলেই সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। হযরত আলী (রা) বর্ণিত হাদিস মতে- প্রথম দৃষ্টি মাফ এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ্। হঠাৎ ও অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত ক্ষমারযোগ্য। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, পর্দার ব্যপারে হাদীসে এত কঠিন ভাষায় বলা হয়েছে যে, একবারের বেশি দ্বিতীয়বার কোন বেগানা নারীর দিকে তাকানো যাবে না। আর সেখানে রসাত্মক চ্যাটিং করা, প্রেম করার প্রশ্নই আসে না ৷
মজার বিষয় ফেসবুকে আসল নকল আইডির মালিক চেনা যায় না ৷ ফেক আইডির সাথে প্রেম করে অনেকেই বিপদে পড়ে ৷ অর্থকড়ি, মোবাইল খোয়ার পাশাপাশি প্রাণের উপর হুমকি চলে আসে ৷ কেউ ফেসবুকে ইটিস পিটিস করে বিয়ে পর্যন্ত গড়ালে বেশিদিন টিকে না বন্ধন ৷ কখনো টিকে থাকলেও অশান্তির উনুনে জ্বলতে হয় সর্বদা ৷ তাই নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণিকে সাবধান হওয়ার বিকল্প নেই ৷
লেখকঃ আলেম, কবি ও আলোচক ৷