আল্লাহর ওলী হওয়া একদম সোজা

আল্লাহর ওলী ৷ আল্লাহর বন্ধু ৷ মানুষ মনে করে আল্লাহর ওলী বা বন্ধু হওয়া কঠিন কাজ ৷ এটা সবার দ্বারা হয়না ৷ হতে পারে না ৷ দুনিয়াতে অল্প কিছু লোক থাকে, যারা আল্লাহর ওলী ৷ আমরা তাদের অনুসারী হবো ৷ মুরীদ হবো ৷ ব্যস ৷ মানুষের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও অবান্তর ৷ বরং আল্লাহর ওলী হওয়া সহজ ৷ একদম সোজা কাজ ৷ এমন কি আল্লাহর ওলী না হলে তো জান্নাতই মিলবে না ৷ আল্লাহ কি তার কোনো শত্রুকে জান্নাত দিবেন নাকি? অসম্ভব ৷ সুতরাং আমাদের সবার আল্লাহর ওলী হতে চেষ্টা চালানো উচিত ৷

লোকেরা মনে করে, আল্লাহর ওলী হতে হলে তো বড় আলেম হতে হবে ৷ বড় হুজুর হতে হবে ৷ বড় পীর হতে হবে ৷ দুনিয়াবিমুখ হতে হবে ৷ সংসারবিরাগী হতে হবে ৷ এসবই মানুষের কল্পনা ৷ ইসলাম আল্লাহর ওলী হওয়ার জন্য এসব শর্ত দেয়নি ৷

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করবে তাঁর হুকুম পালন এবং নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে। তাঁর একান্ত আপন ও বন্ধু হওয়াই মানুষের দুনিয়ার জীবনের একমাত্র চাওয়া এবং পাওয়া। এ চাওয়া-পাওয়াকে আরবিতে বলা হয় ‘ওলি’ বা বন্ধু’।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়বান্দাদের পরিচয় এবং বন্ধু হওয়ার শর্ত এভাবে তুলে ধরেন-

اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰہِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿ۚۖ۶۲﴾
الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ کَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ ﴿ؕ۶۳﴾
لَہُمُ الۡبُشۡرٰی فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ فِی الۡاٰخِرَۃِ ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِکَلِمٰتِ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿ؕ۶۴﴾

“শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না।যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত।
তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবী জীবনে এবং আখিরাতে। আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেই। এটিই মহাসফলতা।”

[সূরা ইউনূস, আয়াত-৬২-৬৪]

উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য দু’টি শর্তারোপ করা হয়েছে। একটি হলো- আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। আর দ্বিতীয়টি হলো- আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও অবাধ্যতা থেকে আত্মরক্ষা করে চলা বা তাকওয়া অবলম্বন করে চলা।

‘ঈমান এবং তাকওয়া’- এ দু’টি গুণের মধ্যেই আল্লাহর ওলি বা বন্ধুর পরিচয় সীমাবদ্ধ। ঈমান ও তাকওয়ার গুণ যার মধ্যে যত বেশি ও যত পরিপূর্ণ হবে; ওই ব্যক্তি বেলায়েতের পথে তত বেশি অগ্রসর ও তত বেশি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সুতরাং আল্লাহর ওলী হওয়ার জন্য তেমন বড় কোনো শর্ত নেই ৷ বড় আলেম, পীর, হুজুর বা শতশত রাকাত নফল সালাত আদায়, হাজার রাত জাগরণ ইত্যাদি কোনো শর্ত নয় ৷

ঈমানের সাথে গোনাহ বর্জনের শর্ত দেয়া হয়েছে ৷ গোনাহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে ফরজ আদায়ের বিষয়টিও চলে এসেছে ৷ কেননা ফরজ লঙ্ঘন করলে তো গোনাহ হবেই ৷ একজন মুমিন তো ফরজ ওয়াজিব আদায় করবেই ৷ এরপর সে নফল আদায় করুক চাই না করুক তাকে গোনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে ৷ তবেই সে আল্লাহর ওলী ৷ আল্লাহর প্রিয় ৷ আর এর বিপরীতে সে যতই নফল সালাত পড়ুক ৷ নফল দান সাদকা করুক ৷ গোনাহ থেকে বিরত না থাকলে সে আল্লাহর ওলী নয় ৷

ইমাম আবু জাফর তাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সব মুমিন করুণাময় আল্লাহর বন্ধু। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী, সে তত বেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত অর্থাৎ তত বেশি বেলায়েতের অধিকারী। (ইবনুল মুবারক, কিতাবুয যুহুদ)

আল্লাহ তাআলার প্রিয়বান্দা হওয়ার জন্য একজন মুমিনের কাজকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।

প্রথমত, বান্দা আল্লাহর ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করবে। দ্বিতীয়ত, ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেলায়েত হাসিল তথা আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভ করবে।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈটক্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সে কাজ আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি; যে কাজ আমি ফরজ করেছি।

অর্থাৎ ফরজ কাজ পালন করাই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সর্ব প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় কাজ।

এরপর বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালোবাসি।

আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় হয়ে যাই, যা দিয়ে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে হাঁটে।

সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (মুয়াত্তা মালেক)

ওলী বা বন্ধু হতে হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হতে হলে তাঁর ফরজ বিধানাবলী পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করাও জরুরি। আর গোনাহ বর্জন করা হচ্ছে মৌলিক কাজ ৷

যারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জনে সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণে সঠিক ঈমান সংরক্ষণ করেন, দুনিয়ার সব হারাম ও নিষেধ বর্জনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করেন এবং তাঁর ওপর অর্পিত যাবতীয় ফরজ দায়িত্ব যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করেন, তারাই হলেন আল্লাহর ওলি বা বন্ধু।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর নৈকট্য অর্জনে ঈমান ও তাকওয়ার ওপর অটল ও অবিচল থাকার পাশাপাশি গোনাহ থেকে বিরত থেকে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখকঃ
দীদার মাহদী
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল
দারুলহুদা মডেল মাদরাসা
কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷

Leave a Comment