পাখিপ্রেম ও বাস্তবতার নমুনা | শরিফ আহমাদ | শীর্ষবার্তা

শরিফ আহমাদ ||

মহান আল্লাহর সৃষ্টিকুশলতার রয়েছে হাজার হাজার নিদর্শন। তার মাঝে পাখি একটি অপূর্ব নিদর্শন ৷ আকাশের বুকে ডানা মেলে রাজত্ব করে পাখিরা ৷ ভোরের আলো বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে সুরের স্লোগানে কর্মমুখর দিনকে স্বাগত জানায় তারা ৷ সেই প্রকৃতিবান্ধব পাখিদের প্রতি মানুষকে সহানুভূতিশীল করে তোলার জন্য পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহপাক পাখি প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
বর্ণিত হয়েছে, তারা কি লক্ষ করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি? আল্লাহই তাদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা আন-নাহল, আয়াত নং ৭৯)
সমস্ত মাখলুক আল্লাহর হুকুম মানে ৷ নির্দিষ্ট ভাষায় তার জিকির করে ৷ অন্যসব প্রাণীর মতো পাখিরাও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা জানে এবং নিজ নিজ ভাষার পদ্ধতি জ্ঞানে তা পালন করে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, তুমি কি দেখো না যে আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে যারা আছে, তারা এবং উড্ডীয়মান পক্ষিকুল তাদের পাখা বিস্তার করে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই জানে তার প্রার্থনার এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি। তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা আন-নূূর, আয়াত নং ৪১)
পাখির কিচিরমিচির শব্দ মুগ্ধ করে সবাইকে ৷ যদিও মানুষ বুঝে না কী বলে তারা ৷ কিন্তু
আল্লাহর নবী হযরত সুলায়মান (আ.)-কে পাখিদের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল, সুলায়মান হয়েছিল দাউদের উত্তরাধিকারী এবং বলেছিল, হে মানুষ! আমাকে পাখিকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে…এটা অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। (সূরা আন-নাহল, আয়াত নং ১৬)

পৃথিবীতে আল্লাহর অপার মহিমা ও প্রশংসা বর্ণনাকারী অগণিত পাখির বসবাস। নানা বর্ণ ও বহু প্রজাতির পাখি আছে ৷ যারা বাড়ির আশপাশে ,ছোট-বড় গাছে, বন-জঙ্গলে,বিভিন্ন নদী- নালা, হাওড়-বাওড়ে থেকে বিষাক্ত কীট খেয়ে পরিবেশকে রক্ষা ৷ তাই পাখিরা সমাজের একমাত্র উপকারী বন্ধু ৷ পাখিরা সবাইকে সুন্দর বাসা বানানো এবং মিলেমিশে থাকার সবক শেখায় ৷ খাদ্য মজুদ না করে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে চলার নজীর পেশ করে ৷
এই নিরীহ এবং নান্দনিক পাখিদের নির্বিচারে হত্যা না করার জন্য ইসলামে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা: থেকে বর্ণিত রাসুল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি চড়ুই অথবা তার চেয়ে ক্ষুদ্র কোনো প্রাণী অনর্থক হত্যা করবে, আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন তাকে এ হত্যার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! পাখির হক কী? তিনি বললেন, পাখি যখন জবাই করবে তখন তাকে খেয়ে ফেলবে। আর তার মাথা কাটার পর ফেলে দেবে না। (মিশকাত শরীফ)
মানুষের প্রয়োজনে সীমিত পরিমানে নির্দিষ্ট পাখিকে জবাই করে খাওয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশনা রয়েছে বটে, কিন্তু বনের পাখিদের অহেতুক খাঁচায় ভরে কষ্ট দিয়ে লালন-পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। একবার একজন সাহাবি একটি পাখির ছানা হাতে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আসেন। ছানাটিকে দেখে মা পাখিটি তার চতুর্দিকে ঘুরতে লাগল। তখন মহানবী (সা.) বললেন, যাও ! ছানাটি যেখানে ছিল সেখানে রেখে এসো। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেন, আমরা কোনো এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক জায়গায় আমরা একটি চড়ুই পাখিকে দুটি বাচ্চাসহ দেখতে পেলাম। আমরা বাচ্চা দুটিকে হাতে তুলে নিলাম। ফলে মা পাখিটি অস্থির হয়ে আমাদের মাথার ওপর ঘোরাঘুরি করতে লাগল। নবী করিম (সা.) তখন বললেন, বাচ্চা ছিনিয়ে নিয়ে কে তাকে কষ্ট দিয়েছে? তার বাচ্চা তাকে ফিরিয়ে দাও। (আবু দাউদ)
সুতরাং আজ অন্যায়ভাবে যারা পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী হত্যা করে মহানবীর বাণী তাদের গুরুত্ব দিয়ে বুঝা ও বুঝানো দরকার।

বিশ্বব্যাপী পাখিপ্রেমিদের বর্তমানে কোন খবরাখবর নেই ৷ ঝড়-তুফানে, বিভিন্ন অসুখে প্রতিনিয়ত নানান পাখি মরছে ৷ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ৷ সুতরাং পাখিদের প্রতি জনসাধারণের সৎচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের বংশ বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। পাখিদের জন্য আরো অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে এদের হত্যা ও উত্ত্যক্তকারীদের যথাযথ শাস্তির বিধান কার্যকর করার জোরালো দাবী ওঠানো হোক ৷

লেখক: আলেম, কবি ও আলোচক

Leave a Comment