শরিফ আহমাদ |
করোনা এবং বন্যার মাঝে এলো ঈদ ৷ পবিত্র ঈদুল আযহা ৷ ঈদে সাজসজ্জার এক মোক্ষম উপলক্ষ। ইসলামও সীমার মাঝে থেকে নারী-পুরুষের সাজসজ্জায় সম্মতি দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে উৎসাহ যুগিয়েছে।
সাজগোজ, রূপচর্চা ও অলংকার শব্দগুলো কেমন যেন নারীত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। নারীদের সহজাত প্রবৃত্তির চিত্র ফুটিয়ে তোলে ৷
তাই প্রসংঙ্গক্রমে মুসলিম নারীদের ঈদের আগে সাজ- সজ্জার বিধি-বিধান সম্পর্কে জানা আবশ্যক।
প্রথমত: সাজসজ্জা করার আগে ভাবতে হবে, আপনি কার জন্য, কাকে দেখানোর জন্য সাজবেন। কোরআনে কারিমে নারীদের সৌন্দর্য্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তবে মাহরাম ১৪ শ্রেণির পুরুষ ছাড়া। কাজেই নারী, নারীসদৃশ হিজড়া এবং মাহরাম পুরুষদের সামনে সাজসজ্জার প্রদর্শন বৈধ। তবে স্বামী ব্যতীত অন্য মাহরাম পুরুষের সামনে পেট ও পিঠের সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা বৈধ নয়। আর হ্যাঁ, তাদের মধ্য থেকে যদি কারও সামনে সাজসজ্জা প্রদর্শনে ফেতনার প্রবল আশঙ্কা থাকে- তাহলে তার সামনে সৌন্দর্য্য প্রকাশ নাজায়েজ। আর স্বামীর সামনে সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন শুধু বৈধই নয় বরং প্রত্যকটি নারীর করণীয়।
শরিয়তের মধ্যে থেকে স্বামী সাজগোজের হুকুম করলে পালন করা, পূর্ণ আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। এ সম্পর্কে হাদীসের ভাষ্য হল : ‘আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদাহ করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে নারীদের আদেশ করতাম তারা যেন আপন স্বামীদেরকে সিজদাহ করে। (তিরমিযী শরীফ : হা. নং- ১০৭৯)
দ্বিতীয়ত : নারী ও পুরুষ যেহেতু পৃথক সত্তা। সৃষ্টিগতভাবে তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য বজায় রাখা জরুরি। তাই নারীদের জন্য পুরুষের কাটছাঁটের পোশাক পরিধান করা এবং তাদের বেশ ধারণ করা নিষিদ্ধ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৪৬)
টাইটফিট জামা-বোরকা বা পাতলা পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া কোনো মুসলিম নারীর জন্য জায়েজ নয়। আবু ইয়াজিদ মুজানি (রহ.) বলেন, হজরত ওমর (রা.) মহিলাদের কাতাবি (মিসরে প্রস্তুতকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এ কাপড়ে তার ত্বক দেখা যায় না। তিনি বলেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৫২৮৮) অতএব নিউ ফ্যাশনের জামা-কাপড় পরিধান করা তখনই বৈধ হবে, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোনো কাফিরের অনুকরণ না হবে।
তৃতীয়ত : এক/ নারীরা কাচ বা যেকোনো ধাতুর চুড়ি পরিধান করতে পারবে। সোনা, রুপা, পিতল, তামা ইত্যাদি ধাতুর সব রকম অলংকার ব্যবহার করতে পারবে। তাই কান ও নাক ফোঁড়াতেও পারবে। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৩৮) দুই/ নারীদের জন্য মাথার চুল যে কোন অংশ থেকেই হোক কাটা বা উপড়ানো কোনটিই জায়েজ নয়। কারণ এতে করে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কাজ করার ব্যাপারে হাদীসে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- হযরত আলী [রা.] থেকে বর্ণিত। রাসূল [সা.] নারীদের চুল কামাতে নিষেধ করেছেন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৯১৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪৭ ] তবে যদি কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে প্রয়োজনের কারণে চুল কর্তন করা জায়েজ আছে। ছোট কন্যাশিশুদের সৌন্দর্য বাড়াতে, বা অন্য কারণে চুল কাটানোয় কোন সমস্যা নেই ৷ চুল রং করার ক্যামিকেলে হারাম বস্তু না থাকলে এমনিতে নারীদের চুল রঙ্গিন করা বৈধ ৷ শরয়ী কোন নিষিদ্ধতা নেই ৷
তিন/ সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উপায়ে ভ্রু চিকন করার বর্তমান প্রচলিত প্রথা বৈধ নয়। হারাম ৷ (মুসলিম, হাদিস : ২১২৫)
তবে হিজড়াদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হলে ভ্রুকে কেঁচি দিয়ে ছোট করা জায়েজ আছে। যেমন- ফাতাওয়া শামীতে এসেছে হাত-পা ও চেহারার চুল উপড়ে ফেলা নারীদের শরীরের অতিরিক্ত লোম ও চুল উপড়ে ফেলা জায়েজ আছে।
তেমনিভাবে কৃত্রিমভাবে দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করা জায়েজ নয়। তবে কোনো দাঁত অস্বাভাবিক বাঁকা বা অতিরিক্ত থাকলে তা সোজা করা বা বৈধ ৷
শেষকথা : হাত-পায়ের নখ বড় রাখা বিজাতীয়দের স্বভাব ও একটি ঘৃণিত কাজ। অনেক সময় নখের ভেতর ময়লা জমে খাবারের সময় পেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতি সপ্তাহে হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নত। অন্তত দুই সপ্তাহে একবার কাটলেও চলবে। তবে ৪০ দিনের বেশি না কাটা অবস্থায় অতিবাহিত হলে গুনাহ হবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮)
হাত পায়ের নখে পবিত্র বস্তু দ্বারা প্রস্তুতকৃত নেইলপলিশ ব্যবহার করা জায়েজ। তবে নেইলপলিশ যেহেতু পানি প্রবেশের প্রতিবন্ধক, তাই তা নখে থাকা অবস্থায় অজু ও ফরজ গোসল হবে না। নখ থেকে তুলে অজু ও ফরজ গোসল করতে হবে। বারবার অজুর সুবিধার্থে নেইলপলিশ ব্যবহার না করাই অধিক নিরাপদ।
হ্যাঁ এক্ষেত্রে নারীদের জন্য সর্বদা হাত-পা,শরীরে মেহেদি দ্বারা রাঙিয়ে রাখা যেতে পারে ৷ এতে অজু-গোসলেও কোনো সমস্যা হয় না। বাজারে প্রচলিত মেহেদির থেকে গাছের মেন্দি উত্তম ৷ আর ক্রিম, স্নো, পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করায় কোনো দোষ নেই ৷ সেন্ট, পারফিউম, বডি স্প্রে ইত্যাদিতে যদি কোনো ধরনের নাপাক বস্তু মিশ্রিত না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ। মুসলিম নারীরা গৃহের মধ্যে অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার করবে। বাইরে কোথাও যাওয়ার সময় নয় ৷
সাজ-সজ্জার বেলায় ইসলামী অন্যান্য বিধানগুলো ফলো করলে দুনিয়া ও আখিরাতে উপকৃত হওয়া সম্ভব ৷ তাই এদিকে সকলের সজাগ থাকা প্রয়োজন ৷
লেখক: আলেম, কবি ও আলোচক