ভাইরাল প্রাসঙ্গিক ইসলামি ভাবনা | শরিফ আহমাদ | শীর্ষবার্তা

ভাইরাল প্রাসঙ্গিক ইসলামি ভাবনা
— শরিফ আহমাদ |

বর্তমানে জনপ্রিয় অনেক শব্দের মাঝে ভাইরাল শব্দটি অন্যতম ৷ কিন্তু এই শব্দটির উৎপত্তি হলো ভাইরাস শব্দ থেকে। আর ভাইরাস শব্দটি একটি সংক্ষিপ্ত রূপ ৷ যার পূর্ণরূপ হলো— Vital Information Resources Under Seize
অর্থাৎ Virusশব্দটিকে Noun ধরে এটির Adjective বা গুণবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয় Viral শব্দটি। ভাইরাস যেহেতু খুব দ্রুতই ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়ে বা বিস্তার লাভ করে, তাই হঠাৎ সমাজে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া কোনো বিষয় বা ইস্যুকেই ভাইরাল বলে উল্লেখ করা হয়।
অনলাইনে সর্বপ্রথম ভাইরাল শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন মার্কিন লেখক সেথ গোডিন। তিনি ২০০০ সালের ৩১ জুলাইয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেন ৷ প্রকাশিত সেই লেখাটির একটি লাইন ছিল এ রকম— Have the Idea behind your online experience go viral…
সেই থেকে শুরু। ক্রমান্বয়ে ভাইরাল হয় ভাইরাল শব্দটি। ইদানীং শহর-গ্রামে, দেশ-বিদেশে সর্বত্র আলোচিত শব্দ ভাইরাল ৷
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগকে অনেকে ভাইরাল যুগ বলেও সম্বোধন করছেন৷ কেননা আজকাল তো সেলিব্রিটির বিয়ের ছবি থেকে শুরু করে অবৈধ প্রেম, ধর্ষণ, হত্যা, কৌতুক-সিনেমা, ওয়াজ সবকিছুই ভাইরাল হয় ৷ মূহূর্তে হাতে হাতে পৌঁছে যায় বিভিন্ন ধরনের ছবি, ভিডিও কিংবা কোনো বক্তব্য ৷ এগুলো নির্মিত হোক বা গোপনে ধারণ করা স্ক্যান্ডাল ভিডিও হোক। কেউ সেলিব্রিটি হতে ভাইরাল হচ্ছেন নিজেই, কেউ হচ্ছেন অন্যের ফাঁদে পড়ে। যাইহোক ভাইরাল শব্দটির এখন হাজার রূপ। এর যেমন খারাপ দিক রয়েছে, রয়েছে ভালো দিকও। তাই সঙ্গত কারণেই এবিষয়ে ইসলামি নির্দেশনা জানা সময়ের দাবী ৷

জনসচেতনতার লক্ষ্যে কিংবা শিক্ষামূলক কোন কিছু ভাইরাল হলে তো ভালো বিষয় ৷ অন্যদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ হলো ৷ পাশাপাশি অর্জিত হলো সওয়াব ৷ কুরআনুল মাজিদে এসেছে ৷ সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কি হতে পারে? (সুরা আর-রাহমান, আয়াত নং ৬০)
ভালো কাজের প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিবেন ৷ পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
তোমরা যেকোনো ভালো কাজ করোনা কেনো সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণভাবে অবগত (সূরা বাকারা, আয়াত নং ২১৫ )
উপরোক্ত আয়াত দুটি থেকে বুঝা গেলো যে ব্যক্তি উত্তম বিষয় ভাইরাল বা অন্যান্য নেকির কাজে নির্দেশ প্রদান করবে এবং এ কাজের জন্য উপদেশ ও পথ-প্রদর্শন করবে তার জন্য বিরাট সওয়াব রয়েছে৷ এ সম্পর্কে
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণকর বিষয় শিক্ষা দেয় তার জন্য আল্লাহ, ফেরেশতা, আসমান-জমিনের সকল প্রাণী এমনকি গর্তের পিপীলিকা এবং মাছ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে ৷ ( তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ২৬৮৫)
আর যদি কেউ অশ্লীল ও মন্দ বিষয় শেয়ার করে , কিংবা উক্ত বিষয়ে লাইক, কমেন্ট করে উৎসাহ প্রদান করে তাহলে সে গোনাগার সাব্যস্ত হবে ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। (সুরা নিসা, আয়াত নং ১২৩ ) অতএব বুঝে-শুনে উত্তম ও কল্যাণকর বিষয় ভাইরাল করা প্রয়োজন ৷ রাগ কিংবা শত্রুতাবশত কোন ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি ভাইরাল করার চেষ্টা করা অনুচিত ৷ কেননা
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে , আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ২৪৪২)
তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গুপ্ত (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবে, আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবেন, এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৫৪৬) তাই কারো গোপন কাজের খবর পেলে তা জানার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়া, শেয়ার করে পৈচাশিক আনন্দ পাওয়া, নেটে আপলোড করে টাকা কামাই করা, বন্ধুমহলে আকামের ফিরিস্তি দিয়ে আড্ডা গরম করার কুঅভ্যাস থেকে তাওবা করা প্রয়োজন ৷

আর হ্যাঁ, কেউ যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে দীনি কাজ আঞ্জাম দিতে চান ৷ তাহলে প্রথমেই নিয়তকে সহীহ করে নিন ৷ জেনে রাখুন
ইখলাস ও নিয়তের গুরুত্ব ইসলামে অপরিহার্য। নিয়ত ছাড়া কোনো আমলই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে । [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত নং ৫]
বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাস সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীসে সতর্ক করা হয়েছে। হাদীসের পাতা থেকে দুটো হাদীস তুলে ধরা হলো ৷ এক .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় সমস্ত আমলের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রত্যেক মানুষ (পরকালে) তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে। (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ১ ) দুই.
আল্লাহ তায়ালা সমস্ত আমলের মধ্যে শুধু সেই আমলটুকুই কবুল করেন, যা ইখলাসের সঙ্গে শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য-ই করা হয়।’ (নাসাই শরীফ হাদীস নং ৩১৪২।)

লেখক: আলেম, কবি ও আলোচক

Leave a Comment