ভিক্ষাবৃত্তির এক্সরে রিপোর্ট
— শরিফ আহমাদ
ভিক্ষাবৃত্তি শব্দটি শুনতেই কেমন যেন একটি নিন্দিত ভাব ফুটে ওঠে ৷ হ্যাঁ এটি একটি ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট পেশা। সুস্থ-স্বাভাবিক যে কোন মানুষ এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন ৷ পৃথিবীতে কখন কোথায় থেকে ভিক্ষাবৃত্তির প্রচলন শুরু হয়েছে কেউ জানে না ৷ তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় সহজলভ্য এটি একটি আদিম পেশা। পৃথিবীর সব দেশে ভিক্ষুক থাকলেও বাংলাদেশে ভিক্ষুক বেশি ৷ ঘরে-বাইরে ,বাস-ট্রেনে, অফিস-আদালতে, কল-কারখানায়, মসজিদ-মন্দিরে দৃষ্টিপাত করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে ৷
ভিক্ষুকের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে ৷ তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে, ১. প্রকৃত ভিক্ষুক: এরা প্রতিবন্ধী ও বয়সের ভারে ন্যুব্জ একপ্রকার অসহায় ভিক্ষুক ৷ যাদের দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই অথবা থাকলেও কেউ নেয় না।
ইসলামি বিধানমতে যার কাছে একদিন চলার মতো খাদ্য সংরক্ষিত নেই, তার জন্য ভিক্ষা করা জায়েজ আছে। অতএব ওইসব প্রকৃত ভিক্ষুককে দান করা জরুরী ৷ বরং সওয়াবের কাজ ৷ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তারা মানুষের কাছে পীড়াপীড়ি করে ভিক্ষা চায় না। (সুরা বাকারা: ২৭৩) এ প্রসঙ্গে
হযরত সালেম (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, শুধুমাত্র দু’জন লোকের ওপর ঈর্ষা করা যায়। একজন হলেন সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন আর সে রাত দিন তা চর্চা করে। অপরজন হলেন যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন আর রাতদিন সে তা মানব কল্যাণে খরচ করে। (সহীহ বুখারী)।
২. ব্যবসায়ী ও কৃত্রিম ভিক্ষুক:এরা বিকলাঙ্গ শিশু, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ বা মৃত কাউকে মাধ্যম বানিয়ে ভিক্ষা করে। তাদের পরিচালনার জন্য গ্রুপ লিডারও থাকে ৷ আবার অনেকে কৃত্তিমভাবে নিজে অন্ধ, বোবা, বধির, মৃগীরোগী,পাগল ইত্যাদি সেজে ধোঁকা দিয়ে দিব্যি উপার্জন করে যায় ৷
এই প্রকার ভিক্ষুকদের দান করা ঠিক নয় ৷ কেননা একদল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসার করছে আর একদল ধোকাবাজি করছে ৷ তাদের সম্পর্কে হাদীসের ঘোষণা ৷ নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য কারো কাছে ভিক্ষা চায়, সে তো জাহান্নামের আগুন ভিক্ষা চায়। তার ইচ্ছা সে চাইলে জাহান্নামের আগুন কম ভিক্ষা করতে পারে বেশিও ভিক্ষা করতে পারে। (সুনানে ইবনে মাজা: ৫৮৯)
তাছাড়া ইসলাম কোনো ধরনের অন্যায় কাজকে অনুমোদন করে না। বিশেষ করে যারা মানুষকে ঠকায়, তাদের ব্যাপারে কোরআন ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে।
নবী কারীম (সা.) বলেন, ধোঁকাবাজ ও প্রতারক জাহান্নামি ( মুসনাদে বাযযার)
৩. মৌসুমী ভিক্ষুক : যারা প্রকৃত অর্থে পেশাজীবী ভিক্ষুক না হলেও জীবিকার তাগিদে মাঝে মধ্যে কিংবা এককালীন ভিক্ষুক সেজে ঈদ, জাকাতসহ বড় বড় উপলক্ষে ভিক্ষায় নামে। এরা যদি বর্ধনশীল-অবর্ধনশীল কোন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয় কিন্তু তার প্রয়োজন অনুযায়ী মাল আছে। তাহলে তারা জাকাতও খেতে পারবে, সদকাও খেতে পারবে। কিন্তু ভিক্ষা করতে পারবে না ৷
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার কাছে বৈধ কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচুমানের ও রাগ সৃষ্টিকারী কর্ম হলো স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ও ভিক্ষাবৃত্তি করা। (ইবনে মাজাহ: হাদীস নং ৪৩৬)
৪.উত্তরাধিকারী ভিক্ষুক : এরা ভিক্ষার পেশা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। অনেক টাকা পয়সার মালিক হওয়া স্বত্বেও বিনা পুঁজির এই ব্যবসা ছাড়ে না ৷ তাদের জন্য সতর্ক বার্তা ৷ এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি অভাব ব্যতীত ভিক্ষা করলো সে যেন জাহান্নামের আগুন ভক্ষণ করলো। (মুসনাদে আহমদ: হাদীস নং ৫১)
ইসলামে দান-সদকা, যাকাত-ফেতরার অনেক বিধান বর্ণিত হয়েছে ৷ তাই অনেকেই উপরোক্ত ভিক্ষুক ছাড়াও অন্যান্য নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাইকে দান করেন ৷ এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ নির্বিচারে দান করা বৈধ হলেও দেখেশুনে দান করা উচিত ৷
ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া এবং তাদেরকে কর্মমুখী, স্বাবলম্বী করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া । ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শের কথা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সকলের কর্তব্য ৷ যাতে সমাজ ও দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি মতো ঘৃণ্য অভিশাপ দূর করা সম্ভব হয়।
লেখক: আলেম, কবি ও আলোচক